Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

জীবন্ত ভূত – 3

জ্ঞান ফিরতে বুঝলাম, মৃত্যুর হাত থেকে আমায় বাঁচিয়েছে লেফটেন্যান্ট পল । সবাই আমায় ঘিরে রেখেছে। আমার জন্য ওরা বিশেষ চিন্তিত। শরীর খারাপের দোহাই দিয়ে ছাড়া পেলাম আমি । তখন ওদের কাছে পুরো ব্যাপারটা চেপে গেলাম আমি । পাছে সবাই ভয় পায় । সেদিন রাত একটা হবে । সেই ঘরের মধ্যে কাশির শব্দ শুনলাম। বিড়াল এর গলায় কাঁটা বিঁধলে যেমন হয় ঠিক তেমনই শব্দ। যাদের জেগে থাকার কথা তারা ঘুমে ঢুলছিল । সবাই কে ডেকে তুললাম আমি । ঐ শব্দের কথা ও বললাম । আর বললাম- চল সবাই দল করে ঐ ঘরে ঢুকি । তা হলে ঘাতক কে ঘায়েল করতে সুবিধা হবে । আমার কথায় কাজ হল না । সবাই বলল, জেনে শুনে মরণ ফাঁদে পা দেওয়া বোকামি । তবে এটা সবাই মেনে নিল যে ভূত ই হোক বা নরমাংস ভোজী ই জন্তুই হোক , কিছু না কিছু ঐ ঘরে আছে। আমার ডিয়ারেস্ট ফ্রেন্ড হাসান কে আলাদা করে সব ই বললাম । আমাদের সিনিয়র মোস্ট মিস্টার বোস সব শুনে বললেন। – ঐ ঘর সিল করে দেব।

হাসান বলল- আমাদের এতোগুলো লোক কার দ্বারা মারা গেল, তা না জানলে আমাদের শান্তি হবে না । ঠিক তখনই ঘরের মাইক্রোফোন বেজে উঠল । ক্যাপ্টেন রাম ধনিয়ার গলা ।ফ্রেন্ডস, বিশাখাপত্তনম এর পথ পেয়ে গেছে আমাদের সাবমেরিন। লাইট হাউজ পথ দেখাচ্ছে । আমরা সবাই হৈহৈ করে উঠলাম । উচ্ছসিত হয়ে আমরা ঐ ঘরের কথা একেবারেই ভুলে গেলাম । সবাই শান্তিতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম । জেগে গেলাম মাইক এ আমার নাম শুনে । ও ঘরে আরও দশ জনের মধ্যে কুক ও কাল মারা গেছে । তাই ক্যান্টিন এর দায়িত্ব নেবার নির্দেশ মাইক এ শোনাল । কারণ যারা বেঁচে আছে তাদের খাবার চাই । রাগ হল নিজের ওপর । সময় মতো গেলে হয়তো ওদের বাঁচানো যেত । এখন আর শোক দেখিয়ে কি লাভ । পৌঁছে গেলাম সেখানে । দুধ জ্বাল দিয়ে সবাই কে দেওয়ার পরেও বেশ কিছুটা রয়ে গেল সসপ্যান এ । ফিরে এসে দেখি স্যসপ্যান খালি । তলানি দুধ টুকু নড়ছে । তারমানে তখনই দুধ টা খেয়েছে । এ দিক ও দিক তাকাতে চোখে পড়ল একটা বিভৎস বিড়াল জাতীয় চার পায়ি। তাগড়াই লেজ তার । লাল টকটকে চোখ তার । সেই চোখের দিকে তাকানো যায় না । সুরুৎ করে কোথায় ঢুকে গেল ।

সেদিন বিকেলে বিশাখাপত্তনম বন্দরে পৌঁছলাম । দারুণ সুন্দর জায়গা । সমুদ্রের ধার ঘেঁষে পাহাড় চলেছে । পাহাড়ের ওপরের ঘর বাড়ির আলো দেখে মনে হচ্ছিল পাহাড়ে ও তারা দেখছি । ভালো লাগলে ও ঐ বিড়াল টার কথা ভুলতে পারছি না । অত লোক যার দ্বারা নিধন হয়েছে তাকে না মেরে শান্তি নেই। রাতে আবার জাহাজ ছাড়বে । এবার মছলিপত্তনম হয়ে মাদ্রাজ যাব আমরা । নতুন কুক এলে ও পাঁউরুটি খেতে হল । কারণ দশটা ডেড বডি বিশাখাপত্তনম এ নামতে দেখে ঘাবড়ে গেল কুক্ । লেফটেন্যান্ট পল এর ইশারাটা মনে হল । ভাবলাম , ছাড়বো না ওদের । হাসান কে বললাম সে কথা ।হাসান, আমার সাথে চল ঐ ঘরে । আমি আগে ঢুকবো ।আমাকে ওরা আক্রমণ করলে তুই আমার কথা চিন্তা না করে একে একে গুলি করবি । দরকার হলে আমার ওপরে ও গুলি চালিয়ে দিবি আমাকে যন্ত্রণার থেকে বাঁচানোর জন্য ।

হাসান- পাগল হয়েছিস তুই বুলেট ? ঐ অবস্থায় আমি তোর ওপরে গুলি চালাবো ? তা পারবো না । বরং আমি আগে যাব । তুই অবস্থা বুঝে ব্যবস্থা করবি ।
বুলেট- দ্যাখ্, তোর সংসার আছে । এখানে জানতে পারলে আমাদের কেউ ঢুকতে দেবে না ঐ ঘরে ।তাই বলি জন্তুগুলো কে শেষ করতে পারলে তো কথাই নেই । নইলে আমায় গুলি করে যন্ত্রণার থেকে মুক্তি দিবি ।
হাসান- আমার ভয় করছে রে বুলেট ।
বুলেট- ওরা সংখ্যায় বেশি হলে যতোটা পারিস ওদের মারার চেষ্টা করবি । বেশি সংখ্যক আমাকে আক্রমণ করলে যত তাড়াতাড়ি আমায় গুলি চালিয়ে মেরে ফেলবি ততোই আমার কষ্ট কমবে । তোকে তাড়া করলে সঙ্গে সঙ্গেই দরজা বন্ধ করতে ভুলিস না । তোর ফেরা চাই ই চাই । দরকার হলে সাবমেরিন টা কে ধংস করতে হবে । রনি,বনি, আমি একসঙ্গে বলে উঠলাম, – বুলেট কাকু,তুমি ঐ ঘরে ঢুকলে ?
বুলেট কাকু- হ্যাঁ রে। আলো জ্বেলে বসে রইলাম ঘাতকের অপেক্ষায় । এলো না । আমি হাসান কে বললাম–তুই দরজার বাইরে অপেক্ষা কর । এ দিকে আসবি না । আমি দশের জন্য নিজেকে উৎসর্গ করবো । আমার এই বলিদান ব্যর্থ করিস না । হাসান ঘরের বাইরে দরজায় দাঁড়াল হাতে তার রিভলভার । আমি অস্ত্রাগারের সিঁড়ির দিকে যেতে দেখলাম অগুনতি ভাম জুলজুল চোখে চেয়ে আছে। হিংস্র চাহনী। এ ভাবে কেন সবাই মরছে তা বুঝলাম । আমার ও ঐ অবস্থা হবার আগে গুলি চালালাম। ক’টা কে মেরেছি জানি না । তার আগেই একে একে আমার পা বেয়ে শরীরে ছড়িয়ে পড়ল । কানে এলো হাসান এর গলা—চলে আয় বুলেট । কিন্তু তখন অনেক দেরি হয়ে গেছে । হাসান কে আমার দিকে এগিয়ে আসতে দেখে বললাম—-এদিকে এগোবি না । এগুলেই গুলি করব তোকে । আমাকে কষ্টের থেকে বাঁচাতে গুলি করে পালা হাসান । দরজা বন্ধ করতে ভুলিস না । এরপর কানে এল তিন টে গুলির শব্দ । বুঝলাম হাসান আমায় যন্ত্রণার থেকে মুক্তি দিতেই গুলি করল । রনি, বনি ঘুমিয়ে পড়েছিল । ওদের ওঘরে যেতে বললাম । বুলেট কাকু বলল–বাবলু তুই ও যা । আমি একা শোব । ঘুম থেকে উঠেই রনি,বনি কে বললাম–মা কে বুলেট কাকুর বলা গল্প টা বলিস না । ঘরে বুলেট কাকু কোথাও নেই । মা রাগারাগি করছিল ।- একেবার আমাকে বলে গেল না ছেলে টা ? ব্রেকফাস্ট করতে বসেছি এমন সময় দরজায় কলিং বেল বাজল। মা বলল- দেখ তো বাবলু কে এসেছে? কুড়িয়ার ডেলিভারি বয় আমার হাতে চিঠিটা দিল। বাবা আমার হাত থেকে চিঠিটা নিয়ে নিলেন । খুব মনোযোগ দিয়ে চিঠিটা পড়লেন । তারপর আমাদের দিকে চেয়ে বললেন ।তোমরা পড়তে যাও । আমি বুঝলাম বাবা আমাদের কাছে কিছু গোপন করতে চাইছেন । রনি,বনি উঠে গেল । আমার মন চাইছিল না উঠে যেতে । আমি জানি এটা বুলেট কাকুর ব্যাপারেই হবে । গুলির শব্দ হল, বুলেট কাকু কে শান্তি দিতে । যেখানে অত লোক মরে গেল আর বুলেট কাকু বেঁচে রইল? ঘর থেকে সরে গেলেও কান খাড়া রাখলাম বাবা মায়ের কথা শোনার জন্য । বাবার গলা- জান বুলেট আর নেই । মা বললেন- কবে? কখন ?কাল যে এসেছিল ? বাবার গলা- তিন বছর আগেই মারা গেছে । কান্না চাপতে পারলাম না । আমার কান্নার শব্দে সবাই ছুটে এল । বাবা বললেন- কেঁদো না ,বুলেট দশের জন্য প্রাণ দিয়েছে । তাই বুলেট কে মরণোত্তর পুরস্কার দেবে। আমাকে ই সেই পুরস্কার নিতে হবে ।

আমি বললাম- আমি জানি বাবা,বুলেট কাকু কাল বলেছে সব । অসংখ্য ভাম জাহাজের অনেক কে মেরে ফেলে তখন বুলেট কাকু সাহস করে ওদের আস্তানায় ওদের মারার জন্য ঢোকে । ভাম যখন বুলেট কাকুকে আক্রমণ করে তখন বুলেট কাকু হাসান কাকুকে বলে বুলেট কাকু কে গুলি করতে বলেন । বুলেট কাকুকে যন্ত্রণার থেকে মুক্তি দিতে হাসান কাকু কে বলে বুলেট কাকু । বুলেট কাকু কে কষ্টের থেকেই মুক্তি দিয়েছে হাসান কাকু । আমার সাথে কান্নায় ভেঙে পড়ে রনি ও বনি ।

Pages: 1 2 3

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress