নতুন বছরে শপথ
দীপান্বিতা আর থেমে থাকবে না ঠিক করে। কিছু একটা করবেই।জীবনটাকে এভাবে নষ্ট হতে দেবেনা।
গরিবের মেয়ে দীপান্বিতা দ্বাদশ শ্রেণী পাস করার পর বাবা বিয়ে দিয়ে দেয়। দীপান্বিতার বাবা টিউশন করে সংসার চালায়। অভাবের কারণে পড়াতে না পারায় ভালো ছেলে হাতছাড়া করেননি। বড় ঘরের ছেলে তাই ধার করে বিয়ে দেয়। কিন্তু বিয়ের পর দীপান্বিতা দেখে স্বামী তার কাছ বিশেষ ঘেঁষে না, সারাদিন বাইরে কাটায়, এক একদিন রাতেও বাইরে থাকে।
শাশুড়ি সর্বক্ষণ খাটায়, মারধরও করে। বাপের বাড়ি যেতে দেয়না।
দীপান্বিতার অসহ্য লাগে।
একদিন দুপুরে লুকিয়ে পালিয়ে আসে বাপের বাড়ি। সব শুনে বাবা বলে, আর যেতে হবেনা ও বাড়ি।
রাতে স্বামী এসে নিয়ে যাবার জন্য ঝামেলা করলে পাড়ার ছেলেরা ঘটনা শুনে ধমকে তাড়িয়ে দেয়।
এরই মধ্যে একটি ছেলে বলে, আরে এই ছেলেটার বউ দীপান্বিতা কি করে হয়! এর তো বউ আছে। আমি কালকেও দেখেছি বউ,বাচ্চা নিয়ে ঘুরতে।
দীপান্বিতা শুনে বাবাকে বলে আমি ওকে ডিভোর্স দেবো, তুমি ব্যবস্থা করো।
আইনি জটিলতা সামলে বাবার এক প্রাক্তন ছাত্র, কোর্টের উকিল অনুপম বিশ্বাসের সাহায্যে ডিভোর্সটা হয়।
তারপর থেকে চেষ্টা একটা চাকরির। বছর পার হয়। নতুন বছরে দীপান্বিতার শপথ, যেভাবেই হোক চাকরি জোগাড় করবেই। প্রতিদিন চাকরির খোঁজে বেড়িয়ে; ভগ্ন মনোরথে ফিরে আসে।
একদিন বাড়ি ফিরছে, মুসলধারে বৃষ্টি। শুনশান রাস্তায় হঠাৎ একটা গাড়ি এসে দাঁড়ায়। দরজা খুলে বলে, আপনি দীপেন মাষ্টারের মেয়ে দীপান্বিতা না! চলে আসুন, আমি অনুপম। দীপান্বিতা সঙ্কোচ করে, তবু বৃষ্টির কারণে গাড়িতে ওঠে।
প্রথম দিন আদালতে দেখে দীপান্বিতাকে ভালো লাগে অনুপমের। গাড়িতে তেমন কোনো কথা হয়না, পৌঁছে দেয় বাড়ির সামনে।
একদিন অনুপম কোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে চা খাচ্ছে ,দেখে দীপান্বিতা রাস্তার ওপার দিয়ে যাচ্ছে। দৌড়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করে, “ওদিকে কোথায় যাচ্ছেন?”
দীপান্বিতা- চাকরির খোঁজে এসেছি। বাবার বয়স হয়েছে , তার উপর আমি বোঝা হয়ে আছি”।
মৃদু হেসে বলল, “আসলে আমি হাইয়ার সেকেন্ডারি পাস, তাই সুযোগ কম”।
অনুপম -” চাকরি খুঁজছেন? দেখি আপনার মোবাইল নাম্বারটা দিন। খোঁজ পেলে জানাবো, আমাদের কাছে তো কোম্পানির লোকও আসে”।
দীপান্বিতা ফোন নাম্বার দিয়ে গন্তব্যে এগিয়ে যায়।
সপ্তাহ পর ফোন আসে। হ্যালো, দীপান্বিতা ম্যাম বলেছেন? আপনার সিভি পেয়েছি। কাল সকাল দশটায় আমাদের অফিসে আসুন, ইন্টারভিউ আছে।
দীপান্বিতা – হ্যাঁ হ্যাঁ নিশ্চয় যাবো। ধন্যবাদ জানিয়ে ফোনটা রেখে দেয়।
পরদিন নির্দিষ্ট ঠিকানায় পৌঁছে দেখে অনুপম দাঁড়িয়ে।
চাকরিটা হয়।
অনুপমের পার্সোনাল এ্যাসিস্টেন্ট।
দীপান্বিতা কিছু বলতে যাবে, অনুপম বাঁধা দিয়ে বলে, “কোনো কথা নয়। মন দিয়ে চাকরিটা করতে হবে”।
দীপান্বিতা মনে মনে খুশি; তার শপথ পূর্ণ হলো। মাইনে চাহিদার তুলনায় অনেক বেশি।
কিছুদিন পর অনুপম প্রপোজ করে। দীপান্বিতা অতীত জীবনের কথা ভেবে এড়িয়ে যায়। অনুপম বোঝে। অনেক বুঝিয়ে রাজি করায়। পরে বাবা-মা’কে পাঠিয়ে বিয়ের তারিখ পাকা করে।