Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » নব জন্ম || Moksuda Halim

নব জন্ম || Moksuda Halim

নব জন্ম

আমার শরীরের মধ্যে একটা যন্ত্রণা অনুভব করলাম। যন্ত্রণাটা ক্রমেই বাড়তে লাগলো , আমি যার সঙ্গে লেগে ছিলাম, সেটা ছেড়ে দিয়ে খসে পড়লাম। আমার চারদিকে অনেক লোকজন দাঁড়িয়ে ছিলো । একজন বলে উঠলো , ” কি হলো কবিরাজ সাহেব , আপনার জোঁক তো খসে পড়লো !” একজন লোক –সম্ভবত কবিরাজ, বললো , ” আরে ভাই , জোঁকের ধর্মই হলো শোষণ করা , তা সে মানুষ রূপীই হোক অথবা কীট । দেখেন না কি হয় !” আমি যার সঙ্গে এতোক্ষণ লেগে ছিলাম সে দুষিত ক্ষত সহ একজন ক্লীস্ট মানুষ । আমি বুঝে শুনেই তাকে শোষণ করা শুরু করেছিলাম। হায়রে , নির্বোধ কীট ! এখন যন্ত্রণায় মর ! মানুষের ভালো করতে গিয়ে যন্ত্রণা ডেকে এনেছি । এখন তো ছেড়ে দিয়েছি , এখন তো যন্ত্রণা কমার কথা । কিন্তু যন্ত্রণা কমলোতো না-ই বরং আরো বেড়ে গেলো। গা কুঁকড়ে ছোট করে আবার বড় করলাম, নিজেকে উলটে দিলাম, একবার ডিকবাজীও খেলাম। কিন্তু না। কিছুতেই যন্ত্রণা কমছে না। শেষে অসহ্য হওয়াতে এই দেহ কুঠুরি থেকে বের হতে মনস্থ করলাম। আর মনস্থির হতেই বের হওয়ার পথ খুঁজতে লাগলাম। অন্ধকার কুঠুরিতে কিছুই দেখা যায় না। খুঁজতে খুঁজতে অবশেষে একটা সুড়ঙ্গপথ পেলাম। অন্ধকার সুড়ঙ্গের ওপাশ থেকে আবছা আলো দেখা গেলো। আমি সেদিকে ছুটতে লাগলাম। একটা বাঁক ঘুরতেই সুড়ঙ্গ মুখের উজ্জ্বল আলো ঝাঁপিয়ে পড়লো গায়ে । আমি বাইরে বের হয়ে এলাম।

যেসব লোক আমাকে ঘিরে দাঁড়িয়ে ছিলো। একজন বলে উঠলো , “যাহ, জোঁকটা দেখছি মরে গেলো” “তা মরুক, ওটা তো একটা কীট। কিন্তু দেখো, দুষিত রক্ত শোষণ করে নেওয়ার ফলে এই প্রাণটা বেঁচে গেলো!” যার গায়ের সঙ্গে এতক্ষণ লেগেছিলাম, দেখলাম সে নড়েচড়ে চোখ মেলে তাকালো। সামনেই আমার দেহটা কুঁকড়ে পড়ে আছে। একজন একটা কাঠি দিয়ে সেটাকে খোঁচাতে লাগলো। কে যেন বললো, “জোঁকটাকে গর্তে পুঁতে ফেলো।” পুঁতে দেবে! আমার দেহ পুঁতে দেবে—আমি হাচড়ে পাঁচড়ে এগিয়ে যেতে চাইলাম। কিন্তু এ কি! আমি কিছুতেই এগুতে পারছি না। ঐ সামনের পৃথিবী- আমার দেহাবশেষ- লোকজন—সবকিছু যেন হঠাৎ করেই ফ্রিজ হয়ে গেলো। যেন একটা ফ্রেমে বাঁধানো ছবি, যা- আমার কাছ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সে কি! আমি কি পিছিয়ে যাচ্ছি! আবার পরিচিত ঐ পৃথিবীর দিকে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলাম। ব্যর্থ চেষ্টা! কে যেন বললো, “ওদিকে আর যাওয়া যাবে না। পৃথিবীতে তোমার অবস্থানের শেষদৃশ্য ঐযে সামনে দেখতে পাচ্ছ, একটু পরে সেটাও আর পাবে না। সময়ের স্রোতে তুমি এখন পৃথিবীর বাইরে।” কে বললো? আমি আশেপাশে তাকালাম। দেখলাম, অসংখ্য প্রাণ-কনিকা মালার মতো সারি দিয়ে ভাসছে, আর ভাসতে ভাসতে পৃথিবী থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। সামনের দিকে আরো নতুন নতুন প্রান-কনিকার ঢেউ আসছে—ক্রমাগত আসছেই। যেন সমুদ্র ঊর্মি! আমি ঘুরলাম। এদিকে আরো ঢেউ!-যারা আমার আগে এসেছে। একই সময়ে যারা এসেছে, তারা একসঙ্গে মুক্তোর মালার মতো সারি বেঁধে চন্দ্রাকারে ভেসে চলেছে।
“কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
“তোমরা যাচ্ছ কারবিতে।”
“কারবি! সেটা আবার কি?”
“কারবি একটা বিশাল অবস্থান।”
“কি হবে সেখানে?”
“সেখানে তোমাদের কর্মফল পরিমাপ করা হবে।”
কর্মফল! হায়- আমি একটা নগণ্য কীট। সারা জনম পচাকাদা ঘেঁটে বেড়িয়েছি। আমার আবার কর্মফল!
“তারপর কি হবে?”
“তারপর তোমাদের কর্মফল অনুযায়ী যার যার গন্তব্যে পৌঁছে যাবে।”
আমার সারি ভাসতে ভাসতে এগিয়ে যাচ্ছে। সামনের সারি, পিছনের সারি-সব একই দিকে চলেছে। এক সময় মনে হলো, বিশাল একটা জায়গা দিয়ে আমরা ধীরেধীরে উপরের দিকে চলেছি। সামনের পুরোভাগের সারিগুলো একে একে যেন মিলিয়ে যাচ্ছে। এরপরই আমি উপরে উঠে এলাম,তারপর আস্তে করে গড়িয়ে গেলাম।

এখন যে সারি ধরে চলেছি, সেটা আর মালার মতো নয়। লম্বালম্বি ভাবে—যেন একটা গোল সূর্য থেকে বের হওয়া হাজারটা রশ্মির মতো। অসংখ্য সারিতে ভাগ হয়ে সবাই চলতে ছুটতে শুরু করেছে। এইবার যেন প্রতিটা সারি কিছুটা আকৃতি লাভ করেছে। লম্বাটে, গোলাকার, চ্যাপ্টা, সরু, মোটা, আঁকাবাঁকা, কোনাচে—নানা আকারের অতি ক্ষুদ্রক্ষুদ্র প্রাণ কণিকা বিভিন্ন রঙে ও বিভিন্ন ঢঙে এগিয়ে চলেছে। আমি কোন সারিতে? সামনের জনকে দেখলাম, কেমন যেন ধুসর-সাদা,একটু লম্বাটে ধরণের আকার। বুঝলাম না কিছুই। মনে হচ্ছে যেন উড়ে উড়ে লাফ দিয়ে দিয়ে যাচ্ছে। এরপর হঠাৎ করে সব অন্ধকার।

কতদিন—না জানি কতদিনপর জীবনের অনুভূতি স্পর্শ করলো আমাকে। কিছুই দেখতে পাচ্ছিলাম না , শুধু একটা অনুভব। নিজেকে যেন আবিষ্কার করলাম একটা প্রশস্ত উপত্যকার উপর। চার দিকে মনে হলো উঁচুউঁচু পাহাড়, আকাশে উজ্জ্বল সূর্য। আহ! কতদিন পর উষ্ণতার ছোঁয়া পেলাম! ধীরে ধীরে নেমে এলাম সমতলে। মনেহল আমার আশে পাশে কিছু আছে। চলতে চলতে চারিদিকে জীবনকে অনুভব করতে লাগলাম। বায়ুর আনাগোনা, আকাশে-মাটিতে চলাচলের শব্দ। আরো এগিয়ে চললাম। ক্রমে সূর্য অস্ত গেলো আর প্রায় সঙ্গে মনে হলো তিনটে চাঁদ নিয়ে হেসে উঠলো আকাশ। বাতাসে অজানা ফুলের গন্ধ ভেসে এলো। কি আশ্চর্য! গন্ধই শুধু নয়- যেন আস্বাদ পেলাম! কেমন মাদকতাময় মধুর আস্বাদ! আমি শ্রান্তি অনুভব করলাম। এখন আমার ঘুম দরকার। খুব নিবিড় ঘুম। আমার চারদিকে এখন বড় বড় ভবন। আমি একটা ভবনের খোলা বড় গরাদহীন জানালা দিয়ে ভিতরে ঢুকে পড়লাম। একটু ঘুমানোর জায়গা চাই। এইখানে খুঁজতে খুঁজতে একটা কুঠুরি পেলাম। একটা কক্ষে নৃত্যরত প্রাণীর অস্তিত্ব অনুভব করলাম। আমি কুঠুরিতে ঢুকলাম এবং ঘুমিয়ে পড়লাম।

কতদিন ঘুমালাম কে জানে! একসময় ঘুম ভেঙে গেলো ক্ষুধায়। খাবার দরকার। আমি হা করে কিছু খেলাম। আবার ঘুমিয়ে পড়লাম। কিছু দিন পর আবার জেগে উঠলাম। ঘুরে ফিরে কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম। এরপর প্রায়ই আমার ঘুম ভাঙতে লাগলো। ক্ষুধাবোধ হল। আমি ঘুরে ফিরে খাবার হাতড়িয়ে খেতে লাগলাম। অন্ধকার কুঠুরিতে চারিদিকে হাতড়ে হাতড়ে আমার সময় কাটতে লাগলো। শেষে এই অন্ধকারে আর থাকতে ইচ্ছে হল না। বাইরের আলোকিত জগতের টান অনুভব করলাম। তা ছাড়া অন্ধকারে জেগে থাকাও বিরক্তিকর। বাইরে বের হবো মনস্থ করতেই আমি বের হওয়ার পথ খুঁজতে লাগলাম। অবশেষে খুঁজে পেলাম। সেখান দিয়ে বের হয়ে এলাম। কিন্তু এ কি! আমারতো দম বন্ধ হয়ে আসছে, শ্বাস নেওয়া দরকার! কিন্তু কি ভাবে নেবো? আমি চিৎকার করে উঠলাম আর সঙ্গে সঙ্গেই শ্বাস টেনে নিলাম। খুব কাছেই কে যেন বলে উঠলো,
“ এইমাত্র এখানে এক নব জাতকের জন্ম হলো!”

আমি চোখ মেলে তাকালাম। কয়েক জোড়া চোখ আমার দিকে চেয়ে আছে—আনন্দ আর ভালবাসায় উজ্জ্বল হয়ে। আমি আবার চিৎকার দিলাম, শ্বাস নিলাম। যতবার চিৎকার দিচ্ছি, ততবারই শ্বাস-প্রশ্বাস সহজতর হয়ে আসছে। চারিদিকে আবার তাকালাম। আমাকে কোলের কাছে নিয়ে একটি হাসি মুখ তাকিয়ে আছে আমার দিকে আনন্দিত আর গর্বিত ভাবে। কতই না সুন্দর সে মুখ! ঘরের মধ্যে কয়েকজন মানুষ। প্রত্যেকেরই গায়ের রঙ ধুসর সাদা। মাথায় ঘন কালো চুল, টানা চোখ। লম্বা সুগঠিত দেহ ঝলমলে পোশাকে ঢাকা। ছোট ছোট দুটো হাত। হাতের পিছন দিকে লম্বা দুটো পাখা,
…..পাখাওয়ালা মানুষ….!!!
….তবে কি আমিও………

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress