Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » তার চোখে আমি || Shamsur Rahman

তার চোখে আমি || Shamsur Rahman

লোকটার চোখে চোখ পড়বার সঙ্গে সঙ্গেই জেনে গেলাম
কোথায় সুখের ধাম
জানে না সে আর তার কাছে
যারা দেবে ধরা তিন ভাগ কালো জলের মতোই দুঃখ আছে
তাদেরও কপালে সুনিশ্চিত।
দরজা-জানালা যার হতচ্ছাড়া, যার ভিত
খুবই নড়বড়ে,
এক যুগ আগে তপ্ত অনুরাগে আমি তো স্বেচ্ছায় রেখেছি পা সেই ঘরে।
এতকাল পরেও সে দুর্বোধ পুঁথির মতো
রয়ে গেছে আমার নিকট। অবিরত
পাঠ করে কখনো সখনো মনে হয়, হয়তোবা
উদ্ধার করেছি লিপি; পরমুহূর্তেই আরে তোবা
অবলীলাক্রমে সে লেখন হয়ে যায় দুঃস্বপ্নের
হিজিবিজি এবং সে নিজে কী রত্নের
আশায় কাটায় কাল গ্রন্থ হাতে রাত্রিদিন। থাকে সর্বক্ষণ
এভাবে, স্বগৃহ যেন পান্থশালা, মনের মতন
ঠাঁই মানে প্রকৃত গন্তব্য তার অন্যত্র কোথাও।
কখনও আমার প্রতি মনোযোগী অতিশয়, প্রায়-প্রেম, তা-ও
মনে হয়, সত্তায় মাখিয়ে দেয়; কখনো নিস্পৃহ উদাসীন।
যখন সে দস্যুতায় প্রবল জড়িয়ে ধরে, জিভ দিয়ে জিভ ছোঁয়, রিন-
ঝিন বাজে শিরা-উপশিরা, রুপালি তরঙ্গ হয়ে
এক ঝাঁক হাঁস ওড়ে মগজে আমার। কী করে যে, হায়, ক্ষয়ে
যায় সে মুহূর্তগুলো
অতি দ্রুত, স্বর্ণরেণু চকিতে বদলে হয় মুঠো মুঠো ধুলো।

কোনো কোনো মধ্যরাতে জেগে দেখি, আমার যুগল
ঊরুর একান্ত মোহনায় মুখ গুঁজে রয়েছে সে, ছলচ্ছল
নড়ে উঠলেই আমি, চেপে ধরে স্তন; জিভ তার,
যেন মাছ, মারে ঘাই, কী-যে ঘেন্না লাগত আমার
প্রথম প্রথম। আজ উপভোগই করি, বলা যায়, যথারীতি।
শরীরে আলোর মতো অন্য শরীরের গলে যাওয়া, এ বিস্মৃতি
অনুপম, এ বিলয়, একেই কি বলে ঠিক ঠিক
ভালবাসা? আমি এতই কি অন্তরঙ্গ তার বাস্তবিক?
অথচ যখন দেখি তাকে সুখে তন্ময় ফুঁকতে সিগারেট,
জ্বলন্ত সে বস্তুটিকে মনে হয়, আমার চেয়েও বেশি অন্তরঙ্গ তার।
মাথা হেঁট করি সে মুহূর্তে নিরুপায়। কখনও সে ঘরময়
করে পায়চারি, কখনোবা নিজস্ব অলিন্দে আর সকল সময়
ঠোঁট কাঁপে তার, যেন প্রজাপতি হয়ে উড়ে যাবে
ঘাসের ডগায়; কী-যে আওড়ায় মনে মনে, জ্বলন্ত সদ্ভাবে
টেনে নেয় খাত, লেখে টেবিলে অত্যন্ত ঝুঁকে, বুঝি
সদ্য কোনো ডাইনী করেছে ভর, যার হাতে পরমায়ু-পুঁজি
করেছে স্বেচ্ছায় সমর্পণ, যার ডাকে
সংসার কুটোর মতো ভাসে; বীণাপাণি তার বাহুলগ্ন থাকে
দেখে লক্ষ্ণীঠাকরুন দুয়ার থেকেই ফিরে যান।
আমি তো ফেরাতে চাই তাকে, চাই এখনও আপ্রাণ।
কিস্তি জোগায় না বলে বীমার কাগজ এই নিয়ে কতবার
হল অর্থহীন, কিন্তু আবার গুছিয়ে আনে, দায়িত্বে ভার
নামায় সত্বর, যেন এক্ষুণি কোথাও যেতে হবে,
নইলে ফেল করবে শেষ ট্রেন। অন্তর্গত কলরবে
অকস্মাৎ সেতারের তার ছেঁড়ার মতোই হয়ে যায় ফের সব
উল্টা-পাল্টা; গোরস্থানে বসে শুধু দেখে যাব উদ্ভট উৎসব?

কখনো বিকেলে সেজেগুঁজে ওর পাশে এসে
দাঁড়ালে সে হেসে
‘শাড়িটা তোমাকে দিব্যি মানিয়েছে’, এ মামুনি কথাটাও তার
ঠোঁট থেকে ভুলক্রমে দেয় না ঝরিয়ে, বলে নাকো ‘কী বাহার
তোমার খোঁপার’, অথচ আমাকে আমুল ছিনিয়ে
এনে কাজ থেকে বলে, ‘দ্যাখো, কী সুন্দর দুটি পাখি খুশি নিয়ে
এসেছে উঠোনে আমাদের। আমি পাখি নয়, তাকে
দেখি এই জীবনের অগ্নিশুদ্ধ অখ্যাত বৈশাখে।

আমার লাব্যণ্য চুরি করে
পাঁচটি সন্তান বড় হচ্ছে কেবলি হোঁচট খেয়ে রুক্ষ পাথরে পাথরে।

এ কেমন মানুষ বুঝি না, রক্তে কী-যে শরারতি
করে তার শিরায় শিরায় মাঝেমধ্যে আর রতি
অকস্মাৎ চোখে আনে রত্নের ঝলক, সে আমার সামনেই
অন্য মহিলাকে হানে কুকুর-নজর, ভেজা সেই
দৃষ্টি অপমান করে বস্তুত আমাকে বার-বার।

পেছনে অস্পষ্ট রেখে স্বপ্নের খামার
কোনো কোনো ভোরে
সঙ্গমস্পৃহায় কাতর সে স্তনে, আমার কোমরে
রাখে হাত এবং দুর্গন্ধময় মুখ চেপে ধরে মুখে,
আমি সহ্য করি শুধু নাকি মুহূর্তের স্পর্শসুখে
ভালবেসে ফেলি তাকে চরম ঘেন্নায়?
বাসি বিছানায়
যখন কুঁকড়ে পড়ে থাকে, বড় মায়া হয়, ভাবি-
আমার সকল ওম দিই তাকে, আছে তার দাবি।

পাশাপাশি শুতে হয়, এটাই তো রীতি চিরদিন;
আমাকে জড়িয়ে ধরে হয়তো সে দিকচিহ্নহীন
কেমন অদৃশ্য পথে ঘোরে ঘুমঘোরে, ভাবে অন্য
কারো কথা, হয়তো আবৃত্তি করে কারুর শরীর। আমিও কি অতি বন্য
স্বপ্নের ঝালর নিয়ে চোখে হু হু শূন্যতায় শুনি আর কারো
পদধ্বনি? তখন দেখলে কেউ আমাদের বলবে, প্রগাঢ়
ছাপ নিয়ে রহস্যের খাটে প’ড়ে আছ দুটি মৃতদেহ। এমন কন্দর
আড়ালেই থাক; আমি তো বেহুলা নই, সে-ও নয় লখিন্দর।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *