Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » প্রেমের দিবস || Samarpita Raha

প্রেমের দিবস || Samarpita Raha

বাবা ও মায়ের “নয়নের মনি “আমি আর ভাই। সন্তানরা যখন বড় হয়,বিবাহিত জীবনে প্রবেশ করে তখন তারা অনুভব করে, হায়রে আমি আর ভাই বাবা -মায়ের সাথে পুরুলিয়ার বাড়িতে আমার বিয়ে হবার আগেরদিন ও একখাটে গুতাগুতি করে ঘুমিয়েছি।
তাদেরও নিজেদের ভালোবাসার জীবন আছে বুঝতে চেষ্টা করিনি।
মায়ের লাল বেনারসি পড়া ছবি ও বাবার বর বেশের ছবিটি দেখলে লজ্জা পেতাম,
মা ও আলমারিতে লুকিয়ে রাখত বিয়ের অ্যালবাম। মায়ের লুকিয়ে লেখা ডায়েরিটা বিয়ের পর দ্বিরাগমনে এসে দেখি,একটা কবিতায় চোখটা আটকায়।
“বসন্ত এসে গেছে”
পলাশ ও শিমুল ,পিকের কুহুতান ,গাছে গাছে কচি কিশলয়-এইসব নিয়ে লেখা।আসমান পলাশ রাঙা,খোঁপায় পলাশফুলের মালা,পলাশ রাঙা বেনারসি ।পলাশের লাল পাপড়ি নাকি মায়ের ভালোবাসা,মায়ের পায়ের আওয়াজ পেয়ে ডায়েরিটা আর পড়া হয় নি,হয়তো মায়ের গোপন কুঠুরিতে লুকানো আছে।সেই মুহুর্তে জানতে পারি পলাশের লাল পাপড়ি মায়ের ভীষণ মন টানে।আর ভায়ের নাম কিংশুক ,মা কেন রেখেছে জানলাম।পলাশের অপর নাম কিংশুক।

এরপর ভাই চাকরি সূত্রে হায়দ্রাবাদ আর আমি বিয়ের পর ব‍্যাঙ্গালোর থাকি। বিয়ের পর বর লন্ডন চলে যায়,ছেলে নিয়ে একা থাকি। বাবা চাকরির থেকে অবসর নিয়েছেন।মা আমার কাছে বাবা ভায়ের কাছে গিয়ে থাকে।
আমিতো ফোনে বরের সাথে যখন গল্প করি আমার জন্য এটা -ওটা এনো,ভালেন্টাইনে আসছ তো??
কি আনবে??
মা ও বাবার গল্প কানে আসে,ওষুধটা খেও। বাবার প্রশ্নে, মা বলে “,হ‍্যাঁ হ‍্যাঁ”।
আমি ঘরে ঢুকতেই মা ফোন রেখে দেয়।আমি বলি মাকে ,”তুমি বাবার সাথে প্রেম করছিলে”।
আমায় হাল্কা বকা দিয়ে বলে জামাই কবে আসছে??
১৪তারিখ ভালেন্টাইনডে -তে আসবে।মাকে দেখি আর্টপেপার কেটে কিছু আঁকতে।একটা ফুলেরডাল আর ছোট- ছোট লাল ফুল।
১৪তারিখ ভোরে আমি ছেলে নিয়ে বরকে আনতে বিমানবন্দরে গেছি।
ফিরে এসে,মা -মা করে ডাকছি ,মা নেই,
ফোন বন্ধ।
একটা চিঠি, “আজ – বসন্ত” একটা কাজে বেরিয়েছি,কয়েকদিন পর ফিরব।
ওদিকে ভাইও বলে দিদি ,বাবা এত সিগারেট খায় , বকেছি বলে ,বাবা চললাম লিখে গেছে।
আমিও বললাম মা -ও নেই—-ইত্যাদি,
বর বলে কিগো” ভাগবান”–সিনেমার অমিতাভ – হেমাতো।
তারপর বিকেলে বাবা ও মায়ের ফোন তোমরা এসো এই ফ্ল্যাটে।দেখলাম বাবা ও মায়েরফ্ল্যাট, ফ্লাটের পাশেই একটা পলাশ গাছ,লাল পলাশে ছেঁয়ে আছে, পলাশ মায়ের খুব প্রিয়।টেবিলে সাজানো নানান -খাবার ,বাবার ভ‍্যালেন্টাইন উপহার মাকে ।মা নিজের হাতের কার্ড বাবাকে দিয়েছে, তাতে মায়ের লেখা কবিতা”বসন্ত এসে গেছে”–
রাঙা পলাশের ওই রূপে
মন’টা গেয়ে ওঠে “বসন্ত এসে গেছে”,
শরমে পলাশ রাঙা নববধূর পলাশ রাঙা বেনারসি,
বধূর কবরীতে রাঙা পলাশ ফুল,
পদযুগল রাঙানো হয়েছে পলাশরাঙা আলতায়
গুণ গুণ করে বনভূমি বলে ফাগুন লেগেছে পলাশ বনে।

মা, বলল মাম তুইতো জামাইকে ফর্দ দিলি,
এই এনো,তুই কি দিলি??
তোমার বর তোমায় এত বড় উপহার দিল,
তুমি শুধু কার্ড।না মাম তোর বাবাকে লালশাক ভাজা করে এনে খাইয়েছি,আমরা হো হো করে হেসে ওঠি।
মা তো কার্ড বানিয়ে কবিতা লিখে বাবাকে দিল।আমি সকলকে গান উপহার দিলাম-
আজি দখিন দুয়ার খোলা
আজি দখিন দুয়ার খোলা
এসো হে এসো হে এসো হে
আমার বসন্ত এসো–
আজি দখিন দুয়ার খোলা।।
বসন্তকে আহবান করে মুদিত নয়নে গাইতে গাইতে দেখি ,ঘরে শুধু বর।বাবা,মা,ভাই,ছেলে সেই ঘরে নেই।
বুঝলাম মা রা সুযোগ বুঝে কেটে পড়েছে।মা আমায় বুঝাতে চেষ্টা করেছেন
প্রেম দিবস বলে আলাদা কিছু নেই রে মাম,সমস্তটা আবেগ।ছোট ছোট জিনিসের মধ্যে প্রেমের জাগরণ।মাঘ ফাল্গুন এলেই মনে হয় সরস্বতি পূজা।পূজায় লাগে পলাশ ফুল,আমের মুকুল।প্রকৃতি ও তাই সেজে ওঠে।গাছে গাছে আম্রমুকুল,কিংশুক ,শিমুল ভরে ওঠে।জানান দেয় কানে কানে ফিসফিসিয়ে এই” মাম “দেখেছিস বসন্ত এসে গেছে।ঐ লন্ডন থেকে এটা ওটা এনো বলিস।একবার বলে দেখিস তো আমার জন্য লাল রুদ্রপলাশ এনে দেবে?দিন চলতে থাকে।
আজ তাই আবেগে গেয়ে যায়
“আসে বসন্ত ফুল বনে, সাজে বনভূমি সুন্দরী
চরণে পায়েলা রুমুঝুমু মধুপ উঠিছে গুঞ্জরী
আসে বসন্ত ফুলবনে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress