Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

টেলিফোনে হুমকি

ডি সি ডি ডি অরিজিৎ লাহিড়ী এলেন একঘণ্টা পরে। কর্নেল তখন সমস্ত কাগজের বিবরণ খুঁটিয়ে পড়ে ফেলেছেন। ঘটনার বর্ণনায় কাগজে কাগজে হেরফের ঘটেছে। তবে জীবনীটা মোটামুটি একই। বিমলকুমার একসময় ক্যালকাটা গ্রুপ অফ পেইন্টার্সের সদস্য ছিলেন। বামপন্থী রাজনীতির সঙ্গে সক্রিয়ভাবে যুক্ত ছিলেন ছাত্রজীবনে। পরে রাজনীতি ছেড়ে দেন। ঠিক স্বেচ্ছায় ছাড়া বলা যায় না। পার্টি থেকে বহিষ্কৃত হন ছয়ের দশকের শেষাশেষি।

অরিজিৎ বসে বললেন, আর্টিস্ট ভদ্রলোককে নিয়ে মাথাব্যথা কেন, বসুন। তারপর আমি ঝুলি খুলছি।

কর্নেল বিষণ্ণভাবে বললেন, ওঁর কাছে একটা পোর্টেট আঁকতে গিয়েছিলুম গতকাল বিকেলে। গিয়ে দেখি স্টুডিওর ভেতর ছবি তছনছ করছেন পাগলের মতো! কী একটা ছবি চুরি গেছে না কি। অবস্থা দেখে ফিরে এলুম। তারপর সকালে কাগজে দেখি, আত্মহত্যা করেছেন।

আসলে খুব হতাশায় ভুগছিলেন ভদ্রলোক। অরিজিৎ পাইপ বের করে তামাক ভরতে ভরতে বললেন, যাই হোক, আপনার কাছে একটা সূত্র পাওয়া গেল। ছবি চুরি গেছে! ভেরি ইন্টারেস্টিং পয়েন্ট।

ষষ্ঠীকে কফি বলা ছিল। কফি এবং স্ন্যাক্স রেখে গেল। কর্নেল পেয়ালায় কফি ঢালতে ঢালতে বললেন, বডি কোথায় কী অবস্থায় পাওয়া যায় এবং কে প্রথম দেখতে পায়?

রাত সাড়ে নটা নাগাদ পাশের ফ্ল্যাটের মিঃ ও মিসেস প্রধান ইভনিং শো দেখে ফেরেন। বিমলবাবু ফ্ল্যাটের দরজা খোলা ছিল। পর্দা ঘেঁড়া ছিল। করিডর থেকে ওঁরা দেখতে পান, ঘর–মানে স্টুডিওর ভেতর সব ভাঙচুর অবস্থা। মেঝেয় চিৎ হয়ে পড়ে আছে বিমলবাবু। মুখে রিভলবারের নল ঢোকানো।

এবং ট্রিগারে আঙুল?

হ্যাঁ। অরিজিৎ পাইপ রেখে কফির পেয়ালা তুলে নিলেন। একটা কাজু বাদাম চিবুতে চিবুতে বললেন, যে পুলিশ অফিসার যান প্রথমে, তার সন্দেহ হওয়া উচিত ছিল যে, ওভাবে গুলি ছোঁড়ার পর ট্রিগারে হাত এবং মুখে নল ঢোকানো থাকতে পারে কি না। যত সামান্যই হোক, বডি নড়ে যাবেই। রিভলবার ছিটকে পড়বেই।

ঠিক ধরেছ।

তাছাড়া চিরকুটের লেখার তলায় নাম সই নেই!

সে কী!

তবে লেখাটা মিলিয়ে দেখা হয়েছে। বিমলবাবুরই হস্তাক্ষর। ইন্সট্রাকশান দিয়েছি ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিতে এক্সপার্টদের কাছে পাঠাতে। রিভলবারের বাঁটে এবং ট্রিগারে আঙুলের ছাপ পরীক্ষা করা হবে। কিন্তু হঠাৎ আপনার পোর্টেট আঁকানোর সাধ কেন হলো, জানতে পারি?

অরিজিৎ মিটিমিটি হাসছিলেন। কর্নেল দাড়িতে হাত বুলিয়ে বললেন, বুড়ো হয়েছি। কখন কেঁসে যাই, ঠিক নেই। ষষ্ঠী দেখবে আর নমো করবে। সে ছাড়া আর কে আছে আমার, বলো?

অরিজিৎ গম্ভীর হয়ে বললেন, উঁহু ঝুলি খুলুন, আমি খুলেছি। এবার আপনার পালা।

কর্নেল তাকালেন তার দিকে। বিষণ্ণ দৃষ্টি। কিন্তু কিছু বললেন না।

অরিজিৎ আস্তে বললেন, তপেশ বসাকের সুইসাইডের পদ্ধতির সঙ্গে হুবহু মিল। এখানেই খটকা লাগছে। আচ্ছা কর্নেল, আপনি কি সত্যিই দরজার ফুটো দিয়ে তপেশবাবুকে আত্মহত্যা করতে দেখেছিলেন?

হ্যাঁ।

পিস্তল মুখে ঢোকানো ছিল এবং ট্রিগারে আঙুল?

না। ছিটকে পড়েছিল মেঝেয়। বাসুদেব—

উঁহু, তপেশ।

ওর প্রকৃত নাম বাসুদেব রায়। তপেশ বসাক হার্ট অ্যাটাকে মারা যাওয়ার একটু আগে বাসুদেব তার পকেট থেকে আইডেন্টিটি কার্ড তুলে নেয়। সে কথা পরে বলবখন।

অরিজিৎ কিছুক্ষণ চুপচাপ কফি খাওয়ার পর বললেন, মোতিগঞ্জের ঘটনার সঙ্গে বিমলবাবুর আত্মহত্যা বা হত্যার সম্পর্ক আছে। ইজ ইট?

কর্নেল আস্তে বললেন, হয়তো আছে–হয়তো নেই।

প্লিজ হেঁয়ালি করবেন না! ঝেড়ে কাসুন।

এখনও আমি গভীর অন্ধকারে, ডার্লিং! কর্নেল চুরুট ধলেন। ধোঁয়ার ভেতর ফের বললেন, হাথিয়াগড় থেকে মিঃ শর্মা কোনো মেসেজ পাঠাননি?

নাঃ!

মোতিগঞ্জে বাসুদেব কার কাছে গিয়েছিল, এটা জানতে পারলে অর্ধেক রহস্য পরিষ্কার হয়ে যায়।

তাই বুঝি?

বাই দা বাই, তপেশ বসাকের নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের কথা বলেছিলুম। এটা প্রত্যাহার করছি। বাসুদেব রায় অথবা কেয়া রায়ের নামে কোন-কোন ব্যাংকে অ্যাকাউন্ট আছে, জানা দরকার জরুরি অরিজিৎ!

কেয়া রায়? হু ইজ শি?

বাসুদেবের স্ত্রী।

ও হ্যাঁ–মনে পড়েছে। কাল যে মহিলা তার মায়ের সঙ্গে সুশোভনবাবর জামা প্যান্ট সোয়েটার সনাক্ত করতে গিয়েছিলেন?

কেয়া আমাকে বলেছে, তার বাবার প্রভিডেন্ট ফান্ড আর ইনসিওরেন্সের টাকায় ফ্ল্যাট কিনেছে। তাহলে তার অ্যাকাউন্টে বেশি টাকা থাকার কথা না। তার চেয়ে বড় কথা, তার অ্যাকাউন্টে টাকা ডিপোজিটের ফ্রিকোয়েন্সিই বলে দেবে কী ঘটেছে। চেক অথবা ক্যাশ ডিপজিট, সেটাই জানা ভাইটাল।

ঠিক। দেখছি। অরিজিৎ কফি শেষ করে পাইপ জ্বেলে বললেন, বাট দা পয়েন্ট ইজ বাসুদেব রায়ের আত্মহত্যা কেসের সঙ্গে বিমলবাবুর কেসটা আপাতদৃষ্টে এক হয়েও এক নয়। হ্যাঁবাসুদেববাবু রক্তমাখা পোশাক হারিয়ে সুইসাইড করেছেন। আর বিমলবাবু কী একটা ছবি হারিয়ে সুইসাইড করেছেন। সুইসাইডের পদ্ধতিও এক। অন্তত অ্যাজ ইট অ্যাপিয়ার্স!

কিন্তু বিমলবাবুর কেসটা সুইসাইড না হতেও পারে!

এক্সজ্যাক্টলি। অরিজিৎ নড়ে বসলেন। সেজন্যই দুটোকে লিংক আপ করতে পারছি না। মনে হচ্ছে, আপনি কিছু গোপন রেখেছেন এবং সময়মতো টেক্কাটি ঝাড়বেন। অরিজিৎ হাসতে লাগলেন।

কর্নেল চোখ বুজে বললেন, বাসুদেব রায় নামে পুলিশ রেকর্ডে কিছু আছে কি না, জানা দরকার। এক সময় তাকে নাকি পুলিশ খুঁজত। সে গা ঢাকা দিয়ে বেড়াত।

অরিজিৎ ভুরু কুঁচকে বললেন, সোর্স?

তপেশ বসাকের স্ত্রী বলেছে। একটু আগে সে এসেছিল।

মাই গুডনেস! আপনি–

এক মিনিট ডার্লিং! বিমলবাবু বামপন্থী রাজনীতি করতেন কাগজে পড়লুম। তার সম্পর্কে পলিটিক্যাল ফাঁইলে কোনো রেকর্ড নিশ্চয় আছে তোমাদের হাতে।

অরিজিৎ হেলান দিয়ে বললেন, তার মানে, পুরো এক দশকের পলিটিক্যাল ফাঁইল খুলে খুঁজতে হবে। বাস্! কিন্তু শেষমেশ লাভটা কী হবে? নাথিং।

ডার্লিং, সুশোভন রায়ের হত্যা রহস্য জানা যায়নি। এখনো বারো বছর পূর্ণ হয়নি, মাইন্ড দ্যাট। সুতরাং এখনও তার খুনীদের ধরার আইনত দায়িত্ব তোমাদের হাতে আছে।

অরিজিৎ চুপচাপ পাইপ টানতে থাকলেন।

কর্নেল ফের বললেন, তোমাকে রবীন্দ্রনাথের একটা কবিতার কথা বলেছিলুম। অতীত বর্তমানের ভেতরও গোপনে কাজ করে চলে। বিমলকুমারের আত্মহত্যা অথবা হত্যা সেই অতীতেরই কাজ করা।

হুম! পাইপ দাঁতে কামড়ে অরিজিৎ বললেন। কিন্তু কী ছবি চুরি গেছে বিমলকুমারের, জানেন? অবশ্য জানলেও বলবেন না বুঝতে পারছি।

কর্নেল একটু চুপ করে থাকার পর বললেন, বিমূর্ত চিত্রকলার ব্যাপারটা আমার মাথায় আসে না। তবে ধরো, যদি কোনো ছবি দেখে মনে হয়, পিঠে ছুরি বেঁধা একটা মানুষ–অতর্কিতে যাকে ছুরি মারা হয়েছে পেছন থেকে–এমন একটা দৃশ্যত বিমূর্ত করে আঁকা হয়েছে এবং সেই ছবিটা চুরি যায়?

আই সি! আপনি ছবিটা দেখেছিলেন, অর্থাৎ আগেও গিয়েছিলেন ভদ্রলোকের স্টুডিওতে। কেন?

সে-কথার জবাব না দিয়ে কর্নেল বললেন, খুনী অথবা খুনীরা বাসুদেবকে প্রচণ্ড ভয় করত। বাসুদেবের কাছে পিস্তল ছিল বলেও নয়, আমার ধারণা বাসুদেবও একজন কিলার চরিত্রের লোক ছিল। তাই তার গায়ে হাত তুলতে সাহস পায়নি। যেন উল্টে খুনী বা খুনীরা তাকে সহযোগিতা করেছে ব্ল্যাকমেলিংয়ে। কিন্তু বিমলকুমার নিরীহ চিত্রকর। তারা আঁকা ছবিটা দেখে প্রথমে তত আমল দেয়নি। কিন্তু আমি ওঁর স্টুডিওতে যাওয়ায় খুনী বা খুনীরা এবার বিপন্ন বোধ করে থাকবে। অর্থাৎ বিমলকুমার একটা খুনের ঘটনা জানতেন। স্বচক্ষে দেখেও থাকতে পারেন। সেটাকে সরাসরি না এঁকে বিমূর্ত রীতিতে এঁকেছেন। অতএব আমি না যাব, বিমলবাবুর না মৃত্যু হবে!

কর্নেলের কণ্ঠস্বরে বিষণ্ণতা লক্ষ্য করে অরিজিৎ একটু হাসলেন। বললেন, অকারণ আত্মগ্লানিতে ভুগছেন, কর্নেল! আপনি নিমিত্ত মাত্র।

কর্নেল চুরুট কামড়ে ধরে বললেন, কেন যে ছাই এ বয়সেও সবতাতে নাক গলাতে যাই। এখনও আমার শিক্ষা হলো না ডার্লিং!

অরিজিৎ ঘড়ি দেখে নিয়ে উঠে দাঁড়ালেন। হাসতে হাসতে বললেন, আপনার এভাবে দাড়ি ঘেঁড়ার ভঙ্গি দেখলে খুব এনজয় করা যায়। বুঝতে পারি, সব রহস্য ফর্দাফাই হতে চলেছে। ওক্কে, উইশ য়ু গুড লাক, মাই ডিয়ার ওল্ড ডাভ! চলি।

ছাদের প্ল্যান্ট ওয়ার্ল্ডে কিছুক্ষণ রোদে দাঁড়িয়ে থেকে নিচে ব্রেকফাস্ট খেতে এলেন কর্নেল। খাওয়ার পর বুকশেলফ থেকে একটা বই বার করলেন : দা পলিটিক্যাল টারময়েল ইন ওয়েস্ট বেঙ্গল তিরিং সিক্সটিজ-সেভেনটিজ। পাতা ওল্টাতে থাকলেন। তারপর শেষের দিকে ইনডেক্সে এ হরফ থেকে পড়তে শুরু করলেন শব্দগুলি। শব্দগুলি টার্ম, কোনোটা নামের পদবি।

ফোন বাজল। সাড়া দিলেন, কর্নেল নীলাদ্রি সরকার বলছি।

অ্যাই বুড়ো! সাবধান! আর এক পা বাড়ালে খতম হয়ে যাবি।

ডার্লিং! রসিকতার জন্য ধন্যবাদ!

শাট আপ শালা বুড়ো ভাম! নাক গলালে গলা ফাঁক করে দেব।

গলা বাড়িয়েই আছি ডার্লিং!

ঠিক আছে। দ্যাখ, কী হয় এবার।

তোমাকে দেখতে পাচ্ছি। আমার জাদু-চোখ আছে ডার্লিং!

তবে মর শালা!

ফোন রাখার শব্দ হলো। কর্নেল হাসলেন। তাহলে ঠিক পথেই পা। বাড়িয়েছেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *