Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » ট্রেকার্স || Bani Basu » Page 8

ট্রেকার্স || Bani Basu

শুকতারা আর আরিয়ান এল একসঙ্গে। আরিয়ান চুলগুলোকে স্পাইক করে এসেছে। শুকতারার কোমর অবধি চুল কুচি-কুচি পার্ম করা। সাদা রঙের একটা কীরকম ঝিকমিকে টপ, জিন্‌স। স্টিলেটো বোধহয় সাড়ে তিন ইঞ্চি হবে। বাপ্‌স। একেই লম্বা, আরও লম্বা দেখাচ্ছে। বিরাট-বিরাট চোখ, কাজল, আইশ্যাডো এসব দিয়ে আরও বড় করেছে। ব্যস, আর কিচ্ছু না। বাবাইয়ের শুকতারার এই ড্রেস-আপ করার ধরনটা রাক্কুসি-রাক্কুসি লাগে। চেপে যায় অবশ্য সে। ঈপ্সা যখন বলে, “শুকতারার সেন্স অব ফ্যাশন অ্যান্ড গ্ল্যামার একেবারে টপ ক্লাস,” সে দুর্বলভাবে মাথা নাড়ে শুধু। রূপরাজ রিনার সঙ্গে ঢুকল। রূপরাজ এক্কেবারে যেভাবে কলেজে আসে, সেইভাবে চলে এসেছে। বাঘছালের মতো টপ, কালো জিন্‌স আর স্পাইক চুল আরিয়ানের পাশে দাঁড়ালে লোকে আরিয়ানকে ফিল্ম স্টার বলবেই। রিনা উপরে একটা চোলি জাতীয় জিনিস পরেছে। তার হাতায়, কনুইয়ের কাছে ঝালর, পেটটা সম্পূর্ণ খোলা। তলায় ফ্লেয়ার্স। চুলগুলোকে টপ নট করে রেখেছে।

বাবাই বলল, “কী রে ঈপ্সা, তোদের কি জোড়ায়-জোড়ায় আসা নিয়ম নাকি?”

“জোড়া, তবে বয়-গার্ল হতেই হবে, এমন কোনও মানে নেই। তুই-আমি এলাম কীভাবে?”

“এটা কাদের বাড়ি বললি না তো? বাড়ি বলে মনেই হচ্ছে না!”

“কার বাড়ি ডিসক্লোজ করা বারণ, জাস্ট এনজয় ইয়োরসেলফ।”

এই সময় একা-একা দিয়াকে আসতে দেখে চমকে গেল বাবাই। চারপাশে অনেক অজানা মুখ। একটি ছেলে ড্রিঙ্ক সার্ভ করছিল।

“আমি না,” বাবাই বলল।

“সফট নাও,” একটা আইসক্রিম সোডা ওর জন্যে এনে দিল ছেলেটি। বাবাই শুধু দিয়াকেই দেখছিল। দিয়াকে কীরকম অদ্ভুত অন্যরকম দেখাচ্ছিল। চোখদুটো চকচক করছে। ঠোঁট, গাল সবই চকচক করছে। একটা অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ মেখেছে। এসেই একটা ড্রিঙ্ক নিয়ে ঘরের এক কোণে চলে গেল। জানলার পাটিতে ভর দিয়ে একটা ফিশ ফিঙ্গার তুলে নিল, তারপর সিপ করতে লাগল। যেন ও একলাই থাকতে চায়, কাউকে ওর দরকার নেই। দিয়া খুব সুন্দর এবং খুব দেমাকিও। বাবাইয়ের অন্তত এমনই ধারণা। খুব ধনী ঘরের মেয়ে হলে এরকম অনেক কিছুই খুব-খুব হয়ে থাকে। সবাই কিন্তু দিয়াকে এতটা ‘খুব’ দেখে না। ঈপ্সাই বলে, “দিয়া একটুও সেক্সি নয়। ওর কোনও ড্রেস-সেন্সও নেই। ওর ওই ডিপ্রেশন-বিলাস নিয়েই থাকে। অবসেশন একটা। মা-বাবা আর কারও ডিভোর্স করে না। তোর তো বাবা তবু মায়ের অনেক টাকা, মায়ের সঙ্গে থাকতে পাচ্ছিস। বাবার সঙ্গেও খুব ভাল সম্পর্ক। আসল দুঃখ, আসল ব্রোকেন হোম কী জিনিস ও জানে? শান্তনুকে দেখ, মা ছেড়ে চলে গিয়েছে, বাবার সঙ্গে থাকে। দশ বছর বয়স থেকে মা একেবারে সাগর পার। বাবা ছাড়া বাড়িতে শুধু ঠাকুমা। ভদ্রমহিলা দিবারাত্র বউমাকে শাপ-শাপান্ত করছেন এখনও। বাবা খুব চুপচাপ। শান্তনু তিনটে টুইশনি করে পড়ে। লেখাপড়ায় যে দারুণ কিছু, তাও নয়। ওর জগৎটা কী তুই বল। তবু দেখ, শান্তনু ইজ ফুল অব জোক্‌স। কী হাসে ছেলেটা।”

এইসব কথা শুনে বাবাইয়ের কেমন গা শিরশির করে। বিবাহ-বিচ্ছেদ! মা দশ বছর বয়সে চলে গিয়েছে এসব কী জিনিস? তার বাবা রানাঘাটে হাসপাতালের ডাক্তার। মা বাইরে কিছু করেন না। কিন্তু বাড়ির মধ্যে সর্বেসর্বা। সেই বাবা-মাকে ছেড়ে চলে আসতে তার যে কী হয়েছিল প্রথম-প্রথম। এখন অনেকটা সয়ে গিয়েছে। প্রতিদিন একবার করে বাবা-মা’র সঙ্গে কথা না বললে তার ঘুম হয় না।

“বাবাই রাস্তা দেখে চলিস তো, কলকাতায় গাড়ি ভীষণ বেড়ে গেছে?” মা।

“অতদূর হস্টেল নিলি কেন, কতটা সময় নষ্ট হয়! তা ছাড়া ট্র্যাফিকও তো…” বাবা।

“পড়াশোনায় কোনও অসুবিধে হলে বলিস, যদি টিউটর লাগে।” মা।

“লাইব্রেরি-ওয়র্ক করবি…” বাবা।

“কেমন আছিস, আবার গলাব্যথা হয়নি তো?” মা।

“গার্গল কর, ভেপার নে, সব ঠিক হয়ে যাবে।” বাবা।

এ ছাড়াও কত কথা হয়। পড়াশোনার বিষয়ে, বন্ধুদের বিষয়ে। সে যখন ইলেভেনে তখনই বাবা বলেছিল, “ভাল করতে পারলে তুই প্রেসিডেন্সিতে ভর্তি হয়ে যাবি। একা-একা থাকতে হবে, কিন্তু হস্টেলে থাকার অভিজ্ঞতাটা খুব ভাল। জীবনে কাজে আসে।”

যখন আসা ঠিক হয়ে গেল মা বলেছিল, “ফট করে যেন আবার কারও সঙ্গে ভাবটাব করে ফেলিসনি। বিয়ে-থা সবই হবে, তোর পছন্দমতোই হবে, কিন্তু এখন থেকে ওসব ভাবিসনি।”

বাবা বলেছিল, “শুনেছি এখন ছাত্ররা ভীষণ নেশা করে, সাবধানে থাকিস।”

মা-বাবা যে কী করে ভাবল সে ফট করে প্রেম করবে বা নেশা করবে! আসলে ভয় পায়। জানে না বাবাই নিজেই কতটা রক্ষণশীল, কত সাবধান।

এবার একটা কমলালেবুর জুস নিয়েছে সে। টুকটাক কত কী আসছে, পুঁচকে-পুঁচকে শিঙাড়া, সসেজ ভাজা, চিকেন লিভার। গান বাজছে মোহময়। স্প্যানিশ গিটার হাতে একটি ছেলে উঠে দাঁড়াল, কোনও ইংরেজি গান গাইছে। তাল দিচ্ছে দিয়া। হাতের ড্রিঙ্কটা রেখে হঠাৎ নাচতে শুরু করে দিল। এইসব নাচের মাথামুন্ডু বোঝে না বাবাই। টিভিতে দেখেছে। সিনেমাতে তো আকছার। কিন্তু দিয়ার নাচটা ওর দারুণ লাগছে। ‘কাম অন বাবাই, কাম অন, ঈপ্‌স,’ কারা যেন বলল। ঈপ্সা তাকে একটা টান দিয়ে চলে গেল, “আয় না!” বাবাইয়ের হঠাৎ মনে হল, সবাই তো নাচছে। শুধু তালে তাল রাখা। ওরকম দিয়ার মতো শিক্ষিত নাচ কি সবাই নাচছে নাকি? ও যদি একদিকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকে, খুব বোকা-বোকা দেখাবে। সুতরাং ঈপ্সার টানের পরই সে হঠাৎ তার ছোট্টতে শেখা কত্থকের একটা চক্রদার করে ভিড়ের মধ্যে ঢুকে গেল।

“দ্যাটস লাইক আ গুড গার্ল।”

“দ্যাটস দ্য স্পিরিট!”

“ফ্যানটাস্টিক!”

চারপাশে তাকে, ঈপ্সাকে, দিয়াকে ঘিরে নাচতে-নাচতে এইসব মন্তব্য। আলো ক্ষণে-ক্ষণে রং বদলাচ্ছে। ‘ইউ আর লুকিং ইয়োর বেস্ট টু ডে’ কে কাকে বলল। কেমন আবছা হয়ে আসছে কেন ঘরটা? বাব্বাঃ, আলো নিয়ে এত কারিকুরি কারও বাড়িতে থাকে! ঘোলাটে-ঘোলাটে লাগছে, মাথাটা কি একটু ঘুরে গেল? কে তাকে সাপোর্ট দিল? হুহ্ করে একটা আওয়াজ, আলো নিভে গেল। সে অজ্ঞান নয়, শিয়োর আলোটাই নিভেছে। ভাগ্যিস তাকে ধরেছিল ছেলেটা। এ মা তাকে জড়িয়ে ধরে নিয়ে যাচ্ছে, এ মা, চুমু খাচ্ছে যে! বাবাই বাধা দিতে পারছে না। শরীরটা কেমন আলগা-আলগা লাগছে, তার বুকের ওপর হুমড়ি খেয়ে পড়ে ধরা-ধরা গলায় কেউ বলছে, “আই লভ ইউ বেবি। পার্ট ইয়োর লেগস ফর মি।” অজ্ঞান হয়ে যেতে-যেতে বাবাইয়ের একটা তীব্র যন্ত্রণা হল যোনিস্থানে। তাকে কেউ বা কারা দুরমুশ করছে একেবারে।

বারোটা প্রায় বাজল। উজ্জ্বল একটা মস্ত আড়মোড়া ভাঙল, মোবাইল অফ করল। টেবল-ল্যাম্প নেভাল। উঠে দাঁড়িয়ে শরীরটাকে একটু ছাড়িয়ে নিল। তারপর সোজা বিছানা এবং সঙ্গে-সঙ্গে ঘুমে জুড়ে গেল চোখের পাতা।

অ্যালার্মে ঘুম ভাঙল তখন সাড়ে পাঁচটা। উঠে পড়ে মোবাইলটা অন করে দিল সে। এবং সঙ্গে-সঙ্গে তীক্ষ্ণ স্বরে বেজে উঠল সেটা।

ও প্রান্ত থেকে কান্নামিশ্রিত একটা বিস্রস্ত, বিকৃত সুর শোনা গেল, “উজ্জ্বল, উজ্জ্বল বলছিস? শিগগিরই আয়, এক্ষুনি।” এ তো বাবাই বলছে, বাবাইয়ের নম্বর।

“কোথায় যাব? গোলপার্ক, কী ব্যাপার?”

“বাইশ নম্বর গ্রাহাম’স প্লেস, টালিগঞ্জ।”

“সে আবার কোথায়? আমি তো চিনিই না, ইংল্যান্ড-আমেরিকায়?”

“বললাম তো টালিগঞ্জে, ইন্দ্রপুরী স্টুডিয়োর কাছে। তুই একটা ট্যাক্সি নিয়ে যত শিগগির পারিস চলে আয়। এমার্জেন্সি।”

বাবাই একটা দোতলা ঘ্যাম দেখতে বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে। ওর সালোয়ার কামিজটা কীরকম যেন হাঁড়ির থেকে বের করে পরা। পিঠের কাছটা ফুলে উঠেছে। শুকনো রক্তের দাগ। একটা কী রকম ভাঙাচোরা বাবাই।

“শেষ পর্যন্ত এলি?”

“কী ব্যাপার তোর, ভোরবেলা কোথায় পড়লি?”

“খুব বিপদে পড়েছি”, বাবাইয়ের গলাটা কাঁপছে। সে বলল, “আয় দেখবি আয়।”

সে ভেতরে ঢুকল। কাঠের ওপর কার্পেট পাতা সিঁড়ি দিয়ে ওরা উপরে উঠল। বাবাই উঠছে যেন তার খুব কষ্ট হচ্ছে। ডানদিকে একটা বিরাট হলঘর। ঘরময় বোতল, সিগারেটের টুকরো, খাবারের টুকরো, থার্মোকলের প্লেট, বেশ কিছু একটা ওয়েস্ট বক্সে ফেলা। কিন্তু তার থেকে উপচে পড়েছে অনেক কিছু। ঘরটার মধ্যে দিয়ে আর একটা ঘরে ঢুকল ওরা ডানদিকে। উজ্জ্বল দেখল একটা মেয়ে মুখ ফিরিয়ে পড়ে রয়েছে, মৃতের মতো।

“আমি ওকে কিছুতেই জাগাতে পারছি না।”

উজ্জ্বল নিচু হয়ে মেয়েটির নাড়িতে হাত রাখল। হাত স্বাভাবিক গরম। চারদিকে মদের গন্ধ।

উজ্জ্বল হাতদুটো ঝেড়ে বলল, “শি ইজ জাস্ট আউট, প্রচুর মাল সাঁটিয়েছে। কী ব্যাপার, দু’জনে কামড়াকামড়ি করছিলি নাকি? এ মেয়েটারও তো দেখছি একই দশা। এর তো জিন্‌স্ ছিঁড়ে গিয়েছে দেখছি। এ হে হে রক্ত-ফক্ত শুকিয়ে রয়েছে।”

কিছুক্ষণ মেয়েটার দিকে তাকিয়ে উজ্জ্বল হঠাৎ ঘুরে দাঁড়াল, “বাবাই, তোর এসব গুণ তো আমার জানা ছিল না, ব্যাপার কী? এখানে তো কাল একটা মোচ্ছব হয়েছে মনে হচ্ছে।” বাবাইয়ের চোখ দিয়ে জল উপচোচ্ছে। সে কোনওমতে বলল, “আমার সফ্ট ড্রিঙ্কের সঙ্গে কেউ কিছু মিশিয়ে দিয়েছিল। কাল, মাত্র কালই আসতে রাজি হয়েছিলুম,” তার গলার স্বর বিকৃত হয়ে গেল।

“মক্কেলটি কে?”

“মক্কেল কেউ না, আমি বান্ধবীর সঙ্গে…”

“ওই মেয়েটা?”

“না, অন্য একজন। ও-ও ভিকটিম বুঝতে পারছিস না?”

“ভিক্…বাবাই, এ তো পুলিশ কেস দেখছি।” উজ্জ্বল হঠাৎ সমস্তটা বুঝতে পারে।

“প্লিজ উজ্জ্বল র‍্যাশ কিছু করিসনি।”

উজ্জ্বল বলল, “বাথরুম কোথায়?”

“ওই যে।”

উজ্জ্বল দ্রুত ঢুকে যায়। জল নিয়ে আসে মগে করে, তারপর নির্মমভাবে মেয়েটির চোখেমুখে জল ছেটাতে থাকে। একটু পরে মেয়েটি মাথা ঝাড়ে, তারপর আবার পাশ ফিরে শুতে গিয়ে, হঠাৎ খুব দুর্বলভাবে উঠে বসে। চোখ দুটো বড়-বড় হয়ে যায়।

বাবাই বলে, “তুই ঠিক আছিস তো দিয়া?”

“বা-বা-ই! আমি, তুই…এখানে…এ কি আমার জামাকাপড় এরকম ছিঁড়ল কে?” উঠে দাঁড়াতে গিয়ে প্রবল যন্ত্রণায়, তলপেট চেপে বসে পড়ল সে।

“কিছু মনে করতে পারছিস?”

“আমরা ভ্যালেন্টাইন পার্টিতে এসেছিলাম…”

“আমাদের ড্রিঙ্কের সঙ্গে কিছু মেশানো হয়েছিল। দিয়া, উই হ্যাভ বিন রেপ্ড।”

দিয়া মুখটা দু’হাত দিয়ে ঢেকে বসে রইল।

বাবাই বলল, “আমি আর দাঁড়াতে পারছি না উজ্জ্বল। কিছু একটা কর, এরকম চেহারায় বাইরে বেরতেও পারছি না।”

“আমি পুলিশকে কল দিচ্ছি।”

“হে, হু আর ইউ, স্টপ ইট!” দিয়া বলে উঠল।

বাবাই বলল, “ও উজ্জ্বল, আমার বন্ধু। শিবপুরে পড়ছে, ও কাল ছিল না।”

দিয়া বলল, “আমার ফোনটা, ফোনটা কই?”

“কাকে ফোন করতে চাও?” উজ্জ্বল গম্ভীর গলায় বলল।

“আমার ড্রাইভারকে, বাড়ি নিয়ে যাবে।”

“এর একটা হেস্তনেস্ত না হওয়া অবধি তোমাকে বাড়ি যেতে দিচ্ছি না। এ জায়গাটা কাদের, কারা ইনভলভড, তুমি নিশ্চয় জানো? বলো, না হলে আমি পুলিশে…”

“স্টপ ইট। আগে বাড়ি যাই। বাবাই-ও আমার সঙ্গে যাবে, তোমাকেও আসতে হবে।”

“উই নিড আ ডক্টর ফার্স্ট।”

দিয়ার ফোন পাওয়া গেল না। সে উজ্জলের ফোন থেকে একটা ফোন করল, “জয়দেবদা আমি দিয়া বলছি, কাল যেখানে পৌঁছে দিয়েছিলে হ্যাঁ…চট করে চলে এস।”

সে একটু ভেবে আর একটা ফোন করল, “আঙ্কল, আমি দিয়া বলছি। আমি খুব অসুস্থ, মা-ও কলকাতায় নেই। আপনি একবার আসবেন? ধরুন ঘণ্টাখানেক পরে? হ্যাঁ চেম্বার পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারব না।”

যখন হলটা পার হচ্ছে, চারপাশে ছড়ানো আবর্জনার মধ্যে একটা ব্যাগ পড়ে থাকতে দেখল উজ্জ্বল। চিকচিকে রুপোলি ব্যাগ।

“ওইটা কি তোমার, দেখো তো।”

“ইয়েস, ওই তো,” দিয়া বলে উঠল। খুলে দেখল। বলল, “সব আছে।”

দিয়ার বাড়িতেই থেকে যেতে হল বাবাইকেও। দু’জনেই খুব অসুস্থ। দিয়ার প্রচণ্ড জ্বর এসেছে। বাবাই ব্যথায় যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। ডাক্তার বললেন, “মেয়েটি এখানে থাক বুঝলে। কী নাম তোমার, উজ্জ্বল না? আমার দেখে যেতে সুবিধা হবে। এখন চোখে-চোখে রাখা দরকার।”

ঘর থেকে বেরিয়ে উজ্জ্বল বলল, “এফআইআর করি একটা?”

ডাক্তার চিন্তিত মুখে বললেন, “বাবাই মেয়েটি তো ওয়াশ করে নিয়েছেই। দু’জনের ক্ষেত্রেই লোকটিকে ওভাবে ধরবার উপায় নেই। এখন শুধু-শুধু টানাপোড়েন, পাবলিসিটি, ট্রমা তো একটা হয়েছেই। দিয়া তো এমনিতেই মেলাংকলিয়ায় ভোগে। খুব সাবধানে ওয়াচ রাখতে হবে। মা ইংল্যান্ডে, তাকে আমি একটা ফোন করে দিতে পারি। কিন্তু ভদ্রমহিলা আসতেও পারবেন না, অনর্থক ছটফট করবেন।”

“বাবা নেই ওর?”

“আছে, আবার নেইও। তুমি বোধহয় কিছুই জানো না। তোমার চেহারাটি বেশ, ভরসা হয়। দিয়ার মা-বাবা ডিভোর্সড। কেউ একজন থাকলে ভাল হত, অ্যাপার্ট ফ্রম দা ইউজুয়াল কাজের লোকস। তুমি?”

“আমি শিবপুরে বি ই কলেজ।”

“ঠিক আছে আমি একজন নার্সের ব্যবস্থা করছি। ডোন্ট ওয়ারি ইয়ংম্যান। তবু তুমি যদি একটু খেয়াল রাখো এদের, ভাল হয়। হোয়ট আ শকিং থিং টু হ্যাপন। ড্রিঙ্কের মধ্যে ওষুধ দিয়ে অজ্ঞান করে, যতই ভাবছি ততই মনে হচ্ছে, ইট উইল বি ক্রিমিন্যাল নট টু গো টু দা পোলিস।”

“আমারও তাই মত। এ তো রীতিমতো ক্রাইম!”

ডাক্তার বললেন, “এইসব জয়েন্ট হয়েছে আজকাল, নাইট ক্লাব-টাব। ইয়ং পিপ্‌ল কোন পথে যাচ্ছে? জুভেনাইল ক্রাইম কী রেটে বেড়ে যাচ্ছে! কিন্তু উজ্জ্বল, আমাদের ফার্স্ট কনসার্ন এই দুটি মেয়ের মেন্টাল হেল্থ।”

নার্স এসে গেলেন এগারোটা নাগাদ। তারপরে উজ্জ্বল বেরোতে পারল। সে আবার চলে গেল গ্রাহাম’স প্লেসের সেই বাড়ির সামনে। এখন সেখানে কিছু লোক ঘোরাফেরা করছে। ড্রামে করে আবর্জনা নিয়ে আসছে ওপর থেকে অর্থাৎ পরিষ্কার হচ্ছে। সে একটু এগিয়ে গেল। যে লোকটিকে সুপারভাইজার মনে হচ্ছিল তাকে বলল, “এ বাড়িটা কার?”

“কুলকার্নিদের। বিক্রি হবে না। এটা ওঁরা ভাড়া দেন, গেস্ট হাউজ হিসেবে ব্যবহার করেন।”

“গতকাল কে ভাড়া নিয়েছিল?”

“তা তো জানি না। আমাদের কাজ বাড়ি পরিষ্কার করা, করছি। আপনি কে, অত কথা জিজ্ঞেস করছেন?”

সে গম্ভীর গলায় বলল, “আমারও তো ভাড়া নেওয়ার দরকার থাকতে পারে।”

কুলকার্নিদের ফোন নম্বর ও ঠিকানাটা নিয়ে সে চলে এল।

বাস চলেছে হাওড়ার দিকে। উজ্জ্বল খেয়ালও করছে না কোথা দিয়ে যাচ্ছে। ভেতরটা শক্ত হয়ে উঠেছে। শক্ত এবং আগুনে পোড়ানো লোহার মতো গরম। নেমন্তন্ন করে ডেকে নিয়ে গিয়ে তাদেরই বয়সের একাধিক ইয়ংম্যান দুটি মেয়েকে অসাড় করে রেপ করল? বিশ্বাসঘাতকটা তো বটেই, কী সাংঘাতিক ক্রাইম। এটাতে ছাড়া পেয়ে গেলে এরকম আরও করবে, আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে যাবে। ইস্ বাবাইটা! একটা বুদ্ধিমতী, অ্যাথলিট মেয়ে এইভাবে ফাঁদে পড়ে গেল? ঠিক আছে বাবাই না হয় শহরের মেয়ে নয়, অনভিজ্ঞ। দিয়া? ও তো রীতিমতো আপার ক্লাস মড মেয়ে। ওর পক্ষে এরকম জালে পড়া কী করে সম্ভব হল? এবং অন্য যারা ছিল, সবাই কি এই ষড়যন্ত্রের অংশী? অন্য মেয়েগুলি, যে মেয়েটা বাবাইকে নিয়ে গিয়েছিল? জানত না, বাবাই হস্টেলে থাকে, তাকে জবাবদিহি করতে হবে? তার চেয়েও বড় কথা, সে তো বন্ধুকে সেধে ডেকে নিয়ে বিপদের মুখে ঠেলে দিল। কলেজের থার্ড ইয়ারের ছেলে-মেয়েদের পক্ষে এইসব ষড়যন্ত্র, এই সব ক্রাইম সম্ভব? হঠাৎ তার মনে পড়ে গেল, বাবাই একটা কী গিফট পেয়েছিল, ভ্যালেনটাইন না কী মডার্ন ন্যাকামি? তাকে জিজ্ঞেস করেছিল, সে পাঠিয়েছে কি না। অর্থাৎ বুঝতে পারেনি কে পাঠিয়েছে। নামটা গোপন করার দরকার কী ছিল মক্কেলের? ইয়েস, সে ডান হাত দিয়ে বাঁ হাতের তেলোতে একটা ঘুঁষি মেরে বলল, “গট ইট।”

আশপাশের লোক চমকে তাকাল।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress