Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বাঘের বাচ্চা || Sankar Brahma

বাঘের বাচ্চা || Sankar Brahma

পাটুলি খাল-পাড়ের বাজারটা খুব বড় নয়। খালের ধার ঘেষে কতগুলি দোকান বসে দিনের বেলা। বেচা-কেনা হয়ে গেলে, সব জিনিস-পত্র তুলে নিয়ে, জায়গাটা ঝাড় দিয়ে পরিষ্কার করে রেখে, সকলে উঠে যায়। খাল পাড়টা ফাঁকা হয়ে যায়। বিকেল বেলা সম্পূর্ণ ফাঁকা থাকে। দেখলে মনে হয় না, এখানে সকাল বেলা সব্জি মাছের বাজার বসে ছিল।
বাজারে মোট আট-দশটা মাছের দোকান। পনেরো-কুড়িটা সবজির দোকান। দু’টি ফুলের দোকান। একটা শাক-পাতার দোকান। একটি চা – রুটি ঘুগনির দোকান। একটি মিষ্টির দোকান। তবে বাজারটি বেশ জম-জমাট। ক্রেতাদের বেশ ভিড় লেগেই থাকে। কারণ, দর-দাম করে জিনিষ কেনা যায় এখানে।
গড়িয়ার বাজারে না গিয়ে আমি মাঝে মাঝে খাল-পাড়ের বাজারে যাই, দাম-দর করে জিনিষ কেনার জন্য। আসলে দাম-দর করে জিনিষ কিনতে পারলে, আমার ভিতরে এক ধরনের জয়ের আনন্দ অনুভূত হয়। বেশ কিছু টাকাও বাঁচে তা’তে এই মাগ্গি-গন্ডার-বাজারে।

সেদিন বাজারে ঢুকতেই দেখি, মাছঅলা সুনীলের দোকানে একটা জটলা। বেশ কিছু লোকের ভিড়। খুব চিৎকার চেঁচামেচি হচ্ছে সেখানে। কাছে গিয়ে দেখি নৃপেনবাবুর সঙ্গে সুনীল মাছঅলার খুব ঝগড়া হচ্ছে।

নৃপেনবাবু বেশ খিটখিটে লোক। মুখের আগল নেই। ভাষাও অশ্রাব্য। তার এই ধরনের অশ্রাব্য ভাষা ব্যবহারের জন্য লোকের সাথে মাঝে মাঝে ঝগড়া অশান্তি লেগেই থাকে। তাতে উনি অভ্যস্থ হয়ে উঠেছেন। গায়ে মাখেন না সেসব। নিজেকেও সংশোধন করার কোনও চেষ্টা করেন না। আজও তেমন একটি ঘটনা ঘটেছে।

ঘটনাটি হচ্ছে, নৃপেনবাবু কাল সুনীলের থেকে বড় বড় পমপ্রেট মাছ, আটশ’ টাকা কেজি দরে পাঁচশ’ গ্রাম মাছ কিনে ছিলেন। মোট পাঁচটি মাছ উঠে ছিল ওজনে। তার মধ্যে দু’টি মাছ ছিল পঁচা। খেতে পারেননি নৃপেনবাবুর বাড়ির লোক। তাই মাছ দু’টি উনি পরদিন থলিতে ভরে ফেরৎ নিয়ে এসেছেন, সুনীলের থেকে তার দাম ফেরৎ নেবার জন্য। পাঁচটি মাছ চারশ’ টাকা হলে, একটা মাছ আশি টাকা। দু’টি মাছের দাম একশ’ ষাট টাকা। সেই টাকা তার ফেরৎ চাই সুনীলের কাছ থেকে।

সুনীল তখন দোকানে মাছের খরিদ্দারের ভিড় সামলাচ্ছিল। সেই সময় নৃপেনবাবু তার সামনে গিয়ে সেই মাছ দু’টি দেকানে ফেলে দিয়ে, তার দাম একশ’ আশি টাকা ফেরৎ চাইলেন। দোকানে ভিড় থাকায় সুনীল তাকে বলল, আপনি একটু ঘুরে আসুন।

নৃপেন বাবু সেই কথা শুনে তেলে-বেগুনে জ্বলে উঠলেন। তারপর মাছঅলা সুনীলকে মুখ খিঁচিয়ে বলে উঠলেন, – কেন? ঘুরে আসব কেন? লজ্জা করে না তোমার পঁচা মাছ বেচতে? তুমি কী মানুষ, নাকি জানোয়ারের বাচ্চা। লোক ঠকাও।

কথাটা শুনেই আচমকা সুনীলের মাথায় রক্ত চড়ে গেলে। সে মাছ কাটার ধারালো আঁশঅলা বঁটিটা বাঁট থেকে খুলে বের করলো, তারপর নৃপেনবাবু গলায় কোপ দিতে ছুটে গেলো। তখন সকলে সুনীলকে চেপে ধরে রেখে, কোন রকমে তাকে থামালো। না হলে হয়তো নৃপেনবাবুর গলায় কোপ পড়তো। একটা অঘটন ঘটে যেত।
সকলে সুনীলকে চেপে ধরে নৃপেনবাবুকে অনুরোধ করে বললো, আপনি এখান থেকে এখন চলে যান প্লীজ।
পরিস্থিতি ঘোরালো বুঝে নৃপেনবাবু সেখানে আর দাঁড়ালেন না।

নৃপেনবাবু সেখান থেকে চলে যেতেই, তার ফেরৎ দেওয়া পমপ্রেট মাছ দু’টি খালের জলে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে, সুনীল আবার মাথা ঠান্ডা করে, আঁশ বটি বাঁটে লাগিয়ে নিয়ে, খরিদ্দারদের কাছে মাছ বেচতে লাগল। খরিদ্দার একটু ফাঁকা হওয়ার পর, আমি ওর কাছ থেকে পাঁচশো গ্রাম পোনা মাছ কিনলাম দর-দাম করে। পাঁচ টাকা কম রাখলো পাঁচশ’ গ্রাম মাছে। মানে কেজিতে দশটাকা কম। তারপর দাম শোধ করে দিয়ে, ফিরে আসার সময় বললাম, একটু আগে তোমার যা রুদ্রমূর্তি দেখালে, দেখে একেবারে বাঘের বাচ্চা মনে হচ্ছিল তোমাকে। আমার কথা শুনে, সুনীল বিগলিত হয়ে একগাল অমায়িক হাসি হাসলো।

বাড়ি ফিরতে ফিরতে আমি ভাবলাম, মানুষ কী অদ্ভূত জীব। জানোয়ারের বাচ্চা বললে খেপে যায়। অথচ বাঘের বাচ্চা বললে খুশিতে তার বুক গর্বে ফুলে ওঠে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress