ঝড়ের খেয়া (Jhorer Kheya) : 04
দরজা খুলে দিল শীলাদি। অদিতি চাবি বার করতে যাচ্ছিল অভ্যাসমতো। এমন সময়ে দরজাটা খুলে গেল। ও পাশে সন্ধ্যাপ্রদীপের মতো শীলাদি। বোধহয় জানলা দিয়ে দেখতে পেয়েছে। কী যে অদ্ভুত ভাল লাগল! সেন্টিমেন্টাল নয় অদিতি। কিন্তু আজকে কেন কে জানে তার চোখ সামান্য স্বচ্ছ হয়ে এল! তাতে শীলাদির কালো পাড় শাড়ি পরা ছায়া। একা, সম্পূর্ণ একা থাকাটা যে সে শুধু মেনে নিয়েছে, ভালবাসেনি কখনও— এটা সে যেন এতদিনে বুঝতে পারল। শীলাদি কি কিছু বুঝতে পারল? খুবই সংবেদনশীল মানুষটি। সূক্ষ্ম সূক্ষ্ম ভাব পরিবর্তন বুঝে ফেলতে পারে এ অদিতি অনেকবার দেখেছে। বুঝলে বুঝেছে। অদিতি নিজের সব ভাব সবার কাছ থেকে লুকোতে চায় না।
—অমন ভিড়ে ঠাসা রাস্তা দিয়ে গাড়ি চালাও কী করে মা? প্রথমেই মনিবানির কথা থোড়ি জিজ্ঞেস করল শীলাদি। মানুষটিকে যে অদিতি তার অতিরিক্ত বিবেকী স্বভাবের জন্য সহ্য করছে শুধু, এতটুকুও ভালবাসছে না, শ্রদ্ধা সম্ভ্রম করছে না এটুকু শীলাদির কাছে জলের মতো পরিষ্কার।
—অভ্যেস হয়ে গেছে। সবাই চালাচ্ছে, আমিও চালাচ্ছি। এর মধ্যে কোনও ‘কী করে’ নেই — সে হাসল — তুমি কি দেরি দেখে ভাবছিলে আমার অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে!
—বালাই ষাট। ও কথা ভাবতে যাব কেন বউমা, তোমার মতো পুণ্যবতী মেয়ের কখনও ওসব হয়? ষাট ষাট!
—যারা অ্যাকসিডেন্টে যায় তারা সব তা হলে পাপী বলছ?
—অত জানি না বাপু। বললুম কথা একটা মুখ্যুসুখ্যু মানুষ!
—ওই একটা ডিফেন্স যে তুমি কতবার ব্যবহার করবে!
—কী ফেনস?
—ডিফেন্স! ডিফেন্স! আত্মরক্ষা, অজুহাত, —মুখ্যুসুখ্যু!
—কেমন আছে মা?
—খুব একটা ভাল না … অদিতি অন্যমনস্ক হয়ে বলল।
আর কিছু জিজ্ঞেস করল না শীলাদি। বলল চা না কফি?
—কফি করতে পারবে?
—কেন পারব না?
—তা হলে করো। তোমারও করো। নিশ্চয়ই খাওনি।
শীলাদি চলে গেল। যে ঘরে তনিকা-অনোহিতা শুয়েছিল সেই ঘরে শীলাদিকে থাকতে দিয়েছে সে। ঘরটা তার, সাজসজ্জা, আসবাবপত্র সব তার বাবা-মা’র। বাবা-মা’রও নয়, দাদা-দিদির। দাদা মারা যাবার সময়ে তাঁর যা কিছু এয়ারলুম ছেলেমেয়েদের মধ্যে ভাগ করে দিয়েছিলেন। বেশ কিছু এই ধরনের অ্যান্টিক আসবাব পড়েছিল মা-বাবার ভাগে। মায়ের বিয়ের আসবাব দুটো খাট, আলমারি সব অদিতির শোবার ঘরে, এ ঘরে ওই অ্যান্টিক। শীলাদি ঘরে ঢুকে এদিক-ওদিক তাকিয়েছিল। কোণ থেকে একটা গোটানো কার্পেট টেনে নিল, বলল—আমায় দুটো চাদর দিয়ে। একটু পুরনো দেখে। কড়কড়ে জিনিসে শুয়ে আরাম পাই না।
এই ব্যাপারটা নিয়ে অদিতি একটা প্রচণ্ড দ্বিধা এবং আত্মগ্লানির মধ্যে ছিল। শীলাদি যদিও রান্নাবান্না করে বিষ্ণুপুরে, ও তো শুধু রান্নার লোকই নয়, আত্মীয়ের বাড়া। পরিষ্কারও খুব। ওকে সে একদা প্রণাম করতে গিয়েছিল। অত ভদ্র মার্জিত চেহারা শীলাদির, তা সত্ত্বেও বাবা-মা’র পালঙ্কে শীলাদিকে শুতে বলতে পারেনি সে। আধুনিকা, দীর্ঘদিন বিদেশে থাকা, অনেক দেশীয় সংস্কার মুক্ত নাকি সে। কিন্তু পারেনি। নিজের ঘরে মেঝেতে একটা ব্যবস্থা করা যেত। কিন্তু একে তার ঘরে অন্য লোক ভাল লাগে না। উপরন্তু এ ব্যবস্থাটা শীলাদির জন্যে তার ঠিক মনে হয়নি। মায়ের পালঙ্কে … মায়ের পালঙ্কে … অথচ কয়েক ঘণ্টার পরিচয়ে অনোহিতাকে ওখানে শুতে দিতে তো তার একবারও ভাবতে হয়নি! নিজের ওপর ঘৃণা হচ্ছিল, কিন্তু যা স্বাভাবিকভাবে আসছে না, তা সে কেমন করে করবে? হিপক্রিসিকে প্রশ্রয় দিয়ে কী লাভ?
গোটানো কার্পেটটা টেনে নিয়ে শীলাদি তাকে মুক্তি দিল। সে শুধু বলল— মেঝেতে শুতে পারবে?
বিষ্ণুপুরে শীলাদির আলাদা ঘর তাতে তক্তপোশ, ভাল ধবধবে বিছানা।
—কার্পেটটাও সরিয়ে দিতে পারি, তা যদি বলো বউমা। তোমার মেঝে এত সুন্দর ঠান্ডা।
—ওসব করতে যেয়ো না, শেষকালে ব্যথাট্যথা হবে।
পুরনো আলাদা চাদর তার কোথা থেকে থাকবে! সে নিজের ভাল চাদর ও বালিশ দিয়ে খানিকটা গ্লানিমুক্তি অনুভব করেছিল।
কফি খেতে খেতে, মোড়ায়-বসা শীলাদির দিকে তাকাল অদিতি। অদ্ভুত মহিলা, সোফা, ডাইনিং চেয়ার ইত্যাদিতে বসবে না। আবার মেঝেতেও বসবে না। ঠিক যেমন কার্পেট খুঁজে নিয়েছিল তেমনই খুঁজে নিয়েছে একটা মোড়া। মোড়াটা শীলাদির সঙ্গে সঙ্গেই চলাফেরা করে।
খুব চিন্তিত মুখে ধীর গলায় অদিতি বলল— ওঁকে বোধহয় এখানেই নিয়ে আসতে হবে। ডক্টর রায়চৌধুরী এখন বিষ্ণুপুরে যেতে বারণ করছেন।
—কী হবে তা হলে? তোমার তো ভীষণ অসুবিধে … শীলাদি থেমে গেল।
—ভাগ্যিস তুমি এসেছিলে! না হলে ওই রোগীকে নিয়ে তো আমি বিপদে পড়ে যেতাম। সারাদিন বাড়ি থাকি না। বাইরের আয়াটায়াকে … একলা রেখে যাওয়া …
কী আশ্চর্যের কথা! রাজর্ষি গুপ্ত, যার সঙ্গে তার বিবাহ-বিচ্ছেদ হয়ে গেছে, তার মা গুরুতর অসুস্থ হয়ে থাকতে আসছেন তার বাড়িতে! শুধু রাজর্ষির মা বলে নয়, মহিলা চিরকাল তাকে বিষ নজরে দেখেছেন। কত আশ্চর্যই না তার কপালে ঘটল!
তার মুখ হয়তো একটু কঠিন বিরক্ত হয়ে গিয়ে থাকবে, শীলাদি বলল— একটা কথা বলব বউমা! বলল বেশ দ্বিধা ও ভয়ে—বলল— তুমি কেন এত দায় নিতে যাবে? যার মা সে ব্যবস্থা করুক। তুমি তাকে ই না এ সেই কী বলে তাই একটা করে দাও। সে আসুক, যা বোঝে করুক।
—যদি আসেও, একটু তো দেরি হবেই। ততদিন ওঁরা ওখানে রাখতে চাইছেন না। বেড আটকে রয়েছে তো!
—তা হলে দাও আবার অ্যাম্বুলেন্সে করে বিষ্ণুপুরে পাঠিয়ে। উনি ভিতু মানুষ। ওঁকে কিছু বলতে হবে না। পাঠিয়ে দাও। আমি আছি। সুবোধ ডাক্তারবাবু আছেন। কিচ্ছু হবে না। আর যদি হয়ই, দুঃখ তো কিচ্ছু নেই! বয়স হয়েছে, নানা রকম অসুখ শরীরে, মনেই কি আর শান্তি আহ্লাদ কিছু আছে! কিচ্ছু না। যদি সময় এসে গিয়ে থাকে তো যাবে! নিজের ভিটে, নিজের জায়গা। কোনও অযত্নের ভয় নেই, সে তো ভাল যাওয়া মা!
‘ভিতু মানুষ’ কথাটার একটা অদ্ভুত প্রতিক্রিয়া হল অদিতির মনে। একটা অনন্ত আর্তির মুখ, অনেক লোকের মুখহীন ভিড়ের মধ্যে দাঁড়িয়ে শূন্যের দিকে চেয়ে রয়েছে। প্রতিবেশটা রেমব্রান্ট-নাইট ওয়চ, ফিগারগুলো এল গ্রেকোর, মুখটা রবীন্দ্রনাথের আঁকা। তাঁর পুরো আলোছায়া, মুখাকৃতির লম্বাটে ছাঁচ, অন্ধকার চোখ, ঘাড়ের সটান ভঙ্গি যেন পায়ের বুড়ো আঙুলের ওপর ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে। সবটার রং, সমস্ত সুদ্ধ গোটা একটা ছবি। সে কোনও কথা বলল না, সাংসারিক কথাবার্তার মধ্যে ছবি বড্ড হারিয়ে যায়। সে স্বপ্নগ্ৰস্তর মতো উঠে আস্তে আস্তে তার স্টুডিয়োর দিকে চলে গেল।
শীলাবতী অবাক হয়ে চেয়ে রইল। পেছন পেছন গেল। তারপর স্টুডিয়োর দরজায় আরও অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে গেল। ইজেলে টান টান করে ক্যানভাস বিছোনো। সামনে অদিতি একটা নিচু টুলে। হাতে পেনসিল। সে সাধারণত একটা খুব হালকা লাইন ড্রয়িং করে নেয়। অদিতির পেছনে, সামনে মেঝেতে কোণে ঠেস দেওয়া ছবি, বাঁধানো-না-বাঁধানো, সম্পূর্ণ-অসম্পূর্ণ— রং রেখা ভাবের এক বিশাল সমারোহ। শীলাবতী তার একফোঁটাও বোঝে না। কিন্তু সম্ভ্রমে-বিস্ময়ে ‘থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে।
এ ঘরটা তালা দেওয়া থাকে। সে এই প্রথম দেখল।
একটা বোবা কষ্ট, ভীত যন্ত্রণার্ত—এ মুখ আঁদ্রের। আঁদ্রের সত্যিই একটা মানসিক ভয়জাত পুরুষত্বহীনতা ছিল। সে ভার্জিন নয়, কথাটা সম্পূর্ণ মিথ্যে। বাহাদুরি করে কথাটা বলেছিল অদিতিকে। বিয়ের পরে প্রথম রাতেই তার কাছে ক্ষমাপ্রার্থনা করতে হয়েছিল বেচারিকে। খুব তাড়াতাড়ি ফুরিয়ে গেল। এই জন্যেই কি ওর অত তাড়া ছিল। শরীরে জোয়ার থাকতে থাকতে কূলে তরী ভেড়াবার?
—তুমি কি কাঁদছ আঁদ্রে?
—না। সে হাসল। সে হাসি কান্নার বেশি।
—শোনো, এসব কিছু নয়, আমি তোমাকে ভালবাসি। এটা তোমার একটা সাময়িক অক্ষমতা। ভয় পাচ্ছ কেন? ঠিক হয়ে যাবে।
—কিছু ঠিক হবে না অদিতি। আমি এই ভয়টাই পাচ্ছিলাম। তোমাকে… তোমাকে আমি ঠকালাম। আমি তোমাকে ছাড়া… নাঃ আমি ভাবতে পারছি না।
—আশ্চর্য! তুমি আচ্ছা বোকা, ভিতু তো! এত দুর্বল তুমি? আমি বলছি ঠিক হয়ে যাবে।
—বলছ!— নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে পড়ল আস্তে আস্তে। দেবদূতের মতো নিষ্পাপ মুখ। কাঁধ অবধি সোনা সোনা চুল, তীক্ষ্ণ নাক, বেদানা রঙের ঠোঁট। ঘুমন্ত আঁদ্রেকে দেখে অদিতির মনে হয়েছিল— এ এমনই কাঁচা, কিশোর কিশোর এক মানুষ যার প্রতি কাম জাগা তার পক্ষেও সম্ভব না হতে পারে।
মাস ছ’য়েকের মতো মানসিক চিকিৎসা, কাউন্সেলিং চলল। আস্তে আস্তে ভরাট হল আঁদ্রের শরীর, পেশিতে ঢেউ, মুখে আত্মবিশ্বাস। ততদিনে ওর সালঁ দাঁড়িয়ে গেছে, রীতিমতো ব্যবসাদার। আর তখনই এক গভীর আধ-ঘুমন্ত রাতের আলোয় আঁদ্রের অলৌকিক-যাত্রা সম্ভব হল।
পরবর্তী কয়েক বছরের হাস্যোচ্ছল সবল আঁদ্রের ভেতর থেকে এই ভয়কাতর মুখশ্রী এতদিন পর তার কাছে এসে অমরত্ব যাচ্ঞা করছে? রাত প্রায় তিনটে অবধি চলল কাজ। টেনে বাড়ানো লম্বা লম্বা বাইজানটাইন ফিগার, পেছন দিকে রবিঠাকুরীয় মুখ। শেষ করতে মাসখানেক অন্তত লাগবে। কিন্তু শেষরাতে বিছানায় ঢুকতে ঢুকতে ক্লান্তিতে অসাড় শরীর মেলে দিয়ে তার মনে হল— মুখটার অভিব্যক্তি তার মনে চিরতরে খোদাই হয়ে গেছে। আর হারাবে না। কে ও? ও কি আঁদ্রে নাকি? নাকি মাধুরী গুপ্ত! নাকি শীলাবতী! তবে কি ওই সব অন্ধকার মুখের আড়ালে একটি মুখই? সে মুখটা কি তার? কাতর। অন্ধকার। কালো পৃথিবী হাতড়ে হাতড়ে অভিব্যক্তি খুঁজে ফিরছে?
বিন্দুমাত্র দ্বিধা না করে মাধুরী গুপ্ত গোয়াবাগান যাত্রা করলেন। সন্তুষ্ট তৃপ্ত মুখ। একবারও সংকোচ প্রকাশ করলেন না। একবারও বিষ্ণুপুর যেতে চাইলেন না। অদিতির বাড়িতে এলেন যেন নিজের বাড়িতে আসছেন। দোষের মধ্যে খালি বাড়িটা অচেনা! সম্পূর্ণ অচেনা অবশ্য নয়। একবার, একবারই মাত্র এসেছিলেন, তখন মা বেঁচে, ওদিকে জেঠিমা, ছোটকাকু, দাদারা সবাই গায়ে গায়ে ছিল। ভাগাভাগি হয়েছে। কিন্তু ছোটকাকু তাঁর ভাগের ঘরটা নিয়ে মায়ের কাছেই থাকতেন। তখন সাজসজ্জা এ রকম ছিল না আদৌ। এসব ঘরের।
—তোমাকে খুব কষ্ট দিলাম, এটুকু অন্তত বলবেন আশা ছিল অদিতির। কিচ্ছু না।
স্ট্রেচারে করে অ্যাম্বুলেন্সের লোকেরা তুলে দিল। সেই মাতৃ পালঙ্কের ওপরই ব্যবস্থা করতে হয়েছে। যাঁকে ভালবাসে না শ্রদ্ধা করে না, যিনি তার ভালমানুষির সুযোগ নিচ্ছেন বলে সে আপাদমস্তক বিরক্ত, তাঁকে তার পবিত্র স্মৃতিসম্পন্ন পালঙ্কে দিব্যি জায়গা দিতে পারল সে, কিন্তু যার প্রতি তার মমতা, খানিকটা ভালবাসাও আছে, আছে এক ধরনের শ্রদ্ধাও সেই শীলাদি মাটিতেই শুয়ে রইল।
পালঙ্কে শুয়ে মাধুরী দেবী প্রসন্ন চিত্তে, প্রসন্ন কণ্ঠে বললেন—
এই বেশ হল। সেই নির্বান্ধব নির্জন পুরীতে কে যায়! যেন গিলতে আসে। মা গো! তোমার এ বেশ ভাল ব্যবস্থা।
—এখানেও কিন্তু পুরী নির্জনই। আমি সারাদিন বেরিয়ে থাকি। একেক দিন ফিরতে বেশ রাত হয়ে যায়। এখানেও আপনি আর শীলাদি দু’জনে দু’জনের মুখ দেখবেন। মহা বিরক্তিতেও অদিতির হাসি পেল।
—রাত্তিরে তো ফিরবে গো, না তা-ও ফিরবে না? তোমাদের আজকালকার আর্টিস্টদের এই হয়েছে এক ঢং। কোনও নিয়ম-নীতি নেইকো।
যেন উনি সেকালের আর্টিস্টদের রীতি প্রকৃতি জানেন।
শুরু হল। অদিতি বিরক্তিতে সরে যায়।
সে যখন স্কেচবুক হাতে শালজঙ্গলের মধ্যে যেত তখন জিনস পরত। কিংবা লং স্কার্ট। ছোট চুলগুলো মাথার উঁচুর দিকে ক্লিপ দিয়ে আটকানো থাকত। মায়ের অনুশাসন সে খুব বেশিদিন মানতে পারেনি। বিষ্ণুপুরের বাড়ির মধ্যে যখন আঁকত, অনেক সময়ে বাবারই প্রয়োজনের আঁকা, তখনও একটা মিডি স্কার্ট মতো পরে থাকত। সুবিধে হত মেঝের ওপর উপুড় হয়ে আঁকতে।
প্রথমদিন দেখে উনি বললেন— এ কী? এই ধিং নারায়ণ হয়ে বাইরে যাবে? লোকে বলবে কী?
—আহ্ হা! —ওরা এসব পরেই অভ্যস্ত। শ্বশুরমশাই হয়তো বললেন।
—অভ্যস্ত? তাই বলে গুপ্তবাড়ির বউ এমন নির্লজ্জের মতো বেরোবে? কুকুর ছুটবে যে পেছনে!
—ছুটুক। ও বুঝবে। ঢিল নিয়ে যাও তো অদিতি পকেটে করে। মেরে কুকুর তাড়িয়ো।