তিমির বিদার (Timir Bidar) : 06
প্রথম মাসের মাইনে পেয়ে দীপুকে জিজ্ঞেস করলাম—কী করবি রে টাকাটা নিয়ে?
—তোর ধারটা শুধব, তারপর বাকিটা বিড়ি খাব।
—মানে?
—মানে তোর জানবার দরকার কী রে শালা? বলেছি না প্রাইভেট ব্যাপারে নাক গলাবি না!
—মাসিমার হাতে কিছু দিবি তো!
—অভ্যেস খারাপ হয়ে যাবে।
—মানে?
—খাচ্ছিল তাঁতি তাঁত বুনে, কাল হল তাঁতির এঁড়ে গরু কিনে। শুনিসনি? আমি একটা এঁড়ে গরু ছাড়া কী? দু’তিনটে মাস পরেই তো পুর্নমূষিক। ইতিমধ্যে ছেলের কাছ থেকে টাকা পেয়ে হয়তো মহাজনদের কাজটা ছেড়ে দিল। কিংবা বোনেদের বিয়ের গয়না গড়াতে শুরু করে দিল। তখন?
—তা তুই কি চাস না মাসিমা কাজটা ছেড়ে দিন কিংবা বোনেদের বিয়ের ব্যবস্থা হোক।
—মায়ের হেলথ তো ভালই। মহাজনরা ভাল মাইনে দ্যায়। ব্যবহারও ভাল। করতে দোষ কী! আর বোনেদের বিয়ে? ও ওরা নিজেরাই ম্যানেজ করে নেবে। ওর মধ্যে আমি নেই। আমার টেম্পোরারি কাজের কামাই আমি ওদের চুড়ি, হারে খরচ করতে গেলুম আর কী!
কিছু বললাম না। মুখটা আমার নিশ্চয় তোম্বা হয়ে গিয়েছিল। ও সেদিকে দৃক্পাতও করল না। গুনে গুনে সাতশো টাকা আমার হাতে দিয়ে চলে গেল। আমার ধার শোধ আর কী! সেয়ানা পাগল, কলোরস ঠিকই বলেছিল।
দ্বিতীয় মাসের মাইনেটাও সুন্দর পেয়ে গেলাম। তারপরই আরম্ভ হয়ে গেল ব্যাপক ঝামেলা। গুহমজুমদারদের বাড়ির সামনে দিকে অনেকটা খোলা জায়গা। কিন্তু পেছন দিকে বাড়ি, হবি তো হ, আবার জগাদাদের সেই ধ্বংসস্তূপ। শুনলাম জগাদারা নাকি মামলা ঠুকে দিয়েছে সাততলা বাড়ি হলে যতটা জমি পেছনে খালি রাখতে হয় তা রাখা হয়নি।
চাকলাদার মোটরসাইকেল দাবড়ে একদিন এল, বলল—কাজ তো এখন বন্ধ থাকবে সাহেব। কতদিন বুঝতে পারছি না। তবু তোমরা এসো, সাইটটা চোখে চোখে রাখবে। এত মালপত্র। রাতে আমি সিকিওরিটির থেকে লোক নেব। তবে তোমাদের অত টাকা আর দিতে পারছি না। দু’জনকে হাজার-হাজার দু’হাজার দেব, মামলা চুকে যাক, তারপর আবার…
—এ কি সহজে চুকবে?
—সবই টাকার খেলা, আঙুলে টুসকি দিয়ে চাকলাদার বোঝাল।
আমার হয়ে গেল মহা রাগ। বেশ মাস-মাস তিন হাজার করে আসছিল। মা আর দাদার মুখ কম গম্ভীর। বউদির হাসি-তামাশা বৃদ্ধির দিকে। এমনকী রাস্তায় মুক্তার মুখে মেজাজে পর্যন্ত একটা আলগা ভাব লক্ষ করেছি, যেন টেনশন মুক্তির লালিত্য। সন্ধে সাতটায় ‘লা-বেল’ বন্ধ হয়। রাস্তায় আমায় দেখে একদিন বলল—‘রুণুদা, ভাল আছ?’ মুখটা সামান্য একটু হাসি-হাসি। আমি বললাম—বাপরে, মুক্তাদেবী কুশল প্রশ্ন করেছেন আর আমি ভাল থাকব না? আমার ঘাড়ে ক’টা মাথা!’
তা এ সবই তো দীপুর মাসান্তিক তিন হাজারের ফল। দীপুর থেকে ওর বোনগুলো অনেক সংবেদনশীল। টাকাগুলো দীপু সত্যিই ফুঁকে দেয় কিনা জানি না। দিক বা না-দিক, মেয়েগুলো চায় দাদা একটা কিছু পাক। কিছু একটা করুক।
সোজা পার্টি অফিসে চলে গেলাম। জগাদা বিরাজ করছে। গম্ভীর মুখে বললাম— আমাদের চাকরিটা শুধু শুধু খেলে জগাদা, অ্যাঁ? কেন, তোমায় কি বিঁধছিল।
—তোর… তোদের চাকরি… কী ব্যাপার বল তো।
—তুমি ভালই জানো, —আমি বিশদে যেতে চাই না।
জগাদা খুব একটা চিন্তার অভিনয় করল। তারপর বলল—ও হো হো ওই গুহদের বাড়িটার কথা বলছিস? শুধু শুধু কী রে? নিয়ম… কর্পোরেশনের নিয়ম—একেবারে মাপে মাপ যতটা উঁচু হবে ততটা বেশি জায়গা পেছনে রাখতে হবে। রেশিও আছে একটা। টুয়েন্টি পার্সেন্ট অব হাইট!
—তা ওদের বাড়ি তো আজ হয়নি, চার বছর আগে থেকে হচ্ছে। অবজেকশনটা তখন দিতে পারোনি? বাড়ির স্ট্রাকচার উঠে গেল, সাততলা কমপ্লিট হয়ে গেল, পজেশন নেবার জন্যে লোকে যাতায়াত করতে শুরু করেছে, এখন তোমার হুঁশ হল?
—আরে বোস বোস, মাথা গরম করিসনি। সত্যিই আমার খেয়াল হয়নি। অত জটিল কর্পোরেশানের আইন কানুনের ব্যাপার। তা ছাড়া যখন শুরু হয়েছিল বলেছিল ছ’-তলা করব। তলে-তলে সাতের ভিত করেছে।
—তোমার কথা বিশ্বাস করব এমন গ্যারান্টি দিতে পারছি না জগাদা। ইউ আর এ ট্রাব্ল-মেকার। ইচ্ছে করে করেছ সবটা।
—সে তুই যা-ই বলিস রুণু, ও সাততলা আমি ভাঙিয়ে ছাড়ব। আর তুই বিশ্বাস করিস না করিস, আমার এক শুভানুধ্যায়ী আমাকে পয়েন্ট আউট না করে দিলে, আমি বুঝতামও না। অ্যাকশনও নিতাম না।
—কে সেই শুভানুধ্যায়ী? নাম বলো।
জগাদা বললে—তুই যে ঘোড়ায় জিন দিয়ে এলি একেবারে। পার্টি-অফিসে আসলে সময় নিয়ে আসতে হয়। যেমন ওই বিশু মল্লিকের কাছে যাস! যাবি তিণমূলের কাছে, খবর চাইবি সি পি এম থেকে এমন তো হয় না সোনা!
—বা বা বা। জানো যে-মুহূর্তে কেউ ইলেকটেড হয়ে যাচ্ছে সে জনগণের কথা, দুঃখ-দুর্দশা শুনতে বাধ্য। বিশুদা নিতাইকাকা এরা আমাদের মানে জনগণের খিদমদগার।
—আমি তো নই বাবা!
—আলবত তুমি কেন না তোমার পার্টি, পার্টি ইন পাওয়ার।
—সেইজন্যেই তো ন্যায় বিচারের জন্যে মামলাটা ঠুকে দিলুম। তা, রুণু ওটা কি একটা চাকরি হল? ইট-বালি-সিমেন্ট পাহারা দিচ্ছিস! ছিঃ, তোদের মতো এডুকেটেড ছেলে! আমি নেক্সট ইলেকশনে আসছি, তারপর দ্যাখ না কী করি, আমার এলাকায় যেখানে যত শিক্ষিত বেকার আছে, চাকরি হোক, কিছু হোক—একটা পাবে। ঘরে ঘরে আনন্দের বাতি জ্বলবে, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন এলাকা। মন্ত্রী এলে আলাদা করে পরিষ্কার করাতে হবে না। বুঝলি? ঘাড় ধরে কর্পোরেশনের লোক দিয়ে কাজ করাব। বোমবাজি নেই। হিন্দু-মুসলমান, ধনী-গরিব নেই—সব এক রং—ভাই-ভাই। —এ আমার অনেক দিনের স্বপ্ন রে!
গালাগাল দিতে ইচ্ছে করছিল। মাকড়াটা মনের সুখে ডোজ দিয়ে গেল। আমিও মুখ হাঁ করে গিলে গেলাম। ‘ঘরে ঘরে আনন্দের বাতি’ ‘হিন্দু-মুসলমান ধনী-গরিব নেই’ কোত্থেকে মুখস্থ করে এসেছে বক্তিমেটা!
মুখটা আমার প্যাঁচার মতো দেখাচ্ছিল নির্ঘাত, কেন না শামু পার্টি-অফিসের মুখেই আমাকে ধরল—এ বে নিমপাতা চিবিয়েছিস?
—দ্যাখ শামু, ভদ্রলোকের ভাষায় কথা বলবি তো বল।
—গাণ্ডুটা তোকে কী সমঝাচ্ছিল রে? খেপচুরিয়াস হয়ে গেছিস?
—তোকে বলতে গেলাম আর কী! গুণ্ডা-দলের সর্দার একটা—
আমি ভাবছিলাম শামু এখানে কেন? কোনও স্বার্থ ছাড়া কি ও আসবে? শামু আমাকে খপাত করে ধরল। দেখলে বোঝা যায় না, কিন্তু এ ক্লাস স্টিলের কব্জাটা। বলল—এদিকে আয় শালা, তোকে আমার দু’-চারটে কথা বলার আছে। —আমার অনুমতির অপেক্ষা করল না। টেনে নিয়ে গেল একধারে, পার্টি-অফিসের সরু-নিচু দরজাটা ছাড়িয়ে বাঁদিকে, বেশ কিছু দূর, তারপর বলল—বল এবার কী বলছিলি!
—কিচ্ছু বলিনি, বলার ইচ্ছে নেই।
—যদি না বলিস তো শোন। যে-কথাগুলো আমাকে বললি, সেগুলো গদাকে বলতে পারবি? পারবি না। গাড়ি চড়ে ইলেকট্রিক জামা-কাপড় পরে ঘোরে। থোবড়াটা যেন চাঁদ থেকে নেমে এসেছে। তাই বলতে পারবি না। আমি শালা লুঙ্গি কোমরে তুলে পরি, বড় জোর একটা টেরিকটের সস্তা শার্ট-প্যান্ট, গুণ্ডার সর্দার! কেমন? তা আর কী বাকি রেখেছিস আমাদের জন্যে। একটা পাড়া দে, যেখানে নিশ্চিন্তে বাস করতে পারি, একটা চাকরি দে যেটা করতে পারি, একটা মানুষ দে যে মুসলিম পরিচয় শুনলে আঁতকায় না।
কেস খতরনাক হয়ে যাচ্ছে। অভিমান। রাগ। আমার মুখের নিমপাতা মুহূর্তে উবে যায়, মুখচোখ আর প্যাঁচা থাকে না। আমি বলি—আমি তো বি কম, দীপু তো প্রায় এম এসসি, চাকরি পেয়েছি? তুই তো মাধ্যমিক ফেল। ন্যায্য কথা বল শামু। তোদের মধ্যে যারা কোয়ালিফায়েড তারা চাকরি পাচ্ছে না? ইলেকশনে লড়ছে না? জিতছে না? ঠিক অন্য পাঁচজনের মতো চুরি আর দলবাজি করছে না? মুশকিল কী জানিস তারা তোদের জন্যে কিচ্ছু করছে না, কিচ্ছু না। সব বোঝে তোদের আঁতেলরা নিজেরা মানে না। কিন্তু তোদের মনে ভয়, ভক্তি জাগিয়ে রাখার ব্যাপারে কথাটি বলে না। আরে বাবা আমাদেরও তো পাণ্ডা ঠাকুররা বলে—পূজা দিস, একশো বিশ টংকার পূজা, পাপঅ হউচি। আমরা থোড়ি শুনি। একদল বোকা আছে। তারা মাছিমারা কেরানির মতো এগুলো ফলো করে যায়। কিন্তু ওই পর্যন্তই।
শামু বলল—চল কোথাও একটা গিয়ে বসি।
আমি আপত্তি করি না। খেলার মাঠে আমাদের কোথাও বিভেদ ছিল না, বিপদে আপদেও না, কিন্তু সামাজিক প্রশ্নে একটা সংকোচ একটা প্রত্যাখ্যান কি ছিল না? নেই? আমার খুব জানতে ইচ্ছে করে কী করে এ সব হয়। কে কী ভাবে, কেন ভাবে! আমার নিজস্ব কতকগুলো ভাবনা আছে ঠিকই, পর্যবেক্ষণও আছে। কিন্তু সেইগুলোকেই আমি অকাট্য বলে ধরে বসে থাকি না। খুব জানতে ইচ্ছে করে। চাকলাদারের চাকরিটা করতে গিয়েও জিনিসটা হয়েছিল। এখন শামুর কথাতেও হল।
বড় রাস্তায় পড়ে আমরা একটা ধাবায় ঢুকে কোনার বেঞ্চিতে গিয়ে বসি।
—বল কী খাবি? শামু বলল।
—খাব না কিছু। লস্যি বানাতে বল!
—ঠিক হ্যায়, রোজ সিরাপ দেবে তো!
—নাঃ, এমনি।
নিজেরটা রোজ সিরাপ দেওয়া আমারটা এমনি অর্ডার চলে যায়।
শামু প্রথম চুমুকটা সড়াৎ করে টেনে নিয়ে বলল—রুণু, আমার ছোট বোনটাকে বিয়ে করবি?
—যা বাব্বা! হঠাৎ? আমি একেবারে আকাশ থেকে পড়েছি।
—না, বলছি, ধর দীপুর বোন আর আমার বোন দু’জনের মধ্যে তুই বাছছিস, আমার বোন কিন্তু কালোর ওপর খুব সুন্দরী!
—দ্যাখ শামু, তোর কথাগুলোর কোনও মানে হয় না। প্রথমত আমি একটা বেকার, নিজেরই ভাত নেই তার শংকরা! আমি অমন বিয়ে-পাগলা নই। দ্বিতীয়ত বাছাবাছি আবার কী! আমার যাকে ভাল লাগবে, মনে হবে সারা জীবনের বন্ধু হবার মতো, তাকে বিয়ে করব, সে তোদের কারও বোন হবে না।
—আমার বোনকে তুই দেখিসনি।
—শুধু রূপ দিয়ে কিছু হয় না শামু।
—শোন রুণু আমাদের ওখানকার রমজান আলিকে চিনিস তো!
—কে? সেই লকড়ি-অলা?
—হ্যাঁ। ও হাসিকে নিকাহ্ করতে জেদ করছে। ওর বিবি অনেক দিন ধরে ভুগছে। ওর নজর পড়েছে…
—ও করতে চাইলেই তুই দিবি?
—তুই জানিস না রমজান আলির পলিটিক্যাল লোকেদের সঙ্গে খুব মাখামাখি।
—সে তো তোরও আছে!
—দুটো আলাদা। আমাকে ওরা ইউজ করে। কোথায় বুথ দখল করতে হবে, কোথায় চাঁদা তুলে দিতে হবে। কোথায় কাকে চমকে দিতে হবে। আর রমজান মিঞার সঙ্গে ওদের সোশ্যাল ওঠা-বসা। শিলিগুড়ি থেকে পালামউ থেকে কাঠ আসে রমজান চাচার গো-ডাউনে, চেরাই হয় ওর চেরাই কলে, তারপর রইসদের কাছে চড়া দামে বিক্রি হয়ে যায়। নেতারাও পেসাদ পায়। রমজান চাচার ইফতার-এ কারা কারা আসে জানিস! কেন আসে জানিস?
—শামু তোর যথেষ্ট তাকত আছে। সব দিক দিয়েই। তুই বোনকে বাঁচাবার চেষ্টা কর ওই রাক্ষসটার হাত থেকে। ওকে দূরে কোথাও আত্মীয়স্বজনের বাড়ি পাঠিয়ে দে। চুপচাপ।
—আমার লাইফ যে হেল করে দেবে রে!
—কী ভাবে? আফট্রল তোর তো মাসল পাওয়ার আছে।
—তবু তুই হাসিকে বিয়ে করবি না?
—আরে খাওয়াব কী? তা ছাড়া বিপদ থেকে বাঁচবার জন্য হাসি যদি আমাকে বিয়ে করে সেটা হাসির পক্ষে সম্মানজনক হবে?
—বাজে ওজর তুলিস না। তোর রুজি-রোজগারের ব্যবস্থা আমি করে দেব। কথা দিচ্ছি।
—তা হয় না রে।
—হয় না কেন? ধর গুহমজুমদারদের তোকে পছন্দ হল। ওরা ওদের বাড়ির কোনও মেয়ের সঙ্গে তোর বিয়ের ঠিক করল, তোকে সিঙ্গাপুরে পাঠাল, কমপ্যুটার-ফার করিয়ে তোর চাকরি জোগাড় করে দিল। প্রস্তাবটা এল তোর মায়ের কাছে। করবি তো? উনি তো মেনে যাবেন?
—উনি মেনে যাবেন কিনা বলতে পারছি না। তবে আমি মানব না।
—তুই মানবি রুণু। তোর ঘাড় মানবে, আমি বলছি।
—তোকেও কিন্তু খোয়ার সইতে হবে, তোদের সমাজে। তারপর তোরা আমায় ধর্ম পালটাতে বলবি। এ সব বখেড়ার মধ্যে আমি যাব কেন?
—কিন্তু তোরা কি হিন্দু ধর্মই সেভাবে মানিস? পুজো-আচ্চা তোর মা হয়তো করেন, তুই কভি করিস না। তা হলে?
—তুই খানিকটা ঠিকই বলেছিস শামু।
—তুই লিবার্যাল হিন্দু?
—বলতে পারিস। তবে লিবারাল হিন্দু বলতে ঠিক কী বোঝায়, আমি অত পড়াশোনা করিনি, পুরো বলতে পারব না। আমি হলাম গিয়ে আমি। বাংলাদেশের ফরিদপুর জেলায় আমার বংশ শুরু হয়েছিল। দেশ বিভাগের ফলে মার খেতে খেতে এ বাংলায় এসে পড়েন আমার ঠাকুর্দা-ঠাকুমা। আমার বাবারও সে-সব স্মৃতিতে খুব পরিষ্কার ছিল না। তবে অনেকদিন রেফিউজি নামটা আমাদের নামের সঙ্গে জুড়ে ছিল। এখন নেই। কোনও মতে বহু স্ট্রাগল করে একটা জায়গা করে নিয়েছি। এখন আর পাঁচটা নিম্ন মধ্যবিত্ত হিন্দু-মুসলমান-শিখের মতো স্ট্রাগল করছি। আমার বিয়ের কথা ভাববারও সময় নেই। ধর্মের কথা ভাববারও সময় বহুত কম রে শামু।
—এই তোদের দোষ রে রুণু, অধার্মিক টাইপের হয়ে গেছিস, লেখাপড়া করে।
—শামু, যারা এগুলো সিরিয়াসলি মানে, করে, তারাই কিন্তু তোদের সবচেয়ে বড় শত্রু মনে রাখিস। বড় বড় কথা বলে কোনও লাভ নেই, মানুষ মানুষের সঙ্গে মানুষের মতো ব্যবহার করবে এইটেই ধর্ম বলে আমার মনে হয়। নইলে ‘রাম-রহিম কৃষ্ণ-করিম’ ধুন গেয়ে কোনও লাভ নেই, আর পুজোই বল নামাজই বল করেও কোনও লাভ নেই।