গোধূলি রঙের মিহি নির্ভার চাদর গায়ে একজন যোগী
এলেন আমার ঘরে খুব নিরিবিলি। আমি ছাড়া
জানতে পারেনি কেউ; আমার চেয়ার আর কেঠো
খাটকে উপেক্ষা করে মেঝেতে গায়ের
চাদর বিছিয়ে বসলেন। মুখে তার কথা নেই, উদাসীন
দু’টি চোখে যেন বহু শতাব্দী নীরবে
ক্রীড়াপরায়ণ, শীর্ণ, ঋজু শরীরের এক ধরনের দ্যুতি
আমাকে জাগ্রত করে। তাকালেন তিনি
সারি সারি পুস্তকের দিকে, ঠোঁটে তার মৃদু হাসি
ফোটে, সে হাসিতে কী-যে ছিল ঠিক বুঝতে পারিনি।
ছিল কি অবজ্ঞা কিছু? না কি উপহাস? ছদ্মবেশী তামাশার
আভাস ছিল কি কোনও? প্রজ্ঞা-উদ্ভাসিত মন তার কখন যে
কোন্ ছন্দে দুলে ওঠে, বোঝা দায়। উচ্চারণহীন
কোন্ কথা আমাকে বোঝাতে চান তিনি,
কী করে বুঝব এই অবেলায়? তবে কি আমার
সকল পুস্তক-পাঠ, সন্ধান, যা-কিছু
সামান্য অর্জন, সবই ব্যর্থ? বেদনার অস্তরাগ
আমাকে দখল করে। যোগী টেবিলের কাছে এসে আস্তে
আমার সকল পাণ্ডুলিপি, অমুদ্রিত কবিতা সংগ্রহ হাতে
তুলে নিয়ে একে-একে পুড়িয়ে ফেলেন। মুখে তার
সুহাস কাঠিন্য আর বলেন নিষ্পৃহ কণ্ঠস্বরে,-
‘ভেঙেচুরে নিজেকে নতুন করো বারবার, বাহুল্যের ঝুঁটি
ছেঁটে ফেলে বুকে নিয়ে প্রকৃত শাঁসের অরুণিমা সৃজনের
পথে হাঁটো নিত্যদিন, ফোটাও মৃত্যুর ঠোঁটে সজীব কুসুম’।
অনন্তর যোগী তার চাদর আমার গায়ে জড়িয়ে নিভৃতে
বেরিয়ে গেলেন হেঁটে, উন্মুক্ত শরীরে কাঁপে রৌদ্র আজ জ্যোৎস্নার ঝালর।