Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » চরিত্রহীন || Purabi Dutta » Page 4

চরিত্রহীন || Purabi Dutta

তৃতীয় অংক

সতীশ , সাবিত্রী

সাবিত্রী– বাবু এখনও  ওঠেন নি, ও সতীশ বাবু, বেলা দশটা বাজে যে…..
উঠুন, মশারী গুটিয়ে দি।

সতীশ–বেহারী কোথায়, অনেকক্ষণ জল আনতে বলেছিলাম। জল খাবো। সে এলো না কেন, সাবিত্রী?

সাবিত্রী– সে উত্তর  আমি কি করে দেবো, সতীশবাবু। সে বরফ আনতে গেছে। আপনি ত একা নন, এখানে মেসে আরও  পাঁচজন বাবুরও কাজ করতে হয়। তা ছাড়া জল আনতে বলা যে আপনার  ছল সে বেহারীও বোঝে।

সতীশ–কিসের ছল? জল খেতে পারব না? কি বলতে চাও, সাবিত্রী?

সাবিত্রী–কিসের ছল? কেন, আমাকে ডাকবার,নতুবা কোন্ দিন আপনি আহ্নিক না করে জল খান যে আজ হাঙ্গামা করছেন? যান, চান করে আসুন,আমি ততক্ষণ আহ্নিকের  জায়গা করে রাখি।

সতীশ– বেহারীকে বরফ আনতে কে পাঠালো, আমি জানি,সে ফিরে এলেও আসতো না…..তাই না?

সাবিত্রী– হ্যাঁ। তারপর সে রাখালবাবুর বিছানা রোদে দেবে, তাকে কি সত্যিই  তোমার  দরকার? তাহলে তাকে পাঠিয়ে দেবো।

সতীশ– আমার  কিসের দরকার, সে তো তুমিই  বোঝো সাবিত্রী, সারা মেসবাড়ির সব বাবুদের খবর ও তত্ত্বাবধান তোমার  হুকুমেই করে বেহারী, তা কি আমি জানি না।

সাবিত্রী– কেন জানবে না, সতীশ বাবু, কালেজে ডাক্তারী পড়ো, আর এটা জানবে না…..

সতীশ– একটি সত্যি  কথা বলবে সাবিত্রী?

সাবিত্রী– সেই একই  কথার উত্তর  তো তোমার জানা সতীশবাবু, বার বার কেন শুধাও—

সতীশ— কেন? মন মানে না,সাবিত্রী….
একবার বলো তোমার  পূর্ব  পরিচয়, তুমি ভদ্রঘরের, লুকিয়ে গোপন করে এই মেসবাড়ির ঝি গিরি করছ, আর….

সাবিত্রী–আর,    পান খাই কেন বিধবা হয়ে? এর উত্তর যে আপনার  জানা বাবু,  কেন একজন সম্ভ্রান্ত বামুন বাড়ির ছেলে হয়ে মেসের ঝিয়ের সাথে এমন জিজ্ঞাসাবাদ করেন, বলতে পারেন?

সতীশ–কেন করি সাবিত্রী? কেন করি বুঝেও না বোঝার ভান করো , না….

সাবিত্রী– আঃ, সতীশবাবু ,কি করছেন, আঁচল ছাড়ুন, আঁচল ছাড়ুন, যান , চান করে আহ্নিক  সেরে, খাওয়া দাওয়া করে কালেজ যান।

সতীশ– আজ আমার কালেজ যেতে ভালো লাগছে না, ইচ্ছে করছে না…..

সাবিত্রী— তবে কি ভালো লাগে,  মেসবাড়ির ঝি এর আঁচল টানাটানি করতে?

সতীশ– তোমার  আজকাল  যা মুখে আসে তাই বলো, আমায় অপমান করতে পারো যতটুকু, সাবিত্রী, কিন্তু নিজের মনের অপমান অন্তর্যামীর কাছে করতে পারবে?

সাবিত্রী– কেন তুমি বোঝ না বলো ত কতো বড়ো বংশের ছেলে তুমি…..

সতীশ—আর তুমি, বেহারী বলেছে, তুমি আহ্নিক  না করে জল খাও না, মাছ খাও না, নিরামিষ,রাতে রুটি খাও…. অর্থাত প্রকৃত বেধবার মতো থাকো।

সাবিত্রী—  তাই, তো বেধবা ত বেধবার মতো থাকবো না?  তো আর কি বলেছে বেহারী?

সতীশ–বলেছে— ভদ্দরনোকের মেয়ে, শুধু অদৃষ্টের ফেরে  এমন মেসবাড়িতে কাজ করছে।

সাবিত্রী– ব্যস্ তাহলে ত মিটেই গেল আর বেধবা হয়ে পান খাই কেন, জানতে চাও বুঝি?

সতীশ — কথা ঘুরিও না সাবিত্রী, তুমি বেধবা কিনা, আমার  সন্দেহ আছে!! আর  তুমি খুব ভালো করে জানো  আমি কি বলতে চাই ও জানতে চাই।

সাবিত্রী– তোমার  সন্দেহ দিয়ে কি হবে? আর এত সব বুঝতে পারো আর জানো না বেধবাদের  বাকি জীবন কিভাবে কাটাতে হয়?

সতীশ– বেধবা তুমি নও …..আমার  কিছু ভালো লাগে না, একবার বলো….

সাবিত্রী– আর কথা নয়, যাও নাইতে যাও, আর কাল রাতে মদের ঘোরে কি প্রতিজ্ঞা  করেছিলে মনে আছে ত? যাও নাইতে যাও, আমি মশারী গুটিয়ে এদিকটা গুছিয়ে দিচ্ছি।

সতীশ– কিন্তু, কাল  কি কথা প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, বলো ত আমার ত কিছু মনেই আসছে না। কাল কখন যে কিভাবে  আবার  এ ঘরে এলাম, তাই মনে পড়ছে না, কে আমাকে তুলে এনেছিল বলো,ত?

সাবিত্রী– হা হা হা। রাস্তায় ত শোবার  বন্দোবস্ত  করেছিলেন মশাই,তা আর হলো কোথায়, বেহারী আর আমি কোনক্রমে তুলে আনি।

সতীশ– ছিঃ। ছি ছি কি যে হয়, আসলে তুমি ঐ——-

সাবিত্রী— না না। ভয়ের কিছু নেই। বাসায় কেউ কিছুই জানতে পারে নি,তখন ত শেষ রাত্রি

সতীশ– তুমি জেগে ছিলে বুঝি? আচ্ছা তোমার  সাথে কোন দুর্ব্যবহার  করি নি তো?

সাবিত্রী–  না

সতীশ– আসলে তুমি ঐ…..সন্ধ্যেবেলা এসে শুনি তুমি মোক্ষদার বাড়ি গিয়েছ। আর সেখানে ত ঐ বাড়িতে কি পরিবেশ…তারপর আমি বেড়িয়ে যাই….

সাবিত্রী– সে যাই হোক— আপনার শপথ, আপনি দিব্বি করেছেন, আর কোনদিন মদ খাবেন না

সতীশ– হঠাত  এমন দিব্বি দিতেই বা গেলাম কেন? এরকম দুর্বুদ্ধি ত আমার  হবার কথা নয়।

সাবিত্রী– তা বটে

সতীশ– ও হো, মনে পড়েছে, আমার মনে পড়েছে সাবিত্রী, তোমায় ছুঁয়ে শপথ করেছি,  না?

সাবিত্রী– হু, বোধ করি

সতীশ– তবে তাই হবে……কিন্তু কালকের  কথাটা তোমার  মনে আছে ত? সত্যি সাবিত্রী, কাল বিপিনবাবুর মজলিস থেকে কখন যে কিভাবে এলাম, তাই ভাবছি, লোকেরা ত জানতে পারবে বোধকরি…..

সাবিত্রী– তা হয়ত , পাবে।

সতীশ–তবে ত মুস্কিল,  তার উপায় কি হবে?

সাবিত্রী– হবে আর কি, আর উপায়? কেন, অন্য বাসায় চলে যান, কিম্বা নিজের বাড়িতে, এজন্য  ভাবছেন কেন? আপনি পুরুষ মানুষ,  এতো ভাবনার কি আছে…..

সতীশ— আর তুমি?

সাবিত্রী– আমি , আমি কিছু ভাবি নে, এ বাসায় বাবুরা রাখেন, ত ভালো, না রাখেন আর কোথাও কাজের চেষ্টা করে চলে যাবো।

সতীশ–অন্য  কোন কাজে, মানে?

সাবিত্রী— হু…. যেখানে খাবো, সেইখানেই দুটি খেতে পাবো। এ তো সহজ হিসেব, সতীশবাবু, আর কিছু বলবেন?

সতীশ– নাঃ, কি আর বলবো।  কারোকে ভালবাসলে, সে যদি ভালো না বাসে, এমন কি ঘৃণাও করে, তা ব্যথা দেয় তীব্র, বোধ করি সহ্য হয় , কিন্তু যদি সেও ভালোবাসে আর……..

সাবিত্রী— আর, আর কি বলো, সতীশবাবু…..

সতীশ— হ্যাঁ, আর যদি তার ভালবাসা পাওয়া যায়….. সাথে বিশ্বাসও, তারপর ভুল ভেঙ্গে যাওয়া, তাহলে সে ব্যথার প্রতিকার নেই। অপমানের কোন নালিশ নেই…..সে ধাক্কা নিদারুণ।

সাবিত্রী– দেখুন সতীশবাবু, মনটা আপনার , ভুল ঠিক সেও আপনার, মিছিমিছি এতো ভাবছেন কেন? আপনি কতো বড় ঘরের ছেলে, মান যশ, অর্থপ্রাচুর্য, আপনার ডাক্তারী পড়া…..

সতীশ– থাক্ আমার  সম্বন্ধে আর কিছু বলার আছে তোমার?

সাবিত্রী— হ্যাঁ, আমি আর কি বলবো সতীশবাবু, আমি ত মেসবাড়ির দাসী। বই ত আর কিছু নই।

সতীশ— বার বার এ কথা বলা মানে আমাকে অপমান।

সাবিত্রী– এর চেয়ে আর বড়ো সত্য যে আর কিছু নেই, তাই কি তুমি জানো না সতীশবাবু…. বেলা বাড়ছে, চান যাও, আমি এদিকটা আয়োজন করি।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress