Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » চরিত্রহীন || Purabi Dutta » Page 13

চরিত্রহীন || Purabi Dutta

দ্বাদশ অংক

সতীশ, কিরণময়ী, দিবাকর, উপেন্দ্র, সাবিত্রী

সতীশ– একি চেহারা হয়েছে তোমার কিরণবৌঠান , আর দিবাকরই বা কোথায়?

কিরণ— তুমি, সতীশ ঠাকুরপো, ওঃ– দিবাকর অন্যত্র থাকে, আসবে একটু পর।

সতীশ– কেন অন্যত্র কেন? আর এসব কি,হচ্ছিল?
সময়মতো আমি না এসে পড়লে তোমার অবস্থা কি হতো বলত? ঐ ধনী মাড়োয়ারীকে এখানে কে এনেছিল?

কিরণময়ী– ভাই, সব শুনে আর কি করবে। দিনদিনই দিবাকর ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছিল। তুমি পরে শুনবে। আগে বলো কি করে আমার সন্ধান পেলে?

সতীশ– তুমি হাঁপাচ্ছ বৌঠান , একটু জল খাও,ওঃ কি ঘরের ছিরি, এইভাবে তুমি পড়ে আছো এখানে উঃ, ভাবতে পারছি না?

কিরণময়ী– কি করে খোঁজ পেলে সতীশ ঠাকুরপো?

সতীশ– আমার দিদির আমি খোঁজ পাবো না ত কে পাবে। একি, বৌঠান তোমার চোখে জল!!!
বিদুষী, দুঃসাহসী কিরণময়ীদেবীর আজ চোখে জল দেখছি।

কিরণময়ী— তোমাকে পেয়ে ভাই।

সতীশ– অনেক খুঁজেছি, অনেক খোঁজখবর ,হঠাৎই ভাবলাম, একবার পাথুরিঘাটায় যাই।

কিরণময়ী– সেখানে বাড়িতে মায়ের সাথে কি সাক্ষাৎ হয়েছিল?

সতীশ- না, ওনাকে পাই নি তবে ভাগ্যিস, ঝিয়ের দেখা পেলাম। তার কাছেই ত জানতে পারলাম সব কিছু….

কিরণময়ী– কিন্তু যার জন্য বুকের জ্বালায় এতকিছু করলাম, তিনি কি কিছু জানেন।

সতীশ– তোমার ভাইকে কি এতই বুদ্ধি- হীন ভাবো, আর তিনি যে কে। তা কি বুঝি নি। ভেবেছ? না না উপিনদাকে কিছুই জানাই নি, একেবারে তার সামনে তোমাকে ও দিবাকরকে নিয়ে হাজির করবো। তবে আমি তোমার সতীশ ভাই।

কিরণময়ী– না না, না। আমি তার সামনে কিছুতেই যাবো না। কিছুতেই নয়।

সতীশ– ঝিয়ের কাছে শুনলাম মানে সে যা জানে তোমার ইচ্ছা দিবাকরকে নিয়ে ঘর বাঁধবার।

কিরণময়ী– হা হা হা। ঘরই বটে।

সতীশ– সেদিন দুপুরে, মাসিমা উপিনদাকে বলেছে তোমার ও দিবাকরের কথা, তোমার সাথে উপিনদার কথা কাটাকাটি। বাকবচসা তারপর…

কিরণময়ী– কে বলেছে এসব?

সতীশ– সব তোমার ঐ ঝি, তারপর সে রাতে ঝিকে রূপোর মল দিয়ে মুখবন্ধ করেছ..

কিরণময়ী– মুখবন্ধই রেখেছে বটে!!

সতীশ– ঝিয়ের বোন আরাকানে থাকে সেই ভরসাতেই তুমি সেই রাতে জাহাজের টিকিট কেটে দিবাকরকে নিয়ে পালিয়ে যাও। এই আরাকানে এসেও কম কষ্ট হয়েছে আমার তোমায় খুঁজে পাওয়া।

কিরণময়ী– কেন এলে ভাই।

সতীশ– তোমাদের ফিরিয়ে নিয়ে যাবো বলে।

কিরণময়ী– আমি কিছুতেই না। কোনমতেই উপিন ঠাকুরপোর বাড়ি যাবো না।

সতীশ– বেশ না গেলে, গ্রামে আমার বাড়ি যাবে। ভাইয়ের বাড়িতে তোমার আপত্তি নেই ত থাকবার?

কিরণময়ী– কিন্তু, তোমার শরীর ত আগের মতো নেই ঠাকুরপো, কোন অসুখ বিসুখ কি হয়েছিল?

সতীশ– সে সব পরে শুনো।
দিবাকরের কথা বলো।

কিরণময়ী– কি বলব, প্রথম ভুল বুঝেছিল, তারও একটা মোহ আমার প্রতি ছিল অবশ্য। কিন্তু পরে প্রণাম করে মাপ চেয়েছিল। কিন্তু, তারপর…

সতীশ — তারপর কি বৌঠান?

কিরণময়ী– অবস্থা বিপাকে, আমাদের ঘোরতর দুর্দশা, কারখানায় যা পায় তাতে কুলোয় না। দিনরাত অভাব, ঝগড়া, অশান্তি। শেষে দিবাকর কেমন মরিয়া হয়ে উঠল।

সতীশ– মানে?

কিরণময়ী– সে বদলা নিতে চাইল?

সতীশ– সেকি। বদলা? কিসের?

কিরণময়ী– আমার প্রয়োজনে, তাকে আমি ব্যবহার করেছি, এখানে লোকে জানে। সে আমার স্বামী, তাই সে জোর খাটাতে আসত

সতীশ– সেকি?

কিরণময়ী– বুঝবে না, রোজরাতে মারধর পর্যন্ত করত, তারপর একদিন আমি ওকে আলাদা থাকবার ব্যবস্থা করতে বাড়াওয়ালিই বলি, দিবাকরের লোলুপ দৃষ্টি আর আমি সহ্য করতে পারছিলাম না।

সতীশ– বুঝলাম।

কিরণময়ী– তারপর বাড়িওয়ালি প্রায়ই বলত এক ধনী লোকের কথা, অনেক কথা ভাই…….
ভগবান বাঁচিয়ে দিলেন তোমায় পাঠিয়ে।

সতীশ– তুমি এখন ভগবান বিশ্বাস করো?

কিরণময়ী– হ্যাঁ, আজকাল করি। সুরবালার কথা মনে পড়ে। সে বলেছিল ভগবান আছেন।
সুরবালাই এখন আমার গুরু।

সতীশ — একি দিবাকর এসেছিস?
একি চেহারা হয়েছে তোর অ্যাঁ, চোখ কোটরে, মুখে কাল ছাপ, শতছিন্ন গেঞ্জি, আঃ, কি ময়লা প্যান্ট।

দিবাকর– তুমি সতীশ দা এখানে?
আর এসবের জন্য আমি দায়ী না।

সতীশ– জানি। সব বুঝেচি। আমি এখুনি জাহাজের টিকিট কাটতে যাচ্ছি, বৌঠান সব গুছিয়ে নাও। একঘন্টার মধ্যে বেড়িয়ে যেতে হবে।

দিবাকর– আমি কোত্থাও যাবো না। তোমার টাকা নষ্ট হবে।

সতীশ– তোর ঘাঁড় যাবে, উপিনদার হুকুম। মৃত হউক জ্যান্ত হউক, দিবার মুন্ডু চাইই চাই।

দিবাকর– তাহলে, মৃত নিয়ে যাও, আমি নিজেই সে ব্যবস্থা করছি।

সতীশ– খুব হয়েছে।আর বীরত্ব দেখাতে হবে না। আসল কথা তোমাদের এতক্ষন ধরে বলতে পারি নি, বৌঠান।

কিরণময়ী– কি কথা।

সতীশ– রাজযক্ষায় বৌঠানের মৃত্যুর পর উপিনদাও ঐ অসুখে কাবু, তারও যাবার সময় হয়ে এসেছে, বড়ো কাকুতি মিনতি করেছে তোমাদের একবার শেষ দেখা দেখবার জন্য। তাই, …
এতক্ষণ বলি নি তোমরা কষ্ট পাবে বলে।

কিরণময়ী– আর কথা নয়, তুমি এখনই টিকিট কাটতে যাও, আমি এদিকটা গুছিয়ে নিচ্ছি। (কান্না)ভগবান তাঁর অসুখ আমাকে দিয়ে তাকে সুস্থ করে দাও ভগবান তুমি কি শুনতে পাচ্ছ…..
……………………………………………
সতীশ– এখন উপিনদা কলকাতাতেই আছেন। চলো

কিরণময়ী–আমি বলি কি আমি একটু গঙ্গায় ডুব দিয়ে আসি। গঙ্গায় ডুব দিলে নাকি পাপ ধুয়ে যায়। সুরবালা বলত।

সতীশ– দেরী হয়ে যাবে বৌঠান

কিরণময়ী– না না, ভগবান তা করবেন না, উনি ঠিক তার যাওয়া আটকে দেবেন , দেখো দেখো তোমরা।

সতীশ– বৌঠান, তুমি কি পাগলের মতো করছ কেন বলত?
এই কি আমার সেই বিদুষী সুন্দরী ব্যক্তিত্বময়ী কিরণবৌঠান।

কিরণময়ী– তাহলে আমি কি বাড়ি চিনে যেতে পারব, গঙ্গায় আমায় যেতেই হবে, গঙ্গাজলে পাপস্খালন হয়। আর কামনা করব ঠাকুরপোকে সুস্থ করে দিতে। না আমায় যেতেই হবে যেতেই হবে…

সতীশ– বেশ। একটু গঙ্গা ঘুরে যাই, চলো।
…………………………………………..
সাবিত্রী– এসেছ তোমরা সন্ধা ঘনিয়ে এলো , শীগ্গিরই এসো, ওদিকে দাদার ত শেষটান উঠেছে।

সতীশ– অ্যাঁ। বলো কি? চলো চলো

সাবিত্রী– একি, ওমা কিরণ দিদি যে মূর্ছা গেলেন।

সতীশ — সাবিত্রী তুমি দিবাকে নিয়ে উপিনদার ঘরে যাও। আমি নীচের ঘরে বৌঠানকে নিয়ে যাচ্ছি।
………………………………………….
উপেন– কোথায় ছিলিস বোন এতক্ষণ, আঃ তোকে ছেড়ে যেতে যে মন চায় নারে–
ওরা এলো না,

সাবিত্রী– এই ত দাদা। তোমার দিবাকর ,

দিবাকর–( কান্না) ছোড়দাদা গো, আমায় মাপ করে দাও। ক্ষমা করো, আমি, আমি তোমার কাছে ফিরে এসেছি, তুমি চলে যেও না।

উপেন — উঃ , আর সে কোথায়?

সাবিত্রী– কিরণদিদি এসেছে সেও যে অসুস্থ, দুর্বল নীচের ঘরে আছে।

উপেন– থাক্ থাক্ আঃ। আমার এ অসুখে তার না আসাই ভালো। ভালো ভালো(কথা জরিয়ে)

সাবিত্রী– আমাকেও সঙ্গে নাও দাদা–

সতীশ– উপিনদা গো–

সাবিত্রী– কিরণদিদি কোথায়?

সতীশ– তিনি নীচের ঘরে ঘুমিয়ে আছেন। থাকুন।

উপেন—হ্যাঁ,চোখে চোখে রাখিস ভাই সতীশ , যতদিন না তিনি সুস্থ না হন আঃ, আঃ, ওর অন্তরের আঘাত যে কি দুঃসহ, সে বোঝবার শক্তি যে আমাদের কারোর নেই।….

সতীশ– আমি আছি উপিনদা, আর তোমার দিবার ভারও আমি নিলাম।

সাবিত্রী- – (কান্না) মুখে রক্ত উঠে এলো। চলে গেলেন……
একবার। কিরণদিদিকে কি ডেকে আনবে।

সতীশ– না, অনেকদিন পর তিনি ভগবানের নাম নিয়ে , শান্তিতে ঘুমোচ্ছেন, তাকে ঘুমোতে দাও তোমরা।
একটু ঘুমোতে দাও।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13
Pages ( 13 of 13 ): « পূর্ববর্তী1 ... 1112 13

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress