Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পাতাল-খন্দক || Syed Mustafa Siraj » Page 3

পাতাল-খন্দক || Syed Mustafa Siraj

বিপ্রদাস মুখুয্যে রাজবাড়ির একতলায় ড্রয়িং রুম বা হলঘরের পাশের ঘরে থাকেন। চিরকুমার বলেই তাকে সবাই জানেন। বয়স প্রায় সত্তরের কাছাকাছি। কিন্তু এখনও শক্তসামর্থ মানুষ। স্বপাক খান। নিত্য প্রাতঃভ্রমণের অভ্যাস আছে। সকালে বাইরে থেকে হাঁটাচলা করে এসে ঘরে ঢুকেছেন, এমন সময় জয়া এল।

জয়া বলল, “কাল রাত্তিরে আমাকে ডেকে পাঠিয়েছিলেন কাকাবাবু। কিন্তু ভীষণ মাথা ধরার জন্য চুপচাপ শুয়েছিলুম। রাগ করেননি তো?”

বিপ্রদাস একটু হেসে সস্নেহে বললেন, “তোমার ওপর রাগ কখনও যে হয়নি, এমন কথা বলব না। তবে কাল রাত্তিরের জন্য রাগ করিনি। রঙ্গিয়া বলেছিল, তোমার শরীর খারাপ।”

জয়া আস্তে বলল, “কেন ডেকেছিলেন কাকাবাবু?”

বিপ্রদাস গম্ভীর হয়ে জানালার বাইরে মিনিটখানেক তাকিয়ে থাকার পর বললেন, “তুমি কলকাতা থেকে একজন ডিটেকটিভ আনিয়েছ”

জয়া দ্রুত বলল, “ডিটেকটিভ! কে ডিটেকটিভ?”

“সে কী! তুমি–তাহলে যে বিজয় বলল, তুমিই বলেছিলে ওকে প্রাইভেট ডিটেকটিভ আনিয়ে শরদিন্দুর মৃত্যুর ব্যাপারটা তদন্ত করতে! তাই সে ওই ভদ্রলোককে নিয়ে এসেছে।”

জয়া অবাক হয়ে বলল, “ওই বুড়ো ভদ্রলোক বুঝি ডিটেকটিভ? ছোড়দা আমার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলে সাম কর্নেল বলে। উনি নাকি রিটায়ার্ড মিলিটারি অফিসার। পাখিপ্রজাপতি এসব নিয়ে প্রচণ্ড হবি। কানাজোলে নাকি কানা প্রজাপতি আছে। তাই দেখতে এসেছেন। তবে কথাটা আমার বিশ্বাস হয়নি। প্রজাপতি কি কানা হয়?”

বিপ্রদাস হাসবার চেষ্টা করে বললেন, “কাল সন্ধ্যায় বিজয়ের সঙ্গে এসেছেন ভদ্রলোক। সামান্য আলাপ হয়েছে। তখন ভেবেছিলুম বিজয়ের পরিচিত উনি। কানাজোলে বেড়াতে এসেছেন ওর সঙ্গে। পরে বিজয় আমাকে চুপিচুপি বলল, ভদ্রলোক বিখ্যাত ডিটেকটিভ। তোমারই তাগিদে শরদিন্দুর ব্যাপারটা–যাই হোক, তুমি যখন কিছু জানো না, তখন বুঝতে পারছি, শরদিন্দুর মৃত্যু সম্পর্কে বিজয়ের মনে কোনো সন্দেহ আছে।”

“সন্দেহ তো আমারও আছে!” জয়া শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে বলল। “কিন্তু সেজন্য গোয়েন্দা ডাকার কথা আমি ভাবিনি। ছোড়দা কেন মিথ্যে বলল আপনাকে? সত্যি কথাটা বলতে পারত।”

“হয়তো আমি ওকে বকব ভেবে তোমার নাম করেছে।”

“আমাকে বুঝি আপনি বকতে পারেন না?”

বিপ্রদাস একটু হাসলেন, “পারি। কিন্তু বকলেও তো তুমি আমার কথা শুনবে না। তাই বিজয় তোমার নাম করেছে। যাই হোক, এ নিয়ে আর মাথাব্যথা করে লাভ নেই। ছেড়ে দাও।”

জয়া একটু চুপ করে থেকে বলল, “ব্যাপারটা টের পেলে বড়দা ভীষণ রাগ করবে। আমার ভয় হচ্ছে, বড়দা ওই ডিটেকটিভদ্রলোককে না অপমান করে বসে।”

বিপ্রদাস গম্ভীর হয়ে বললেন, “হ্যাঁ–তাও ঠিক। আমার মতে, জয়কে কথাটা বোলো না। আমিও বলব না। আর বিজয়কেও নিষেধ করে দেব। ওকে একবার পাঠিয়ে দাও তো!”

“ছোড়দা কর্নেল ভদ্রলোককে নিয়ে বেরিয়ে গেছে ভোরে। এখনও ফেরেনি।”

বিপ্রদাস স্বগতোক্তির ভঙ্গিতে বললেন, “হু কানাপ্রজাপতি দেখাতে।”

জয়া চলে আসছিল। বিপ্রদাস হঠাৎ ডাকলেন, “জয়া শোনো!”

জয়া ঘুরে দাঁড়াল।

বিপ্রদাস একটু ইতস্তত করে বললেন, “আমি দুদিনের জন্য একটু ভাগলপুর যাব। জরুরি দরকার! একটা জিনিস তোমার কাছে রেখে যেতে চাই। জিনিসটা খুব দামি। তুমি গোপনে লুকিয়ে রাখবে। কেমন?”

জয়া মাথাটা একটু দোলাল, বলল, “আপনি কখন যাবেন?”

“এখনই।” বলে বিপ্রদাস তাঁর হাফহাতা পাঞ্জাবিটা তুলে কোটের কাছ থেকে একটা ছোট্ট কৌটো বের করে চাপা স্বরে বললেন, “এক্ষুনি লুকিয়ে ফেলো। সাবধান!”

জয়ার মুখে বিস্ময় ফুটে উঠেছিল। দম আটকানো তার হাত একটু-একটু কাঁপছিল। সে ভেলভেটমাড়া শক্ত এবং ছোট্ট কৌটোটা ব্লাউসের ভেতর চালান করে দিল।

বিপ্রদাস আস্তে বললেন, “ঠিক আছে লুকিয়ে রাখোগে। সাবধান!” বলে ব্যস্তভাবে একটা স্যুটকেস গোছাতে থাকলেন। জয়া বেরিয়ে এল ঘর থেকে। অন্দরমহলের ভেতরকার প্রাঙ্গণে ইঁদারা থেকে জল তুলছিল রঙ্গিয়া। সে জয়াকে লক্ষ্য করছিল না। কলাবতী রান্নাশালে বৈজু ঠাকুরের সঙ্গে কী নিয়ে তর্ক করছিল, তারাও লক্ষ্য করল না। রাজবাড়ি এই সকালে খুবই স্তব্ধ মনে হচ্ছিল। পায়রার বকবকম, কলাবতী-বৈজুর তর্ক, ইঁদারায় বালতির শব্দ সেই গভীর স্তব্ধতায় কোনো আঁচড় কাটতেই পারছিল না।

দোতলায় গিয়ে জয়া বড়দা জয়ের ঘরের দিকে তাকাল। জয়ের ঘরের দরজা বন্ধ। জয়ের এখন ‘চিড়িয়াখানায় থাকার কথা। নিজের ঘরে ঢুকে জয়া নিঃশব্দে দরজা বন্ধ করল। তারপর তার ইচ্ছে হল, কৌটোটা খুলে দেখে নেয় দামি জিনিসটা কী। কিন্তু লোভ সংবরণ করল অতি কষ্টে। সে ঠোঁট কামড়ে ভাবতে থাকল, এটা কোথায় লুকিয়ে রাখবে।

জয়া গণ্ডগোলে পড়েছিল। যেখানে রাখতে যায়, মনে হয়, সেখানটা তত নিরাপদ নয়। আলমারির লকার, পুরনো আমলের সিন্দুক, দেয়ালের গুপ্ত তাক, পালঙ্কের শিয়রের তলার বাকসো,–কোনো জায়গাই তার মনঃপূত হচ্ছিল না।

ঠিক সেই সময় দরজায় কেউ টোকা দিল। অমনি জয়া ঝটপট কৌটটা আবার ব্লাউসের ভেতর লুকিয়ে ফেলল! রাত্রে হলে সে জিগ্যেস না করে দরজা খুলত না। কিন্তু এখন সকাল প্রায় নটা। তাছাড়া এভাবে তার দাদারাই দরজায় নক করে তাকে ডাকতে পারে, যদিও সেকথা জয়া সে-মুহূর্তে ভাবল না। সে বরং বিরক্ত হয়েছিল। কিছুটা খাপ্পাও হয়েছিল। সেই ঝেকেই দরজা খুলে দিল।

দরজার ভারী পর্দা ফাঁক করতে গিয়ে জয়া বুকে ধাক্কা খেয়ে পিছিয়ে এল। টাল সামলানোর মুহূর্তে সে লোকটাকে একপলক দেখে নিল। ছাইরঙা স্পোর্টিং গেঞ্জির ওপর কালো একটা কুৎসিত মুখোশ। ঘরের ভেতরটা আবছা বলে এক সেকেন্ডের জন্য এর বেশি কিছু দেখা সম্ভব হল না এবং পরের মুহূর্তে ঝাঝালো অথচ মিঠে একটা গন্ধ টের পেল জয়া। তারপর অতল শূন্যতায় তলিয়ে গেল সে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress