চাহিদা পূরণ – পর্ব ২
পাঁচ বছরের সুখী দাম্পত্য জীবন,যদিও সুখ শব্দটা কেমন যেন দুর্বোধ্য মনে হয় সুমেধার মাঝে মাঝে। বর অফিসের কাজে মাদ্রাজে এখন, মাসের মধ্যে দশ পনেরো দিন বাইরে থাকতে হয় দেবাংশুকে। শাশুড়ি মায়ের শরীর খারাপ, ছেলের পড়াশোনা,লোক লৌকিকতা একাহাতে সামলাতে অভ্যস্ত জীবন, মাঝে মাঝে সবকিছু যেন মেকি মনে হয় সুমেধার।
জোজোকে স্কুল বাসে তুলে দিয়ে নিজে অফিসের জন্য রেডি হয়।যাওয়ার পথে চৌধুরী বাবুর সঙ্গে দেখা, হাসিমুখে বললেন ছেলে বাইরে বিদেশে পড়তে যাচ্ছে, সুমেধা বলেন খুব ভালো, বৌদির অনেক দিনের ইচ্ছা পূরণ হতে চলেছে তবে বাইরে থেকে দেশে ফিরে এডজাস্ট করতে অনেক সময় একটু অসুবিধা হয়, চৌধুরী বাবু বলেন এই দেশে আছেটা কি? ঘুষখোর নেতা,আর বেকারত্বের হাহাকার,তাই একটু বেশি খরচ হলেও পাঠিয়ে দিচ্ছি, আমাদের জন্য ভাবি না, ছেলে বুড়ো বয়সে দেখবে সেই আশা রাখি না, তবে ওর জীবনে সুখ স্বাচ্ছন্দ্য থাকুক,আর কোনো শরীর খারাপ বা অন্য কিছু দরকার হলে তুমি, দেবাংশু আছো তো। সুমেধা হেসে বলে নিশ্চয়ই দাদা, একদম চিন্তা করবেন না, আমাদের কমপ্লেক্সে এইটুকু সহযোগিতা আমরা অবশ্যই করতে পারবো।অফিসে যেতে যেতে ছেলের কথা ভাবতে থাকে, দেবাংশুর ফোন, অনলাইনে আমার কিছু অর্ডার আসবে নিয়ে নিও, সুমেধা কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে যায়। অগত্যা বাড়িতে ফোন করে জানায়, শাশুড়ি মা বলেন আমিতো ঐ জন্য আছি, দিনরাত তোমাদের অনলাইন অর্ডার রিসিভ করবার জন্য। কথা বাড়ায় না সুমেধা,অফিসে পৌঁছে কাজে মনোযোগ দেয়।অডিটের জন্য কাজের চাপ একটু বেশি অফিস থেকে বেরোতে দেরি হয়ে যায়, ক্লান্ত শরীরে কলিং বেল বাজাতে শাশুড়ি মা দরজা খুলে দিয়ে মুখভার করে সোফায় বসে পড়ে। সংসারের প্রয়োজনীয় টুকিটাকি জিনিষ যেগুলো অনলাইনে অসুবিধা কেনার ফেরার পথে নিয়ে নিয়েছিল সুমেধা একপাশে নামিয়ে রেখে নিজের ঘরের দিকে এগোতে যাবে, শাশুড়ি মা বলেন আজ দেবাংশুর বড়ো পিসি ফোন করেছিল,রোহনের বিয়ের ঠিক হয়েছে, ঠিক মানে রোহন নিজেই ঠিক করেছে,একই অফিসে চাকরি করে, তার বাবা নাকি অসুস্থ প্রায় সজ্জাশায়ী…যত্তসব ঢং,তৃণা তো খুবই রেগে আছে ছেলের ওপর, ফোনে বলছিল দেবাংশুর মতো একই ভুল রোহন করবে আমি ভাবতে পারিনি,একটা মাত্র ছেলে একটু স্ট্যান্ডার্ড ফ্যামেলি হলে বলতে বলতে থেমে যান, আড়চোখে সুমেধাকে দেখে নিয়ে বলেন তুমি বরং একটা ভালো শাড়ি আর একটা ব্রেসলেট অর্ডার করে দিও, আমার পায়ের ব্যাথাটা একটু বেড়েছে। সুমেধা অল্প হেসে বলে ঠিক আছে মা, শাশুড়ির এই ধরনের কথায় অভ্যস্ত সুমেধা। হঠাৎ ফোনটা বেজে ওঠে, রিসিভ করতে একটা গম্ভীর পুরুষ কন্ঠ ভালো আছো? কিছু বলার আগেই ফোনটা কেটে যায়… গলাটা যেন খুব চেনা , তৃণা চায়ের কাপ এগিয়ে দেয়, কাপটা নিয়ে সুমেধা নিজের ঘরের দিকে এগিয়ে যায়,জোজো বলে মা কি এনেছ আমার জন্য?