Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ফুলেশ্বরী || Sibani Gupta

ফুলেশ্বরী || Sibani Gupta

ফুলেশ্বরী

গার্গী আনন্দে উচ্ছ্বসিত,- জানো,এইযে দু’জনে নদীর পারে বসে আছি, কি সুন্দর মিঠে ঠান্ডা হাওয়া, মাঝনদীতে দেখো,মাঝিদের ভাটিয়ালি গানের সুর ,গাঙচিলেদের ওড়ে যাওয়া,দূরে-গ্রামের ইশারা,সবুজের হাতছানি,আমাকে যেন আবেশে মুগ্ধ করে তুলে ।কি ভালোই না লাগেগো-

গৌরব মুচকি হাসে ,-জানি,আর তাইতো ছুটি পেলেই এখানে তোমাকে নিয়ে চলে আসি।আমারও ভীষন পছন্দের জায়গা এটা। কেন বলোতো? গার্গীর ঠোঁটে চটুল দুষ্টুমির হাসি ,- তা আর জানিনে? এখানেইতো- ধেৎ, বলবোনা, যাও- গৌরব মুখে অভিমানের ভাব আঁকে- ও বুঝেছি,মনে নেই,তা সেটা বললেই পারো-এতো শিগগির ভুলে গেলে সবকিছুই ফুলেশ্বরী? গার্গী গভীর অনুরাগের দৃষ্টিতে তাকায় গৌরবের দিকে ।তারপর ,কাছ ঘেঁষে মাথাটা রাখে গৌরবের কাঁধে,- নাগো,ভুলিনি কিছুই।এইখানেই তো আমাদের প্রথম দেখা।খেয়া পারাপারের জন‍্যে দাঁড়িয়েছিলাম আমি।নৌকোতে উঠতে গিয়ে কাঁদাতে পা পিছলে নদীতে তলিয়ে মরেইতো যেতাম ,যদিনা-সেদিন তুমি আমাকে বাঁচাতে ,ওফ্ ভাবলে এখনো গা’য়ে কাঁটা দেয়-

গৌরব দুষ্টু হাসিতে মুখ ভরিয়ে বলে, -সেদিন ভাগ‍্যিস তোমাকে তুলেছিলাম ,নাহলে কি তুমি আমার জীবনে আসতে ফুলেশ্বরী? আমাদের,কতো কতো মজা,-হ‍্যাঁ। সেদিন থেকেই তুমি আমাকে ফুলেশ্বরী বলে ডাকতে শুরু করলে ।আমার ভীষন ভালো লাগতো,লজ্জাও করতো।এদিকে,আমাদের বাড়ি খুব রক্ষনশীল, জানাজানি হতেই ,জাতপাতের,বংশের, অর্থমর্যাদার,কতো যে বাঁধা নিষেধের ঝড় ! বাপরে্ – গৌরব গর্বিত হয়,- যাই বলো,আমাদের ভালোবাসা ছিলো খাঁটি ।তাই শত চেষ্টাতেও কেউ ফাটল ধরাতে পারেনি। আমি ব্রাহ্মণ ,তুমি শূদ্র। এছাড়া শিক্ষাদীক্ষায় দু’জনেই সমান,তবু কতো যে লড়াই – গার্গী খিলখিল করে হেসে উঠে শুনে।
-তোমাকেও বলিহারি,আমার পুলিশ অফিসার জ‍্যেঠুর সামনে দাঁড়িয়েও ঘাবড়ে যাওনি মোটেও, বীরপুরুষ আমার! গৌরব বিস্মিত চোখে তাকায়,
-কেন? উনি পুলিশ অফিসার বলে ভয় পাবো কেন? ভালোবাসা কি দোষের ? সেটাই তোমার জ‍্যেঠুকে সাফ জানিয়ে দিয়েছিলাম সেদিন,যে আমি আপনাদের মেয়েটিকে বিয়ে করতে চাই।উনি সব শুনে রাজী হতেই তো বিয়েটা হলো । মানুষটার মনটা ভালো।

গার্গী ভ্রুকুটি করে,- ইস্ তুমি চেনোনা,কি সাংঘাতিক রাগী জ‍্যেঠু।দস্তুরমতো তদন্ত করে, কোয়ালিফিকেশন ,ভালো চাকরী এসব সুলুক সন্ধান জেনে তবেইনা রাজী হয়েছিলেন।
গৌরব দরাজ গলায় হাসে,- তাহতে পারে, কিন্তু আমার জীবনে তোমার প্রবেশটুকুই সেরা পাওয়া ছিলো ফুলেশ্বরী।
গার্গী আহ্লাদিত হয়,- জানিগো,তুমি আমাকে পূর্ণ করে দিয়েছো ,তোমার মতন জীবন বন্ধু কতো ভাগ‍্যেই না জুটে।
গৌরব মুচকি হাসে,- আর তুমি! আমার জীবনকেই যে সুশোভিত করেছো তাই নয়।আমার পরিবারের সকলের মনে তোমার স্থান করে নিয়েছো আপন স্বভাব মাধুর্যে । ক’জন মেয়ে এমনটি পারে বলো?
গার্গী খানিকটা লজ্জা মিশ্রিত খুশিতে হেসে দু’হাতে আচমকা জড়িয়ে ধরে গৌরবকে,-,এমন করে বলতে নেইগো,তোমার ভালোবাসাই তো আমার শক্তি,তোমাকে যেমন ভালোবাসি,তেমনি ওদেরকেও,তাছাড়া,আমার মতো ভাগ‍্য কি সকলের হয়? তোমার মা,বাবা ,সবাই আমাকে তো কোন অভাব বুঝতেই দেননি।আমি শূদ্রের মেয়ে বলে কখনো অবহেলা তো করেননি?
গৌরব সায় দেয়,-তাঠিক।অথচ ,আমাদের বিয়েতে প্রথমে কারো মত ছিলোনা ।কতো ঝামেলাই না-
গার্গী বাঁধা দিয়ে বলে,- এখন তো সবাই আমাদেরকে বুকে টেনে নিয়েছেন ,সেটা কি কম? পুরনো কথা ঘেঁটে এমন সুন্দর সাঁঝবেলাটা নষ্ট করতে চাইনে। এই ফুলেশ্বরী আমাদের ভালোবাসার ভিত্তি গড়ে দিয়েছিলো।তাইতো, আমরা এখানে না এসে পারিনে ।এর সাথে কতো যে স্মৃতি-
গৌরব খুশির সুরে বলে,- ঠিক বলেছো।এসো- আগের মতো দুজনে গান গাই-
গার্গী খুশিতে ডগমগ হয়ে গলা মেলে,- আমার হাত ধরে তুমি নিয়ে চলো সখা-

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *