জঙ্গলমহলের লোক দেবতা
নয়াগ্রাম থানা এলাকার সুবর্ণরেখা নদীর দক্ষিণ পশ্চিম প্রান্তের একটি গ্রামের নাম ”কালুয়া ষাঁড় ”। গ্রাম লাগোয়া জঙ্গল পুরো আদিম প্রকৃতির। শাল , সেগুন , অর্জুন , চরলা ,বুনো শিরিষ,মহানিম গাছের পাশাপাশি সাবড়া জাতীয় গুল্ম, অনন্ত লতা,শঙখ লতা,জার্মান লতা ও বিভিন্ন বীরুত জাতীয় গাছের সমাহার এখানে ॥ জঙ্গলের গভীরে সূর্যালোকের প্রবেশ নিষেধ ! এই জঙ্গলের অধিষ্ঠাতা দেবতা”কালুয়া ষাঁড় ”। দেবতার না
মেই গ্রাম ও জঙ্গলের নাম । এই লোকদেবতা.
এই প্রান্তিক বাংলার ওড়িশা লাগোয়া অঞ্চলের এক ভয়ঙ্কর বলশালী দেবতা॥ যিনি ষাঁড়ে র রূপ ধরে অরন্যের রাজা বাঘের হাত থেকে গৃহপালিত পশু ও পশুপালক দের রক্ষা করতেন ॥
এখানকার মুল উৎসব হয় পৌষ সংক্রান্তি তে।১০দিন মেলা চলে। তবে শনি ও মঙ্গল বারে মানত রক্ষা ও মনো বাসনা পূরনে র পূজো দেওয়া হয়।
লৌকিক রীতি তেই পূজো করেন দেহুরী রা! বর্তমানে এই দেবতাজনে র ও পূজ্য, ফলে ভক্তের পরিধি ও বেড়েছে।
এই দেবতার পূজার একটি নিদির্ষ্ট সময় রীতি আছে। মানত পূরণ পূজায় বলিপ্রথাও প্রচলিত॥
ডাকুয়া বা মোরগ ,পাঁঠা বলি দিয়ে তার রক্ত উৎসর্গ করা হয়। মানত রক্ষা করার সময় ঢাক ,ঢোল,কাঁসি বাজিয়ে যাওয়ার প্রথা থেকেই
বোঝা যায় য়ে এই অঞ্চলে হিংস্র পশুর বসবাস ছিল!তাদের হাত থেকে বাঁচার জন্য এই প্রথা প্রচলিত ছিল ॥ বলির আগে ফল মূল,বাতাসা,মিষ্টান্ন সহযোগে পূজো করা হয় !
তারপর বলির ডাকুয়া বা পাঁঠাকে স্নান করিয়ে আতপচাল ও বেলপাতা খাওয়ানো হয় ! ডাকুয়া যদি চাল ও পাঁঠা যদি বেলপাতা খায় তাহলে দেবতা
পূজা গ্রহণ করবেন বলে ধরা হয় ॥ যদি না খায় তাহলে মানত কারী দেবতার সামনে আভূমি নত হয়ে ক্ষমা প্রার্থনা .করে নি জের দোষ স্বীকার করে
নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূজা দেবার অঙ্গীকার করেন ।
এর পর দেখা যায় যে ডাকুয়া চাল ও পাঁঠা বেলপাতা খাচ্ছে॥ বলির পর ঐ রক্ত মাটির পাত্রে ধরে দেবতার উদ্দেশ্যে উৎসর্গ করা হয়॥
পুজোর সর্বশেষ পর্বটি হল ”ঝুরি ভোগ ”॥
ঝুরি সম্ভবত ঝারি শব্দে র অপভ্র।শ ……
ঝোর…ঝারি…ঝুরি….
ঝোর অর্থাত ঝরনা ….জলধারা! এখানে এই
ধারাটি হল ”মদ”! দেবতার উদ্যেশ্যে এখানে মদ উৎসর্গ করা হয়॥ দেহুরী দেবতার প্রতিনিধি হিসেবে সেই মদ গ্রহণ করেন । এরপর সবাই মিলে
দেবস্হান পরিত্যাগ করে! নিয়ম অনুযায়ি এরপর
পেছনে তাকানো মানা ॥ লোকশ্রুতি যে পেছনে .তাকালে বাঘের কবলে পড় তে হয়।
এই একটি প্রথাতেই বাঘের কথা বলা আছে॥
কালুয়া ষাঁড়ে র প্রতিপক্ষ বাঘ ॥আবার পশুপালক দের শত্রুও বাঘ! তাই নি জেদের ও গৃহপালিত পশুদের জীবন বাঁচাতে এই দেবতার উপাসক হয়ে ছিল পশুপালক সম্প্রদায় , , , , , , , , !
তাই কালুয়া ষাঁড় এক আদি অকৃ ত্রিম লোক দেবতা॥
এখান কার অনে কে এঁকে দেবী হিসেবে পুজো করে! তাদের মতে দেবী চন্ডীর এক রূপ এটি॥
আবার অনেকে শিবজ্ঞানে ও এঁর পুজো করেন ॥
কালের গতি,ভক্তদের চাহিদা অনু যায়ি দেব বা দেবী যে রূপেই বিরাজ করুণ না কেন কালুয়া ষাঁড় এ অঞ্চলের লোকজন দের প্রিয় উপাস্য দেবতা॥ পুরো জঙ্গল মহলে আর কোথাও এই দেবতার অস্তিত্ব নেই ॥
এই দেবতার মান তের জন্য দুটি মাটির ছলন ঘোড়া লাল সুতো দিয়ে বেঁধে দিতে হয়॥ পুরো দেবস্হানে এই ছলনে র স্তূপ দেখতে পাওয়া যায় !
মানুষ এর আন্তরিক কামনা র বহিঃপ্রকাশ এই মান তের ছলন গুলি॥
নমি .নমি চরনে ॥