Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » পথের ভিখিরি || Tarapada Roy

পথের ভিখিরি || Tarapada Roy

পথের ভিখিরি

কথায় বলে ‘লোকটা একেবারে পথের ভিখিরি হয়ে গেছে।’ সাধারণত এ রকম কথা বলা হয় যার সম্বন্ধে সে রেস বা জুয়া খেলে, কিংবা শেয়ার বাজারে ফাটকাবাজি করে অথবা নিতান্ত ভাগ্যবিপর্যয়ে সর্বস্বান্ত হয়ে গেছে। তবে ভাষাটা ঠিক সমবেদনার নয়। পথের ভিখিরি ভিখিরিদের মধ্যে সবচেয়ে নিচু জাতের।

পথের ভিখিরি নিয়ে গল্পের আদিঅন্ত নেই। এর মধ্যে অনেক কাহিনীই বহুশ্রুত। সুতরাং একটি অতি সম্প্রতি শোনা গল্প দিয়েই আরম্ভ করা উচিত হবে।

রাস্তার মোড়ে যথারীতি জনৈক ভিক্ষুক পথচারীদের কাছে পয়সা চাইছিল। তবে নিতান্ত পয়সা নয়, সে পুরো একটা টাকা চাইছিল পাউরুটি কিনে খাবার জন্যে। এক ভদ্রলোক পথ দিয়ে যাচ্ছিলেন, সেদিন কোনও কারণে তিনি খুব দিলদরিয়া হয়ে পড়েছিলেন। ভিখিরিটির প্রসারিত করতলে তিনি পকেট থেকে প্রথমে একটা এক টাকার কয়েন, তার পরে আরেকটা এক টাকার কয়েন, মোট দু’ টাকা বার করে দিলেন। টাকা দুটো গ্রহণ করে ভিখিরিটি বলল, ‘স্যার, আর একটা আধুলি যদি দিতেন।’ ভদ্রলোক থমকিয়ে গিয়ে বললেন, ‘কেন, দু’ টাকায় পাউরুটি হবে না? তুমি তো এতক্ষণ এক টাকা চাইছিলে পাউরুটি কেনার জন্যে।’ ভিখিরিটি করুণ মুখে বলল, ‘স্যার পাউরুটি নয়, আড়াই টাকা পেলে একটা কেক কিনে খেতাম।’ দাতা ভদ্রলোক অবাক হলেন, ‘পাউরুটি চলবে না, কেক খেতে হবে ?’ ভিখিরি সবিনয়ে বলল, ‘আজ একটা কেক খেতে পারলে ভাল হত স্যার, আজ আমার জন্মদিন কিনা।’

এই দুঃখজনক কাহিনীর পরে যতই পুরনো হোক দু’-তিনটে হাসির গল্প বলা প্রয়োজন।

সেই ভিখিরির কথা তো সকলেই জানেন যে আগে রাস্তায় একটা অ্যালুমিনিয়ামের থালা নিয়ে বসত, তাকে একদিন দেখা গেল সে দু’পাশে দুটো থালা নিয়ে বসেছে। তাকে নাকি জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, ‘কী হে, এতদিন একটা থালা ছিল, এখন দুটো থালা হল কী জন্যে ?’ বুদ্ধিমান ভিখিরি একগাল হেসে জবাব দিয়েছিল, ‘একটা ব্রাঞ্চ অফিস খুললাম স্যার।’

কিন্তু গরিব দীনদুঃখী ভিখিরিকে এসব প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করার সত্যিই কি কোনও মানে হয়?

এক কৃপণ ভদ্রলোকের কাছে এক অন্ধ ভিখিরি পঞ্চাশ পয়সা প্রার্থনা করে। ভদ্রলোক তীক্ষ্ণদৃষ্টিতে ভাল করে পর্যবেক্ষণ করে ভিখিরিকে জিজ্ঞেস করেছিলেন, কিন্তু তুমি কি পুরোপুরি অন্ধ? ভিখিরিটিকে চুপ করে থাকতে দেখে ভদ্রলোক বললেন, ‘আমার মনে হচ্ছে তোমার একটা চোখ খারাপ বটে কিন্তু আরেকটা চোখে বেশ দেখতে পাও।’ ভিখিরি বলল, ‘ঠিক আছে, আপনার কথাই ঠিক বড়বাবু, আপনি আমাকে তা হলে দুটো চোখের জন্য পঞ্চাশ পয়সা না দিয়ে একটা চোখের জন্য পঁচিশ পয়সাই দিন।’

অন্ধ ভিখিরির সমস্যার শেষ নেই। এক খঞ্জ ভিখিরির থালায় একটা সিকি দিয়ে দয়ালু মহিলা বলেছিলেন, ‘বাবা, তবু ভাল তুমি খোঁড়া, অন্ধ নও। তুমি তো চোখে দেখতে পাচ্ছ।’ ভিখিরিটি বলেছিল, ‘সত্যি বলেছেন মা, অন্ধ হলে বড় অসুবিধে হয়। অন্ধ হয়ে দেখেছি লোকে বড় বেশি অচল পয়সা দেয়।’

এর চেয়ে মারাত্মক অন্য এক ভিখিরি ও তার ভাইয়ের গল্প। গল্পটি শুধু মিথ্যে নয়, অবিশ্বাস্য। দুই ভাই একই রাস্তার দুই দিকে দুই মোড়ে ভিক্ষা করে। এক ভাই বোবা ভিখিরি, অন্য ভাই অন্ধ ভিখিরি। এক ভদ্রলোক বাড়ি থেকে বেরিয়ে রাস্তার মোড়ে এসে সেখানে দণ্ডায়মান অন্ধ ভিখিরির থালায় প্রতিদিন নিয়ম করে একটা দশ পয়সা দিতেন। সেদিন এসে দেখেন, মোড়ে সেই অন্ধ ভিখিরিটি নেই। তার জায়গায় অন্য একজন ভিক্ষুক থালা নিয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে।

স্বাভাবিকভাবে এই নতুন ভিক্ষুকের কাছে ওই ভদ্রলোক জানতে চাইলেন ‘এখানে যে অন্ধ ভিখিরিটি নিয়মিত দাঁড়ায় সে গেল কোথায়?’ নতুন ভিখিরিটি অম্লানবদনে জবাব দিল, ‘বাবু ওই অন্ধ ভিখিরিটি আমার ভাই। ও আজকে একটু সিনেমা দেখতে গেছে, ওই সামনের হলটায়। তাই আমি ওর জায়গায় ভিক্ষে করছি।’

দয়ালু ভদ্রলোক অন্ধ ভিখিরি সিনেমা দেখতে গেছে জেনে হতভম্ব হয়ে গেলেন, কিন্তু তাঁর বিস্মিত হওয়ার তখনও বাকি ছিল, কারণ নতুন ভিখিরিটি এর পরে আরেকটি প্রসঙ্গ যোগ করল, সে মধুর হেসে বলল, ‘আমি হলাম গিয়ে ওর দাদা, ওই সামনের মোড়ের বোবা ভিখিরি। আজ ও না থাকায় এখানে এসে দাঁড়িয়েছি।’

এর পরে পথের ভিখিরির কাহিনী আর বাড়াব না। শুধু অল্প কিছুদিন আগে আমারই বলা একটা খুচরো গল্প নিতান্ত কারণে পুনর্বার স্মরণ করছি।

পথের ভিখিরি অনেকসময় অনেক ভদ্রলোক হয়ে থাকে। কেউ পকেটমার হয়েছে বলে ব্যারাকপুর যাওয়ার ট্রেন ভাড়া প্রার্থনা করে, কেউ মুমূর্ষু রোগীর জন্যে ওষুধ কিনতে বেরিয়ে টাকা হারিয়ে প্রেসক্রিপশন হাতে ভিক্ষে করে, কেউ বা তেউনি জড়িয়ে গুরুদশায় সাহায্য চায়। এই রকম এক ভদ্রলোককে রাস্তায় ভিক্ষে করতে দেখে এক পথচারী তাঁকে চিনে ফেলেন এবং প্রশ্ন করেন, ‘আপনি ভিক্ষে করছেন? আপনি সেই ‘অর্থ উপার্জনের সহস্র পন্থা’ গ্রন্থের লেখক নন?’ ভদ্র ভিক্ষুক গম্ভীর হয়ে উত্তর দিয়েছিলেন, ‘সহস্র পন্থার মধ্যে এটাও একটা পন্থা।’

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *