চাবুক জামাই
অপরেশ বেশ উত্তেজিত,এই কুসুমিকা শুনছ বাবা ,মা তো উড়োজাহাজ চড়ে নি। এবার বেশ কিছু টাকা অফিস থেকে পেলাম। ভাবছি !
এই শোনো তোমার ভাবনা নিজের মধ্যে রাখো।যা মাইনে পাও সব তো মা বাবার জন্য পাঠিয়ে দাও। ওনারা বুড়ো বুড়ি পঞ্চাশ হাজার টাকা দিয়ে কি করেন! ছেলের কষ্টের টাকা তছনছ করছে।এই শোনো খোঁজ নিয়ে দেখো নিশ্চয় মদ , সিগারেট খেয়ে টাকা উড়াচ্ছেন।অপরেশ সব সময় ছিঃ–এই একটা কথা বলে অন্য ঘরে চলে যায়।কুসুমিকার বকর বকর শুরু হলে থামতেই চায় না।কুসুমিকা যখন বাপের বাড়ি যায় , ঠিক গুণে চারটে মিষ্টি দুলিয়ে দুলিয়ে নিয়ে যায়।মন,হাত খুব ছোটো।বললেই বলবে আমার বাবা মা অন্যের টাকায় ফুটুনি করে না।
অপরেশ শোনো আমি আর তুমি বেড়াতে যাব।বুড়ো ,বুড়ির অতো শখ কেন?
অপরেশ বলে আমার টাকা আমি যাকে ইচ্ছে নিয়ে যাব, তোমার তাতে কি ?
কুসুমিকা বলে আমি যাব না। তুমি যেখানে ইচ্ছে যাও।ওই কদিন আমার মা , বাবাকে আসতে বলব। এমনিতে জামাই কোনোদিন নিমন্ত্রণ করে না।
অপরেশ বলে নিজের মেয়ের বাড়িতে কখনো কেউ নিমন্ত্রণ করে না।
কুসুমিকার কথানুযায়ী সে বাড়িতে থাকবে, অপরেশ একা বাবা ও মার সাথে পুরী যাচ্ছে।ভোর হতেই অপরেশ চলে যায়।কুসুমিকা কেঁদে কেঁদে চোখ ফুলিয়ে নিজের মা ও বাবাকে ফোন করতে থাকে। কিন্তু মা তো ফোন ধরেই না।
এমন সময় কলিং বেলের শব্দ, দরজা খুলতেই দেখে অপরেশের মা ও বাবা।
কুসুমিকা বলে কি এরোপ্লেন ধরতে পারেন নি, আপনার ছেলে কোথায়?
শ্বশুর বলে বহরমপুর থেকে কলকাতায় আসতে এরোপ্লেন আসে না বৌমা।
অপরেশ তো বলল মা ও বাবা তোমার বৌমা একা থাকবে।ওর কাছে চলে এসো।
এমন সময় টেলিফোন এই কুসুম ফোন করেছিলি, জীবনের প্রথম উড়োজাহাজ চড়লাম।
কুসুমিকা ধপ করে মাটিতে বসে পড়ে।ভাগ্য করে জামাই পেয়েছি , এরকম জামাই ,মাস গেলে পঁচিশ হাজার বাবার অ্যাকাউন্টে পাঠিয়ে দেয়। কুসুম মা তুই কিন্তু শ্বশুর ও শাশুড়ির যত্ন নিস।
কুসুমিকা বিড়বিড় করে বলে নিশ্চয় মা!
মা ও বাবা জামাইয়ের সাথে তীর্থ করে মেয়ের বাড়িতে ফেরে।
মা বলেন জামাই প্রতি মাসে পঁচিশ হাজার টাকা পাঠায়।তার কাছে দুই বাড়ির বাবা ও মা সমান।ভাগ্য করলে এরকম জামাই পাওয়া সম্ভব। কুসুমিকা অপরাধ বোধে অপরেশের পা জড়িয়ে অঝরে কাঁদতে থাকে ।