Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জুতোর ছলনা || Uday Kumar Ghosh

জুতোর ছলনা || Uday Kumar Ghosh

আমার স্পষ্ট মনে আছে দিনটা ছিল শনিবার। ঘড়ির কাটাটা সবে মাত্র নয় এর ঘর ছোঁবো ছোঁবো করছে। রাস্তা দিয়ে দুটো মেয়ে হেঁটে এদিকেই আসছে। বৈশাখের শেষ, কালবৈশাখীর প্রচণ্ড তেজে গোটা শহরজুড়ে জায়গায় জায়গায় কোথাও গাছের ডাল, কোথাও কারোর বাড়ির চাল কোথাওবা সম্পূর্ণ গাছটাই উড়ে এসে তারের ওপর আছড়ে পড়েছে। ফলে লোডসেডিং ! আজ আর কারেন্ট আসবে না বুঝতে পেরে আমি সবে ছাদের ওপর এসে রাস্তার দিকের রেলিং এর ওপর হেলান দিয়ে রাস্তার দিকে তাকিয়ে এই অপূর্ব অন্ধকারাচ্ছন্ন প্রকৃতিটাকে উপভোগ করছি।
চারিদিকে নিস্তদ্ধ অন্ধকার,শুধু আশেপাশের বাড়িগুলোর দু-একটার জানালা থেকে মোমবাতির মৃদু আলো বাইরে বেরিয়ে আসছে। কিন্তু টা এতটাই ক্ষীন যে এই মারিয়ানা খাত কে আলোকিত করতে সক্ষম নয়। অন্ধকারে কিছু দেখা না গেলেও সম্ভবত উত্তর দিক থেকে মৃদু বাতাস বইছে এর সঙ্গে ব্যাং আর শিয়ালের ডাক আবহাওয়া টাকে আরও গা ছমছমে করে তুলছে।
মেয়ে দুটো আখুন আমার বাড়ির কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। “এরকম দুর্যোগের মধ্যে মেয়ে দুটো একা কি করতে বেরিয়েছে ?” – প্রশ্নটা হওয়ায় হটাতই খেলে গেলো আমার মনে !
পরক্ষনেই অবশ্য উত্তরটা পেয়ে গেলাম, মেয়ে দুটোর কাধে স্কুলব্যাগ, মানে এরা টিউশন পড়তে গিয়েছিল নাহয় যাচ্ছে। কিন্তু এভাবে তুমুল দুর্যোগে একা কেন?
আমি ওদের দিকে আরও কিছুক্ষন নজর রাখলাম। আমার বাড়ির দুপাশে দুটো তিন মাথা মোর আছে। দুটোর মধ্যে দূরত্ব কম করে দুশো মিটার। আমার বাড়ির অবস্থান একদম মাঝমাজি। আমার ছাদ থেকে অনেক দূর পর্যন্ত দেখা যায়। ওরা আমার বাড়ি সবে পার করেছে তখনই রাস্তার ল্যাম্পপোস্ট গুলো জলে উঠলো। বিদ্যুৎ দফতর যে এত জলদি কাজ করবে ভাবাই যায়না।
আমার বাড়ির পরের মোর থেকে বাম দিকে কিছুটা গেলে একজন অঙ্কের শিক্ষকের বাড়ি এরা হয়তো ওখানেই যাচ্ছে। সম্ভবত মাঝরাস্তায় ঝরের কবলে পরে কোথাও আশ্রয় নিয়েছিল। এখন স্যার এর বাড়ি যাচ্ছে। রাত তো অনেক হয়েছে যতই হোক যা দিনকাল। বাইরে দাড়ানোটা নিরাপদ নয়।
ওরা সবে মোরটার কাছে পৌঁছেছে অমনি কোনো কিছু দেখে ওরা থেমে গেল, মুখে তাদের স্পষ্ট ভয়ের ছাপ। বলাই বাহুল্য মেয়েদুটির বয়স খুব একটা বেশি নয় এই সতেরো কিংবা আঠারো এর মধ্যেই হবে হয়তো, দুজনেরই চোখে চশমা, ঘাড় পর্যন্ত লম্বা চুল, চোখ দুটো এত অপূর্ব দেখলে যেন প্রাণ জুড়িয়ে যায়, একজনের চেহারা ফুটবলের মতো অপর জনের ঝাটার কাঠির মতো।
ভালো করে লক্ষ করে দেখলাম একটা খয়েরী রঙের চামড়ার জুতো রাস্তার প্রায় মাঝখানে পরে আছে, মেয়েদুটোর দিকে মুখ করে। আমাদের তিনজনেরই দৃষ্টি তখন জুতা জোড়ার দিকে। ভয় যে আমার করছে না এটা বলা ভুল হবে। এই শীতল পরিবেশের মধ্যেও আমার সারা মুখ ঘামে চপ চপ করছে।
“এই জুতা জোড়া খুব চেনা চেনা লাগছে! কোথায় যেনো দেখেছি…..” কথাটা হটাৎ করেই মনে হলো আমার।
“ও হ্যা গতকাল রাত্রে যখন ওদিক দিয়ে আসছিলাম ঠিক একই জায়গায় পরে ছিল জুতাটা শুধু মুখটা ছিল বিপরীত দিকে। যেনো কেও তিনশো ষাট ডিগ্রি ঘুরিয়ে দিয়েছে।” কথাটা বিদ্যুৎ এর মত খেলে গেলো আমার মনে। এবং পরক্ষনেই আরও মনে পড়লো যে শুধু গতকালই নয় বিগত এক সপ্তাহ বাবদ যতবার সন্ধার পর ওই জায়গা দিয়ে যাতায়াত করেছি জুতো জোড়া ওখানে পরে ছিল কোনো দিন তেমন খেয়াল করিনি। তবে কি আমি যেটা ভাবছি সেরকমই কিছু ! রহস্য রোমাঞ্চের বইতে এসব অনেক পড়েছি। কিন্তু যদি সেরকমই হয় তবে তো মেয়ে দুটোকে এখুনি ওখান থেকে সরানো প্রয়ো…
ধপ !!!
মাথাটা বোধ হয় ফেটে গেছে! হাত পা গুলোও কেমন যেনো অবশ হয়ে আসছে…। উহঃ…, আহহ…! তিন তলার ছাদ থেকে পড়েছি বাঁচার কোনো চান্স নেই। চোখের দৃষ্টি আবছা হয়ে আসছে। কোনো কিছুই স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছি না। এর মধ্যে সব টুকু শক্তি দিয়ে দেখার চেষ্টা করে যা দেখতে পেলাম এটা দেখার চেয়ে কিছু না দেখতে পেলেই ভালো হতো। হটাৎ আমি বুঝতে পারলাম আমার শরীর টাকে কেউ টেনে পাশের নর্দমায় নামিয়ে নিচ্ছে। অনেক চেষ্টা করে মাথা ঘুরিয়ে দেখি ওই মেয়ে দুটো আমার দুই পা ধরে টেনে নর্দমায় নামিয়ে নিচ্ছে। চোখে ক্যাট আই চশমা, সেই অপূর্ব চোখ বলতে আর কিছু নাই শুধুই ফাঁকা গর্ত, ঘার পর্যন্ত লম্বা চুল, মুখে একটা পৈশাচিক হাসি আর পায়ে সেই কালো আর খয়েরী জুতো।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *