পরমান্ন
পৃথিবীর যুদ্ধ শেষ হইয়াছে। বড়লোকেরা বড় হইতে পারিল না। গরীব’রাও গরীব হইতে পারিল না। কত দেশ নিশ্চিহ্ন হইলো, কত লোক মরিয়া গেল তাহার হিসেব কারো কাছে নাই। গোপালের বাবা মরিয়া গিয়াছে, তাই গোপাল খুব কষ্ট পাইয়াছে। তিন বছরের বোনটি বাঁচিয়া গিয়াছে। তাই গোপালের মনে আনন্দ হইতেছে। গোপালের মা এই যুদ্ধে হারিয়াও হারে নাই।
মোটা চালের ভাত ফুটিতেছে। গোপাল বুঝিল ভাতের গন্ধ কত মিষ্টি। বোনটিকে আহ্লাদ করিয়া গোপাল বলিয়া উঠিল, – আজ ভাত খাইবা। কাল তোমারে পরমান্ন দিমু।
একথা শুনিয়া কঙ্কাদেবী শত কষ্টের মধ্যেও হাসিয়া ফেলিলেন। গোপালকে ডাকিয়া বলিলেন,- পরমান্ন কোথায় পাই। গোপাল ইহাতে কর্ণপাত করিল না। আবার সুর করিয়া বলিতে লাগিল, – কাল তোমারে পরমান্ন দিমু।
গোপালের একটি মাত্র বন্ধু ঝুমা। ঝুমার একটি গাভী বাঁচিয়া গিয়াছে। ঝুমাকে মরিতে দেয় নাই গোপাল। হাতে একটি ঘটি লইয়া বড় বড়ির সম্মুখে আসিয়া ডাকিল,- ঝুমা এক ঘটি দুধ দিবি। এক মুঠি ছোট্ট গোলার গন্ধ চাল।
বারান্দায় আসিয়া ইস্তক ঝুমার আনন্দে চোখ ভরিয়া উঠিল। গরম দুধে ছোট্ট মুঠির গন্ধচাল ঢালিয়া কহিল, – বোন খাইবে, দুইটা বাতাসা ঢালিয়া দেই। গোপাল দেখিল চালগুলো ফুলিয়া উঠিয়াছে। ঘটি ছাড়াইয়া পরমান্নের গন্ধে চারিদিক ম ম করিতেছে। পুনরায় ঝুমাকে দেখিল গোপাল। পরিষ্কার বুঝিল পরমান্নের গন্ধ বারান্দা হইতে আসিতেছে।