Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » বড়দি || Rana Chatterjee

বড়দি || Rana Chatterjee

বড়দি

“দেখ্ দিদি ,ওই টুকু জায়গাই আমাদের সম্বল -বাবার অনেক স্বপ্ন ছিলো তোকে ভাল ঘরে বিয়ে দেওয়া ,বোনের একটা ভাল ক্যারিয়ার আর আমায় ইঞ্জিনিয়ারিং পড়ানো ,তোর হয়ত সত্যিই ভাল বড়লোক বাড়িতে বিয়ে হয়েছে ,জামাই বাবু দের অগাধ টাকা কিন্তু মিষ্টির পড়া টা মাঝ পথে বন্ধ হয়ে গেছে স্রেফ টাকার অভাবে,গরীব ঘরের মেয়ে তার আবার ক্যরিয়ারের স্বপ্ন ! আর বাকি রইলাম আমি – নিজে টিউশন করে আর মাথার ঘাম পায়ে ঝরিয়ে কোনমতে পড়াটা আর দুবেলা দু মুঠো ভাত ডাল জুটিয়ে যাচ্ছি দিদি ।
ইচ্ছা আছে বাবার কেনা ওই একমাত্র সম্বল মল্লিক রোডের ধারের এক ফালি জায়গা টায় একটা বাড়ি বানাবো ভাগ্য যদি সাথ দেয় ,তাই তোর কাছে আমার অনুরোধ দিদি ,ওই সামান্য জায়গা টুকু তুই এমন ভাবে চাস না ,জামাইবাবু কে বোঝাস একটু । শুনলাম তোরা নাকি জায়গাটা কিনে নিতে চাইছিচ ,তাও বাজার মূল্যের অনেক কম দামে ,কিন্তু দিদি ,মা বল আর আমি বা মিষ্টি কেউ ই কিন্তু চাই না এভাবে অভাবের তাড়নায় বিক্রি করে দেই ।ভাল থাকিস দিদি ” -এই বলে মোবাইলের কল টা শেষ করলো ভোম্বল ।

সে বছর মাধ্যমিক দিয়েছে ভোম্বল ,খুব ব্রিলিয়াণ্ট একটা রেজাল্ট ,বাবা বললেন চল ,গ্রামের বাড়ি থেকে ঘুরে আসি ,তোর ঠাকুমা কে রেজাল্ট দেখানোও হবে আর রাধা মাধবের থানে আশীর্বাদ নিয়ে নতুন উদ্যমে পড়াশোনা শুরু। ক্লাস এইট এ ওঠা মিষ্টি শুনে হই হই করে উঠল। দিদি বাড়িতে ছিল না ,রবিন বাবুর ব্যাচে পড়তে গিয়েছিল -এসে বলল না মা ,তোমরা যাও- আমার কাল প্রাক্টিক্যাল্ ক্লাস আছে ,আমার যাওয়া একদমই সম্ভব নয় ।

একদিন নয় ,বার তিন চার ভোম্বল ,মা কে সাবধান করেছিল ,”মা ,দিদিকে বলো ওই পাড়ার শিবু দার সাথে যেনো না মেশে ,স্বভাব চরিত্র একদমই ভালো নয় ছেলে টার !” একদিন রাত্রে সবার সাথে খাবার টেবিলে মা ,দিদি কে সাবধান করতেই সব যেন রাগ এসে পড়েছিল ভোম্বলের ওপর ,এমন হিংস্র ,নির্লজ্জ রূপ বোধহয় কোনদিন দেখেনি সে দিদির ,তারপর থেকে দেখিয়ে দেখিয়ে ইচ্ছা করে শিবুদার বাইকে চেপে ঘুরতো ওরা ।

সেই দিন দেশের বাড়ি থেকে ফেরার পথে ,স্টেট হাইওয়ে তে রাত তখন দশ টা ,ঠাকুমা আর পিসিমনির পীড়াপীড়িতে রাতের খাবার খেয়ে ওই রিস্ক রোড ধরে , ফেরার সময় তুমুল বৃষ্টি শুরু হল । অনভিজ্ঞ চালকের সামান্য ভুলে এক সাংঘাতিক রোড দুর্ঘটনাতে পড়ে ভোম্বলদের ভাড়া করা অ্যাম্বাসেডর গাড়ি ,সামনের সিটে বাবা একা আর মাকে নিয়ে ওরা দুই ভাই -বোন পেছনের সিটে বসে । গাড়ির সামনের টা দুমড়ে গিয়ে সেদিনের অসহায় বাবার আর্তনাদ আজও এই তিনটে মানুষ কে পিছু তাড়া করে বেড়ায় । চালক কোনোমতে বেঁচে গেলেও নূন্যতম চিকিত্সা টুকু বাবাকে দেবার প্রয়োজন পড়েনি ,আর এটাই এক মস্ত আফসোস ভোম্বল দের সারা জীবনের ।

দু কামরা ভাড়া নেওয়া চালা ঘরে,সেই শুরু ভোম্বলদের যন্ত্রণার জয়রথ ।ছোটো ছোটো চাহিদা গুলো কে মেটাতে হিমসিম খাওয়া মায়ের যন্ত্রণাক্লিষ্ট মুখ আর একই ছাদের নিচে আপন দিদির রকমারী সাজসজ্জা,দামী পোশাক আর উগ্র পারফিউমের ঝাঁঝ ,স্বর্গ নরকের অপূর্ব সহাবস্থান ফুটিয়ে তুলেছিল ।

গেলো বছর রথের দিন ,সকাল সকাল একটা উজ্জ্বল হলুদ শাড়িতে আর দামী গাড়ি চড়ে শিবুদা কে নিয়ে মন্দিরে বিয়ে করে দিদি এসেছিল ফাইনাল খবর টা দিতে যে ,আর সে এ বাড়িতে থাকছে না ।সুন্দরী দিদি কে আজ যেনো অপরূপা লাগছিল আরো ।পাশের বাড়ির মল্লিক কাকিমা হেঁকে বলেছিল ,-“ওরে ভোম্বল -ওরে মিষ্টি ,তোদের যে বরাত খুলে গেলো দেখছি “। কতটা বরাত খুললো তা জানা না থাকলেও ভালই যে ঝামেলার শক্ত বাঁধন অক্টোপাসের মতোন ভোম্বল দের জড়িয়ে ধরছিল তা ভালই টের পাচ্ছিল বাড়ির সবাই ।

অষ্ট মঙ্গলার দিন খুব সকালে মায়ের একপ্রকার অনুরোধেই ইচ্ছার বিরুদ্ধেও ভোম্বল ,দিদি কে আনতে বড় আশা করে “চৌধুরী ভিলা “তে গেলে ,সিকুইরিটি গার্ড ভেতরের নির্দেশ আছে বলে ঘাড় ধাক্কা
দিয়ে বার করে দিয়েছিল ,যদিও সে অপমান গায়ে মাখেনি ভোম্বল ,দিদি সুখে থাকুক এই কামনায় খুশি হয়েই বাড়ি ফিরে মা কে বলেছিল ,”মা,আজই দিদিরা বাইরে ঘুরতে যাচ্ছে ,খুব খাতির যত্ন করেছে ,তুমি একদমই মন খারাপ করো না “।

পূজার আগে মা আর বোনের জন্য ফুটপাতের সস্তা পোশাক ,সেই সঙ্গে শিবু দার পুরানো একটা জিনসের প্যান্ট পরিপাটি করে প্যাকেট করে এনে ,রান্নাঘরে মা এর কাছে, শিবু দার কোর্ট -ব্লেজার জন্য অন্তত হাজার পাঁচেক টাকা দিতেই হবে ,এই জোড়ালো দাবীও ভোম্বল ,মিষ্টি দের দৃস্টি এড়াই নি ।

দিদি কে মজা করে সেদিন আবদার করেছিল ভোম্বল “দিদি ,মিষ্টির পড়াশোনা টা মাঝপথে বন্ধ -কিছু একটা যদি সুরাহা করতে পারিস “,উত্তরে দিদি বলেছিল দেখ্ গরীবের ঘরে আর যাই হোক পড়াশোনা বিলাসিতা,তুইই বরং কোনো দোকানে কাজে লেগে পড় ।

এরপর থেকে যতবার এসেছে দিদি -সহানু ভূতি তো দূরের কথা ,কেবল এটা দাও ,ওটা দাও এর আবদার । একসময় এটাও হযেছে ,বাবার কিনে দেওয়া মা এর না পড়া নতুন শাড়ি ,দিদি ওবাড়ির রান্না -কাজের মাসির জন্য দিব্যি হাসতে হাসতে নিয়েগেছে।
এখন কয়েক মাস ধরে বাবার কিনে যাওয়া একমাত্র সম্বল রোড সাইডের প্লট জমিটাকে কব্জা করতে ওঠে পড়ে লেগেছে ,বড়ো লোক শিবুদার সু গৃহিণী ,ভোম্বল মিষ্টিদের আদরের বড়দি ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress