Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey » Page 57

নীলবসনা সুন্দরী || Panchkari Dey

মুন্সী সাহেবের সেই হত্যারাত্রির গতিবিধি সম্বন্ধে পূর্ব্বে দেবেন্দ্রবিজয় মনিরুদ্দীনের নিকট কতক শুনিয়াছিলেন; তাহার পর এখন আবার মজিদ খাঁর মুখে সেই সম্বন্ধে যাহা শুনিলেন, তাহাতে মুন্সী সাহেবকেই হত্যাকারী স্থির করিয়া একরূপ কৃতনিশ্চয় হইতে পরিলেন। মুন্সী সাহেব ও সৃজান বিবির মধ্যে স্বামী-স্ত্রীর সম্বন্ধের পরিবর্ত্তে যে, সর্প-নকুল সম্বন্ধ স্থাপিত হইয়াছিল, তাহা প্রতিবেশীরা সকলেই জানিত। দেবেন্দ্রবিজয়ও তাহাদের নিকটে কিছু কিছু শুনিয়াছিলেন। এখন তিনি বুঝিতে পারিলেন, বিশ্বাস-হন্ত্রী এই নূতন ব্যভিচারের কথা কোন রকমে জানিতে পারিয়া মুন্সী সাহেব গোপনে স্ত্রীর উপরে লক্ষ্য রাখিয়াছিলেন। তাহার পর সুযোগমত সময়ে তাহাকে খুন করিয়াছেন।
দেবেন্দ্রবিজয় আরও ভাবিয়া দেখিলেন, কেবল সন্দেহ করিলে কোন কাজ হইবে না, মুন্সী সাহেব খুনের রাত্রিতে তাঁহার স্ত্রীর গলদেশ হইতে কণ্ঠহার ছিনাইয়া লইয়া কোথায় রাখিয়াছেন, তাহা এখন অনুসন্ধান করিয়া বাহির করিতে হইবে। যে ছুরি মজিদ খাঁর বাড়ীতে পাওয়া গিয়াছে, সে ছুরিতে যে এই খুন হয় নাই-তাহা নিশ্চয়। এখন ঘটনা আর এক ভাব ধারণা করিয়াছে। পূর্ব্বে যে সকল সূত্র অবলম্বন করিয়া কাজ করিতেছিলাম, তাহা এখন একান্ত নিরর্থক বলিয়া বুঝিতে পারিতেছি। যে বিষাক্ত অস্ত্রে সৃজান খুন হইয়াছে, তাহাও এখন সন্ধান করিয়া মুন্সী সাহেবের অধিকার হইতে বাহির করিতে পারি, তাহা হইলে তাঁহার নিজের দোষস্খালনের আর তখন কোন উপায়ই থাকিবে না। বিশেষতঃ মনিরুদ্দীন ও মজিদ খাঁর নিকটে তাঁহার সেই খুনের রাত্রির গতিবিধি সম্বন্ধে যতটা প্রমাণ পাওয়া যাইবে, তাহাতে আমি তাঁহাকে অতি সহজে দোষী সাবুদ করিতে পারিব। মুন্সী সাহেব যে নিজেই স্ত্রীর হত্যাকারী, সে বিষয়ে আর কোন সন্দেহ থাকিতে পারে না। এখন তাহার নিকট হইতে সেই কণ্ঠহার আর যে বিষাক্ত অস্ত্রে তিনি সৃজানকে খুন করিয়াছেন, তাহা এখন অনুসন্ধান করিয়া বাহির করা চাই; কিন্তু তিনিই যদি প্রকৃত হত্যাকারী হইবেন, তাহা হইলে সেদিন সৃজান বিবির সন্ধানে আমাদের সঙ্গে ফরিদপুরে গিয়াছিলেন কেন? এখানে দেবেন্দ্রবিজয়ের মনে একটা খটকা লাগিল, বড় গোলমালে পড়িলেন। একবার ইচ্ছা হইল, অরিন্দম প্রদত্ত সেই বাক্সটি ভাঙিয়া দেখেন, তন্মধ্যে অরিন্দম বাবুর হস্তাক্ষরে কোন্ নিরীহ (?) ব্যক্তির নামটি লিখিত রহিয়াছে-কে সৃজান বিবির হত্যাকারী। কিন্তু তাহা তিনি করিলেন না। ক্ষণেক চিন্তার পর আপন মনে বলিলেন, “কিছু নয়-মুন্সী সাহেবই প্রকৃত হত্যাকারী-নিশ্চয় এই বাক্সের মধ্যে তাঁহারই নাম লিখিত রহিয়াছে। মুন্সী সাহেব নিজের অপরাধ ঢাকিবার জন্যই সৃজান বিবির সন্ধানে আমাদের সহিত ফরিদপুরে গিয়াছিলেন। মনে করিয়াছিলেন, এরূপ করিলে কেহ তাঁহাকে সন্দেহ করিতে পারিবে না। সেখানে গিয়া যে সৃজানকে দেখিতে পাইবেন না, তাহা তিনি নিজের মনে বেশ জানিতেন। কেবল নিজের অপরাধ গোপন করিবার জন্য তিনি এইরূপ কৌশল অবলম্বন করিয়া থাকিবেন।”
দেবেন্দ্রবিজয় মুন্সী সাহেবের সহিত দেখা করিতে বাহির হইলেন। সেই পথে মনিরুদ্দীনের বাড়ী। যাইবার সময়ে একবার মনিরুদ্দীনের সঙ্গে দেখা করিয়া যাইতে মনস্থ করিলেন। বহির্ব্বাটীতেই মনিরুদ্দীনের সহিত তাঁহার দেখা হইল। সেখানে আর কেহ ছিল না।
দেবেন্দ্রবিজয় দেখিলেন, অত্যন্ত চিন্তা-গম্ভীর মুখে মনিরুদ্দীন একাকী বসিয়া আছেন। তাঁহার মুখমণ্ডল যেমন গম্ভীর, তেমনই বিবর্ণ। এবং বিশৃঙ্খলভাবে কতকগুলা চুল ললাটের উপরে আসিয়া পড়িয়াছে।
দেবেন্দ্রবিজয়কে গৃহপ্রবিষ্ট দেখিয়া মনিরুদ্দীন রুক্ষস্বরে জিজ্ঞাসা করিলেন, “কি মনে করিয়া আবার? এবার দিলজানকে গ্রেপ্তার করিয়া লইয়া যাইতে আসিয়াছেন না কি?”
দেবেন্দ্রবিজয় খুব সংক্ষিপ্তভাবে বলিলেন, “না।”
মনিরুদ্দীন কহিলেন, “না কেন?’
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “আমি ত সেইদিনই আপনাকে বলিয়াছি, তাহার কথা আমার বিশ্বাস হয় নাই; কেবল আপনাকে এই বিপদ্ হইতে রক্ষা করিবার জন্য দিলজান এরূপভাবে খুন স্বীকার করিয়াছে। তাহার ধারণা, আপনার দ্বারাই খুন হইয়াছে।”
মনিরুদ্দীন কহিলেন, “তাহার ধারণা যাহাই হউক-আপনার ধারণা কি?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “আপনি সম্পূর্ণ নির্দ্দোষ।”
মনিরুদ্দীন জিজ্ঞাসা করিলেন, “কিরূপে আপনি বুঝিতে পারিলেন, আমি সম্পূর্ণ নির্দ্দোষ?”
দেবেন্দ্রবিজয় বলিলেন, “এখন আমি প্রকৃত হত্যাকারীর সন্ধান পাইয়াছি। আমি খুব সাহস করিয়া বলিতে পারি, নিশ্চয় তিনিই সৃজানকে খুন করিয়াছেন।”
ম। কে-মুন্সী সাহেব?
দে। হাঁ-মুন্সী সাহেব নিজে।
ম। আমিও তাহাই ভাবিয়াছিলাম। তিনি সৃজানকে ইদানীং ঘৃণা করিতেন।
দে। ইহার কারণ?
ম। কারণ অনেক। দেখুন-দেবেন্দ্রবিজয় বাবু, আমি জিতেন্দ্রিয় মহাপুরুষ নই-এমন কি সাধারণ লোকের অপেক্ষাও আমার অন্তঃকরণ নীচ; কিন্তু কি করিব? আমার হৃদয় যেরূপ দুর্ব্বল-তাহাতে কোন প্রবৃত্তিকে বশে রাখা আমার সাধ্যাতীত-চেষ্টা করিয়াও তাহা পারি নাই; কেবল আমি কেন-আমার বোধ হয়, অনেকেই এরূপ প্রলোভনের হাত এড়াইতে পারে না।
দে। অবশিষ্ট জীবনটাও কি এইরূপভাবে অতিবাহিত করিবেন?
ম। না-সে ইচ্ছা আর আমার নাই। এখন হইতে যাহাতে সৎপথে চলিতে পারি, সেজন্য সর্ব্বতোভাবে চেষ্টা করিব। আমি এবার বিবাহ করিব, স্থির করিয়াছি।
দে। পাত্রী কে?
ম। দিলজান। দিলজান যে আমাকে এত ভালবাসে, তাহা আমি পূর্ব্বে জানিতাম না। যদিও আমি তাহাকে দেখিয়াও দেখিতাম না; কিন্তু সে অদ্যপি অগাধ বিশ্বাসের সহিত আমার উপরে নির্ভর করিয়া আসিতেছে; কিন্তু আমি কেবল তাহাকে প্রবঞ্চিত করিতেই চেষ্টা করিয়াছি। এমন গভীর প্রেম যাহার, তাহাকে উপেক্ষা করিয়া আমি যে কি ভয়ানক অপরাধ করিয়াছি, সেজন্য আমার মনে এখন অত্যন্ত অনুতাপ হইতেছে। যতদিন না আমি তাহাকে বিবাহ করিয়া তাহার বিষন্ন মুখে হাসি আনিতে পারি, ততদিন কিছুতেই আমার চিত্ত স্থির হইবে না।
দে। তবে আর বিলম্ব করিতেছেন কেন।
ম। দিলজান বড় পীড়িত-ঈশ্বর যদি এখন রক্ষা না করেন, হয়ত সারাজীবন এই অনুতাপ আমাকে হৃদয়ের মধ্যে পোষণ করিতে হইবে।
দে। দিলজানের কি অসুখ করিয়াছে?
ম। দিলজান এখন উন্মাদিনী-তাহার মস্তিষ্ক একেবারে বিকৃত হইয়া গিয়াছে। সেই মূর্চ্ছাভঙ্গের পর হইতেই তাহার এইরূপ শোচনীয় অবস্থা।
দে। তাই ত-দিলজানের এরূপ অবস্থা, বড়ই দুঃখের বিষয়। এখন হইতে বিধিমতে চিকিৎসা আরম্ভ করুন।
ম। হাঁ-খুব চেষ্টা করিতেছি; চিকিৎসায় কোন ফল হইতেছে না। দিলজান দিনরাত কেবল প্রলাপ বকিতেছে।
এই বলিয়া মনিরুদ্দীন ললাটে হস্তার্পণ করিয়া নিতান্ত বিষন্নভাবে মুখ নত করিয়া রহিলেন। দেবেন্দ্রবিজয় আর কিছু না বলিয়া সেখান হইতে বাহির হইয়া পড়িলেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28 29 30 31 32 33 34 35 36 37 38 39 40 41 42 43 44 45 46 47 48 49 50 51 52 53 54 55 56 57 58 59 60 61 62 63 64 65 66

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *