Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » চরিত্রহীন || Purabi Dutta » Page 9

চরিত্রহীন || Purabi Dutta

অষ্টম অংক

অঘোরময়ী, কিরণময়ী, সুরবালা, উপেন, সতীশ, দিবাকর

অঘোরময়ী– বাবা বিপিন, শ্রাদ্ধশান্তি ত সব ভালমতো চুকে গেলো, কি ভাগ্যি যে জগদীশ্বর তোমাদের পাঠিয়েছিলেন সময়মতো, নাহলে যে কি হতো।

বিপিন– মাসিমা বসুন, শরীর ঠিক বোধ হচ্ছে ত। আজ কেমন আছেন।

অঘোরময়ী– আর আমার শরীর। বাবা কি বলব। হারান তো যাবার জন্য পা বাড়িয়েই ছিল, সব আমার কপাল। বাছা আমার একটা দিনও শান্তি পায় নি ।

বিপিন–মাসিমা, আমরা ত আগামী কালই ফিরে যাবো। সতীশ আসবে মাঝে মাঝে আর একমাস বাদে দিবাকরও এসে এখানে থাকবে।সে এখানে থেকেই কলেজে পড়বে।

অঘোরময়ী– যা তুমি ভালো বুঝবে বাবা।

বিপিন– আর বাড়িটি একটু মেরামতি করতে হবে। সে ব্যবস্থাও হবে।

অঘোরময়ী– বাবা বিপিন একটা কথা বলার আছে।

বিপিন– হ্যাঁ , হ্যাঁ , বলুন

অঘোরময়ী– পাশের বাড়ির মল্লিকদের বড়বৌ কাশী, বৃন্দাবন , প্রয়াগ বেড়াতে যাবেন। আমার কি সেই সঙ্গে যাওয়া হতে পারে না?

বিপিন– কেন পারবে না মাসি। স্বচ্ছন্দ হতে পারে। কিন্তু….

কিরণময়ী–আমার জন্য চিন্তা নেই ঠাকুরপো। আমি ঝি কে নিয়ে বেশ থাকতে পারব। আর দিবাকর ঠাকুরপো ত থাকবেন। কালেজে বি. এ.পড়বেন।

অঘোরময়ী– তাহলে ত কোন কথাই নেই , উপিন—তাই ঠিক করো আমার যাবার। তাই করো। আমি উঠি , যাই উদিকে।

উপেন– এই যে, দিবাকর, কোন্ রাজ্য জয় করে এলে?

দিবাকর– ও বাবা। এতক্ষণ ধরে বউঠানের বই পুস্তক সব দেখছিলাম আর গুছিয়েও রাখলাম।

কিরণময়ী– হ্যাঁ , আমি বড়োই অগোছালো, ভালো করেছ ভাই বইগুলো গুছিয়ে রেখে।

দিবাকর– কিন্তু বইগুলো খুলে দেখলে বোঝা যায়। কি যত্ন করেই না পাঠিকা পুস্তকসকল পড়েছেন।

কিরণময়ী– বই পড়া যে আমার নেশা ভাই। একটা নেশা ত জীবনে বেঁচে থাকতে গেলে দরকার।

দিবাকর– আর কত ধরণের বা বই সব।

কিরণময়ী– উনিও পড়তে ভালবাসতেন। তবে শেষদিকে আর কিছুই পেরে উঠতেন না।

দিবাকর– আমি একটি বই নিয়ে যাচ্ছি, বৌঠান, “কঠোপনিষদ” আবার ত আসব তখন না হয় ফেরত দেবো।

উপেন–এত বই থাকতে “কঠোপনিষদ”?

কিরণময়ী– কার মনে কি সাড়া পড়ে। কে কোথায় ধরা পড়ে, সে তো শুধু সেই জানে।

দিবাকর–যাই, আমি একটু বইগুলো দেখি গিয়ে।

উপিন– সুরবালাকে দেখছি না, সেই সকালের জলখাবার দিয়ে গেল।

কিরণময়ী–(দীর্ঘশ্বাস) কি বলব। আমাকে জোর করে রান্নাঘর থেকে বার করে দিল। সব নাকি সে নিজের হাতে রান্না করবে। বললাম। পারবে? বলল কেন এই ত সাহায্যের জন্য ঝি রয়েছে।

বিপিন– হাসি। হু। সুরবালা যা ভাববে তা করবে।

কিরণময়ী– ঠাকুরদেবতায় সুরবালার খুব ভক্তি। মহাভারতের সব ঘটনা, কথা সে ধ্রুব সত্য বলে ভাবে। অমন যদি হতে পারতাম।

বিপিন– কেন , আপনি কি নাস্তিক।

কিরণময়ী– জানি না, পূজা করতে হয় তা করি, এ এক অভ্যাস। যে বস্তুকে যা অজ্ঞেয় বলে নিশ্চয় বুঝেচি, তাকে চিন্তা করাও যায় না, করিও নি।

বিপিন– তাই

কিরণময়ী– নিশ্চয়ই, অচিন্তনীয়কে চিন্তা করব কি দিয়ে।

বিপিন– বৌঠান। সত্যিই বলছি, আপনার এইটুকু বয়সের মধ্যে এত পড়লেনই বা কি করে, আর এত ভাবলেনই বা কি করে!!!

কিরণময়ী– বিদ্রুপ করছ ঠাকুরপো।

বিপিন– না, মনের কথাই বলছি। যত দেখছি ততই অবাক হচ্ছি।

কিরণময়ী– কিন্তু, সুরবালার মতো ভাবতে পারলে ভালবাসা পেতে অসুবিধা হতো না।

বিপিন– সুরবালা একশভাগ খাঁটি।
তার বেশী বিদ্যা নেই। কিন্তু তর্কের বুদ্ধি অতি তীক্ষ্ণ।
তাঁর ভালবাসায় কোন ভেজাল নেই।
তাকে ঠকাতে পারব না কোনদিন।

কিরণময়ী– কে কোথায় মনের আড়ালে কাকে ঠকাচ্ছে, তা নিজেও কি টের পায়। অথচ…

বিপিন– ঠিক। বুঝলাম না

কিরণময়ী– একদিন বুঝবেন, নিজের মনকে কে কতদূর বা বোঝেন।

বিপিন– ভাবছি,

কিরণময়ী– কী??

বিপিন– না। ভাবছি। একি পিঞ্জরাবদ্ধ বন্য পশুর গর্জন না…..

কিরণময়ী– আর নয়ত?

বিপিন– কিসের বিরুদ্ধে এত আক্রোশ ! এ বিদ্রোহীরূপ!
শাস্ত্র ও শাস্ত্রকারদের কোন্ অনুশাসনের শৃঙ্খল চূর্ণ করে বিধবা মুক্তি।

কিরণময়ী– এমন তামাশা কি ভালো ঠাকুরপো।
কোথায় কে বাঁধা পড়ে গুমরিয়ে কাঁদে। সে খোঁজ বা কে রাখে।

বিপিন– হয়ত রাখে। কিন্তু…

কিরণময়ী– কিন্তু বেড়া ভাঙবার সাহস নেই, সমাজ নয়, নিজের মনেরই।

বিপিন– জানি না। — সুরবালা এর উত্তর হয়ত দিতে পারত।
সুরবালার বিদ্যে নেই, কিন্তু তার বিচার করার শক্তি সত্যিই অদ্ভূত।
তার সঙ্গে কি এ আলোচনা হয়েছে।

কিরণময়ী– মোটে দিন কয়েক ত এসেছেন, এর মধ্যে নানা ব্যস্ততা।

বিপিন– ঠিক। আবার ও এতো বোকা যে জীবনে কোন মিথ্যা কথা বলতে পারে না।
সংসার করতে ত একটু আধটু মিথ্যেকথা বলতে হয়। তাহলেই অশান্তি।

কিরণময়ী– কিন্তু তোমার ত অসুবিধে হবেই, তুমি যে কাঙাল

বিপিন– কাঙাল কিসের? কেন?

কিরণময়ী– কাঙাল ? কেন, যশের, ধনের, মানের আর অহংকারের গন্ডী সীমা… সে বেড়া ডিঙোতে পারবে না , জানি, নয়ত…

বিপিন– নয়ত কি?

কিরণময়ী — আসলে তুমিই আমার গুরু। তোমার কাছে স্বীকার না করেও পারব না।

বিপিন– কি কথা?

কিরণময়ী– স্বামীকে আমি কোনদিন ভালবাসিনি। কায়মনে চেষ্টা করেছিলাম। পারিনি। কিন্তু ভালবাসার সাধ যে আমার কত বেশি সে-কথা টের পাই প্রথম তোমাকে দেখে। ।

বিপিন– বৌঠান, আপনি আজ ক্লান্ত ও উত্তেজিত আছেন। পরে একদিন শুনবো।

কিরণময়ী– না। আমি ঠিক আছি।

বিপিন– মানুষ মাত্রেরই গোপনীয় কিছু কথা থাকে, সে ত খুলে বলবার কোন আবশ্যক নেই।

কিযণময়ী– আছে , আমি এক ভালবাসাহীন দুর্গের মাঝে বাস করছিলাম। আমার স্বামী জীবন থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন। আমার শাশুরি মা আমাকে আঁকড়ে বেঁচে থাকতে চেয়েছিলেন।

বিপিন– বুঝলাম না। কি রকম?

কিরণময়ী– অনঙ্গ ডাক্তারকে মনে আছে, হয়ত প্রথম যেদিন এ বাড়ি এসেছিলে, দেখে থাকতে পারো।

বিপিন– হু , হু

কিরণময়ী– মা আমাকে টোপ দিয়ে তার কাছ থেকে টাকা নিতেন, নয়ত আমাদের সংসার চলত না। রোজ সাজসজ্জা করে মন ভোলাতে হতো। তবু আমি ধরা দিই নি কোনদিন।
আমার জীবন বিতৃষ্ণা , মুক্তি পেতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আবার আমার জীবন তৃষা ফিরে এলো।

বিপিন– হারানদার মৃত্যুর পর?

কিরণময়ী– না। তার আগেই….
তার দুয়ার তুমিই খুলে দিয়েছ।
আর এও জানি।

বিপিন– কি

কিরণময়ী– রক্ষক হয়ে তুমি ভক্ষক হতে পারবে না।

বিপিন– মনে যাই থাক, এসব কথা আপনার আমার আলোচনা না হওয়াই ভালো।

কিরণময়ী– জানি, তোমার মনের কথাও আমার টের পেতে দেরী হয় নি।
তোমার কাছ থেকে কোন আশা নিয়ে বলি নি।

বিপিন– তবে?

কিরণময়ী– বিদ্রোহীরা প্রতিহিংসার পথ কিভাবে বেছে নেয় নিজেকে দিয়ে তা আমার জানা আছে।
আমার পথ আমি বুঝে নেবো।

বিপিন– আজ আপনার মাথা ঠিক নেই, মন চঞ্চল।
এ আলোচনা আর করতে চাই না।

কিরণময়ী– হ্যাঁ ঠিক হয়ত বা। তবে সুযোগ বার বার আসে না।

বিপিন– হু,

কিরণময়ী– থাক্ অনেক বেলা হলো, নিজের মনকে জিজ্ঞেস করো, উত্তর পাবে।
কাল যাবার তাড়া। সব দিক গুছোতে হবে , আমি যাচ্ছি।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress