০৪. বাড়ির বাইরে সাঁকোটা পেরিয়ে
বাড়ির বাইরে সাঁকোটা পেরিয়ে হঠাৎ পরান বলে উঠল, ভাবখানা মোরে তাজ্জব করলে। তোমারে ডাকতে যাওয়ার আগে কতা বললে, দশরথের ছেলে সেই কুমোরকে একটু ডেকে নিয়ে আয়।
মহিম আশ্চর্য হল না। কিন্তু পরানের বিরক্তি দেখে সে বিস্মিত হল। বিরক্তি নয়, পরানের কথার মধ্যে কতার বিরুদ্ধে যেন অভিযোগ রয়েছে; পরানের জীবনে এটা নতুন কি না জানা নেই, মহিমের কানে এটা নতুন।
আর কিছু না বলে প্রান ফিরল।
আকাশের একফালি চাঁদ ড়ুবেছে অনেকক্ষণ। জমাট অন্ধকার। কিছুক্ষণ আগে বোধ হয় সামান্য জল হয়ে গেছে। মহিম টের পায়নি। দিঘির কালো জলে নক্ষত্রের ঝাপসা রেখা দুলছে।
মনে পড়ল গোবিন্দের কাছে একবার যাওয়ার কথা। দৈনন্দিন আড্ডাস্থল সেটা মহিমের। ভক্ত গোবিন্দ। ভক্ত বললে বোধ হয় ভুল হবে, সাধক গোবিন্দ।
অন্ধকার, কিন্তু পথ জানা। মহিম এগুলো। কয়েক পা এগিয়ে সে থমকে দাঁড়াল।
সামনে মানুষ দাঁড়িয়ে আছে। ভয় পেয়েই মহিম অস্ফুট গলায় জিজ্ঞেস করল, কে?
আমি ভরত।
অ। তা—তুমি–
তা না এসে উপায় আছে নাকি আর কিছু। ভরত বলে উঠল, ঘরে তো থির হয়ে মোর দু দণ্ড বসবার জো নাই। তাকী, বিত্তান্তটা কী এতক্ষণ বাবুদের বাড়িতে?
মহিম বুঝল রাগটা ভরতের অহল্যার উপর। সে-ই তাকে উৎকণ্ঠিত হয়ে এখানে পাঠিয়েছে, কিন্তু কী কথা এতক্ষণ হল, কী বলবে সে ভরতকে। মহিমের কাজকে ভরত বলে, বনের মোয তাড়ানোর কাজ। কথাকে বলে, ফষ্টিনষ্টির বড় বড় কতা। আবার এ-ও ঠিক, এই ভাইটিরই জন্য গাঁয়ে ঘরে তার ঢাক পেটানো গলাবাজিও কম নেই, নেই গৌরববোধেরও কম। সামনে যা-ই হোক, আড়ালে মনের মধ্যে তার কোথায় যেন অনেকখানি শ্রদ্ধা এই ভাইটির জন্য সঞ্চিত আছে। আছে বিস্মিত ভালবাসা।
মহিম বলল, ওই হল নানান কথা। বাজে সব কথা।
মহিমও বলে বাজে কথা। ভরত বোঝে, এ হল তার মন জোগানোর আড়ে, তাকেই ঠাট্টা করা। আসলে তার ভাইয়ের কাছে যে সে সব কথা মোটেই বাজে নয়, সে কথা বোঝবার মতো বয়সের মিনসে সে হয়েছে। মনে মনে বলে, ছোঁড়া যদি এটুও খাতির করত। তা নয়, বলেছি বলে কেমন খোঁচাটা দিল।
বাজে নয় তো কী, কাজের কথা নাকি? গম্ভীরভাবে বলে ভরত।
অবাক করলে। আমিও তো তাই বলছি। অন্ধকারে মহিমের হাসি দেখতে পেল না ভরত।
বলবিই তো।
কিন্তু ভরতের মনে প্রবল কৌতূহল, কী এতক্ষণ ঘটল জমিদার বাড়িতে। না শুনলে তার পেটের ভাত হজম না হয়ে অস্বস্তি বাড়বে আর ছটফটানিতে কাটবে। তা ছাড়া, অনেক মানুষ যেমন আছে, কথাটি শুনেছ তো অমনি চাউর করো, ভরত খানিকটা সেই রকম। কথা সে যাই হোক, সাজিয়ে গুছিয়ে নিজের মতোটি করে নিয়ে চালু করবে সে। কৌতূহল ভরতের সেইখানেই বেশি, যখনই মনে হচ্ছে, কথাটা নিয়ে গাঁয়ে-ঘরে ঘুরে বেড়ানো যাবে খুব। আর সে রকম কথা হলে বুক ঠোকার বাহাদুরিটাও পাওয়া যাবে কম নয়।
বলছি এতখোন ধরে কথাটা কী হল? বলে দাঁড়িয়ে আছি তো সেই ক’ দণ্ডকাল ধরে। তারও খানিকটা উল্কণ্ঠা এসে পড়েছে মনে।
মহিমও বুঝল, মুখে যতই নীরস হোক, ভরতের মনে আছে উৎকণ্ঠিত ছটফটানি।
উৎকণ্ঠারই ব্যাপার। যাদের সঙ্গে জীবনের যোগাযোগের ক্ষেত্রে পাওয়া গেছে শুধু অপমান, উৎপীড়ন, যাদের সঙ্গে সম্বন্ধটা বুকে হাত দিয়ে বলতে গেলে অত্যন্ত তিক্ত, তাদেরই এ আকস্মিক ডাক কেন? প্রশ্নটা বিস্মিত এবং উৎকণ্ঠিত। নয়নপুরের কত মানুষের ডাক পড়েছে এমনি অতীতে কতদিন। এখন গল্প হলেও শোনা গেছে, সে ডাকে হাজিরা দিতে গিয়ে জোয়ান মরা অনেকে ফিরেও আসত না। যদি বা আসত, কথায় বলে বাঁশডলার রক্তাক্ত দেহ নিয়ে নিজের দাওয়াটিতে এসে চিরদিনের মতো চোখ বুজত। নয়নপুরের ওই প্রাসাদ, নয়নপুরের শতাব্দীর কোটি প্রশ্নের জবাবে মূক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। পাথরের কাছে জিজ্ঞাসা। পাথর কোনও দিন কথা বলেনি। ওই মৌন প্রাসাদ নয়নপুরের কাছে আজও বিভীষিকায়, ললাভে, হাসিকান্নায় এক বিচিত্র রহস্যের আড়ালে রয়ে গেছে। ওই প্রাসাদের মানুষের পরিবর্তন আজকাল চোখে পড়ে, প্রাসাদটার পরিবর্তন চোখে পড়েনি কোনওদিন, মানুষের নীরব প্রশ্নের জবাব পাওয়া যায়নি আজও।
শ্মশান পবিত্র, কিন্তু শ্মশানের আতঙ্ক কী দুনিবার। যেন কোন্ বিভীষণ রহস্যে ভরা, কণ্টকিত ভাবনায় মূঢ় করে দেয়, এনে দেয় আড়ষ্টতা।
ভরত উৎকণ্ঠিত হবে বই কী! নয়নপুরের মাটিতে যার জন্ম, নয়নপুরের ওই প্রাসাদ তো এক বিশিষ্টতা নিয়ে আছে তারও মনে। তার রক্তের ধারায় মিশে আছে ওই প্রাসাদের কথা, ওই রূপ। কোনও দিন যেখানে ডাক পড়েনি, না পড়াটাকেই সৌভাগ্যের কথা বলে জেনে এসেছে, সেখানেই ঘরের মানুষ প্রহর কাটিয়ে এল। উৎকণ্ঠা হবে না ভরতের? অহল্যার মুখে এ কথা শুনে প্রথমেই তার মনে যে উৎকণ্ঠা এসেছিল, তা-ই শেষটায় ক্রোধে পরিণত হয়েছিল তার। পরানের কথায় বিশ্বাস কেন করেছিল অহল্যা, আর মহিমই বা এক কথায় রাজি হয়েছিল কেন? জীবনে যাদের সঙ্গে কোনও দিন খাজনা, আর প্রভু-ভৃত্যের সম্পর্ক ছাড়া অন্য কারবার নেই, যাদের আহ্বানকে লোকে সন্দেহের চোখে দেখে, যেখানে লোকে যাওয়া অবাঞ্ছনীয় মনে করে—অমঙ্গলকর কিছু ঘটতে পারে বলে, সেখানে এ ভর সন্ধেবেলা ডাক পড়ার কী কারণ থাকতে পারে? . নয়নপুরের মানুষ মহিমও। তাই তো তার বোসেদের সাঁকো পেরিয়ে পাঁচিলের আড়ালে গিয়েই মনে হয়েছিল, যেখানে সে এল, সেখান থেকে নিজের ইচ্ছায় বুঝি আর কোনও দিন বেরুতে পারবে না। তাই তো তার সেই দ্বিতীয় মহলের অন্ধকার উঠোনে দাঁড়িয়ে মেয়েমানুষের হাসি শুনে কত উদ্ভট কথাই মনে হয়েছিল, মনে হয়েছিল—এখানকার বিচিত্র রহস্যের মতো পরানও বদলে গেছে বুঝি। শিউরে উঠেছিল সে।
তারপর মানুষের সঙ্গে কথা বলে সে ভুল তার ভেঙেছে, সহজ হয়েছে মন।
সহজ হয়েছে ভরতের মনও, যখনই মহিমকে পেয়েছে সে। তবু নিভে আসা উৎকণ্ঠার মধ্যেই কৌতূহল তার বেড়েই উঠল।
বলল, তা, বাবুরা ডেকে কী বললে, বলবি তো সেটা?
বলছিল পিতিমে গড়ার কথা বাবুদের বাড়ির।
হ্যাঁ? উল্লসিত মনে হল ভরতকে। বলল, তোরে চেনে তালে বাবুরা? অ, সবই জানে তালে, তোর ওই পুতুল-পিতিমে পড়ার কথা?
হ্যাঁ, তাই মনে হল।
মনে হল? ভাইটার কথায় উদাসীনতার বিদ্রূপের আভাস খুঁজে পেল ভরত। ছোঁড়া রেয়াত করে না মোটে। কিন্তু সে রাগ করল না। বলল, তা না হবে কেন? কত্তা তো শুনেছি খুব ভদ্দরনোক মানুষ। কলকেতায় থাকে কিনা? নেকাপড়ার গুণ আলাদা। আবার পাশ করা বউ এনেছে।
কথাটাতে চমকে উঠল মহিম। ও, গাঁয়ের সকলেই তা হলে উমাকে জানে। একমাত্র তারই জানা এতদিন সম্ভব হয়ে ওঠেনি। সত্যই, উমা তো আর পুরোপুরি অন্দরবাসিনী নয়। গাঁয়ের লোক তাকে চিনবে বই কী! এতে আশ্চর্য হওয়ার কিছুই নেই।
তা তুই কী বললি? গড়বি?
নিস্পৃহ গলায় বলল মহিম, না।
না? কথাটা অপ্রত্যাশিত। বরং ভরত ভেবেছিল, মহিম যা বললে সে দু-একটা খোঁটা দিতে পারবে ভাইকে। কিন্তু সেটা হত নিতান্তই মৌখিক। আসলে সে আচমকা ভয়ানক নিরাশায় খেপেই উঠল কথাটা শুনে।
না কেন বললি?
সময় কোথা? সময় নাই। আর পিতিমে গড়াও–আমার দ্বারা হবে না আর।
কেন? তাজ্জব হল ভরত। বলল, ওই দিয়েই তো তুই হাত পাকালি।
কথাটা শুনে রাগ হল মহিমের। দিন কি মানুষের সমান যায় গো, না, মনটা চিরকাল একরকমই থাকে! আজ যা মানুষের মন ভোলায়, কাল আর তা ভাল লাগে না। কবে কোকালে ঠাকুর গড়তে ভাল লেগেছে, তাই বলে অ-আ-ক-খ কি মানুষের চিরকালই পড়তে ভাল লাগে। মহিম বেদনা বোধ করে, রুষ্ট হয় ভরতের উপর। ভরতের কাছে শিল্পবোধের কোনও মূল্য নেই। জবাব দিল না সে।
ভরত বলল, ঠাকুরের মূর্তি তো তুই গড়িস, তবে পিতিমে গড়বি না কেন?
মন চায় না?
ভ্যালা রে তোর মন। প্রায় ধমকের মতো বলে উঠল ভরত। তা কেন চাইবে মন। এতে যে এট ঘরের সাচ্চয় হত। তা, তোর সইবে না।
আচমকা আঘাতে কেমন আড়ষ্ট হয়ে গেল মহিম। কথাটা নির্মম সত্য, কিন্তু বেদনারও। আরও কয়েকদিন মহিমকে সোজাসুজি না হোক প্রকারান্তরে এরকম কথা বলেছে। সত্যই, মহিম এখন বড় হয়েছে, সংসারের ভার তাকেও খানিক বইতে হবে বইকী! চিরদিনই কিছু আর এমনি স্বপ্নছায়ার তলে জীবন কাটবে না। মহিমও তা জানে। জানে বলেই বেদনা তার এত বেশি। এ বেদনাবোধের জন্যও আছে কিছু বিক্ষোভ। বেদনাই বা কেন? কেমন করে দিন চলে, কবে আর সে খবর রেখেছে। কবে আর ভেবেছে, কোনও দিনেকের তরে জীবনটাকে চালিয়ে নিয়ে যেতে তাকেও আর দশটা মানুষেরই মতো বাস্তবের জীবনযুদ্ধের পথে শরিক হতে হবে। ভাবতে হবে, কত ধানে কত চাল, স্বপ্ন দিয়ে পেট মানে না! সে তো পরম নির্ভরশীল, পরের কাঁধে ভর করে আছে। আজ না হোক কাল—একদিন না একদিন মুখের কথা খসবেই, আর সেই খসাতে যদি মুখের গরাস খসার কারণ হয়ে ওঠে, সেদিনের ভাবনা কি নয়নপুরের খালের জলে খাবি খেয়ে ড়ুবেই যেতে হবে? তা তো হবে না।
কিন্তু এ-ও আবার সত্য যে, ভরত বলে অনেক কথা, কিন্তু মহিমকে তার ভেতরের মনটার ছায়াতলে সে-ই তো রেখেছে ঘিরে। সাতে পাঁচে থেকেও সাতে পাচে না থাকার মতো মানুষ ভরত। মুখে অমন কত কথাই বলে সে। রাগের সময় রাগে, হাসির সময় হাসে। মনে যা আসে তাই বলে। আর না বললেই বা চলবে কেন? শত হলেও ছোটভাই তো! তা, সে সৎ হোক আর সহোদর হোক।
কিন্তু এখন মহিমকে চুপ করে থাকতে দেখে ভরত বুঝল, কথাটা লেগেছে মহিমের। ছোঁড়ার লাগেও আবার বেশি। কী এমন কথাটা বলেছে সে যে একেবারে গুম মেরে যেতে হবে। অন্যায় কথা তো কিছু বলেনি সে। বাবুদের বাড়ির পিতিমে গড়লে, কোন্-না আজ পঞ্চাশটা টাকা আসত ঘরে। কিন্তু ভাইয়ের তার সেদিকে টান নেই মোটে। উদাসীন বড়। উদাসীন থাকলে চলবে কেন চিরকাল? জীবনটারে নিতে হবে তো গুছিয়ে গাছিয়ে। যা, হিসেবি মানুষ ভরত। সেধে লক্ষ্মী আসতে যদি চায় ঘরে, তা সে কষ্ট স্বীকার করেও আনতে হবে। তার মানে, ভাই তার আপনভোলা হোক, কিন্তু পয়সার বেলা আপনভোলাগিরি চলে নাকি? তখন নাকি চলে একটু চনমনে না হলে?
বলল, রাগ করলি বুঝিন্?
না।
না কেন, রাগই তো করেছিস? কথাটা কিছু অন্যায্য বলছি বুঝি আমি? গুলা পঞ্চাশ টাকা তো—
মহিম শান্তভাবেই বলে উঠল, বলব বাবুদের। কথা ফিরিয়ে নিতে আর কতক্ষণ।
হ্যাঁ, কথা ফিরিয়ে নেবে না, ছাই করবে। বলে ফেলেছিস, চুকে গেছে। দেখা যাবে আবার বছর ঘুরলে। এরকম কথা বললেই আবার খটকা লাগে মহিমের। সে ঠিক বুঝতে উঠতে পারে না, কথাটা রাগের না অরাগের। বলল, তাতে কী হইছে, মান তো আর বয়ে যাবে না।
ভরত বলে উঠল—যাবে না তো কি? মুখের কথার দাম নেই নাকি? বাবু বলে তো পীর নয় তারা।
আশ্চর্য! লোকটা পাড়া ঘুরে ঝগড়া বিবাদ করে, ঠ্যাঙাঠেঙি করে, সদরে মামলা করতে ছোটে। বাড়িতে চেঁচায়, তম্বি করে, সে একরকম। বুঝতে কষ্ট হয় না। কিন্তু এ আবার কী? হঠাৎ মুখে একটা শব্দ করে থমকে দাঁড়িয়ে পড়ল ভরত। আমলো, এযে পশ্চিমপাড়ায় চলে আসছি।
এসেছে মহিম। আর কথার ফাঁকে ভুলে তাকে অনুসরণ করে চলে এসেছে ভরত।
তোর বউদি বোধ হয় আবার এতক্ষণ হা হুতোশ করছে, ফিরে চল তাড়াতাড়ি।
পশ্চিমপাড়ার শেষ সীমানায় গোবিন্দের ঘর। বৈষ্ণবী বনলতাদের আখড়ার কাছাকাছি।
মহিম বলল, এসেই পড়ছি যখন, একবার ঘুরে আসি গোবিন্দের কাছ থেকে।
হ্যাঁ, তা না হলে আর পাগলের মেলা জমবে কেন? ভরত ধমকে উঠল, চল চল, সে আবার ভাত নিয়ে বসে আছে।
গোবিন্দকেও ভরত পাগল মনে করে। যেমন পাগলা মনে করে বামুনদের গৌরাঙ্গসুন্দরকে, তেমনি। কারণ এসব লোক তথাকথিত পাগলের মতো গালাগালি দেওয়া অথবা হিংস্র প্রকৃতির আর দশটা পাগলের মতো নয়। এরা নায় খায় শোয় হাসে কথা বলে, তবু এদের নাগাল পাওয়া দায়। বহু দূর ফারাক যেন রয়েছে এদের সঙ্গে আর সাধারণ মানুষগুলোর সঙ্গে। সংসারের মধ্যে থেকেও এরা সংসার থেকে দূরে। ভরত বলে পাগল, কিন্তু ওদের পাগলামো সমীহ জাগায়, মানুষের দৈনন্দিন জীবনের নীচতায়-হীনতায় কলহে ঝগড়ায় ওরাই একমাত্র শান্তির ধ্বজাধারী। পাগল বলে, কিন্তু বিদ্বেষ, উপেক্ষা, অসামাজিকতার সুর নেই তাতে।
তবু মহিম বলল, মোর পিত্যেশ করে বা বসে আছে গোবিন।
তা বলে এত রাতে যেতেই লাগবে, এমন কি কিছু লেখাপড়া আছে নাকি? দ্যাখো দেকি কাণ্ড!
বন্ধুত্ব বড় ভারী। দিনেকের তরে বাদ যায় না দুই বন্ধুর ক্ষণেকের মিলন। প্রতিদিনের দেখা, প্রতিদিনে নতুন করে আগ্রহ বেড়েই চলে, উদগ্রীব উদ্বেলতা, ব্যাকুল আবেগের সঙ্গে মিশে থাকে প্রতিদিনের মিলনের সময়টিতে। একে খানিকটা বলতে গেলে লোকচক্ষে বন্ধুত্বের বাড়াবাড়ি, ঈর্ষাকাতরও করে বইকী মানুষকে এ বন্ধুত্ব। বলতে ছাড়ে না লোকে যে, এটা খানিকটা নেড়ানেড়ির ভাবে ঢলাঢলি কাণ্ড। মনের মিলের হদিস সেই দেখন-চোখে এই দুজনে। তর্কবিতর্ক দৈনন্দিন, কাজেকর্মে আলাদা, অমিল যেন পর্বত সমান। তবু নিয়ত ছিলোম্মুখ সুতোটির কোনখানের গেরোটিতে যে এ শিল্পী আর সাধক বাঁধা—তা কেউ খুঁজে পায় না।
আজ সত্যিই ব্যতিক্রম দেখা দিল, যে ব্যতিক্রমের সূত্রপাত আজ জমিদার বাড়ির ডাক করেছে। রাত্রি অনেক হয়েছে, তৎসঙ্গে অহল্যার কথাও মনে পড়ল মহিমের। সে ভরতের সঙ্গে ঘরের দিকেই চলল। কিন্তু অত্যন্ত অস্বস্তি নিয়ে।