( ১ )
ফেলটা তুমি হতেই পারো লজ্জা নেই তো তাতে ,
মানুষের মত মানুষটা হও বাঁচো দুধে ভাতে ।
নাইবা খেলে বিরিয়ানি, মটন চিকেন ললিপপ ,
পান্তা ভাতে লঙ্কা পেঁয়াজ আর মেখে নাও আলুরচপ ।
মানুষ কিন্তু হতেই হবে,পাস করাটা লক্ষ্য নয় ,
সমাজ বোনা শিখতে হবে,আসুক সাহস কাটুক ভয় ।
গুরুজনে মানতে হবে, জানতে হবে কর্মটা ,
প্রত্যয় থাক মানবতা,অটুট তবেই ধর্মটা ।
সত্যটা থাক হৃদয় মাঝে, ন্যায়ের কথা দুর্নিবার ,
অন্যায়টা অতীত এখন, পরাজয়েও নেইকো হার ।
পাশ যদি হয় মাথার পালক, ফেলটা তবে কলঙ্ক ,
ফেলুরামেই গড়বে সমাজ, সভ্যতাকে চলন্ত ।
বিবেকহীনের জাগুক বিবেক, দূর হয়ে যাক অন্ধকার ,
আসুক বিপদ রইবো পাশে, করব শপথ হাজার বার ।
পাশফেলটা কথার কথা, না থাকলেও নেই ক্ষতি,
প্রথম শর্ত মনুষ্যত্ব, বিনয়ী হোক সব মতি ।
বিনয়ী হোক সন্তানেরা, পিতা-মাতার নাড়ীর ধন ,
ভক্তি-শ্রদ্ধা ভালোবাসায়, দয়ালু হোক তাদের মন ।
বিলীনতায় বৃদ্ধাশ্রম, অনাথ শিশুর ছোট্ট হাত ,
সমাজ জুড়ে বাঁচবে মানুষ,নিপাত যাবে জাতও পাত ।
( ২ )
পাশ হল সব পেয়েছির দেশ
জলসা ঘরে রঙিন চিত্রলেখা
যুদ্ধ প্রেমে অসৎ পথের রেশ
ফেল ক’রে এক অদম্যতা শেখা ।
অদম্যতা সৃষ্টির উল্লাসে
মণিমুক্ত কুড়িয়ে চলার নাম
নিশ্চুপ মন ধুমকেতু নিঃশ্বাসে
মরুপথে স্নিগ্ধ মরুদ্যান ।
মরুদ্যানে মিঠে হ্রদ যদি পাই
উপন্যাসে লিখতে পারি সুখ
বিবর্তনে শুদ্ধ সমাজ চাই
পবিত্র প্রেম প্রকাশ্যে উন্মুখ ।
আত্মীয়দের আশীর্বাদী হাত
জীবন দানে সঞ্জীবনী সুধা
ভৃঙ্গারিকার সুখের বর্ষারাত
রংমিছিলে মে দিবসের ক্ষুধা ।
ক্ষুধা যখন অতৃপ্ততা আঁকে
পাশ করলেও ফেলেই পরাজয়
ছোট্ট খোকা একলা সুধায় মাকে
“সর্বহারা” কাদেরকে মা কয় ?
( ৩ )
সুবোধ ছেলে গোপাল পড়াশোনায় ভালো,
পাশের পরে পাশ দিয়েছে মায়ের চাঁদের আলো।
গোপাল এখন ইঞ্জিনিয়ার , বিলাতে ঘরবাড়ি,
বৃদ্ধা মা দেশেই থাকেন মলিন ছেঁড়া শাড়ি ।
আশ্রমে যেতে নারাজ , তাইতো একা ঘরে
দিনরাত্রি কাঁদেন শুধু ভোগেন পিত্ত জ্বরে !
ছেলের সুখে গর্বিত মা জীবনযুদ্ধে ফেল,
দ্বীপান্তরের বন্দী জীবন গরাদ ভাঙ্গা জেল ।
পড়াশোনায় বড্ড খারাপ রাখাল পিছে রয়,
ফেল করাটাই স্বভাবসিদ্ধ মায়ের পরাজয় ।
অভিযোগে বিদ্ধ সবাই বাড়ির গুরুজন,
দিবস কাটে দুশ্চিন্তায় অশান্ত মা’র মন ।
দেখতে দেখতে রাখাল যুবক দিন কেটে যায় মাঠে,
মাটি কাটে ফসল ফলায় সূর্য নামে পাটে ।
রাখালের মা সাথেই থাকে সঙ্গে পরিবার,
জীবনযুদ্ধে পাশ হয়ে যায় পুত্র মনিহার ।
গোপালের মা’র ভরসা এখন রাখাল নয়নমণি,
মানুষের মতো মানুষ সে যে, যেন সোনার খনি ।
জীবন পাশের শেষ হাসিটা রাখাল হাসে বটে,
ঊর্মিমালার জলোচ্ছ্বাস আছড়ে পড়ে তটে ।