Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » জন্মভূমি মাতৃভূমি || Bani Basu » Page 7

জন্মভূমি মাতৃভূমি || Bani Basu

হা-ই ক্যালকাটা! য়ু আর হাইলি ইণ্টারেস্টিং। খালি তুমি ম্যাস্কুলিন না ফেমিনিন, বাচ্চা না বুড়ো সেইটা ভেবে পাচ্ছি না। ভোরবেলা যখন আমাদের সামনের রাস্তা দিয়ে সারি সারি সাইকেল চলে যায়, ট্র্যাক সুট পরে লেকের ধারে ছুটতে বেরোয় খেলোয়াড় ছেলেমেয়েরা, যখন ঠাণ্ডা ঠাণ্ডা আইসক্রিম আলোয় গাছপালাগুলো আহ্লাদেপনা করে তখন মনে হয় তুমি নেহাতই বাচ্চা। এখনো প্লাসটিকের রঙিন বল আর বেলুন ওড়াতে ভালোবাসো। আবার কোন কোনদিন গ্র্যাণ্ডের সামনের পেভমেণ্ট দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দেখি ঝমর ঝমর বাজনা বাজছে। লাল নিশান, রুপোলি রাংতামোড়া বাকস নিয়ে বেরিয়ে পড়েছে লেপারের দল। বড় বড় অফিস-বিল্ডিংগুলো তখন খালি ঘামছে। গলগল করে ঘামছে। ওপরদিকে মুখ। তলায় সেপাইপুতুলের লড়াই দেখাচ্ছে রবারের সুতো টেনে-টেনে একটা খুব রোগা লোক অনেকে ভিড় করে দেখছে কেউ কিনছে না, মিউজিয়ামের কাছ দিয়ে কাটা-হাঁটু ঘষটাতে ঘষটাতে এগিয়ে যাচ্ছে দুটো কনুই তুলে আরেকটা মানুষ। তখন বুঝতে পারি আসলে তুমি একটা বুড়ি, অ্যান ওল্ড উওম্যান ইন র‍্যাগ্‌স্। তোমার হৃদয় আছে না নেই, ব্রেইন আছে না নেই সেটা এখনও ধরতে পারিনি। য়ু আর আ হামিং বার্ড। মিডনাইট পর্যন্ত সবসময়ে একটা বজ্‌জ্‌জ্ মম্‌ম্‌ম্ শব্দ হয়েই চলে, হয়েই চলে। ফড়িয়াপুকুরে বড়পিসির বাড়ির কাছে পেভমেণ্টে ভর্তি বাজার। গড়িয়াহাটেও তাই। জিনিস কেনাকাটা দরাদরির আওয়াজে গমগম করছে। ওইরকম একটা স্টলের দোকানদার আর একটা দোকানদারের সঙ্গে সেদিন কি মারামারিটাই করল। দুজনেরই ডিগডিগে চেহারা। একজন আরেকজনের পেটে এমন স্ম্যাশ করল সঙ্গে সঙ্গে ছেলেটার মুখ দিয়ে রক্ত উঠে এলো। এতো ভায়োলেণ্ট এরা! এত নিষ্ঠুর! অথচ দেখলে মনে হবে প্রাণশক্তি বলে কিছু অবশিষ্ট নেই। কলকাতা, তুমি তোমার প্রাসাদ, সুপার মার্কেট, স্টক-এক্সচেঞ্জ, মাল্টি ন্যাশন্যাল কোলে করে বসে আছো, এদের এমন কিছু দিতে পারো না যাতে এই নিষ্ঠুরতা এই হিংস্রতা চলে যায়! হাওড়া কদমতলায় ছোটকাকিমার বাপের বাড়ি যেতে যেতে হাওড়া ময়দান বলে একটা জায়গায় আমি আরেকটা পাগলকে দেখলাম। নেকেড। মাথার চুলে জটা। একটা অ্যালুমিনিয়ামের পাত্র নিয়ে রাস্তার এধার থেকে ওধারে গড়িয়ে যাচ্ছে। কোনও চাহিদা নেই, কারো দিকে তেড়ে যাওয়া নেই, অখণ্ড মনোযোগে খালি গড়িয়েই যাচ্ছে, গড়িয়েই যাচ্ছে, যেন গড়িয়ে যাওয়ার ইভেণ্টে দেশের জন্য সোনাটা ওকে অলিম্পিক থেকে আনতেই হবে। সেদিনই দেখলাম একটা বুড়ি শুয়ে রয়েছে পথের ধারে, চোখেমুখে মাছি ভিনভিন করছে। মরে গেছে। বাবা বলেছিল বৃদ্ধদের নাকি খুব সম্মান ইণ্ডিয়ায়। কথাটা কী করে সত্যি হবে? বাবাকে বলতে বাবা খুব করুণ মুখে বলল, ‘যার আপনার জন নেই তার অবস্থা সর্বত্রই এক মণি। নিউ ইয়র্কের অ্যাপার্টমেণ্টে পচে ঢোল না হয়ে এই আত্মীয়হীন বৃদ্ধা পথে পড়ে মরেছে। কিছুক্ষণ পরই মিউনিসিপ্যালিটি ব্যবস্থা করবে।’ অথচ একটা রাস্তায় দেখলাম ইঁট দিয়ে পুতুলের ঘরের মতো একটা ঘর বানিয়েছে একটা লোক। পাশেই, একটা গাছের সঙ্গে অন্তত পনের ষোলটা স্ট্রে ডগ বাঁধা। একটা সানকিতে ভাত মেখে নিজেও খাচ্ছে, কুকুরগুলোকেও খাওয়াচ্ছে। বউবাজারে যেদিন ন কাকিমার কাছে ছিলাম, সেদিন রাত্রে ওদের পাড়া দিয়ে একটা ফিউনার‍্যাল প্রোসেশন গেল। সে কি চিৎকার! ‘বলো হরি, হরি বোল’-তিন চারজনে মিলে হেঁকে উঠছে ‘বলো হরি’, বাকি সবাই জবাব দিচ্ছে ‘হরি বোল।’ নাচতে নাচতে যাচ্ছে। যেন ভীষণ মজার আনন্দের ব্যাপার ঘটেছে একটা। এতো অশ্লীল কিছু আমি কখনও দেখিনি। মৃত্যু নিয়ে অশ্লীলতা? টুলটুলদি বলল, ‘ওরা আসলে ভয় কাটাচ্ছে।’ বাবলুদা বলল, ‘ভয় কাটাচ্ছে না আরও কিছু মাল টেনেছে।’

‘মাল টেনেছে’, মানে কি রে বাবলুদা?’

টুলটুলদি হেসে গড়িয়ে পড়ে বলল, ‘এইসব স্ল্যাং-এর এ বি সি ডি এবার ওকে হাত ধরে শেখা বাবলু।’

বউবাজারে খানিকটা কাঁচা গলি পেরিয়ে তবে বাঁধানো গলি, সেটা পেরিয়ে তবে রাস্তায় পড়তে হয়। আমি ট্রামরাস্তা পেরিয়ে ওদিকে ওষুধের দোকানে যাচ্ছিলাম কয়েকটা ছেলে পেছনে আসতে আসতে বলছিল, ‘মালখানা রসালো, প্যাঁজ রশুন, লঙ্কাবাটা দিয়ে রাঁধলে যা হবে না! জুত্তো জুত্তো’ সোজা আমার দিকে চেয়ে বলছিল। অর্থাৎ, আমাকেই বলছিল। এই স্ল্যাং-এর আবার কি মানে? ‘মাল’ মানে মদও হয় আবার ‘মেয়ে’ও হয়? মাকে এসে একেবারে ওয়ার্ড ফর ওয়ার্ড রিপ্রোডিউস করলাম, মার মুখটা কাঁদো কাঁদো হয়ে গেল, বলল, ‘যা-তা ছেলে সব। কলকাতার কি কালচারই হয়েছে! ছি, ছি, তুমি আর একলা বেরিও না।’

একলা বেরোব না! ফড়িয়াপুকুর কি বউবাজার কি কদমতলার রাস্তা দিয়ে হেঁটে গেলে দুধারের লোক এমন করে তাকিয়ে থাকে যেন আজব কোনো চীজ দেখছে। ন কাকিমা বলল, ‘মণি, তুমি বড্ড সুন্দর তো! আর একটু অন্যরকম সুন্দর। তুমি এদিকে আর একলা বেরিও না, বিশেষ করে প্যাণ্ট বা মিনি-স্কার্ট পরে।’

বেরোব না! বন্দী থাকবো! যা পরে আমার স্বস্তি হয়, তা পরব না? তাহলে আমি ওদিকে আর যাবোই না।

কাকুদের বাড়ির দোতলার বারান্দা থেকে খুব চুপচাপ একফালি কলকাতা দেখা যায়। আর আমাদের পাঁচতলার বারান্দা থেকে সবুজ গাছপালা। আড়ালে লেকের জল চিকচিক করে। সবুজের একটা ফালি আমাদের রাস্তাটার মাঝখানেও। অনেক গাছপালা সেখানে। সেদিকে তাকিয়ে আমার মেপল অ্যাভেন্যুয়ে ফল আসার কথা মনে পড়ে। কমলা, লাল, হলুদের আগুন-লাগা হৈমন্তী মেপ্‌ল। আমাদের এই লম্বা সবুজ দ্বীপটার ধারে হাতে-টানা রিকশাপুলাররা থাকে। গল্প করে, গামছা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে হাওয়া খায়। দোতলা বাস যায় অনেক উঁচু ছুঁয়ে। বিজ্ঞাপনে ঢাকা লম্বা লম্বা বাস যায়। লী রোডে ক্যালকাটা ইন্টারন্যাশন্যাল স্কুলে পড়ছি। ও লেভেল দিয়ে হায়ার সেকেণ্ডারি পড়তে হবে। এখানকার কোনও স্কুল আমায় নিল না। পড়তে হলে দু বছর নষ্ট করে পড়তে হবে। প্রথম থেকে কোনও সাবজেক্ট না পড়লে, তাকে আর ভবিষ্যতে ছোঁয়া যায় না এ দেশে। বাড়িতে আমি চিরকালই মা-বাবা-দাদার সঙ্গে বাংলা বলে এসেছি। মা বাড়িতে ইংরেজি বলা পছন্দ করত না। আমি কোনদিন বেবি-সিটারের কাছেও থাকিনি। কিন্তু সবাই বলে আমার কথায় খুব টান। টুলটুলদি একদিন বলল, ‘তুই একটু চাল মারিস মণি, যাই বলিস। ওইরকম জিভে চুয়িংগাম রাখার মতো ছাড়া তুই বাংলা বলতে পারিস না আমার বিশ্বাস হয় না।’

‘চাল কী?’

‘চাল? কেন রাইস? রাইস জানিস না?’ টুলটুলদি মিটিমিটি হাসছে। বাবলুদা বলল, ‘যাঃ ওর সঙ্গে ঠাট্টা করছিস কেন? বেচারি। না রে মণি, চালও একটা স্ল্যাং বলতে পারিস। মানে এই একটু কায়দা করা, একটু অ্যাফেকটেশন।’

ছোটনের সঙ্গে কথা কইতে আমার সবচেয়ে ভালো লাগে আজকাল। টুলটুলদি একেক সময় এমন সিলি কথা বলে! দুজনে মিলে পূরবী হলে সিনেমা দেখতে গিয়েছিলাম, বলল, ‘তোর সঙ্গে আর হাঁটব না। লোকে তোকেই দেখে। আমার দিকে ফিরেও চায় না।’

আমি বললাম, ‘তোমার এইসব বাজে কমপ্লেক্সের কোনও মানে হয়? লোকে দেখলেই বা কি, না দেখলেই বা কি? ওরা তো জাস্ট লোক!’ ও চুপ করে বসে দাঁতে নখ কাটতে লাগল। ওই আর এক ব্যাড হ্যাবিট। ছোটনটা খুব মজার। বলে, ‘তোকে দিদি বলব না, তুই তো মণি। যখন ছোট ছিলুম বলতুম টুলটুলদি, ছর্মিদি, এখন বড় হয়ে গেছি এখন তোকেও মণি বলব, আর ছেজজ্যাঠাকেও ছেজদা বলব এবার থেকে।’

ও সব বলতে পারে খালি ‘স’টাকে ‘ছ’ বলবে। আমি হাসতে হাসতে বললুম, ‘আমার মাকে কি বলবি তাহলে? সেজবউদি?’

বলল, ‘কেন, কমলিকা বলব। ছেজদা কি ছুন্দর বলে, কমলিকা ছুনছো!’ এমনি পাকা না বাংলা নিয়ে আমি কেনদিনই নাকি পড়তে পারবো না। এইরকমই এখানকার সিসটেম। লেখার স্ট্যাণ্ডার্ড অবশ্য খুবই হাই। হঠাৎ স্ট্যাণ্ডার্ডটা ধরতে পারতাম কি না জানি না। রবীন্দ্রনাথ আমি যা সামান্য পড়েছি, কবিতাই। পূজারিণী, দেবতার গ্রাস, চিত্ত যেথা ভয়শূন্য, গানভঙ্গ এই ভারতের মহামানবের সাগরতীরে। দাদা গোগ্রাসে গিলত, আর গড়গড় করে মুখস্থ বলতো। খুব ভালো লাগত, বিশেষ করে বাবা কিম্বা মা বুঝিয়ে দিলে। ‘শ্যামা’ ‘চিত্রাঙ্গদা’ ‘চণ্ডালিকা’র ক্যাসেট শুনেছি। কি সুন্দর কথাগুলো! পূজা করি মোরে রাখিবে ঊর্ধ্বে সে নহি নহি/হেলা করি মোরে রাখিবে পিছে সে নহি নহি/যদি পার্শ্বে রাখো মোরে রাখিবে পিছে সে নহি নহি/যদি পার্শ্বে রাখো মোরে সঙ্কটে সম্পদে/সম্মতি দাও যদি কঠিন ব্রতে/সহায় হতে/পাবে তবে তুমি চিনিতে মোরে।’ কিন্তু প্রবন্ধ পড়তে গিয়ে আমার অবস্থা কাহিল হল। মারাত্মক শক্ত। লেখাটা অভ্যেস করিনি একদম। হাতের লেখা বাচ্চাদের মতো। কম্পোজিশন কাঁচা। ভারতীয় ক্ল্যাসিক্যাল নাচ আমার ভীষণ ভালো লাগে। ভরতনাট্যম আর ওড়িষিতে ভীষণ পা মোড়ার ব্যাপার। মাস্টারমশাই বলছেন অত পা মোড়া আমার আসবে না, ব্যালে শেখার জন্যেই না কি এটা হয়েছে। কত্থক দেবেন আমাকে। কিন্তু ব্যালের অনেক ফিগারেই হাঁটু মোড়া ছিল প্লিয়ে বা আতিতিউদ এ হাঁটু মুড়তে হত, কখনও সামনে, কখনও পেছনে। কত্থক অবশ্য খুব ড্রামাটিক। কিন্তু আমার ওড়িষি সবচেয়ে ভালো লাগে। ফরাসীর জন্য আমায় রামকৃষ্ণ মিশনে যেত হয়, সবটাই আমি সাইকেলে চলি। এক বছরে দু তিন বছরের কোর্স কভার করতে হচ্ছে, স্কুলে, খুব খাটুনি। সারাটা দিন বাবা-মার সঙ্গে দেখাই হয় না বলতে গেলে। বাবা আগে বেরোয়, তারপর আমি, শেষে মা।

মা আবার বাড়ি এসে সন্ধেবেলা খুব রান্না নিয়ে মাথা ঘামাচ্ছে। ছোটকাকী আর মা মিলে নাকি রান্নার বই লিখবে একটা। মা কণ্টিনেণ্টাল, ছোটকাকী মোগলাই, দেশী, ন কাকিমাও দিদুর কাছ থেকে, বড়দির কাছ থেকে শেখা দেশী রান্না সাপ্লাই দেবে। মা বলছিল দিদিমার কাছ থেকে পুরনো দিনের রান্না উদ্ধার করবে। বাবা প্রায়ই কলেজ-ফেরত বউবাজার যায়। বাবার খালি কাজ। বাবা অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ জব নিল বলে মা বকাবকি করে। বাবা বলে, ‘আজকাল কেউ প্রিন্সিপ্যালের চেয়ারে যেতে চাইছে না, চেয়ারটা গরম। আমিও যদি না যাই, কে আর যাবে বলো!’

‘যেখানে যত ঝামেলা তোমাকে নিতে হবে?’

বাবা এখনও আমাকে ছোট বলে ট্রীট করে। এটা আমি হতে দিচ্ছি না। বাবার প্রবলেম আমায় বুঝতে হবে। মনমরা হয়ে থাকে কেন? দাদা নেই, আমি একটা অতিরিক্ত দায়িত্ব বোধ করি। দাদা যদি এসে জিজ্ঞেস করে, ‘বাবার চোখের তলায় কালি কেন রে মণি?’ আমি কি জবাব দেবো? ইন ফ্যাকট দাদা না থাকাতে আমি খুব অসহায় বোধ করি। ওকে লিখেওছিলাম। ও লিখেছে এইটেই নাকি আমার নিজেকে গড়বার সুযোগ। তবে ও আসছে। একেক সময়ে ওর সার্মনগুলো আমার অসহ্য লাগে। লিখেছে ভারতবর্ষ সম্পর্কে নাকি ওর ইমপ্রেশন সেভেনটি ফাইভ বহাল আছে। এখনকার ছবিগুলো যেন আমি ওকে সাপ্লাই করি। আমি কি ওকে লিখব দাদা, তোর ইণ্ডিয়া বড্ড টেম আবার বড্ড ভায়োলেণ্ট, সব ছবিই আমার হয় ওভার এক্সপোজার নয় আণ্ডার-এক্সপোজারে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আমার ইচ্ছে করে ভাইবোনদের নিয়ে অন্ততপক্ষে কলকাতা আবিষ্কারে বেরিয়ে পড়ি। তা টুলটুলদি বড্ড ভিতু, টু ফেমিনিন, বাবলুদা ভীষণই নিরীহ এবং নিজের পড়াশোনা নিয়ে ভাবিত, শর্মিটা গাড়ি এবং অভিভাবক ছাড়া এক পা এগোতে পারে না। সুমন তো এতো লাজুক যে কথাই বলে না, বউবাজারের বাড়ি গেলেই কোথায় লুকিয়ে পড়ে। আমি একেক সময় অগত্যা ছোটনকে নিয়েই বেরিয়ে পড়ি। লাভের মধ্যে একগাদা খুচরো জিনিস আর মিষ্টি কেনা হয়ে যায়। স্টলের দোকানদাররা এমন করে কেনার জন্যে পীড়াপীড়ি করে যে আমি না কিনে পারি না। রুমাল, টেপ, কাফতান, যা মোটামুটি পছন্দ হয়, কিনে ফেলি। মিষ্টিগুলো বেশির ভাগই আমাতে ছোটনেতে মেরে দিই, বাকিগুলো মুখ মুছে বাড়িতে নিয়ে আসি। বাবাকে বলেছিলাম, একদিন একা একা ঘুরতে যাবো। বাবা পরের রবিবারই আমাদের সবাইকে নিয়ে বেলুড়মঠ, দক্ষিণেশ্বর ঘুরে এলো। এভাবে কি আর কিছু আবিষ্কার হয়?

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress