Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » তিমির বিদার || Bani Basu » Page 3

তিমির বিদার || Bani Basu

এঃ, দীপুটা মহা-ভাবনায় ফেললে। খ্যাপাটে ছিল, ঠিকই, বোধহয় পুরো খেপে যাচ্ছে। সেদিন আমায় একটা কোণে ঝুপসি দেখে একটা গাছের তলায় টেনে নিয়ে গিয়ে বলল—রুণু তোকে একটা কথা বলছি, কাউকে বলবি না বল।

—কী কথা?

দীপু বলল—আমার আর চাকরি-ফাকরি চাই না।

আমি জানি এই ইন্টারনেটের যুগে যেখানে শিক্ষিত ছেলেদের দশজনে একজন কম্প্যুটার জানে, এমপ্লয়মেন্ট এক্সচেঞ্জের হাতে ভবিষ্যৎ সঁপে দিয়ে কেউ থোড়ি থাকে, কিছু না কিছু একটা দালালি-ফালালি খুঁজে নেয়, সেখানে দীপুর মতো ছেলের চাকরি হওয়ার কথা না। লেখাপড়ায় ছিল মন্দ না, অঙ্কের মতো সাবজেক্টে এম এসসি করছিল, তখনই ঝপ্‌ করে ওর বাবার ব্যাপারটা ঘটে। বুঝতে পারি হকার বাবা অনেক কষ্টে পড়িয়ে শুনিয়ে একটা ভদ্র, সুন্দর ভবিষ্যতের স্বপ্ন নিজেও দেখতেন, ওকেও দেখাতেন। দীপুটা একটা প্রচণ্ড নাড়া খেয়েছে। ধরুন, এক গ্লাস জল তার তলায় ময়লা থিতিয়ে রয়েছে, হঠাৎ সেটাকে যদি ঝাঁকান, কী হবে? ময়লাগুলো পরিষ্কার জলের সঙ্গে মিশে যাবে, জলটা ঘোলা হয়ে যাবে। দীপুর মগজের সেই অবস্থা। ওদের হিসট্রিটা ভারী অদ্ভুত! ওর ঠাকুর্দা ছিলেন পুরুত বামুন। বেশ বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত কাজটা করে গেছেন। ছেলেকে অর্থাৎ দীপুর বাবাকে বলেছিলেন— ক্রমশ পুজো-আচ্চা কমে যাচ্ছে, এই জীবিকা নিলে আর করে খেতে হবে না। একটা নিশ্চিন্ত চাকরি খোঁজো। দীপুর বাবা তাই খুঁজেছিলেন, একেবারে নিশ্চিন্ত বলতে সরকারি চাকরি পাননি, উনি একটা বড় ফ্যাক্টরিতে ডেসপ্যাচে কাজ করতেন। ফ্যাক্টরি বন্ধ হয়ে গেল। আবার যখন খুলল দেখা গেল উনি ছাঁটাই। ওঁর জীবৎকালে কোনও ট্রেড ইউনিয়ন ওঁর প্রাপ্য টাকাটা বার করে দিতে পারেনি। চলে গেলেন বস্তিতে, নিলেন হকারি।

পার্টিগুলোকে টাকাও খাওয়াতে হল। বড় ছেলেটি লেখাপড়ায় খাটো। কিন্তু মেজ এই দীপুর মাথা ছিল। বড় মেয়ে মণিটারও যে মাথা আছে তা তো দেখতেই পাচ্ছি। দীপুটাকে উনি পড়িয়ে যাচ্ছিলেন। ডাক্তারি-এঞ্জিনিয়ারিং-এর লাইন ধরা তো দুরাশা। ও অঙ্ক নিয়েই পড়ছিল। তারপর বিনামেঘে বজ্রপাত। যারা বসিয়েছিল তারাই উঠিয়ে দিল। উনি বোধহয় পর পর এরকম দুর্দৈব সইতে পারলেন না। কাজেই ছারপোকা মারার ওষুধ…। সত্যিই, উনি বেঁচে থাকলে তো মাসিমা রাঁধুনিগিরি করতে পারতেন না। মণিমালাও স্কুল থেকে ওরকম সাহায্য পেত না। বড় ছেলেটিও নিজের পথ নিজে খুঁজে নিত না। সেই একটা কথা আছে না, ‘নেই তাই পাচ্ছো, থাকলে কোথায় পেতে?’ এখন ওঁর প্রাপ্য বকেয়া টাকাপয়সাগুলোও দীপুর মা পেয়ে গেছেন। কাজেই দীপু কিছু না করলেও ওদের দু’ বেলা দু’ মুঠো জুটে যাবে। কিন্তু তাই বলে মা রাঁধুনিগিরি করবেন, ছোট ভাই গাড়ি ধোবে, ছোট বোন চুল ঝাঁটাবে— আর সেই পয়সায় ও বসে বসে খাবে? ফ্যামিলিতে একটা আত্মহত্যা, আর একটি নিরুদ্দেশ, নিরুদ্দেশই বলব দাদাটাকে, তার ওপরে যদি আর একজন উন্মাদ হয়ে যায় সর্বনাশের বাকি কী থাকবে? দীপুটা তো দু’ চারটে টুইশনিও করতে পারত। আমি যেমন করি! বলতে কী অঙ্ক নিয়ে বি এসসি করেছে, এম এসসিরও বোধহয় এক বছর পুরো পড়া হয়ে গিয়েছিল, অঙ্ক তো সোনার সাবজেক্ট, পড়াতেই পারত! কিন্তু দীপু টিকে থাকতে পারে না। আমি দু’-একটা ওকে দিয়ে দেখেছি, তারা বলে ওরে বাবা দীপুদা বড্ড হাই স্ট্যান্ডার্ড। করতে করতে দীপু ছেড়ে দিত। কি তারাই ছাড়িয়ে দিত। আমার একটু রাগ হয়ে যায়। আমিও দাদার হোটেলে খাই। কিন্তু আমার জামাকাপড়, দু’-চারটে বিড়ি, ট্রাম-বাসের ভাড়া, আমার শেভিংক্রিম, বুরুশ, ব্লেড, চটি, জুতো, বাইরে দু’চার কাপ চা পকোড়া এসবের জন্যে কারও কাছে হাত পাতার কথা ভাবতেও পারি না। বাড়ির যত ফাইফরমাশ, বাজার থেকে কলের মিস্ত্রি, ইলেকট্রিকের মিস্ত্রি, ইলেকট্রিকের বিল, রিন্টিটাকে স্কুলে নিয়ে যাওয়া-আসা, সেজ মাসির গলস্টোন অপারেশন পি.জিতে, দিদির পিসশাশুড়ির শ্রাদ্ধ এ সব আমি নিজে যেচে করি। উশুল করে নিই। এ ধরনের দায়িত্বজ্ঞানহীনতা, আত্মসম্মান জ্ঞানের অভাব দেখলে আমার ভেতরটা চিড়বিড় করে। তবু ভাবলাম— বিশুদা এমেলে যখন ওর জন্যে আন্তরিকভাবে চেষ্টা করছে…

সে কথাই বললাম— বিশুদা কিছু ব্যবস্থা করে দিল নাকি?

—তুইও যেমন, দীপু বলে, বিশুদাকে কে দেয় তার নেই ঠিক!

যাব্বাবা একটা এমেলে লোক…

আমি তেড়ে উঠি—কী যা তা বকছিস।

দীপু বলে—তুই মিছিমিছি রাগ করছিস রুণু। একটু ভাল করে ভেবে দ্যাখ, এমেলে ঠিকই। কিন্তু রুলিং পার্টির তো না! বিশুদার কট্টুকুনি ক্ষমতা! রুলিং পার্টি ছাড়া কেউ এখন কারুর কিছু করে দিতে পারে না।

—তা হলে রোজ যে অত লাইন পড়ে?

—আরে তুই তো রোজ যাচ্ছিস না, আমি তো নিয়ম করে সকাল ন’টা থেকে বারোটা একটা পর্যন্ত ধর্না দিই। কী বল তো! বেশির ভাগই র‍্যাশন কার্ড হারিয়ে ফেলেছে, কি একটা প্রতিবন্ধী সার্টিফিকেট চাই। কি ইনকাম সার্টিফিকেট, ফ্রি স্টুডেন্টশিপ, কি পাসপোর্ট কি কিছুর জন্যে। এগুলো হয়। কিন্তু আর কিস্যু হয় না। বিশুদা সব ঝুলিয়ে রেখে দেয়, সেই বলে না বাইরে ছুঁচোর কেত্তন আর ভেতরে কোঁচার …

আমি ওকে কারেক্ট করে দিই— বাইরে কোঁচার নর্তন, ভেতরে ছুঁচোর কেত্তন।

—ওই হল। তার ওপরে বিশুদাটা কীরকম ক্যাংলা দেখেছিস। ধর আমি গেছি, ফর দা ফাইভ হানড্রেড্‌থ টাইম… মুখে বিগলিত হাসি, চোখে নেড়ি কুকুর, কান চুলকোচ্ছে যেন ন্যাজ নাড়ছে।

—সে আবার কী!

—মানে কী জানিস। মুখে বলছে—তোমার একটা ব্যবস্থা?— এই হয়ে গেল। স্কুলসার্ভিস কমিশনের এক হোমরা-চোমরাকে বলে দিচ্ছি। নেক্সট ইন্টারভিউতেই তোমার হয়ে যাবে। ভাল করে ভাইভাটা দিয়ো কিন্তু! বলে দেওয়া পর্যন্ত আমার হাত, তারপর… বলতে বলতে কাঠি দিয়ে কান খোঁচাবে। বুঝলি? ক্ষমতা নেই এক কড়া। বলবে ভাইভাতেই গেছ। বুঝলে? আর যতক্ষণ থাকব কাঙালের মতো চেয়ে থাকবে, ভোটটা দিয়ো, তোমাদের বাড়ির পাঁচটা ভোট শিওর তো! যদি একবার ক্ষমতায় আসতে পারি, ইস্‌স্‌-ফুড মিনিস্ট্রিটা কে ঠ্যাকায়! আর তখন দো হাত্তা টাকা টাকা টাকা…

বলতে বলতে দীপু হাতগুলো দিয়ে ইম্যাজিনারি টাকা লোফে আর হো-হো হা-হা করে হাসে।

—চুপ কর দীপু।…আমার মনে হল দীপু ইজ টকিং সেন্স। কিন্তু ধরনধারণ সুবিধের ঠেকল না,— তা চাকরি না হয় তুই না-ই করলি। অন্য কোনও ব্যবস্থা করতে পেরেছিস?

—তোকে বলব কেন?—দীপু চকচকে রহস্যভরা চোখে তাকায়।

—বলতেই তো ডেকেছিলি!

—তা-ই? ডেকেছিলুম বুঝি!

আমি পেছন ফিরি, বেকার হতে পারি। এত নষ্ট করার সময় আমার নেই। সচিনের পোস্টারটা আমাকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে! হকারি উঠে গিয়ে এই একটা মস্ত গোলমাল হয়েছে। কোন জিনিসটা কোথায় পাবে তুমি জানবে না। মাছের বাজার জানো, কাপড়জামা-জুতোর দোকানও সব স্পেশালাইজড। কিন্তু পোস্টার। ও তো চিরকাল এসপ্লানেড কি গড়িয়াহাটের ফুটেই দেখেছি!

দীপু বলল— চুপ করে শুনবি। কমেন্ট করবি না। কাউকে বলবি না। আমি আজকাল একটা ভয়েস শুনতে পাচ্ছি।

—ভয়েস?

—ইয়েস। কখনও মনে হয়, আকাশ-বাতাস থেকে আসছে। কখনও মনে হয় ভেতর থেকে আসছে।

—কী বলছিস ছাতা?

—ছাতাও নয়, ছাই-ও নয়। এ ডিসটিংক্ট ভয়েস। কিছু বলছে। কী এখনও পরিষ্কার বুঝতে পারছি না। ফিসফিসে তো! তবে আস্তে আস্তে বুঝতে পারব।

হঠাৎ আবার হা-হা করে হেসে দীপু আমার কাঁধে একটা থাবড়া মারল। তারপর ওর রোগা, বড় বড় চোখ, বেড়ে যাওয়া চুল, একমুখ পাতলা পাতলা দাড়ির ময়লাটে চেহারাটা দ্রুত আমার কাছ থেকে সরে গেল। আর পেছন ফিরে তাকাল না দীপু। যেন কেউ দেখে ফেলবে। আর তা হলেই সর্বনাশ। যেন একখানা সিক্রেট এজেন্ট।

আমি একটু হতবুদ্ধি হয়ে দাঁড়িয়ে থাকি। ভয়েস? ভয়েস কী রে বাবা? হ্যালুসিনেশন হচ্ছে না কি দীপুর? বিশুদার ব্যাপারে তো বেশ ভাল কথাই বলল। সেন্সিব্‌ল। কিন্তু এ সব ভয়েস-টয়েস! এ তো পাগলামি! সর্বনাশ। ওর তো চিকিৎসা দরকার!

অন্যমনস্কভাবে সাইকেল বাই। যান্ত্রিকভাবে বেয়ে যাচ্ছি। লোকজন, গাড়িঘোড়া এড়িয়ে এড়িয়ে। মনটা দীপুতে নিবিষ্ট। শামু যেমন বন্ধু, গদা যেমন বন্ধু, পানু, সাম্য এরা যেমন বন্ধু, দীপুটাও তো তেমন আমার বন্ধুই! খুব ঘনিষ্ঠ নয়। দীপুদের ফ্যামিলি বরাবর কেমন আড়ো-আড়ো ছাড়ো-ছাড়ো। মাসিমা যে পরের বাড়ি রান্না করেন, কি মুক্তা পার্লারে চুল ঝাঁটায়, কি ভুতো গাড়ি ধোয় এগুলো ওরা ভুলতে পারে না আমাদের সঙ্গে মিশতে এলে। আবার চক্কোত্তি বামুন, এক পুরুষ আগেও পুজো-অর্চনা করেছেন নিষ্ঠাভরে, এক ছেলে এম এসসি ড্রপ, আর এক মেয়ে ক্লাস টুয়েলভে উঠল ফার্স্ট হয়ে, এগুলোও ওঁরা ভুলতে পারেন না বস্তির সমাজের লোকেদের সঙ্গে মিশতে গেলে। বস্তির মধ্যে ওদের বাড়িটা যেন একটা সেকেন্ড ব্র্যাকেট। গেলে দেখি, সামান্য একটা দাওয়া, দাওয়ার পাশে রান্নার জায়গা। ভেতরে একটা ঘর। আর একটা এত ছোট যে তাতে কেউ থাকতে পারে বিশ্বাস হয় না। টিনের ঢাকনা দেওয়া একটা কলঘর। কিন্তু সমস্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন। দাওয়ায় টবে ক’টা ফুলগাছ—রঙ্গন জবা এইসব বারোমেসে। ভেতরে তক্তপোশে পরিষ্কার চেক-চেক বেঙ্গল হ্যান্ডলুমের চাদর ঢাকা দেওয়া। কোথাও এতটুকু ধুলো ময়লা নেই। ছোট্ট ঘরটায় মণিমালা পড়ে। আমি মাঝে মাঝে ওকে এটা ওটা পড়া দেখিয়ে দিই। দেখেছি কী সুন্দর করে খবরের কাগজের মলাট দিয়ে বইগুলো গুছিয়ে-সাজিয়ে রেখেছে। একটি পেন, একটি পেনসিল, কয়েকটা লম্বা, লাইন ছাড়া খাতা। একটা লণ্ঠন। ঘরটাতে জানলা নেই বললেই চলে। যেটা আছে সেটা খুললেই পাশের কুঠুরির বাসিন্দাদের ঘরকন্না দেখা যায়। জানলাটায় একটা ছেঁড়া শাড়ির পর্দা দেওয়া আছে। কিন্তু পড়াতে গিয়ে দেখেছি, অনেক সময়ে ও-কুঠুরি থেকে এমন চিৎকার অকথ্য গালিগালাজ আর অসহ্য গন্ধ আসে যে মণি ওটাকে বন্ধই রাখে। এই ঘরেই রাতে দীপু আর ভুতো শোয়। বড় ঘরটাতে দুই মেয়েকে নিয়ে মা। কিন্তু ওঁদের বাড়ি গেলেই মাসিমা এত সংকুচিত হয়ে যান যেন ধরা পড়ে গেছেন। কিছু যেন লুকোচ্ছিলেন, লুকোনো হল না। মুক্তা থাকলে কথাই বলে না। মণিকে তারপর থেকে আমি বলেছি— তোমার দরকার হলে আমাদের বাড়ি চলে এসো বরং। মেয়েটা আসে। তবে খুব কম। খুবই বুদ্ধি ওর। আমার চেয়ে অনেক বেশি। পরিবারটার নানারকম দুর্দৈবর মধ্যে মণিমালাই একমাত্র পরিষ্কার মাথার ঠিক রেখেছে। অন্তত তাই আমার মনে হয়। এখন যদি দীপু এ সব ভয়েস-টয়েস বাধিয়ে বসে কে বলতে পারে নৈরাশ্য এ মেয়েটাকেও গ্রাস করবে কি না। বাড়ির আবহাওয়াই বা কেমন হবে! সে ক্ষেত্রে তো ফ্যামিলিটা ধসে যাবে একেবারে।

এইসব দুশ্চিন্তা মাথায় নিয়েই বড় রাস্তা ধরে যাচ্ছিলাম। যাচ্ছি ছাত্র পড়াতে। হাতে এখনও একটু সময় আছে। তাড়াহুড়ো কিছু নেই। হঠাৎ নজর পড়ে গেল একটা মোটর পার্টস-এর দোকানে। সারি সারি সব টিনের প্লাস্টিকের কৌটো বা’টা সাজানো। চকচকে দোকান, বাইরে মোটা কাচের দরজা। ভেদ করে দেখা যাচ্ছে একটা চমৎকার সচিনের পোস্টার। বালক বালক নিষ্পাপ মুখখানা, টেস্ট-ক্রিকেটের ড্রেস পরা, হাতে ব্যাট, কিন্তু দেখা যাচ্ছে শুধু ব্যাটের আধখানা। নীল পটের ওপর আঁকা সচিন! ছবিটা দেখে যেন মন্ত্রমুগ্ধের মতো দাঁড়িয়ে গেলাম। আহা রে সচিন তুই তোর দেবদূত মুখ নিয়ে আমাদের প্রধানমন্ত্রী হলি না কেন? অমন আন্তরিকতা, নিজের কাজে অমন মনোযোগ, পাঁচজনের সঙ্গে পা মিলিয়ে আবার নিজের স্বাতন্ত্র বজায় রেখে চলার শক্তি, নির্দ্বিধায় দক্ষতর ব্যক্তিকে জায়গা ছেড়ে দেওয়া, বাজে আউট, আম্পায়ারের ভুলে বা বদমাইশিতে আউট হলেও অমন স্থৈর্য, কিন্তু প্রত্যয়, ব্যক্তিত্ব, এমন ক্যারিশমা যে বম্বের বিখ্যাততম নায়ককেও তোর পাশে ম্লান এবং খল দেখায়! রাজনীতি বুঝিস না, কিন্তু দলবাজি তো বুঝে গেছিসই! দে না বাবা ক’টা ছক্কা মেরে। এক একটাতে এই হতভাগাদের গড়া এক একটা পাপস্তম্ভ ধূলিসাৎ হয়ে যাক। এক ছক্কায় জনগণের টাকা নিয়ে নয়ছয়, আর এক ছক্কায় জাতি-ধর্ম-বিদ্বেষ, আর এক ছক্কায় সরকারি ঘুঘুর বাসা… আর এক ছক্কায় বেসরকারি ঘুঘুর বাসা…

ঢুকে পড়লাম।

—কী চাই?

—সচিন।

—মানে?

—না, এই পোস্টারটা কোথায় পেলেন জিজ্ঞেস করছিলাম।

—ও আমাদের এক ক্লায়েন্ট দিয়েছে—একজন বলল।

আর একজন কীরকম খেঁকিয়ে বলল—খ্যানো বলুন তো!

দমে গিয়েছিলাম। তবু বলি— যদি কিছু মনে না করেন ন্যায্য দামে পোস্টারটা আমায় দেবেন?

—মামার বাড়ির আবদার না কি?—খেঁকি জন বললেন।

—না, না, মামার বাড়ি নয়। ভাইপোর। বাচ্চা তো! কোথাও জিনিসটা খুঁজে পাচ্ছি না। এদিকে সে খাওয়া-দাওয়া ত্যাগ করার জোগাড়।

—ভাইপোকেই সামলাতে পেরে উঠছেন না। ছেলে হলে কী করবেন? ভালজন মৃদু হাস্যে বললেন।

মনে মনে আরও দমে গেলাম। সবে তেইশ। এখনই আমাকে পিতৃপ্রতিম দেখাচ্ছে না কি? ছেলে তো অদূর ভবিষ্যতে দেখতে পাচ্ছি না। যদ্দিন না হচ্ছে ভাইপোটাই ছেলে। ছেলের প্রতি স্নেহ-মমতা কেমন হয় তা যদিও আমার জানা নেই।

খেঁকি বললেন—আজকালকার বাচ্চাগুলো আর বাচ্চা নেই। টিভি দেখে দেখে টিভি দেখে দেখে এক একটি পাকা পক্কান্ন হয়ে উঠেছে।

এর মধ্যে পাকা পক্কান্নর কী হল বুঝতে পারলাম না। সে বেচারি তো আর ঋত্বিক রোশন কি ঐশ্বর্য রাই চায়নি।

—দেবেন নাকি? বাচ্চাটার কথা মনে করে? কত দাম বলুন। আমি পার্স বার করি।

—দাম নেই।

—মানে? অমূল্য?

—হ্যাঁ তাই। আমার দেয়ালের জিনিস আপনাকে দিতে যাব কেন খামোকা? এর পরে আরেকজন এসে বলবে—বাঃ আপনাদের গাছদানটা তো বেশ, আমার ভাইঝি ঠিক এইরকম একটা চায়…

আমি আর দাঁড়াই না। সচিনের ছক্কা এদের জন্যেও দরকার। এই মায়া-মমতাহীন সভ্যতা-ভদ্রতাহীন দোকানদার সমাজ। পুরো সমাজটাই দোকানদার হয়ে গেছে। পুরো দেশটাই। আমি বলছি না আমি ছোট বাচ্চার নাম করে কিনতে চাইছি বলেই ওরা আমাকে জিনিসটা দিয়ে দিক। কিন্তু কথাবার্তা বলারও তো একটা ধরন আছে। আমাদের ওরা চ্যাংড়া বলে, আমাদের মুখের ভাষাকে স্ল্যাং বলে, ওদের তো একজনের চুল বেশ পাকা আরেকজনের গোঁফেও পাক ধরেছে, ভদ্রভাবে কথা বলতে কী দোষ! বাবা মৃত্যুর আগে একটা কথা খুব বলতেন। বলতেন— এতদিন ধরে সমাজ চলেছে মোটামুটি ভারতীয় আদর্শে। অল্পে সন্তুষ্ট থাকো, সন্তোষ এবং শান্তিটাই আসল। গুরুজনদের শ্রদ্ধা করো, নিজের কাজটুকু মন দিয়ে করো, অবসর সময়ে ঈশ্বরচিন্তা করো। উপার্জন যদি খুব বেশি করো, তা হলে উদ্বৃত্তের কিছুটা দান করো। অতিভোগ ও শোষণের প্রক্রিয়া তখনও ছিল, কিন্তু আদর্শটা ছিল এই। দীর্ঘদিনের ইংরেজ-রাজত্বেও জনসাধারণ মোটের উপর এই আদর্শটাকেই পালনীয় এবং উৎকৃষ্ট বলে জানত। কে কতটা পালন করত সেটা আলাদা কথা। কিন্তু নতুন যে আদর্শটা আসছে সেটার ঝোঁক ভিন্ন জায়গায় পড়তে যাচ্ছে। ভূমা চাও, আত্মিক বা আধ্যাত্মিক ভূমা নয়, সাংসারিক ভূমা, বৈষয়িক ভূমা। চাহিদাটা বাড়াতে থাকো, আকাঙক্ষা কোথাও থামবে না। গুরুজনদের ছেড়ে কাউকেই শ্রদ্ধা করার দরকার নেই। যার সঙ্গে যে-রকম আদান-প্রদানের সম্পর্ক তেমনই করো, নিজের কাজ অবশ্যই মন দিয়ে, রক্ত দিয়ে মজ্জা দিয়ে করবে কিন্তু কাজের আনন্দে নয়, পাওনার আনন্দে। অবসর সময় বিনোদনে কাটাও। নিজের প্রবৃত্তির নিম্নতম খেয়াল খুশিকেও মর্যাদা দাও এই সময়টায়, তা নয়তো চাপ সামলাতে পারবে না। ঈশ্বর নেই। তা সত্ত্বেও যদি ঈশ্বরচিন্তা করলে তোমার বিনোদনের কাজটা হয়ে যায়, অর্থাৎ চাপটা কমে তা হলে করো। অর্থাৎ ঈশ্বর একটা কনভিনিয়েন্স। আর উদ্বৃত্ত? আরও কেনো, আরও ভোগ করো। শেষ পর্যন্ত ওই ফ্যালো কড়ি মাখো তেল। একটা দোকানদারি সমাজ-ব্যবস্থা।

আমরা অর্থাৎ আমি আর দাদা নিজেদের তালে থাকতাম। কে আর অত বাবার কথায় কান দেয়। কিন্তু বাবা অনেক সময়েই রাত্তিরের খাওয়ার সময়টা বাছতেন। মাকে উদ্দেশ করে বলতেন। বলতেন—একটা টোট্যাল চেঞ্জ অফ্‌ অ্যাটিচিউড। সেইটার সঙ্গে মানিয়ে তোমাদের প্রতিদিন চলতে হবে। আরও খাটো, আরও চাও, আরও কেনো—এই ফাঁদে পড়ে গেলে মহা মুশকিল। কেন না, প্রত্যেক মানুষের ক্ষমতা আলাদা, এবং সে ক্ষমতার সীমা আছে। এই সীমা খানিকটা বাড়ানো যায়। কিন্তু কোনও না কোনও জায়গায় থামতে জানতেই হয়। এবং থেমে সন্তুষ্ট থাকতে হয়।

দাদা বলত—বাবা তুমি কতকগুলো অ্যাবস্ট্রাক্ট কথা বলে গেলে। চেঞ্জ তো হবেই। সারা পৃথিবীতে চেঞ্জ হচ্ছে। তুমি কি বলো সেই পুরনো ভারতবর্ষের দীনতা, বিনয়, শ্রদ্ধার আদর্শ যা দুর্বল ছাড়া কেউ মানত না সেটাই ভাল।

—না, তা আমি বলছি না। যদিও সেই আদর্শটার সামগ্রিক দোষগুণ বিচার করার ক্ষমতাও আমার নেই। কেন না আমিও ওই ব্যবস্থাটার প্রোডাক্ট। যেমন পেরেছি, যতটা পেরেছি মেনেছি। ধরো আমার বাবা মা খুব শোকাতাপা মানুষ ছিলেন, নিজের মাতৃভূমি, ভিটে, সন্তান ভয়াবহ ভাবে হারানোর দুঃখ কোনওদিন ভুলতে পারেননি। যে-জমির ওপর আজ আমাদের বাড়ি, তা কিন্তু সোজা কথায় চুরি। তাঁরা নিরুপায় হয়ে কোণঠাসা হয়ে তাঁদের অবস্থার আরও অনেকের মতো খালি জায়গা পেয়ে দখল করে নিয়েছিলেন। তাঁদের ওপর অন্যায় হল, তাঁরা অন্যদের ওপর অন্যায় করলেন, কিন্তু এই অন্যায়ের জন্য আমি মনের কোণেও তাঁদের প্রতি কোনও অশ্রদ্ধা পুষে রাখিনি। ‘বেশ করেছি, খুব করেছি’ এমনটাও কিন্তু আমি মনে করি না। পুরো ব্যাপারটাই খুব আনফরচুনেট। আমি দুঃখ পাই। কিন্তু তোমরা যেটা ফেস করতে যাচ্ছ সেটা অন্য রকম। ধরো তুমি, তোমরা মহাজনদের বিরাট প্রাসাদ, লোকজন, গাড়িজুড়ি দেখছ, দেখতে দেখতে মনে স্থির সংকল্প গড়ে উঠছে তোমাকেও অমন পেতে হবে। তোমার যা ব্যাকগ্রাউন্ড অর্থাৎ ব্যবসা করা বা কোনও প্রযুক্তিগত বিষয়ে বিশেষ দক্ষতা, তোমার নেই, অর্থাৎ তুমি কোনও ছোটখাটো বিড়লাঘরেও জন্মাওনি, বিল গেটস-এর ক্ষমতাও তোমার নেই। অথচ বাসনাটা তোমার প্রচণ্ড, সেটা তোমাকে তাড়িয়ে বেড়াচ্ছে, এখন হয় তুমি কী করে ইজি মানি করা যায় তার হদিশ করবে, করতে করতে গাড্ডায় পড়ে যাবে, আর নয় তো হতাশা, ফ্রাসট্রেশন, ক্রোধ, অশান্তি—এই-ই তোমার সমস্ত জীবন। এটা কি কাম্য হতে পারে! এই অভিশপ্ত জীবন তো এড়ানোও যায়। মানুষের মনের মধ্যে এত লোভ ঢুকিয়ে দিতে নেই।

পাড়ায় ঢুকছি। গদাইদের বাড়িটা পড়ল, আশ্চর্য হয়ে দেখি দীপুর মা ঢুকছেন। উনি তো গদাইদের বাড়ির কাজ ছেড়ে দিয়েছেন। তারপরে বুঝি—আশ্চর্য হবার আর কী আছে! গদাইদের কাজ উনি কোনও মনোমালিন্য করে ছাড়েননি। বোঝাই যাচ্ছে সম্পর্ক ভাল আছে। মহাজনদের রান্না সেরে বাড়ি ফিরছেন। খবরাখবর নিতে গদাইদের বাড়ি হয়ে যাচ্ছেন। অন্য দিকে তাকিয়ে দেখি—গুহ মজুমদারদের মাল্টিস্টোরিডের খাঁচা হয়ে গেছে। ঢালাইও শেষ। এখন রাজমিস্ত্রির কাজ হচ্ছে। হাতে হাতে ইট উঠে যাচ্ছে, কামিনরা মাথায় সিমেন্টের কড়া নিয়ে অদ্ভুত ভঙ্গিতে রিলে শুরু করেছে। একটা কেমন ছন্দ, যেন মৃদু দোলের কোনও নাচ। সেই ঠিকেদার চাকলাদার আসছে দেখি মোটরসাইকেল দাবড়ে। হেলমেট খুলে বাঁ বগলে নিয়েছে কায়দা করে, আপাদমস্তক দেখছে বাড়িটার। একটা হিরো হিরো ভাব। আমাকে দেখে এগিয়ে এল।

—কী হল সাহেব কোথায় চললে?

—বাড়ি ফিরছি।

—কিছু পেলে?

—কী পাব?

—নাঃ কাজ-কারবার নিশ্চয়ই খুঁজছ…

আমি কোনও জবাব দিই না, দাঁড়িয়ে থাকি।

—বসেই আছ, কোয়ালিফায়েড ছেলে, আমার একটা উপকার করবে নাকি?

—মানে?

—যদ্দিন না পার্মানেন্ট কিছু পাচ্ছ এই সাইটটা যদি একটু সুপারভাইজ করো…

শুধুই উপকার না পেইড উপকার বুঝতে পারলাম না। এমন কথার ধরন এদের!

—ধরো বেসমেন্টে একটা অফিস আছে, সেখানেই বসবে, প্ল্যানট্যান সব তোমার টেবিলে থাকবে, এভরিথিং …একটা হিসেব…

যাক, শুকনো পরোপকার টাইপ নয়, আমদানিও আছে।

বলি,—আমি কখনও করিনি।

—করোনি তো কী! করতে আরম্ভ করলেই শিখে যাবে। আমি তোমাকে মাসে পাঁচ হাজার করে দেব।

আমি হেভি চমকাই। বলে কী রে লোকটা? কোনও ট্রেনিং নেই। এক্সপিরিয়েন্স নেই, পাঁচ হাজার?

—কেন? এতদিন কি আপনার সুপারভাইজার ছাড়াই চলছিল?—জিজ্ঞেস করি।

—আর বলো কেন? এসব লাইনে সবসময়ে লোকে কাজ নিচ্ছে, কাজ ছাড়ছে। আমার কাছে যে ছেলেটি মানে লোকটি কাজ করছিল, সে বোধহয় অন্য কোথাও বেটার অফার পেয়েছে। আমি একটা বিশ্বাসযোগ্য লোক পাচ্ছি না। ঠিক আছে, পাঁচ হাজারটা যদি তোমার খুব কম মনে হয়, আরেক হাজার তোমার এবং তোমার ফ্যামিলির রেপুটেশনের খাতিরে বাড়িয়ে দিচ্ছি।

—আমাকে একটু ভাবতে সময় দিন। —আসলে আমায় ভাবতে হবে এ মাকড়া হঠাৎ এত টাকা ছড়াচ্ছে কেন!

—যা বাব্বা আবার ভাবনা কেন? আমি কাজ কারবার ছেড়ে এখানে প্রায়ই আসতে পারি না। কী যে করছে এরা ভগবান জানেন। তুমি তাড়াতাড়ি মানে কাল পরশুর মধ্যেই জানিও। কাছেপিঠের লোক হলে কী হয় জানো? দুপুরবেলা টুক করে বাড়িতে খেয়ে আসতে পারবে।

এই বাড়িটার পাঁচিলেই ভিখারি চাপা পড়েছিল। অনেক দিন মানে দু’-তিন বছর হয়ে গেল বন্ধই ছিল। বোধহয় এ বার সব কেস-টেস ক্লিয়ার হয়ে গেছে। হুড়হুড় করে কাজ হচ্ছে। তবে চাকলাদার ছিল স্রেফ কনট্রাক্টর। এই ক’বছরে সে কি প্রোমোটারও হয়ে গেল? বাড়ি ফিরতে ফিরতে ভাবলাম মন্দ কী? জীবিকাটার সম্পর্কে আমার কিছু জানা নেই। ঠিকই। কিন্তু আমাকে তো কিছু না কিছু ধরতেই হবে। সব জীবিকা সম্পর্কেই আমার একটা কৌতূহল আছে। কী করে কী হয়। আমার বি কম ক্লাসের এক বন্ধু তমোনাশ তো অটো চালাচ্ছে। হাতদুটো কালো হয়ে থাকে ডিজেল আর রাস্তার ধুলোয়। চুল সব সময়ে উড়ছে, এলোমেলো খড়কুটো। স্কুটার থামিয়ে ওই কালো হাতে রাস্তার টিউবওয়েল থেকে জল খাচ্ছে দেখি। আমায় দেখে বলল—টেপ তো একটু, হ্যান্ডলটা মার। একটু জল খেয়ে বাঁচি।

আমি বললাম—হাতটা ধো। ওই হাতে জল খাবি কী রে। গাড়িতে একটা বোতল কিংবা গ্লাস রাখলেও তো পারিস।

—রেখেছিলাম রে। নাচতে নাচতে বেরিয়ে চলে যায়।

—তো সাবান!

—এটা ভাল বলেছিস। রাখতে হবে। তবে কী জানিস—লাইফটাই এখন ডিজেল হয়ে গেছে। চড়বি নাকি?

—চল।

তখন রাত আটটা হবে। ভাগ্যক্রমে আমার দু’চাকার বাহনটি আমার সঙ্গে ছিল না! তাই কত কথা জানতে পারলাম। তমোনাশটা একটু ডাকাবুকো মতো ছিল। খেলাধুলো করত। চাকরি-বাকরি না হতে ওর বাবার এক বন্ধু অটোর পরামর্শটা ওকে দেন। লোন নিয়ে কিনেছে। দিনে সব খরচ-খর্চা বাদ দিয়ে শ তিনেক মতো হয়। মানে মাসে ন’হাজার। এত খেটে ন’হাজার, রাস্তায় রাস্তায় ঘোরা, পুলিশের পাবলিকের গালাগাল। ময়লা, নোংরা। এর তুলনায় নির্মীয়মাণ বহুতলের বেসমেন্টের অফিসে বসে বসে হিসেব নিকেশ, মাঝে মাঝে অকুস্থলে গিয়ে কাজকর্ম দেখে আসা, মাসে ছ’হাজার! এ তো সোনার চাকরি! আকাশ থেকে টাকার থলি পড়া যাকে বলে। তারপর আবার নিজের বাড়িতে দুপুরবেলায় অফিসারদের মতো লাঞ্চ খেতে যাওয়া।

—তমোনাশ সাবানটা ভুলিস না! হাতে গ্লাভস পরলেও পারিস।

—কথাটা মন্দ বলিসনি। সাবান! ঠিক। গ্লাভস? অলরাইট। দু’ লেনের দুটো ট্যাকসির মাঝখান দিয়ে অদ্ভুত কায়দায় নিজের তিন চাকা গুঁজে দিয়ে, বাঁদিকের লেনে এসে মোড়ে আমায় নামিয়ে দিল তমোনাশ—দেখা হবে, রণধীর…

হ্যাঁ আবার। —মুহূর্তের মধ্যে তমোনাশের অটো ভ্যানিশ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress