ফিরে এলাম বিরতির পর
প্রতি সন্ধ্যায় বাঙালি পরিবারের সদস্যদের মধ্যে, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে টিভির রিমোট কন্ট্রোল নিয়ে রীতিমত কাড়াকাড়ি পড়ে যায় ! সৌজন্যে অবশ্যই বাংলা ধারাবাহিক । সারাদিন সংসারের হাড় ভাঙা খাটুনির পরে প্রমীলা বাহিনী যেন স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেন বাংলা ধারাবাহিক গুলো দেখে। কি নেই সেই বাংলা ধারাবাহিকে ? ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আবেগ অনুভূতি, অতিশয় স্পর্শচেতন ভাষা ! প্রেম অপ্রেম , পরকীয়া প্রেমের আখ্যান , কিম্বা নিখাদ আধ্যাত্মিকতায় সমৃদ্ধ সেইসব ধারাবাহিক গুলো যেন টেনে হিঁচড়ে আরও বড় করে আপামর দর্শকদের সামনে উপস্থাপিত করা হয় ! থুড়ি ভুল বললাম ! আসলে সেইসব বাংলা ধারাবাহিক গুলো বাঙালি প্রমীলা বাহিনীকে একপ্রকার জোর করে গেলানো হয় ! আর মন্ত্রমুগ্ধের মত সেই ধারাবাহিকগুলো দেখার শিক্ষণীয় বিষয় হল, আগামী দিনে সেইসব ধারাবাহিক গুলোর বক্তব্য প্রমীলা বাহিনী তাঁদের ব্যবহারিক জীবনে প্রয়োগ করতে উদ্যত হন ! কোনো একটি বিশেষ চরিত্রের সংলাপ হুবহু নকল করেন , এমনকি সাংসারিক জীবনে কূটকৌশল গুলোও এইসব তথাকথিত সিরিয়াল দেখেই রপ্ত করেন ! শুধু কি তাই ? কিভাবে বিবাহ বহির্ভূত সম্পর্কে আবদ্ধ হতে হয় , তাও এখান থেকেই প্রমীলা বাহিনী রপ্ত করেন ! এমনকি পরিবারের বড় ছেলের থেকে মেজো ছেলে কেন কিছুটা উপেক্ষিত থাকেন , তারও বিস্তারিত বিবরণ জানতে পারেন । বাস্তবে বাঙালি প্রমীলা বাহিনী এইসব ধারাবাহিক দেখে বেশ একটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তোলেন ! এমনকি আধ্যাত্মিকতায় সমৃদ্ধ কোনো সিরিয়াল দেখতে দেখতে হঠাৎ করেই তাঁরা করজোড়ে বোকা বাক্সের দিকে তাকিয়ে নমস্কার জানিয়ে ফেলেন ! প্রসঙ্গত উল্লেখ্য যে, পশ্চিমবঙ্গের বেশ কিছু বাংলা ধারাবাহিক বাংলাদেশেও বেশ জনপ্রিয় হয়েছে । তবে এইসব বাংলা ধারাবাহিক চলাকালীন সময়ে বাড়ির ড্রয়িং রুমে কিন্তু পিন ড্রপ সাইলেন্স ! সেখানে পরিবারের পুরুষ মানুষটির সাময়িক ভাবে প্রবেশ নিষিদ্ধ ! টানটান উত্তেজনা, নিখুঁত চিত্রনাট্য এসবকে ছাপিয়ে সেই ড্রয়িং রুমে এক অদ্ভুত নিস্তব্ধতা বিরাজ করে ! আর মিডিল ক্লাস ইনসিকিওর্ড হ্যাজবেন্ডের মত পুরুষমানুষটি যেন পাশের ঘর থেকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকেন ! কিন্তু হঠাৎ করেই যেন ছন্দপতন ! টিভির পর্দায় তখন ” ফিরে আসছি বিরতির পরে ” লেখাটি জ্বলজ্বল করছে ! হ্যাঁ, সেই বিজ্ঞাপনী বিরতি থেকেও যেন প্রমীলা বাহিনী শিক্ষা নিয়ে থাকেন…… ! তা সে ফর্সা ফেয়ারনেস ক্রিম হোক অথবা গর্ভনিরোধক বড়ি সেবনের উপকারিতা ! এভাবেই এগিয়ে চলে যাপিত জীবন ! আজও হয়তো বিজ্ঞাপনী বিরতি গুলো খুবই প্রাসঙ্গিক এবং গভীর অর্থবহ ।।
খুবই প্রশাঙ্গিক লেখাটা।