Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

কিছু তথ্য, কিছু প্রশ্ন

কলকাতার ইলিয়ট রোডে সানি লজের তিনতলায় কর্নেলের অ্যাপার্টমেন্ট। ছাদে তার সুপরিচিত প্ল্যান্টওয়ার্ল্ড–যেখানে পৃথিবীর যত সব উদ্ভুট্টে গড়নের ক্যাকটাস, অর্কিড, ফুলগাছ। সকালবিকেল সেখানেই কাটান। শীতে অ্যারিজোনা থেকে সংগৃহীত ছিপছিপে ক্যাকটাসে লাল ফুল গজিয়েছে। বিভিন্ন অ্যাঙ্গেল থেকে ক্যামেরায় ছবি তুলছিলেন কর্নেল। শেষ বেলার নরম আলো তার উদ্ভিদরাজ্যটিকে যেন বিষণ্ণ করে রেখেছে। নাকি নিজেরই মানসিক অবস্থার প্রতিফলন? হাথিয়াগড়ের হোটেলে একটি মানুষের মৃত্যুর কারণ হয়েছেন, কিছুতেই ভুলতে পারছেন না।

ষষ্ঠী এসে খবর দিল, নালবাজারের নাহিড়ীসায়েব এসেছেন। বইসে রেইখে। বাবামশাইকে ডাকতে এসেছে।

কর্নেল দ্রুত নেমে গিয়ে ড্রইংরুমে ঢুকলেন। হাই ডার্লিং!

ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ী মুচকি হেসে বললেন, কলকাতা নিয়ে হিমশিম খাচ্ছি। তার ওপর কোন মুল্লুকের উটকো আপদ এনে চাপিয়ে দিলেন। বাপস্! এবার দেখছি, সত্যিই চাকরি ছেড়ে ফিল্ম করতে নামব।

কর্নেল হাসলেন না এ পরিহাসে। গম্ভীর মুখে বসে বললেন, খবর বলো অরিজিৎ।

ইউ আর টু সিরিয়াস, কর্নেল! কেন?

এ কথার জবাব না দিয়ে কর্নেল আস্তে বললেন, খবর নেই কিছু?

আছে। অরিজিৎ ব্রিফকেস খুলে একটা নোটবই বের করলেন।..তপেশ বসাকের বুকপোস্টে পাঠানো খামটা বউবাজার পোস্টঅফিস থেকে সিজ করা হয়েছে। ওতে ঠিকই একশোটা একশোটাকার নোট ছিল। তপেশের ফ্ল্যাটে তালা আঁটা ছিল। ভেঙে ঢুকেছি। সিঙ্গলরুম ফ্ল্যাট। একটা ফেল্ডিং খাট আর বিছানা ছাড়া কোনো আসবাব নেই। নাথিং! তবে বিছানার তলায় এই ফোটোটা

পেয়েছি। দেখুন!

ফোটোগ্রাফটি পঁচিশ-ছাব্বিশ বছরের এক যুবতীর। সাদাসিধে পোশাক। তত কিছু সুন্দর নয়। কর্নেল দেখে ফেরত দিয়ে বললেন, প্রেমিকা?

তাছাড়া আর কে হতে পারে? অরিজিৎ সিগারেট ধরালেন। তারপর বললেন, আজ সব কাগজে তপেশের ছবি ছাপানো হয়েছে মিসিং স্কোয়াড মারফত।

দেখেছি। কর্নেল চুরুট বের করে অন্যমনস্কভাবে বললেন, মোহন শর্মাকে বলে এসেছিলুম স্যুটকেসের জামা প্যান্ট সোয়েটার এখানকার ফরেন্সিকে পাঠাতে। খবর নিয়েছ? :

পাঠিয়েছেন। ইউ আর রাইট, কর্নেল! ছোপগুলো রক্তের। সোয়েটারপরা অবস্থায় পিঠের দিকে কাউকে স্ট্যাব করা হয়েছিল।

আচ্ছা অরিজিৎ, খুনের কেস কতদিন পর্যন্ত কার্যকর থাকে?

বারোবছর। তারপর ল্যাপ্স হয়ে যায়। এই পিরিয়ডের পর খুনী কে জানলেও আইনত আর কিছু করার থাকে না।

এটা ১৯৮১ সালের জানুয়ারি! কর্নেল তেমনি অন্যমনস্কভাবে বললেন। বাই দা বাই, পারিজাত ট্রান্সপোর্টের খবর কী?

অরিজিৎ এবার নড়ে বসলেন। হ্যাঁ–এটা আগেই বলা উচিত ছিল। আইডেন্টিটি কার্ডটায় কারচুপি করা হয়েছে। তপেশ বসাক নামে একজন কর্মচারী ওদের ছিলেন বটে; কিন্তু কার্ডের ছবিটা তার নয়।

বলো কী।

প্রকৃত তপেশ বসাকের ছবিটা তুলে ফেলে আপনার দেখা যুবকটির ছবি সাঁটা হয়েছে। ছবির ওপর দিয়ে পারিজাত ট্রান্সপোর্টের মালিকের সই ছিল। সইয়ের আদ্ধেকটা জাল।

ষষ্ঠী ট্রেতে কফি আর স্ন্যাক্স আনল। কর্নেল পট থেকে কফি ঢালতে। ঢালতে বললেন, শ্যামলকান্তি মজুমদারের ব্যাকগ্রাউন্ড?

নো স্পট। অন্তত পুলিশ রেকর্ডে কিছু নেই।

পুরনো রেকর্ড ঘাঁটা দরকার, ডার্লিং!

অরিজিৎ কফির পেয়ালা হাতে নিয়ে একটু হেসে বললেন, ১৯৭০ পর্যন্ত রেকর্ড ঘাঁটা হয়েছে। ওই নামে কিছু পাওয়া যায়নি। ভদ্রলোক একজন মিনিস্টারের আত্মীয়। গে ক্লাবের মেম্বার। গে ক্লাবের বিরুদ্ধেও কোনো বদনাম আমাদের কানে আসেনি।

কর্নেল কফিতে চুমুক দিলেন। বললেন, তপেশ বসাকের নামে কোনো ব্যাংক অ্যাকাউন্ট আছে কি না কোনো বাংকে–সেটার খোঁজ নেওয়া দরকার ছিল।

অরিজিৎ বললেন, ওই নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট খুলতে যাবে কেন? নামটা তো অন্য একজনের।

তবু খোঁজ নেওয়া দরকার। কর্নেল নিভন্ত চুরুট জ্বেলে নিলেন। ধোঁয়ার ভেতর বললেন ফের, ফরেন্সিক রিপোর্টে পোশাকের রক্তের দাগ কতদিন আগের, তা বলা হয়েছে?

হ্যাঁ। আনুমানিক আট থেকে দশ বছর আগের বলে এক্সপার্টরা মনে করেন।

পোশাক তিনটে দেখে আমার অনুমান, নিহত লোকটি ছিল সাড়ে পাঁচ ফুট লম্বা, রোগা গড়নের।

ঠিক তাই। ফরেন্সিক এক্সপার্টরাও একই কথা বলেছেন। অরিজিৎ হাসলেন। …বোঝাই যায়, এই ভুয়ো তপেশ বসাক ছিল একজন ব্ল্যাকমেইলার। খুনীকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আনতে গিয়েছিল। কর্নেল, খুনী নিশ্চয় মোতিগঞ্জের লোক। মিঃ শর্মা আর বিহার গোয়েন্দা পুলিশ উঠে পড়ে লেগেছে তাকে খুঁজে বের করতে।

কর্নেল স্থির দৃষ্টে ডি সি ডি ডি-র দিকে তাকিয়ে আস্তে বললেন, বাট হোয়াই তপেশ কমিটেড স্যুইসাইড? কেন সে অমন নার্ভাস হয়ে আত্মহত্যা করে বসল?

ব্ল্যাকমেইল করার পুঁজি হারিয়ে প্রচণ্ড ভয় পেয়ে গিয়েছিল।

হুঁ ভয়। কিন্তু–

কোনো কিন্তু নেই। এবার তাকে খুনী সহজেই বাগে পেত। ব্ল্যাকমেইলিং এর শাস্তি দিত।

অরিজিৎ! হেয়ার ইজ দা মিস্ট্রি। এখানেই এ কেসের ভাইটাল পয়েন্ট।

অরিজিৎ হাসতে লাগলেন। আমি বরাবর দেখেছি, আপনি তিলকে তার করে দেখেন। অ্যান্ড উই আর ফোর্সড় টু চেইজ এ রেড হেরিং! বয়স হয়েছে–এখনও এসব ব্যাপারে আপনার আগ্রহ দেখে সত্যি অবাক হয়ে যাই। আপনার বয়সে আমি কিন্তু ধর্মকর্ম নিয়ে থাকব-আই অ্যাসিওর ইউ।

অরিজিৎ কফি শেষ করে উঠে পড়লেন। কর্নেল তাকে তপেশ বসাক নামের ব্যাংক অ্যাকউন্টের কথাটা মনে করিয়ে দিলেন। তারপর কিছুক্ষণ চোখ বুজে হেলান দিয়ে চুরুট টানতে থাকলেন।

সওয়া পাঁচটা বাজে। এখনই কলকাতা ধোঁয়াশা ভরা সন্ধ্যায় আচ্ছন্ন। কর্নেল উঠে পড়লেন। ঝাকে ঝুঁকে প্রশ্ন তাকে আক্রমণ করেছে। অরিজিৎ লাহিড়ীর তথ্যগুলো থেকে প্রশ্ন উঠে আসছে–মাংসের পিণ্ডে যেমন মাছির ঝাঁক ভনভন করে, সেইরকম একটা শব্দ যেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *