তিমির বিদার (Timir Bidar) : 12
পরের কয়েক দিন ধরে, পাড়াতে ওই একটাই খবর। মহেন্দ্র মহাজন অপহরণ। বাড়িতে বাড়িতে ঝুপড়িতে ঝুপড়িতে, রাস্তার মোড়ে মোড়ে। কাগজে বড় বড় করে ছেপেছে খবরটা। মহেন্দ্র মহাজন, মহাজন ইলেকট্রনিক্স্-এর বাড়ির ছোটকর্তা, বয়স উনচল্লিশ। দুটি বাচ্চার বাবা, একজন এগারো আরেকজন সাত, বৃদ্ধ এ. এস মহাজন ও মিসেস মহালক্ষ্মী মহাজনের কনিষ্ঠ পুত্র, বিকেল চারটে নাগাদ ডায়মন্ডহারবারের ফ্যাকটরি থেকে ব্রেসব্রিজ হয়ে বাড়ি ফিরছিলেন। তাঁর ব্রাউন রঙের লান্সার গাড়িতে। ড্রাইভার মদনলাল চালাচ্ছিল। রাস্তা ফাঁকা। দু’ পাশে ঝোপড়ি, গাছপালা, ব্রেসব্রিজের কাছে একটি লোক টলতে টলতে গাড়ির সামনে এসে পড়ায় মদনলাল জোর ব্রেক কষে। এবং কাঁচ নামিয়ে গালাগাল দিয়ে ওঠে। সঙ্গে সঙ্গে তার কানের কাছে পিস্তল চেপে ধরে কেউ। মহেন্দ্র সম্ভবত একটু তন্দ্রায় ছিলেন। জার্কে তিনি জেগে যান। প্রথমটা হতবুদ্ধি হয়ে গেলেও পেছন থেকে অব্যর্থ লক্ষ্যে তাঁর লাঞ্চ বাক্সটি তিনি পিস্তলধারীর হাতে ছোড়েন। পিস্তল লক্ষ্যচ্যুত হয়ে যায় বটে কিন্তু মদনমোহনের ডান ঊরুতে গুলি বিঁধে যায়। সে যন্ত্রণায় মুহ্যমান হয়ে যায়। ইতিমধ্যে জনাদুই লোক পেছনের দরজা দিয়ে মহেন্দ্রকে কবজা করে। সম্ভবত তাঁর নাকে মুখে ক্লোরোফর্মভর্তি রুমাল চাপা দেওয়া হয়। ভিন্ন একটি গাড়ি করে তারা মহেন্দ্রকে নিয়ে উধাও হয়ে যায়। মদনলালের যখন জ্ঞান ফেরে তখন সন্ধের ছায়া নেমে গেছে। সে প্রথমে দিক ভুল করে ব্রেসব্রিজের দিকে চলে যায়, তার পর আবার অনেক কষ্টে গাড়ি চালিয়ে নিকটবর্তী পেট্রল স্টেশনে এসে সব জানায়। এবং তাদের সাহায্যে থানায় ও বাড়িতে ফোন করে। গোটা ঘটনাটার কোনও সাক্ষী নেই। সাক্ষী কাচভাঙা রক্তাক্ত-সিট লান্সার এবং ডান-ঊরু গুরুতর জখম মদনলাল। সে হাসপাতালে। অপারেশন হচ্ছে। কিঞ্চিৎ সুস্থ হবার পর দফায় দফায় তার জবানবন্দি নেওয়া হবে। গাড়ি এবং তার মধ্যে যা কিছু ছিল, লাঞ্চ বক্স, ফ্লাস্ক, ফাইল ভর্তি ব্রিফকেস সমস্ত পুলিশের জিম্মায়।
সারা শহর আমাদের এলাকা নিয়ে আলোচনা করছে। দারুণ ইমপর্ট্যান্স। পাড়ার অপেক্ষাকৃত ছোটদের কেমন একটা গর্ব এসে গেছে। চলাফেরায় একটা গেরেম্ভারি ভাব। পেছন দিকে মহাজনদের বাড়ি একটা ভূতের বাড়ির মতো দাঁড়িয়ে থাকে। মহেন্দ্র-জননী মহালক্ষ্মী দেবীকে একদিন সকালে আমাদের চোখের সামনে দিয়েই নার্সিং হোমে নিয়ে গেল। এ এস ভোরের দিকে একটা মারুতি জেন-এ করে বেড়াতে বেরোতেন। সম্ভবত আলিপুরের দিকে গিয়ে হাঁটতেন। তিনি আর বেরোন না। দু’ চার দিন পর মহেন্দ্রর দুটি ছেলে মেয়ে আর জগদিন্দ্রর তিনটি পুলিশ পাহারায় স্কুল-কলেজ যেতে থাকল। জগদিন্দ্রও দুটি সিকিওরিটিম্যান নিয়ে অফিস যেতে থাকলেন। কিন্তু বাড়িটা তার দুর্গ-গড়ন, তার প্রচুর লোকজন ও স্বল্প কয়েকজন মনিব মনিবানি ও বাচ্চা কিশোর-কিশোরী নিয়ে একদম চুপ। খালি থেকে থেকে রাতের দেহ ফুঁড়ে বুলেটের মতো বেরিয়ে আসে অ্যালসেশিয়ানের গর্জন। গর্জনে গাম্ভীর্যের থেকে তীব্রতা যেন বেশি। কুকুরটা টেন্স্ হয়ে আছে।
এরই মধ্যে প্রথমে মাধ্যমিক পরে উচ্চ-মাধ্যমিকের খবর বেরোল। সন্ধেবেলা টিউশানিতে বেরোচ্ছি মণিমালা তার সেই অচেনা সঙ্গী নিয়ে এসে হাজির। দু’জনেই বিনা নোটিসে ঢিপ করে প্রণাম করল, আমি সরে যাবার সময় পেলাম না।
—রুণুদা, আমি স্টার পেয়েছি। ম্যাথ্স্ বাংলা আর ফিজিক্সে লেটার, কেমিস্ট্রিতে একটুর জন্যে মিস করেছি।
—বাঃ, খুব ভাল। মনে-মনে বলি আর্ডিনারি কমার্স গ্র্যাজুয়েটের ছাত্রী স্টার? লেটার? আনন্দ করব না মুখ লুকোব বুঝতে পারি না।
মণি বলল—আর এ আমার বন্ধু, ও-ও মাধ্যমিক ফার্স্ট ডিভিশনে পাশ করেছে। আমি বলি—বাঃ, কংগ্র্যাচুলেশনস্ মণি, বউদির কাছে যাও। আমি এখন পড়াতে যাচ্ছি তো।
সন্ধে অনেকক্ষণ পেরিয়ে গেছে। আমার ট্যুইশন সারা। তুলতুল নামে একটি ছেলে এবং টুম্পা বলে তার দিদিকে পড়িয়ে এলাম। টুম্পা যেমন মনোযোগী, পড়াশোনায় ভাল করার জন্যে বদ্ধপরিকর, তুলতুল ঠিক তেমনি ফাঁকিবাজ। বকামির দিকে যাচ্ছে, ওর মুখে আমি সিগারেটের বদবু পাই। আমি পড়ানোর সময়ে স্মোক করি না। কিন্তু পকেটে প্যাকেট থাকে। কোনও অদ্ভুত হাতসাফাইয়ের কৌশলে তুলতুল তার থেকে দু’ চারটে সরিয়েছে আগে। তার পর থেকে আমি আর প্যাকেট নিয়েই যাই না। তাতে আমার খুব অসুবিধে হচ্ছে। কেন না দু’জনকে পড়ানোর প্রচণ্ড মানসিক পরিশ্রম আর ক্লান্তির পর রাস্তায় বেরিয়েই আমার একটা দুটো ধোঁয়া লাগে। বেরিয়েই কোনও দোকান পাই না। মনটা খিঁচড়ে যায়।
আজকে একটু রুক্ষ ব্যবহার করে ফেলেছিলাম। পড়াতে পড়াতে তুলতুলের মুখে গন্ধ পাই। কড়া চোখে তাকিয়ে বলি—তুলতুল, আমার জিনিস সব গোনাগুনতি থাকে, সরালে আমি টের পাই। একবার দু’বার করেছ, আর করো না। চুরির অভ্যাসটাও অতি বদ, স্মোকিংটাও খারাপ।
—আপনিও তো খান! এত আস্পদ্দা ছেলেটার, একটা বারো-তেরো বছরের ছেলে আমার মুখের ওপর বলল।
—খাই, কিন্তু নিজের পয়সায় খাই। কারও থেকে চুরি-চামারি করি না। তা ছাড়া হ্যাবিটটা করে ফেলেছি বলে পস্তাচ্ছি এখন। আশা করি অদূর ভবিষ্যতে ছেড়ে দিতে পারব।
টুম্পার মুখটা লাল। এভিডেন্টলি ও জানে ব্যাপারটা এবং লজ্জা পায়। তুলতুল কী একটা ছুতোয় ভেতরে গেল। একটু পরে দেখি ওর মা চা আর টোস্ট নিয়ে আসছেন। খাবারগুলো আমার সামনে বসিয়ে বললেন—মাস্টারমশাই, তুলতুল আমার তিনটে ছেলে-সন্তান চলে গিয়ে তবে হয়েছে। ওকে কিছু বলবেন না। আমরা ওকে বকাঝকা করি না।
আমি সোজা বললাম—স্মোক করলেও বলব না? আমার পকেট থেকে সিগারেট সরালেও বলব না?
—আমার ছেলে আপনার পকেট থেকে সিগারেট সরিয়েছে? আপনি বলতে পারলেন কথাটা? ওকে আমরা হাতখরচা দিই, তা জানেন?
—খুব ভাল, তা হলে সেটাতেও খেয়েছে। আমার পকেট থেকেও সরিয়েছে। সে যাকগে, ও এই বয়স থেকে স্মোক করবে আপনারা কনট্রোল করার চেষ্টা করবেন না, এমন যদি ব্যাপার হয় এই ছেলেকে পড়ানোর রিস্ক্ আমি নিতে পারব না। টুম্পা ইজ ডিফারেন্ট। ও অত্যন্ত মনোযোগী, ভাল করার চেষ্টা করে। কিন্তু তুলতুল যদি এইভাবে চলে ওর ভবিষ্যৎ অন্ধকার।
ভদ্রমহিলা কালো মুখ করে চলে গেলেন। আমার ট্যুইশনটা বোধহয় গেল।
আমাদের এ অঞ্চলটা আসলে ছোটদের বড় হওয়ার পক্ষে ভাল নয়। আমরাও ছোটবেলায় এসব এলিমেন্ট ফেস করেছি। শনিতলার সাড়ে-বত্রিশভাজা থেকে প্রচুর ছেলেপিলে বার হত, অনেক খেলেছি তাদের সঙ্গে, তলাওটায় সাঁতার শিখেছি ওদেরই কাছ থেকে। কিন্তু যেই স্কুলে উঁচু ক্লাসে উঠে গেলাম, ওরা ড্রপ আউট করতে লাগল। আমি, পানু, সত্য টিউটরের কাছে অঙ্ক সায়েন্স পড়তে থাকলাম। ওরা নিজেরাই সরে যেতে থাকল। কেমন একটা লজ্জা, সংকোচ, একটা কমপ্লেক্স। ওরা কেউ বিড়ি বাঁধে, কেউ চায়ের দোকানে কাজ করে, কেউ বাজারে সবজি নিয়ে বসে, কেউ আড়ত থেকে মাছ নিয়ে আসে, কেউ কর্পোরেশনে জঞ্জাল তোলার খবর্দারি করে। এখন ভাবলে খুব খারাপ লাগে। এক স্কুলে এক ক্লাসে পড়া আরম্ভ করেছিলাম। আমরা ভদ্রলোক, নিঃস্ব না হলেও দরিদ্র। ওরা ভদ্রলোক নয়, ওদের চারপাশে মা-বাবা-সৎমা-সৎবাবা-বহু ভাইবোন-অবৈধ সম্পর্ক, খোলাখুলি যৌনতা ও বড়দের সমস্ত কাজকারবারের বে-আব্রু পরিবেশ। কখনও ওদের কথা ভাবিনি, হেল্প করার চেষ্টা করিনি। এই সামাজিক তফাতটা মেনে নিয়েছি। এখন কেমন লজ্জা হয়। দুঃখ হয়। ওদের সঙ্গে যোগাযোগের সেতুটা ছিল কর্পোরেশন স্কুল। কর্পোরেশন স্কুল থেকে ক্লাস ফোরের পর আমরা যোগদারঞ্জন বিদ্যালয়ে গেলাম। আরও বড় হবার পরও শামু, খলিল, রাজু, সঞ্জুদের সঙ্গে জমিয়ে ফুটবল খেলেছি। কিন্তু এরা আমাদের সঙ্গে খেলতে আসতেও সাহস পেত না। বিড়ি খেত, মুখ-খিস্তি করত, একেবারে অন্যরকম একটা জগতের বাসিন্দা হয়ে গেল আস্তে আস্তে।
এখন দেখি, এই ব্যবধানটা বেশ কমে এসেছে। তথাকথিত ভদ্রলোকের ছেলেরা একটু নেমেছে, আর ঝুপড়ির ছেলেরা উঠেছে। এই যে নামা আর ওঠা এ কিন্তু কমিউনিজম-ঈপ্সিত সোশ্যাল ইকোয়ালিটি বা ক্লাসলেস সোসাইটি নয়। আসলে আমাদের বাড়ির ছেলেরা আচার-আচরণে সভ্যতা-ভব্যতায় স্ট্যান্ডার্ড হারিয়ে ফেলছে। আর যারা নিজেদের ভব্যতার ও কুশ্রী পরিবেশের লজ্জায় দূরে থাকত তাদের সাহস বেড়েছে, তারা এখন নিজেদেরই শর্তে তুলতুলদের ঘাড়ে হাত রাখছে। আর তুলতুলদের মা-বাবারা ছেলে-মেয়ে মানুষ করার নতুন নিয়ম কানুনে দিশেহারা হয়ে ভালমন্দ বুঝতে পারছেন না। তুলতুলের মা-বাবার মতো স্নেহান্ধ পিতামাতা আগেও ছিলেন, তাঁদের অনেকে নিজেরাও মন্দ-অভ্যেস ভুল চিন্তাধারার ধ্বজাধারী ছিলেন। কিন্তু এখনকার ব্যাপারটা অন্য। এখন লোকে ধৃতরাষ্ট্র নয়। জন্মান্ধ নয়। জেনেশুনে গান্ধারীর মতো চোখে পট্টি বাঁধতে চায়। ভাল বাবা, বাঁধ, পরে বলিসনি টিউটরটা বখা ছিল। তারই সঙ্গে পড়ে উচ্ছন্নে গেছে। তুলতুলদের বাড়ি আমি আর পরের দিন থেকে পড়াতে যাব না। টুম্পাটার জন্যে খারাপ লাগে। ওর তো কোনও দোষ নেই! কিন্তু কী আর করা যাবে, আমি এমন কিছু এ-ক্লাস টিউটর নই যে টুম্পার সর্বনাশ হয়ে যাবে। আমার চেয়ে ভাল টিউটরই হয়তো ওর জুটে যাবে। ক্ষতিটা আমার। আমিও এমন কিছু এ-ক্লাস ছাত্র নই। কিন্তু যেটুকু শিখেছি এমন খেটে-খেটে নিজের চেষ্টায় শিখতে হয়েছে যে ওই জায়গাটায় আমি সলিড। আর সেইজন্যেই সামান্য নিচু ক্লাসের অঙ্ক ইংরেজি সায়েন্স, একটু টেক্সট বইটা পড়ে, ইলাসট্রেশনগুলো পড়েই বুঝে নিতে পারি। ভালও লাগে বেশ। আমার কাছে তো আর স্টার পাওয়া ছেলেমেয়ে পড়তে আসবে না। এই রকম সাধারণদের মধ্যে থেকেই একটু আধটু ভাল-মন্দ আমার জোটে। মণিমালার মতো ছাত্রীর টিউটর হবার সৌভাগ্য আমার হত না, যদি ওদের অবস্থা একটু ভাল হত, কিংবা দীপেটা রেসপনসিব্ল্ হত।
এই সময়েই আমার চোখে পড়ল ব্যাপারটা। কালো প্যান্ট, কালো আঁট টি শার্ট পরা শামু সুট করে গদাদের বাড়ি ঢুকে গেল। তাজ্জব কী বাত! এক কালের এক মাঠের এক দলের খেলোয়াড় এখন ভিন্ন মাঠে রাইভ্যাল গ্রুপ। এ যেন ইন্ডিয়ার ন্যাশন্যাল টিমে পঞ্জাব, বাংলা, মহারাষ্ট্র সব জায়গাকার প্লেয়ার মিলে-জুলে খেলছিল। দেশের মাটিতে এসে আবার সব আলাদা ইস্ট জোন, ওয়েস্ট জোন…। তা যেন হল, ওরা কি আবার কোনও ন্যাশন্যাল টিমে ডাক পেয়েছে নাকি এতদিন পরে?
শামু গদা মিলে যাক কে না চায়! আমাদের মতো ছোটবেলার বন্ধুদের তো জিনিসটা ভালই লাগবার কথা। ওরা মিলে-জুলে গদাইয়ের কারখানাটা চালাক। আমাদের রেল লাইনের এপার-ওপার লোকের ওপর অযথা জুলুম অত্যাচার বোমবাজি বন্ধ হয়ে যাক। আমিও নিশ্চিন্তে একটা ছোটখাটো ‘সুধা স্টোর্স’ খুলে ফেলি। মা খুশি হোক, দাদা বউদি খুশি হোক। কিন্তু শামু দিনের বেলায় একটা দামি সিল্কের লুঙ্গি তার ওপরে সাদা টেরিকটের পোশাকি শার্টটা পরেই যাক। যাক বুক ফুলিয়ে, মুখে হাসি নিয়ে। গদা দরজায় নক শুনে খুলে দিক। ধবধবে পায়জামা-পাঞ্জাবিতে গদাকে বিশুদার চাইতেও ভাল দেখাবে।
—আরে শামু তুই? পথ ভুলে না কি?
—এ বে শ্শ্ শালা। অনেক দিন ধরে ভাবছি ছোটকালের দোস্তিটা একটু ঝালিয়ে নিই, মর্চে পড়ে গেছে।
—সাবাশ। আমিও ঠিক ওই কথাই ভাবছিলাম, বুঝলি শামু? তুই ব্যাক-ভলিতে যে গোলটা করে সবুজ সঙ্ঘকে ডুবিয়েছিলি, সেইটার কথা ভাবছিলাম এক্ষুনি স্টার স্পোর্টস-এ খেলা দেখতে দেখতে। জাস্ট এক্ষুনি, বিশ্বাস কর। আয় আয় ভেতরে আয়।
গদাদের বাইরের ঘরে বসে শামু বলবে—এ বোমবাজি, লোকজনের কাছ থেকে ভিক্ষে এ আর ভাল্লাগে না শালা। তোকে একটা প্রোপোজাল দিচ্ছি, দ্যাখ পছন্দ হয় কি না।
—বল। শুট ম্যান শুট।
—তোর কার্ডবোর্ডের কারখানাটা? ওর সিকিওরিটিতে আমাকে রেখে দে না। বাইসেপসগুলো দ্যাখ। কারাটের কথা তো জানিসই। আর স্টিলের নীলচে খোকাখুকুগুলো তো আমার কথায় ওঠে বসে—জানিসই। দ্যাখ ভেবে। চাকরিটা যদি দিস, আমি তোর সেলসের দিকটাও যথাসাধ্য দেখব। বাঙালির ছেলে, করেই দেখাই কিছু। খেয়োখেয়ি ভুলে! আফটার অল তুই আমাদের টিমের স্টপার।
গদা বলবে—সিরিয়াসলি বলছিস? এ উঞ্ছবৃত্তি আমারও আর ভাল লাগছে না, সত্যি বলছি। পাড়ায় হেঁটে বেরোতে পারি না। সব কেমন যেন চোখে তাকায়।
কিন্তু রাতের অন্ধকারে কালো প্যান্ট কালো বেল্ট পরে শামু শুট করে গদার বাড়ি ঢুকে গেলে পরবর্তী আলাপ-আলোচনাটা আর ওভাবে ভাবা যায় না। আমার কল্পনা আর খেলে না, খেলতে চায় না।
খুব টেন্স্ হয়ে বাড়ি আসি। বাথরুমে গিয়ে আচ্ছাসে জল ঢালি, মাথায় গায়ে। বেরিয়ে আসতে মা বলল—আচ্ছা রুণু, তোর কী আক্কেল বল তো, গা মুছিসনি, পুরো গেঞ্জি পায়জামা ভিজে উঠেছে।
রাফ গলায় বলি—ঠিক আছে।
বউদি বলে—ওকে বলব মা?
—বলো।
—আমাদের সরকার কাকা বুঝলে রুণু একটা লাখটাকার প্রোপোজ্যাল দিয়েছেন। ওঁর মেয়েটি তো একমাত্র। রং কালো বলে দু’ চারবার পাত্রপক্ষ রিজেক্ট করবার পর এখন সে ধরেছে আর ও ভাবে বিয়ে করবে না। সরকার কাকার ইচ্ছে একটি ভাল ছেলেকে নিজের বাড়িতে রেখে ব্যবসার, ওঁর মাছের ভেড়ি আছে জানিস তো—ব্যবসাটা ভাল করে বুঝিয়ে তার হাতেই মেয়ে দ্যান। শুভশ্রীরও আপত্তি নেই। উনি তোকে খুব পছন্দ করেন। শুভশ্রীরও…
আমি বউদির কথার কোনও জবাব দিই না। রূঢ় হাতে সামনে থেকে রিন্টিকে সরিয়ে দিই। তারপর দোতলার সিঁড়ি উঠতে উঠতে রূঢ়তর গলায় বলি—মা, এখন আমার খিদে নেই। খাবার টেবিলে ঢাকা দিয়ে রেখো।
রাত ক্রমশ বাড়ে। আমি আমাদের ছোট্ট দোতলার ছাদে দাঁড়িয়ে সিগারেট ধরাই। ভীষণ একটা অস্থিরতা, একটা অন্ধ রাগ। আপনিও তো খান? একটা তেরো বছরের কিশোর মুখ তেরিয়াভাবে বলছে। ওকে আমরা বকাঝকা করি না, ও আপনার পকেট থেকে সিগারেট সরায় কথাটা আপনি বলতে পারলেন? জানেন ওকে আমরা হাত খরচা দিই! চুল আঁট করে আচড়ানো পেছনের ক্লিপ থেকে ঝুলছে, ছাঁট-কাট হীন স্লিভলেস ব্লাউজ, বগলের মাংস ফুলে ফোড়ার মতো বেরিয়ে আছে, টোপা কুলের মতো মুখ, ঢাউস-কোমর গান্ধারী। মেয়েটা যে অত পড়াশোনায় ভাল, দেখতে পায় না। ছোট ভাইয়ের সঙ্গে ভাগে পড়বার ব্যবস্থা করেছে। ভেড়ি! ভেড়ি! ভেড়ির ব্যবসা? করে কারা? অশিক্ষিত ধূর্ত, ফন্দিবাজ, প্রায় অ্যানটিসোশ্যাল, কালো মেয়ে মানে হতকুৎসিত। এই ভাবেই আমার ব্যবস্থা করার চেষ্টা হচ্ছে। শুধু দাদা-বউদি নয়। তারা তো পর বললেই হয়। কিন্তু নিজের মা, মা। তিনি আমার ঘর-জামাইগিরির বন্দোবস্তে সায় দিচ্ছেন। বা বা বা বাঃ। এইজন্যে বাজার থেকে খয়রা, কাজলি আনি, সিগারেট কমাবার চেষ্টা করছি, টুইশানি করে করে নিজের চার ভাগের তিন ভাগ খরচ চালাই। আমার বয়সী ছেলেরা সত্য, পানু, শামু, গদা, দীপু এদের থেকে সেইজন্যেই আমি এতদিন বেশি ভদ্র, বেশি মিশুক, বেশি সিনসিয়ার, বেশি রেসপনসিব্ল্ হতে চেষ্টা করেছি! কে আমাকে বারণ করত যদি আমি সত্যর মতো সাহাদের বাড়ির মেয়েকে নিয়ে পালাতাম, কে বারণ করত যদি শামুর মতো বোমা বাঁধতাম, দীপুর মতো রাস্তায় রাস্তায় ঘুরে মায়ের রোজগারে, বোনের রোজগারে খেতাম। গদার মতো মাফিয়া হতেই বা কে আমায় বাধা দিত! গদা আমাকে খুবই পছন্দ করত। ভিড়ে যেতেই পারতাম! কাদের জন্যে তা হলে আমার এত ভদ্রতা, এত সুখ্যাতি, এত চেষ্টা! ভেড়ি! মাছের ভেড়ি! শুভশ্রী? ঘরজামাই?
হঠাৎ চোখে পড়ে আপাদমস্তক আলো-নেভানো মহাজনদের বাড়িটা তারার আলোয় ভূতের বাড়ির মতো দাঁড়িয়ে রয়েছে। ওদের অবশ্য খুব পালিশ, চিৎকার করে টিভি-ক্যাসেট বাজে না ওদের বাড়ি। কিন্তু এই রকম শান্ত গ্রীষ্মের রাত্তিরে যখন দক্ষিণ থেকে হু হু করে হাওয়া বয়, তখন চ্যানেল ফাইভ, গোলাম আলি কি সুচিত্রা মিত্র ভেসে আসে। সেতার-সরোদ-বাঁশি এ সবও শোনা যায়। এগুলো কোনটা কার বাজনা বলবার বিদ্যে আমার নেই। পাশ্চাত্য সুরও আসে ভেসে। ভাল লাগে খুব, ধরতে পারি না কিছুই যদিও। ওদের বাড়ির সঙ্গীত রুচি খুব ব্যাপক এইটুকু বোঝা যায়। কিন্তু আজ কোনও আওয়াজ, কোনও সুর শুনতে পেলাম না। ভীষণ খারাপ হয়ে গেল মনটা। মহাজনদের বাড়ির অভূতপূর্ব বিপর্যয়ে আমাদের পাড়ায় অনেকেই খুব খুশি। যেমন সত্য। সত্য বলছিল এক পাড়ায় থাকবে অথচ কারও সঙ্গে মিশবে না এত অহংকারের উচিত সাজা হয়েছে। এ রকম মতামত অনেকেরই। অনেকে আবার খুব উদাসীন। সহানুভূতি বলতে ঠিক যা বুঝি, সমব্যথা, দুঃখিত হওয়া এরকমটা বোধ হয় কারওরই হয়নি। যেটা হয়েছে সেটা হল কৌতূহল, রোমাঞ্চকর নাটকের মঞ্চ হবার একটা গর্ববোধ। পাড়ার নাম মহেন্দ্র অপহৃত হওয়ার সুবাদে কাগজে উঠে গেছে। জবানবন্দি সূত্রে কিছু ছবিও। নিজেদের রাস্তা, নিজেদের বাড়ি, নিজেদের বিশেষত্বহীন মুখ কাগজের পাতায় দেখে বুক দশহাত। কীরকম যেন বিচ্ছিন্ন একটা অভিশপ্ত দ্বীপের মতো বাড়িটা।
সত্যিই ওরা কেন এখানে আছে? অত বড় বাগান, পৈতৃক ভিটের মমতা ছাড়তে পারেনি, না কি? ওদের বাড়ির বউরা? সাধারণত বউয়েরা এসে এইসব বায়না ধরে। পশ এরিয়ায় যেতে হবে, এই গাড়ি কিনতে হবে, বাড়ি এরকম সাজানো হবে—এদের বাড়ির বউয়েদেরও কি এ বিষয়ে কোনও বক্তব্য ছিল না? থাকলেও গ্রাহ্য হয়নি? এ এস-কে আমরা অনেকবার দেখেছি। টুকটুকে বৃদ্ধ। চুলগুলো সব সাদা। চেহারাটা একসময়ে বেশ ভারী ছিল, এখন আলগা হয়ে গেছে। কিন্তু চলাফেরা বেশ স্মার্ট। খটখট করে হেঁটে যান। বরং ওঁর স্ত্রীকে যা দেখলাম নার্সিং হোমে নিয়ে যাবার সময়ে—মোটা, থলথলে বৃদ্ধা, যেন এ এস-এর চেয়েও বয়সে বড়। কিন্তু কাউকে দেখেই খুব রিজিড মনে হয়নি। মনে হওয়া দিয়ে অবশ্য কিছু হয় না। কে ভেতরে ভেতরে কী, এ সব বাইরে থেকে বোঝা যায় না। কিন্তু মহাজনরা পাড়ার লোকের সঙ্গে একেবারে মেশে না কথাটাও ভেবে দেখতে গেলে সেন্ট পার্সেন্ট ঠিক নয়। পুজোর সময়ে চাঁদা চাইতে গেলে আমাদেরও অল্পতর বয়সে এ এস নিজের বিশাল বসার ঘরে বসাতেন, শরবত, মিষ্টি আসত। হাসিমুখে দু’ হাজার-এক, তিন হাজার-এক চাঁদা দিতেন। এখন বোধহয় আরও বেশি দ্যান, বিনা প্রতিবাদে। কেন? পুজোর সময়ে কী যেন ফাংশন হল সে-বার, এ এস-কে প্রেসিডেন্ট করা হয়েছিল। উনি এসেছিলেন। রাস্তার এক পাশে তক্তা মেরে তৈরি করা মঞ্চে বসে মালা-টালাও পরলেন। বক্তৃতাও করেছিলেন দু’ চার লাইন। জগদিন্দ্র বোধহয় জগাদা অরবিন্দদাদের সমসাময়িক, দেখা হলে হাসে, নড্ করে। মহেন্দ্র তো আমার সঙ্গে গাড়ির কাচ নামিয়েও কথা বলেছে, জাস্ট কী খবর, ভাল তো!—এইরকম। ওদের বিয়েতে রিসেপশন অন্যত্র কোথাও ক্লাবে-ট্লাবে হয়েছিল। কিন্তু নিজেদের বাগানে একদিন পাড়ার লোকেদের পংক্তিভোজন করিয়েছিল ভাল কেটারার দিয়ে। —এর চেয়ে বেশি সামাজিক আদান প্রদান কি কোটিপতিদের সঙ্গে আমাদের সম্ভব? ওরা যদি মিশতে চাইতও, আমরা পারতাম? আমাদের বাড়ির বিয়েতে আমরা কখনও ওদের নেমন্তন্ন করেছি?
হঠাৎ কেমন মনে হল ওদের ঐশ্বর্য, ওদের সামাজিক প্রতিপত্তি, ওদের কালচার, ওদের বউ ছেলেমেয়েদের রূপ এই সবেতে ঈর্ষান্বিত হয়ে আমরাই এত বড় আঘাতটা ওদের দিয়েছি। পাড়াটা যেন ওত্ পেতে ছিল বুনো শেয়ালের মতো। ঝোপঝাড়ের আড়ালে-আবডালে, সেইসব শেয়াল এক গ্রীষ্মের নির্জন রাস্তায় বাগে পেয়ে টুঁটি টিপে ওদের নিয়ে গেছে। এখন বোধহয় তারিয়ে তারিয়ে খাচ্ছে।
ধনী আর দরিদ্র, ক্ষমতাশালী আর ক্ষমতাহীনের এই যুদ্ধ অঘোষিত, অলিখিত। এ কি কোনওদিনও ঘুচবে না? ওরা আমাদের অবজ্ঞা করবে, এড়াবে। আমরা ওদের হিংসে করব, ওদের শোকে আনন্দ করব!
—রুণু, খাবি না? —পেছনে মায়ের গলা।
—যাচ্ছি, যাও।
—এগারোটা বেজে গেছে। রুটিগুলো ঠাণ্ডা কড়কড়ে হয়ে গেল।
—যাচ্ছি।
মা বোধহয় এত রাগতে আমাকে কখনও দেখেনি। আর টু শব্দটি না করে চলে গেল। কে জানে নিজে খেয়েছে কি না। আমার মা আপাতদৃষ্টিতে খুব সেন্টিমেন্টাল অবশ্য নয়। বাবার মৃত্যুর পর মাকে মাছ খাওয়াতে, পাড়-ওয়ালা শাড়ি পরাতে আমাদের খুব বেগ পেতে হয়নি। আমরা বলেছিলাম মা তোমাকে আমাদের খুব দরকার, তোমারও আমাদের। ওসব নিরামিষ-টিষ নিয়মের কোনও মানে হয় না। তবু যদি করা সম্ভব হত, না হয় করতে কিন্তু মাছটুকুই একমাত্র প্রোটিন যা আমরা সহজে জোগাড় করতে পারি। ডাল-রুটি খাওয়া শরীরও আমাদের নয়। তুমি স্বাস্থ্য হারাবে মা, তখন আমরা কী করব? মা একটু চুপ করে থেকে বলেছিল —তোদের বাবাও এসব মানতেন না। —একটু কম সেন্টিমেন্টাল আর বেশি প্র্যাকটিক্যাল বলে মা নিজের অম্লশূলের ব্যথার কথা মনে রেখে খেয়ে নিয়েছে আশা করা যাক। এখন আমার রাগটা অনেক পড়ে এসেছে। কিন্তু এই একাকিত্ব আমার যেন আরও কিছুক্ষণ দরকার। খেতে এত অনিচ্ছাও আমার আগে কখনও হয়নি। রাগ-অভিমান এমনই জিনিস না কি? খিদে ভুলিয়ে দেয়! যে খিদের জন্য ভুবনময় এমন মরণ-বাঁচন যজ্ঞ?
নিস্তব্ধ রাত, কোথাও তীক্ষ্ণ সুরে মোবাইল বাজছে। দক্ষিণ থেকে প্রবল প্রবলতর হাওয়া এসে আমাকে, আমার ছাতকে উড়িয়ে নিয়ে যাচ্ছে। সেই হাওয়া কত দূর থেকে বয়ে আনছে এই শব্দ। অন্ধকারের মধ্যে মহাজন বাড়ির জানলাগুলো খোলা ছিল। আমার মুখোমুখি জানলাটা কেউ বন্ধ করে দিল।
নীচে গিয়ে লক্ষ্মীছেলের মতো মুসুর ডাল দিয়ে ভাত আলুর দম আর পটোল ভাজা খেয়ে উঠলাম। রুটি কড়কড়ে হয়ে যাবে, খেতে পারব না বলে মা রুটিগুলো নিজে খেয়ে, ভাতটা আমার জন্যে রেখে দিয়েছে। মায়ের রুটি একদম সহ্য হয় না। হঠাৎ আমার কী যে হল আরশুলা ফড়ফড়ে সেই একতলার কেরোসিন কাঠের টেবিলে মাথাটা উপুড় করে রাখলাম। চোখের জলে কাঠ ভিজে যেতে লাগল। কখনও মনে হতে লাগল মায়ের জন্য কাঁদছি, পরক্ষণেই মনে হল নিজের জন্যে কাঁদছি, তার পরেই মনে হল আমার চোখের জলের মধ্যে আবছা নাইলনের পর্দার ওপাশে যেন মহেন্দ্র মহাজন দাঁড়িয়ে আছে। —রাস্তার মাঝখানে থুতু ফেলাটা কি ঠিক হল? —কালো কাচ নিঃশব্দে উঠে যায়, নেমে যায়।
আমি কেঁদে যেতে লাগলাম। কেঁদে যেতে লাগলাম। আমারই বয়সি কোনও তরুণী মেয়েরই মতো হয়তো। এবং সারা রাত ঘুমের মধ্যে ঘোরাফেরা করতে লাগল গদাই। শামু। নানা কম্বিনেশন। কখনও গদাই শামুকে ফুটবলের মতো হেড মারে শামু শূন্যে চলে যায়। কখনও শামু গদার কোলে বসে গলা জড়িয়ে চুমু খায়, কখনও দু’জনে হাত ধরাধরি করে আমার কাছে এসে বলে পার্লামেন্টের সামনে হিউম্যান বম্ব ফাটাচ্ছি, তুই আমাদের সঙ্গে আছিস তো? আমি সানন্দে রাজি হয়ে যাই, যেন শুশুনিয়ার পাহাড়ে মাউন্টেনিয়ারিং-এর পয়লা পাঠ নিতে যাচ্ছি। তারপরই কোথা থেকে মহেন্দ্র মহাজন এসে বলে—এটা কিন্তু ঠিক করছ না শামু। শুভশ্রী কালো বলে কি সে মানুষ নয়? শামু উল্টো দিক থেকে এসে বলে—শুভশ্রী আমার বোন কিন্তু খুব সুন্দরী। তুই বিলকুল ভুল শুনেছিস। এখন দেখ ভেড়া চড়াতে যদি রাজি থাকিস তো শুভশ্রীর সঙ্গে তোর বিয়ে দিই, গদা সাক্ষী। এমনি উল্টোপাল্টা ঘটনার মধ্যে কখন যেন মা এসে বলল—রুণু আমি তা হলে যাচ্ছি, যাচ্ছিরে! আমি শামুর কথা শুনতে ব্যস্ত ছিলাম, ঘাড় নেড়ে বললাম—ঠিক আছে যা-ও। এই সময়ে তুলতুল ছুটতে ছুটতে এসে বলল—মাস্টারমশাই ও দিকে দেখুন ওই যে! আমি তাকিয়ে দেখি মহাসমুদ্রে সবুজ তুফান। একটা মাছ রাখার ঝুড়ি তার ভেতর দিয়ে ভেসে যায়। ঝুড়ির মধ্যে আমার মায়ের মাংস। মা পরপারে চলল। মা-মা বলে চিৎকার করে আমি জেগে উঠি। আমার দেড়তলার ঘরে পাক দিয়ে দিয়ে সেই চিৎকার ফেরে। যেন আমি নয়। অন্য কেউ, অন্য কারা, সমস্ত পাড়া, সারা পৃথিবী মায়ের মৃত্যু টের পেয়ে আর্তনাদ করছে।