Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » চেনা অচেনা || Ranjana Guha

চেনা অচেনা || Ranjana Guha

চেনা মানুষকে দেখলাম অচেনার গাম্ভীর্যে–সেই কতো কালের চেনা ছিল বিতান,বলা ভালো ছোটবেলায় আমি আর বিতান একসাথে পাশাপাশি বাড়িতে থাকতাম বলে বন্ধুত্বও ছিল দু’জনের অসীম।আস্তে আস্তে স্কুল ছেড়ে দুজনে কলেজ, তারপর ইউনিভার্সিটি –কখনও বন্ধুত্বে ছেদ পড়েনি।
সবে ইউনিভার্সিটির গণ্ডী পেরিয়ে আমি একদিকে এম.ফিল করছি আর বিতান পিএইচডি,আমি মেয়ে তাই আমার বাড়িতে পাত্র দেখা শুরু হয়ে গেলো।একদিন ইউনিভার্সিটির গেটে বিতানের সাথে দেখা হলো,ওকে বললাম যে আমার বিয়ের কথাবার্তা চলছে।ও হঠাৎ বলল;-‘বাবলি তুই বছর দুয়েক বিয়েটা করিস না,আগে নিজের পায়ে দাঁড়া,তারপর বিয়ে করিস।”আমি বললাম;-“মা,বাবা যে শুনছে না••”
“ঠিক আছে, আমি কাকু কাকীমার সাথে কথা বলবো••”
-“কিন্তু কেন?তুই বললে বাবা-মা শুনবে কেন?”
••”ঠিক শুনবে,দেখবি,শোনে কি শোনে না”।
আর কোনো কথা হয়নি, একদিন ইউনিভার্সিটি থেকে ফিরছি দেখি বিতান আমাদের বাড়ির থেকে বেরোচ্ছে। আমি জিজ্ঞেস করলাম;-“কি রে, কিছু বললি,শুনবে বাবা-মা তোর কথা?”
বিতান বলল;-“আমি ভবিষ্যতে সাপ হবো না ব্যাঙ হবো,তোর জন্য তো এখনই এমবিবিএস ডাক্তার জুটিয়ে ফেলেছেন ওঁরা••আমার এই মুহূর্তে আর কিছুই করার নেই রে”।
আমি বললাম;-“আচ্ছা,কেন বলতো তুই এসব কথা শোনার জন্য বাবা-মা’কে বলতে গেলি?”
ও বলল;-“সেই কবে থেকে তোকে নিয়ে স্বপ্ন দেখেছি, কোনদিন বলিনি,আজ বলে গেলাম যে বাবলি আমি তোকে খুব ভালোবাসি রে!”
আমার বুকের মধ্যে কেমন চিনচিন করে উঠলো, কিন্তু আর কিছুই বলতে পারলাম না।এই প্রথম আমাকে কেউ বলল “ভালবাসি”-শুনে মনের ভেতর এক অদ্ভুত অস্থিরতা, কিন্তু প্রত্যুত্তরে বলতে পারলাম না;-“বিতান আমিও তোকে খুব ভালবাসি।”
তারপর এই জীবনের ধারাপাতে গত এগারো বছরে কতো সংখ্যা বসে গেছে ,ডাক্তারের ঘরণী হয়ে সময়ে নাওয়া খাওয়াও ভুলে গেছি।ছেলে টিটো এখন আট বছরের,ওর স্কুল,ওকে মানুষ করা সব মিলিয়ে নিজের পায়ে দাঁড়ানোর স্বপ্নটাও হারিয়ে গেছে।
আজ হঠাৎ হিন্দু স্কুলে ছেলেকে ছেড়ে কলেজস্ট্রীট মোড়ে ট্রামের জন্য দাঁড়িয়ে আছি,দেখি বিতান।একটা সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী পড়ে কাঁধে একটা ঝোলা ব্যাগ নিয়ে প্রেসিডেন্সী কলেজে ঢুকছে।আমি চেঁচিয়ে উঠলাম;-“বিতান,এ্যাই বিতান?”
বিতান দাঁড়ালো••কাছে এসে বলল;-“ভালো আছিস?”
আমি বললাম;-ওই আছি,তারপর তোর খবর কি?”
“এই কলেজে পড়াই,দিন কেটে যাচ্ছে••”
“তুই প্রফেসর!ডাঃ,বিয়ে করেছিস?”-জিজ্ঞেস করলাম।
বিতানের স্বভাব উজ্জ্বল মুখটা ভীষণ গম্ভীর হয়ে গেল,বলল;-“না, ভালবাসার মতো কাউকে পেলাম না তাই এ জীবনে আর বিয়ে করা হলো না,ছাড় ও সব কথা,আমার সাড়ে দশটায় ক্লাস আছে,চলি রে••তুই ভালো থাকিস।”—বলে বিতান সত্যি চলে গেল।
আমার চেনা বিতানের এই পরিবর্তন আমাকে অন্তর থেকে বিদ্ধ করছিল।সবটাই তো আমার জন্য! কেন সেদিন বলতে পারিনি যে ওকে আমি ভালবাসি,আর কেন যে বাবা-মা’কেও জোর গলায় বলতে পারিনি!এখন সারাজীবন অতৃপ্ত ভালোবাসা যেমন আমাকে কাঁদাবে, বিতানের গাম্ভীর্যতার আড়ালে সেই একই অনুভূতি তাড়া করে বেড়াবে।।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress