দিদিমাসির জিন (Didimasir Jin) : 15
এডিথের আজকাল নাম হয়েছে অদিতি। ভারতীয় নাগরিকত্ব পেতে তার আর বড় দেরি নেই। গঙ্গাপ্রসাদ আর তীর্ণা তাকে জোর বাংলা শেখাচ্ছেন। ফাদার জেনকিন্সও ছাড়ছেন না। তিনি ওকে স্যান্স্ক্রিটও শেখাবেনই শেখাবেন, পট্টাভিরাম শাস্ত্রীর শিষ্যের দক্ষিণী উচ্চারণ সমেত। গোপালগোবিন্দ, অশোক সাঁতরা শুধু-গোপাল, যশজিৎ সবাই-ই এখন এডিথের বন্ধু। তীর্ণা আর রাংতা তো বটেই। যশজিৎ এখন যেহেতু তার আঙ্কল দলজিতের ঘোর বিপক্ষে সেহেতু এডিথ তাকে আর ব্যাড ম্যান মনে করছে না। তবে এডিথের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু হলেন সরলাবালা বোস। তাঁর পাঁচালির আসরে এডিথ নিয়মিত উপস্থিত থাকে। তার চুলের রঙ, চোখের রঙ সরলাবালার মতো, ঠোঁটের ঢেউ, ভুরুর বাঁক সরলাবালার মতো, হাসি-কান্না তা-ও সরলাবালার মতো। তবে সবচেয়ে মিল দুজনের সাহসে আর উৎসাহে। অদিতি তার পোশাকি নাম। সরলা কিন্তু তাকে আদর করে ডাকেন— জিনু বলে।
সবে বসন্ত পড়তে শুরু করেছে। গাছের পাতা সব চকচকে। কাজলদের গোয়াবাগানের বাড়ির বাগানে নিমগাছের মগডালে বোকা কাক-কাকিনী বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। চড়ই শালিখ কোথা থেকে খড়কুটো এনে ঘর নোংরা করছে, এমন দিনে কাজলরেখা দিদিমাসির ফোন পেল।
—কি রে কাজলা, দেখা নেই কেন?
—আমার বুঝি কাজ নেই সংসারের?
তোর আবার কাজ নেই! গ্যাসটা জ্বালবি, বাটিটা চাপাবি, তাতে জলটা দিবি, গোটা কতক ডিম ফেলে দিবি, সেদ্ধ হলে ঠাণ্ডা জলে ছাড়বি, খোসা ছাড়াবি…
—আচ্ছা বাবা, আচ্ছা। কাজল কম্মের ঢিপি, এখন বলো কী করতে হবে।
—আয় না, একবারটি আয়!
কাজল বিকেল চারটের সময়ে পিচ রঙের পিওর সিল্ক শাড়ি পরল। কপালে ছোট্ট মেরুন টিপ দিল। কোমরে চাবির গোছা, নাকে হীরের নাকছাবি। নতুন কোলাপুরি চপ্পল পায়ে দিয়ে নদীয়ার দোকান থেকে দিদিমাসির জন্যে সরপুরিয়া-সরভাজা কিনে সে একটা রিকশা নিল।
দিদিমাসি পালং আলো করে বসে আছেন। রূপ যেন আরও খুলেছে। একগাল হেসে বললেন— কি রে? মান হয়েছে, মানিনীর?
—কাজলের মুখ ভার, ঠোঁট ফুলেছে, সে বলল, তুমি তো তোমার জিন পেয়ে আর সবাইকে ভুলে গেছো! আমাদের আর দরকার কী? আমরা বাবা তোমার জিনুর মতো সুন্দরীও নই আর বুদ্ধিমতীও নই, অত সাহসও আমাদের নেই।
তখন দিদিমাসি কাজলের থুতনি নেড়ে আদর করে বললেন :
তুই যে আমার প্রথম নাতনি
বাপের ঘরের আসল গাঁথনি
সুশীতলা বোনের স্মৃতি তুই যে সরোর আয়ি
তোমাকে না দেখলে সরোর পরাণ আই ঢাই।
তুমি আমার গ্যাসের আলো
তোমায় দেখলে থাকি ভালো
তুমি আমার বরফি গুঁড়ো মুড়কি মেখে খাই।
তোমাকে না দেখলে আমার প্রাণ করে আইঢাই॥
চোদ্দ মেয়ের মা হয়েছি তাতে হয়েছে কী?
আমার প্রথম মেয়ে সরেস মেয়ে, আর সকল মেয়ে ঝি!