Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ডাকিনীতন্ত্র || Syed Mustafa Siraj » Page 9

ডাকিনীতন্ত্র || Syed Mustafa Siraj

শুধু এটুকু বুঝেছিলাম, করুণাময়ী চুপিচুপি আশ্রম থেকে কলকাতা যেতে চান। কর্নেলকে জিজ্ঞেস করে কোনও হদিস পাইনি। এক্কাগাড়ি চেপে কৃষ্ণনগর স্টেশন, তারপর ট্রেনে শেয়ালদা পৌঁছুতে রাত সাড়ে আটটা বেজে গিয়েছিল। সারা পথ করুণাময়ী গম্ভীর এবং নীরব ছিলেন। কর্নেলও তাই।

শেয়ালদা থেকে ট্যাক্সি থেকে চেপে বাগবাজারের দিকে যাওয়ার সময় আমার খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। কর্নেল নির্বিকার। পেছনে কোনও কালো আম্বাসাডার দেখামাত্র মনে হচ্ছিল, আমাদের ফলো করে আসছে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তেমন কোনও কালো গাড়ি ফলো করে এল না।

ট্যাক্সিচালক ট্রামলাইন থেকে গলিতে ঢুকতে রাজি হলো না। কালকের মতো এ রাত্রেও এলাকা জুড়ে লোডশেডিং। প্রতি মুহূর্তে আমার আশঙ্কা হচ্ছিল, শিববাবুর গুণ্ডারা হামলা করবে। বাড়ির গেটের কাছে গিয়ে করুণাময়ী ডাকলেন, ভবতারণ! অবু!

পোর্টিকার ছাদ থেকে টর্চের আলো এসে পড়ল। অবনীর সাড়া পাওয়া গেল, কে? কী চাই?

আমি। গেট খুলে দে!

টর্চ নিভে গেল। একটু পরে নিচের প্রাঙ্গণে আবার জ্বলে উঠল। অবনী ত্রিশূল এবং টর্চ নিয়ে হন্তদন্ত হয়ে আসছিল। করুণাময়ী রুষ্ট স্বরে বললেন, আলো নিভিয়ে দে বলছি!

কী কাণ্ড! পিসিমা না? আমি স্বপ্ন দেখছি না তো? ব্রহ্মময়ী! মা গো!

ন্যাকামি করলে থাপ্পড় খাবি। শিগগির গেট খুলে দে বলছি।

অবনী গেট খুলে দিল। আমরা ঢুকলে সে তক্ষুণি তালা এঁটে দিয়ে বলল, মায়ের এ কী লীলা! আমি মাইরি বিশ্বাস করতে পারছি না–

চুপ। ভবতারণ কোথায়?

সন্ধ্যায় বেরিয়েছে। অবনী হাঁটতে হাঁটতে বলল। দুপুরে ব্যাটাচ্ছেলে ফিরল। বাড়ি ঢুকতে দেব না ভেবেছিলাম। কিন্তু ঝামেলার ভয়ে ওকে ঘাটালাম না। শিবু উকিলের গুণ্ডাদের নিয়ে এসে উল্টে আমাকেই যদি বাড়ি থেকে বের করে দেয়? তা তুমি হঠাৎ এসে পড়বে কল্পনাও করিনি। মায়ের দিব্যি! কর্নেলসাহেব তোমাকে ডেকে এনেছেন মনে হচ্ছে? ও মশাই! ব্যাপারটা কী?

কর্নেল বললেন, গোপার খবর কী অবনীবাবু?

এখনও পৌঁছুতে পারেনি। তবে অলরেডি আমি রঞ্জুবাবুর সঙ্গে কনসাল্ট করে এসেছি।

করুণাময়ী দোতলায় উঠে বললেন, অবু! খোকা কোন্ ঘরে ছিল?

পিসেমশাইয়ের ঘরে।

ঘরটা খুলে দে। আর লণ্ঠন বা মোম নিয়ে আয়।

অবনী নিজের ঘর থেকে আগে হ্যারিকেন নিয়ে এল। তারপর সুদর্শনের ঘরের তালা খুলল। করুণাময়ীর নার্ভ যে কত শক্ত, তা টের পাচ্ছিলাম। বললেন, কর্নেলসাহেব! আমাকে সব বুঝিয়ে দিন। খোকাকে যে সত্যি মার্ডার করা হয়েছে, আপনি কী করে বুঝলেন আমি ডিটেলস জানতে চাই।

কর্নেল সেই চেয়ারে বসে হাত দুটো টেবিলে বিছিয়ে মুখ কাত করে রেখে চমৎকার অভিনয় করলেন। তারপর বললেন, ভাঙা কাপটা এখানে পড়েছিল। চেয়ারে বসে কফিতে চুমুক দিলে কাপ নিচে পড়বে না। পটাসিয়াম সায়নায়েড কয়েক সেকেন্ডেই কাজ করে। কাজেই কাপটা টেবিলেই গড়িয়ে পড়া উচিত ছিল। টেবিলে কোনও তরল পদার্থের চিহ্ন ছিল না। ডান হাত টেবিলে ওভাবে ছড়িয়ে পড়ার সম্ভাবনাও ছিল না। এবার সুদর্শনের ল্যাবে আসুন।

অবনীর হাত থেকে করুণাময়ী হ্যারিকেন নিলেন। অবনী বলল, আমি পোর্টিকোর ছাদে যাচ্ছি পিসিমা! বাড়িতে চোর ঢুকতে পারে। পাহারা দিই গে।

সে চলে গেল। সুদর্শনের ল্যাবে ঢুকে করুণাময়ী শ্বাস ছেড়ে আস্তে আস্তে বললেন, এ ঘরে খোকার বাবার ল্যাবরেটরি ছিল।

কর্নেল গ্যাসওভেনের কাছে গিয়ে খুদে টর্চ জ্বেলে হাঁটু মুড়ে বসলেন। তারপর হঠাৎ উঠে দাঁড়ালেন। গম্ভীর মুখে বললেন, আশ্চর্য! কাপের কয়েকটা সূক্ষ্ম কুচি পড়ে ছিল। নেই। কফির দাগ ছিল। ঘষে মুছে দিয়েছে কেউ।

করুণাময়ী এগিয়ে গেলেন একটা কাঁচের দেওয়াল-আলমারির দিকে। নানা সাইজের কৌটো, প্যাকেট আর শিশি-বোতলে আলমারিটা ভর্তি। উনি কাঁচের পাল্লা ধরে টানতেই খুলে গেল।

কর্নেল বললেন, আলমারিটা খোলা ছিল দেখছি!

করুণাময়ী লণ্ঠনটা আমাকে দিয়ে একটা চেয়ার টেনে আনলেন। চেয়ারে উঠে উপরের তাকের পেছনে হাত ভরলেন। তারপর ব্যস্তভাবে খোঁজাখুঁজি শুরু করলেন।

কর্নেল বললেন, পটাসিয়াম সায়নায়েডের শিশি খুঁজছেন কি?

হ্যাঁ। কিন্তু পাচ্ছি না।

আপনি জানতেন ওখানে শিশিটা ছিল?

জানতাম। করুণাময়ী চেয়ার থেকে নামলেন। তবে এক বছর আগের কথা। খোকার বাবা পরে কোথাও সরিয়ে রেখে থাকবে। শুধু বুঝতে পারছি না, আলমারিটা খোলা কেন?

সুদর্শন হয়তো বন্ধ করতে ভুলে গিয়েছিল।

করুণাময়ী আমার হাত থেকে হ্যারিকেন নিয়ে ল্যাবের ভেতর ঘোরাঘুরি করে বললেন, এই ল্যাবে অনেক নতুন যন্ত্রপাতি দেখছি। এ দুটো কি কম্পিউটার?

হ্যাঁ। আপনার বউমাও বায়োকেমিস্ট। স্বামীর রিসার্চের ব্যবস্থা করে দিয়েছিল।

করুণাময়ী বাঁকা মুখে বললেন, ওর চালাকি খোকা ধরতে পেরেছিল। সরল সাদাসিধে ছেলেটাকে এক্সপ্লয়েট করছিল মেয়েটা।

কর্নেল পকেট থেকে সুদর্শনের লেখা চিঠিটা বের করে দিলেন। বললেন, পড়ে দেখুন।

করুণাময়ী একটা টেবিলে লণ্ঠন রেখে চিঠিটা পড়লেন। তারপর বললেন, আমি খোকাকে কখনও বলিনি বউকে নিয়ে আমেরিকা ফিরে যাক। এ কথা খোকা কেন লিখল জানি না। আমি ওকে বলেছিলাম, ওকে তোর বাবার ফমুল্ম দিয়ে ভুল করেছিস। ফাইলটা কেড়ে নিয়ে মেয়েটাকে বাড়ি থেকে তাড়িয়ে দে।

কর্নেল বললেন, ফাইলটা কেড়ে নেওয়ার সাহস সুদর্শনের ছিল না। তাই গোপনে গোপার স্যুটকেস থেকে হাতিয়ে নিয়েছিল। এখন বুঝলাম আপনার কথায় সে এ কাজ করেছিল।

ফাইলটা কি খুঁজে পেয়েছেন আপনি?

ফাইলটা আমি পেয়েছিলাম। পুড়িয়ে নষ্ট করে দিয়েছি।

ভাল করেছেন।

চিঠিটা আমাকে প্লিজ ফেরত দিন।

চিঠিটা দুহাতে ধরে ঠোঁটে চেপে ধরলেন করুণাময়ী। কাঁপা কাঁপা গলায় বললেন, আমার খোকার হাতের শেষ চিহ্ন!

যথাসময়ে ওটা আপনার হাতেই তুলে দেব। আই প্রমিস!

করুণাময়ী চিঠিটা কর্নেলকে ফেরত দিয়ে বললেন, পটাসিয়াম সায়নায়েডের শিশিটা খুঁজে বের করা উচিত। শিশিটা ভর্তি ছিল দেখেছিলাম।

বলে উনি পাশের ঘরে গিয়ে ডাকলেন, অবু! শুনে যা তো!

অবনী করিডরে এসে বলল, পিসিমা! মাইরি আমি কল্পনা করতে পারছি না, তুমি এসেছ!

ভাং গিলেছিস?

তোমার দিব্যি

তুই ল্যাবের কাঁচের আলমারি খুলেছিলি?

আমি? আমার মাথা খারাপ? ওষুধের আলমারি খুলে আমি করবটা কী?

ওতে পটাসিয়াম সায়নায়েডের শিশি ছিল। খুঁজে পেলাম না।

ওরে বাবা! এ কী সাংঘাতিক কাণ্ড!

অবু? এখনও ব, তুই ওটা চুরি করে কাউকে বেচেছিস কি না?

মা কালীর দিব্যি! পিসিমা! আমি তাই পারি? আমি কেমন করেই বা জানব ওই আলমারিতে সায়নায়েড আছে?

তুই খোকার বাবার আসিস্ট্যান্ট ছিলি। তুই নিশ্চয় জানতিস।

আমার কিস্যু মনে নেই! তপজপ তন্ত্রসাধনা নিয়ে কাটাচ্ছি। আমাকে দেখেই তোমার বোঝা উচিত ছিল, কী ছিলাম আর কী হয়েছি। বলে অবনী হঠাৎ গলার স্বর চাপা করল। আমার সন্দেহ হচ্ছে, এ নিশ্চয় ভবার কাজ। চলো তো পিসিমা, ভবার ঘর সার্চ করে দেখি। সে কর্নেলের দিকে তাকাল। ও মশাই! আপনি তো গোয়েন্দা! তালা ভাঙতে পারবেন?

কর্নেল হাসলেন। তালা ভাঙার দরকার কী অবনীবাবু! আমরা বরং অপেক্ষা করি। ভবতারণ ফিরে আসুক।

পিসিমা! এস। আমার ঘরে বসবে। আমি চা-ফা করে আনি।

করুণাময়ী রুক্ষ কণ্ঠস্বরে বললেন, না। আমরা নিচে গিয়ে দাঁড়াচ্ছি। আমাকে আজ রাত্রেই আশ্রমে ফিরতে হবে।

অবনী কাঁদো কাঁদো মুখে বলল, আশ্রমে কাল দিনেই যেও বরং। কে জানে কেন আজ রাত্রে বড্ড অস্বস্তি হচ্ছে। তুমি থাকলে সাহস বাড়ে। বুঝলে না? শিবু উকিলের গুণ্ডারা কখন এসে হামলা করে বলা যায় না। অন্তত আজ রাত্রিটা থেকে যাও পিসিমা! কাল থেকে আমার আর ভয় নেই।

কর্নেল বললেন, হ্যাঁ। গোপা দিল্লি থেকে এসে গেলেই আপনি নিশ্চিন্ত।

করুণাময়ী বললেন, সেই বজ্জাত ডাইনি মেয়েটা আবার আসবে? তার সাহস তো কম নয়।

অবনী গম্ভীর মুখে বলল, পিসেমশাই যে কেলোর কীর্তি করে গেছেন। উইল অনুসারে গোপা এই প্রপার্টির মালিক। শিবু উকিলের কাছে উইল আছে। দেখে এসো গে না!

করুণাময়ী শ্বাসপ্রশ্বাসের সঙ্গে বললেন, চলুন কর্নেলসাহেব! নিচে যাই। এখানে থাকতে আমার দম আটকে আসছে।

আমরা নিচে গেলাম। পোর্টিকোর সামনে লনে গিয়ে দাঁড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুৎ ফিরে এল। অবনী বলল, ততক্ষণ মন্দিরে গিয়ে মায়ের আশীর্বাদ নিয়ে আসি! তারা! ব্রহ্মময়ী! মা গো!

এতক্ষণে লক্ষ্য করলাম, অবনী মৈত্রের পায়ে খড়ম নেই। খালি পা। আজ সকালেও কর্নেলের বাড়িতে সে খালি পায়ে গিয়েছিল।

কর্নেল বললেন, অবনীবাবুর তন্ত্রসাধনার বাতিক সম্পর্কে আপনি কিছু জানেন?

করুণাময়ী বললেন, গুরুজি ওকে দীক্ষা দিয়েছিলেন। মাঝে মাঝে খোকার বাবার সঙ্গে আশ্রমে যেত। গুরুজির খড়ম চুরি করে ধরা পড়েছিল। খড়মজোড়া গুরুজিকে হিমালয়ে এক সন্ন্যাসী দিয়েছিলেন। আপনি বিশ্বাস করবেন কি না জানি না, সেই খড়ম পায়ে দিয়ে গুরুজি এক হাত উঁচুতে শূন্যে দাঁড়াতে পারেন।

সব সময়?

না। বছরে মাত্র একবার। কালীপুজোর রাত্রে অমাবস্যার তিথিতে হাজার হাজার ভক্তের চোখের সামনে উনি এই অলৌকিক শক্তি দেখান। সেই খড়ম চুরি করেছিল অবু। গুরুজি ক্ষমা করেছিলেন। ভক্তরা অবশ্য তার আগেই ওকে মারধর করেছিল। আমি আর খোকার বাবা তো লজ্জায় মুখ দেখাতে পারিনি গুরুজিকে। শেষে উনি নিজেই এ বাড়ি এসে আমাদের আশ্রমে ডেকে নিয়ে যান। করুণাময়ী শ্বাস ফেলে বললেন, যাক সেসব পুরনো কথা।

আপনি গোপনে আশ্রম থেকে এলেন কেন?

গুরুজি অনুমতি দিতেন না বলে।

কর্নেল হাসলেন। উনি অলৌকিক শক্তিধর সিদ্ধপুরুষ। উনি নিশ্চয় টের পাবেন।

পাবেন। কিন্তু উনি ক্ষমাশীল। মায়ের মন উনি বুঝবেন।

এইসময় গেটের কাছে ভবতারণের হাঁকডাক শোনা গেল। অবনী মন্দিরের দিক থেকে দৌড়ে এসে গেট খুলতে গেল। বলল, দ্যাখ গে কারা এসেছে। তোর পিণ্ডি চটকানো হবে।

ভবতারণ, হন্তদন্ত এসে থমকে দাঁড়াল।

করুণাময়ী বললেন, ভবতারণ! তুই আমার সঙ্গে দেখা না করে চলে এলি যে?

আজ্ঞে, সময় পাইনি।

অবনী হুঙ্কার দিয়ে বলল, ঘর খোত্ হতচ্ছাড়া! তোর ঘর সার্চ হবে।

ভবতারণ পাল্টা হুঙ্কার দিয়ে বলল, যান! বেশি জাঁক দেখাবেন না। আমি, কি চুরি করেছি যে আমার ঘর সার্চ হবে?

করুণাময়ী বললেন, তোর ঘরটা একবার দেখতে চাই ভবতারণ!

ভবতারণ ভড়কে গেল। তা দেখবেন বৈকি। কিন্তু কেন–ঠাকরুন?

অবনী ত্রিশূল নেড়ে বলল, শাট আপ! ঘর খোল শিগগির?

গোমড়ামুখে ভবতারণ তার ঘরের তালা খুলল। সুইচ টিপে আলো জ্বালল। ছোট্ট ঘর। একটা তক্তাপোশে বিছানা পাতা। দড়িতে কয়েকটা জামাকাপড় ঝুলছে। দেওয়ালে অনেকগুলো ক্যালেন্ডার এবং তাকভর্তি ওষুধের শিশি।

অবনী বলল, সার্চ শুরু করুন কর্নেলসাহেব!

কর্নেল তাকের ওষুধের শিশিবোতলগুলো দেখতে ব্যস্ত হলেন। অবনী তান্ত্রিক তক্তাপোশের তলায় টর্চের আলো ফেলল। তারপর বলল, স্যুটকেসের পেছনে একটা শিশি দেখতে পাচ্ছি। দেখুন তো এটা কী?

শিশিটা দেখামাত্র করুণাময়ী কেড়ে নিলেন। তারপর শিশিটা মুঠোয় বুকের কাছে চেপে ধরে ভাঙা গলায় বললেন, ভবতারণ! তোর মনে এই ছিল?

অবনী বলল, আমি থানা থেকে পুলিশ ডেকে আনি। ওকে পালাতে দেবেন না।

কর্নেল বললেন, ব্যস্ত হওয়ার দরকার নেই অবনীবাবু!

কী বলছেন মশাই! হাতেনাতে ধরাপড়া আসামীকে ছেড়ে দেব?

একটু ধৈর্য ধরুন। আমি দেখছি!

ভবতারণ গুম হয়ে দাঁড়িয়ে ছিল। গলার ভেতর থেকে বলল, আজ্ঞে, কী। হলো কিছু তো বুঝতে পারছি না।

এই শিশিটা তুমি কোথায় পেয়েছিলে ভবতারণ?

আজ্ঞে, শিশিটা কোত্থেকে এল তা তো বুঝতে পারছি না স্যার!

এখনও খুলে বলো ভবতারণ!

সত্যি বলছি স্যার! শিশিটা আমি রাখিনি।

কী আছে এতে তুমি বুঝতে পারছ?

পারছি মনে হচ্ছে। বি-বিষ ভরা আছে।

এর আগে তুমি এটা দেখেছিলে কোথাও?

না স্যার! বলে ভবতারণ করুণাময়ীর পা জড়িয়ে ধরল। কেঁদে ফেলল সে। বিশ্বাস করুন মা-ঠাকরুণ! আমি কিছু জানি না। কেউ আমাকে ফাঁসাবার জন্য আমার ঘরে শিশিটা রেখে দিয়েছে।

করুণাময়ী পা ছাড়িয়ে নিয়ে বাইরে গেলেন। কর্নেল বললেন, ভবতারণ! আজ আশ্রম থেকে ফিরে তুমি ঘর পরিষ্কার করেছিলে। দরজার পাশে ধুলো জড়ো করা আছে।

দুপুরে পরিষ্কার করেছি। তখন শিশিটা দেখিনি।

আজ তোমার ঘরে কে এসেছিল?

একবার জগা এসেছিল। কিছুক্ষণ গল্প করে চলে গেল।

কে সে?

আজ্ঞে উকিলবাবুর লোক।

অবনী বলে উঠল, গুণ্ডা কর্নেলসাহেব! সাংঘাতিক লোক।

কর্নেল বললেন, আর কে এসেছিল?

তারকবাবুর ছেলে গোপাল এসেছিল।

অবনী বলল, সে-ও এক বাটপাড় মস্তান! জগার রাইটহ্যান্ড!

কর্নেল বললেন, গোপাল কেন এসেছিল?

টাকা ধার চাইতে।

অবনীবাবু! আপনি কি ওদের দেখেছিলেন?

না। কী করে দেখতে পাব? অবনী এগিয়ে গিয়ে ওপাশের একটা দরজা খুলল। এই দেখুন, ভবার চ্যালাচামুণ্ডাদের যাতায়াতের পথ।

ওদিকে কর্পোরেশনের আবর্জনার গাদা এবং একটা জঙ্গুলে পোড়ো জমি দেখা যাচ্ছিল। কর্নেল বললেন, দরজাটা বন্ধ করে দিন অবনীবাবু! আবর্জনার দুর্গন্ধ আসছে।

অবনী দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলল, তা হলে এবার থানায় যাই?

ঝামেলা বাড়িয়ে লাভ নেই অবনীবাবু! বলে কর্নেল বেরিয়ে গেলেন।

দেখলাম লনে আলো-আঁধারে দাঁড়িয়ে করুণাময়ী ফুঁপিয়ে কাঁদছেন। কর্নেল ওঁর কাছে গিয়ে বললেন, শিশিটা আমাকে দিন। আমার সঙ্গে আসুন। এ বাড়ি আপনার পক্ষে নিরাপদ নয়। জয়ন্ত, এগিয়ে গিয়ে একটা ট্যাক্সি দ্যাখো! মোড়ে পেয়ে যাবে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *