এই তো আবার তুমি আগুন রঙের শাড়ি প’রে
দাঁড়ানো অথবা
ছড়িয়ে যুগল ঊরু ব’সে আছ গৈরিক ডিভানে,
তুমি, শুধু তুমি।
তোমার গ্রীবার জ্বলজ্বলে কালো তারা,
ঠোঁটের কার্নিশে জমে মদির শিশির।
চতুর্দিকে বস্তু ধু-ধু, চেয়ার টেবিল, বইপত্র
পোশাক-আশাক,
জানালায় হলদে পর্দা, রেডিওর নিস্পৃহ ঘোষক
রটাচ্ছে খবর মধ্যপ্রাচ্য, কম্বোডিয়া, দক্ষিণ ভিয়েতনাম,
সহসা সুকর্ন মৃত, মহান প্রেমিক।
এই তো আবার সেই তুমি, সব বস্তু, সব কিছু
ছাপিয়ে উঠেছ তুমি, নাইছ নিয়নে খুব, কোনো রাঙা
মিলনাঙ্গুরীয়
এগিয়ে দিইনি তবু মিলনের ইডেনে দুজন।
হৃদয় উজাড় করে তোমার একান্ত নাম ধরে
ডেকে ডেকে ডেকে ডেকে ওস্তাদের মতো
সারা পৃথিবীকে বস্তুহীন
একটি প্রগাঢ় সুরে মুঞ্জরিত করে দিতে ভারি
ইচ্ছে হয়েছিল। আমাদের
চৌদিকে বস্তুর ভিড়-বস্তুই তো মাঝে মাঝে মানবের
সংযোগ সাধনে
ঐন্দ্রজালিকের মতো অনুপম চাতুর্য দেখায়।
তোমাকে দেখছি আমি নিষ্পলক, তুমি
এখনও দাঁড়ানো;
যেন উদ্যানের সবচেয়ে তন্বী গাছটিকে কেউ
করেছে রোপণ এই তকতকে ফ্লোরে।
পুরো রাতদিন ধরে শুধু একটি শব্দের জন্যে
অশ্রান্ত ভ্রমণ করে একটি কবিতা কিছুতেই
শেষ করতে না-পারার দুঃখ,
বিকেল বেলায় কোনো হুলুদ বাড়ির কাছে একটি পাখিকে
শুকনো, মৃত প’ড়ে থাকতে দেখার দুঃখ,
সারাদিন ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে ঘুরে কারুর কাছেই
একটি পায়সাও ধার না পাওয়ার দুঃখ,
বিদেশী দূতাবাসের কাছে
একটি ছাত্রকে মুখ থুবড়ে পড়তে দেখে দুঃখ,
একজন বালককে পুকুরের কালো জলে ডুবতে দেখেও
তাকে বাঁচানোর ক্লীব উদ্যমহীনতা,
তার জন্যে দুঃখ,
নিমেষে গেলাম ভুলে তোমাকে দেখেই।