চোরাই ধন – দ্বিতীয় অংক
দ্বিতীয় অংক
সুনেত্রা, বিভাবতী
সুনেত্রা–স্বগত (হ্যাঁ সেই একুশ বছর আগে আমার বিবাহ হয়েছিল মনে পড়ে সেদিনের কথা। সেই কথোপকথন মায়ের সাথে–)
মা, মাগো…..
বিভাবতী–হ্যাঁ,সুনি , কি হলো। একি এমনভাবে বসে আছিস। ঘরে বাতি দেয় নি।
সুনত্রা– না। ঠিক আছে। সন্ধ্যা ও রাত্রির এই সন্ধিসময় টুকু আমার খুব ভালো লাগে।
বিভাবতী– তোমার আর তোমার পিতার ত খালি আকাশ আর চাঁদ নক্ষত্র নিয়েই যত ভাবনা।
সুনেত্রা– মা , তোমার ইচ্ছে করে না,জানতে, আকাশের এই লক্ষ লক্ষ তারাদের খবর , কত কি রহস্য আছে এই তারা মন্ডলে জানো…
বিভাবতী— থাক ওসব খবর। বলি আমায় ডাকলি কেন রে।
সুনেত্রা– মা আমার কাছে একটু বসো না মা।
বিভাবতী– কি হয়েছে মা সুনি? সুধীর ত দুদিন হলো আসছে না, কেন রে?
সুনেত্রা– মা তুমি বাবাকে বলো, আমার জন্য আর পাত্রের খোঁজ করতে হবে না।
বিভাবতী– না, উনি ত তেমন ভাবেন না। যা দুচারটে আসে,তোমার বিয়ের জন্য , পাত্রদের ঠিকুজি মেলাতেই প্রথম ব্যস্ত হন। কিন্ত তার মনের মতো ঠিকুজি ত মিলছে না।
সুনেত্রা– হ্যাঁ। সে তো ঠিক। ঠিকুজী কুষ্টি মিলিয়েই ত বিবাহ হওয়া উচিত।
বিভাবতী– ঐ বাপ ও মেয়ের এক কথা। ঈশ্বর তোমার বর ঠিক করে রেখেছেন, মনের ভেতরে সে ডাক শুনতে পাচ্ছিস না মা।
সুনেত্রা– মা, তোমার মতো যে আমি ভাবতে পারি না।আকাশের গ্রহ নক্ষত্রের প্রভাব যে আমার ভাগ্য ঠিক করেই রেখেছে। অন্যথা কি করে হবে?
বিভাবতী– একি মা সুনি, তোর চোখে যে জল , মায়ের কাছে কি কিছু লুকোন যায়, মা।
সুনেত্রা– মা আমি একটা সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
বিভাবতী– আহা সুনি, আমি বুঝতে পারছি মা — আমার ইষ্ট দেবতা তোকে রক্ষা করবেন। তোর আশংকা আমি বুঝতে পারছি।
সুনি– মা। মা, আমি তাই এক সিদ্ধান্ত নিয়েছি মা।
বিভাবতী– কি
সুনেত্রা– আমি আর কারোর সাথে ঠিকুজী বিচার করবো না,বাবাকে তুমি বলো।
বিভাবতী– সে তো খুব ভালো কথা। আমার ইষ্ট দেবতাই তোমার বিবাহ ঠিক করে রেখেছেন। দরকার কি ঠিকুজী মেলাবার।
সুনেত্রা– হ্যাঁ। আমি কোন ঝুঁকি নিতে চাই না,সেখানে অমিল হলে— না না তার চেয়ে না মেলানই ভালো ….
বিভাবতী– ঠিক , তাই ভালো, আমি জানি কার জন্য এতো আশঙ্কা, আমি যে তোর মা সুনি।
সুনেত্রা– তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি বিবাহই কোনদিন করবো না। গ্রহ নক্ষত্রের অমিল আমায় আরো দুঃখ দেবে …… তার চেয়ে কুমারী থাকবো।
বিভাবতী– সেকি , এ কেমন কথা সুনি, এ আমি কি শুনছি সুনি।
সুনেত্রা– মা তুমি কি পুরাণের লীলাবতীর কথা পড়ো নি?
বিভাবতী– জানি তার শাস্ত্রজ্ঞ পিতা বিবাহের ক্ষণলগ্ন দেখেছিলেন। বড়োই কম সময় ছিল।
সুনেত্রা– কিন্ত ঐ ক্ষণ সময় পাড় হওয়াতে, লীলাবতীর ভ্রষ্টলগ্নে বিবাহ হয় ও পরে সঙ্গে সঙ্গেই তার বৈধব্যযোগ আসে।
বিভাবতী– সে ত এক অঘটন, ভাগ্যে যা ইশ্বর লিখে রাখেন তাইত হয়।
সুনেত্রা– তারপর বিধবা লীলাবতী গণিত শাস্ত্রে পারদর্শী হন ও পরে গণিত শাস্ত্রও রচনা করেন।
বিভাবতী– থাক থাক ওসব কথা।
সুনেত্রা– হ্যাঁ মা, মা আমি চিরকাল কুমারী থাকব। আর আমার বিদ্যার সাধনাতেই দিন যাবে।
বিভাবতী– মা সুনি, এ হয় না, এমন কথা বলে না , শান্ত হও মা, আমার ইষ্ট দেবতা সব সমাধানের পথে তোমার ও সুধীরের মঙ্গল করবেন।
সুনেত্রা– মাগো, তুমি এখন এসো মা, আমার সিদ্ধান্ত আমি জানালাম, আর এখন…আমায় একটু একা থাকতে দাও মা।