Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » গান্ধর্বী || Bani Basu » Page 25

গান্ধর্বী || Bani Basu

রণো ভালো হয়ে বাড়ি ফেরবার পর অপালা বলল ছাতের ঘরে রণোকে থাকতে হবে না। তারা চলে যাবে ছাতের ঘরে, রণো, দোতলায় মা বাবার ঘরে শুক। তার আসলে ভয় ছিল, ওপরের ঘরের ওই একটেরে নির্জনতা, এবং পরিবেশ, রণোর পুরনো ক্ষতগুলোকে আবার জাগিয়ে দিতে পারে। রণো বিনা প্রতিবাদে ব্যাপারটা মেনে নিল। আরেকটা পরিবর্তন হল বাড়িতে। বিশু এসে তার বাবাকে জানাল তারা আসছে মাসের প্রথম দিনে অর্থাৎ পয়লা এপ্রিল এ বাড়ি ছেড়ে যাচ্ছে। যোধপুর পার্কে ফ্ল্যাট কিনেছে। মনোহর ও পারুল হতভম্ব হয়ে চেয়ে আছেন দেখে বিশু জানাল এ বাড়ির আবহাওয়া তার স্ত্রীকে কোনদিনই সুট করেনি। সম্প্রতি রণোর ঘটনার পর সে এ সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে। বিশেষত তার স্ত্রী সন্তানসম্ভবা। এতদিন পর। তাকে সম্পূর্ণ শারীরিক ও মানসিক আনন্দের আবহাওয়ায় থাকতে বলেছেন ডাক্তার।

বিশু এবং জয়া বাড়ি ছেড়ে গেল। কিন্তু তাদের নিজেদের ব্যবহারের ঘর দুটি তালা দিয়ে গেল। যোধপুর পার্কের ফ্ল্যাট যথেষ্ট বড়। তিনখানা বড় বড় ঘর, বিরাট হল, বারান্দা। ফিরে এসে মনোহর নিশ্বাস ফেলে পারুলকে বললেন— ‘যার যা সাধ্য তা করুক না। মানা করছি না। কিন্তু একখানা ঘর অন্তত খুলে দিয়ে গেলে পারত। মেয়ে দুটো আর কতদিন ওইভাবে জড়োসড়ো হয়ে থাকবে!’

রণোর ঘরখানাই এখন প্রায় শিবনাথের পুরো পরিবারের বসবার ঘর হয়ে দাঁড়িয়েছে। রণো আজকাল তার বোনেদের সঙ্গে খুব মিশছে। আজ দাদু-দিদা শুতে চলে গেলে রণো হঠাৎ বলল— ‘মা, তুমি ভেবো না। তোমাকে আমি ওইরকম কি ওর চেয়েও ভালো বাড়ি বানিয়ে দেবো।’ অপালা ধরা ধরা গলায় বলল—‘বাড়ি আমার চাই না, তুই খুব স্বাস্থ্যবান, ভালো ছেলে হয়ে ওঠ।’

—‘সোহমমামুর মতো?’

—‘সোহমমামুর মতো কেন, তোর বাবার মতোও, তোর প্রদ্যোৎ মামার মতোও।’

এর পরের দিন সকালবেলায় শিবনাথকে ঠেলে তুলল অপালা, গলাটা তাকে দেখিয়ে ইশারায় বলল— ‘আমার গলাটা বন্ধ হয়ে গেছে। একদম স্বর বেরোচ্ছে না। শিবনাথ বললেন— ‘ও কিছু না, ঠান্ডা লেগে গেছে। আমি ডাক্তার দেখাচ্ছি ওষুধ খাও। ঠিক হয়ে যাবে।’ দিন দশ পরেও যখন ঠিক হল না, তখন ডাক্তার বললেন সিঙার্স থ্রোট হয়েছে ওষুধ দিচ্ছি। তাতেও কিছু হল না। ভালো ই.এন.টি. বিশেষজ্ঞ নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে বললেন—‘কিছু পাচ্ছি না। কোনও নডিউল না, ল্যারিঞ্জাইটিস না, কিচ্ছু না।’ শিবনাথকে আড়ালে ডেকে বললেন— ‘আচ্ছা, উনি কি খুব ইমোশন্যাল, সহজে আপসেট হয়ে পড়েন?’

—‘কই না তো!’

—‘মনে করুন তো, খুব শকিং কিছু হয়েছে কি না সম্প্রতি।’

—‘তা তো হয়েছেই। ছেলে প্রায় যেতে বসেছিল। একেবারে সুইসাইডের চেষ্টা।’

ডাক্তার সব শুনে বললেন— আমার মনে হচ্ছে জিনিসটা নিউরোটিক হিসটিরিক। টেনশন, শক ইত্যাদির ফল।’ ওঁকে আনন্দে রাখুন, কোথাও থেকে ঘুরিয়ে আনুন। ওষুধ দিচ্ছি, আস্তে আস্তে ঠিক হয়ে যাবে। হঠাৎ একদিন দেখবেন কথা বলছেন। ইন দা মীনটাইম, এ নিয়েও অর্থাৎ গলার এ অবস্থা নিয়েও কোনও উদ্বেগ বাড়িতে যেন প্রকাশ না হয়।

শিবনাথ পুরো পরিবার নিয়ে গোয়া ঘুরে এলেন। খুব আনন্দ করে বিভিন্ন বীচে ঘোরা হল। স্নান হল। তিন ভাইবোন খুব আনন্দ করল। শিবনাথ কনডাকটেড টুরের বাসে অপালার পাশে বসে প্রতি মুহূর্তে আশা করেন এই বুঝি সে এক কলি গেয়ে উঠল। তাঁর আশা পূর্ণ হয় না। মাঝে মাঝে শুধু বাইরের দৃশ্য দেখে অপালা ফিসফিস করে বলে— ‘কী সুন্দর!’ শিবনাথ ভয়ে ভয়ে তাকিয়ে বলেন— ‘আর কোথায় যাবে, বলো! নিয়ে যাবে!’ সুতরাং তাঁরা মহাবলেশ্বর এবং বম্বে থেকে এলিফ্যান্টা দেখে আসেন। মুগ্ধ চোখ অপালার। মুখে ভাষা নেই, চোখ খালি উজ্জ্বল থেকে উজ্জ্বলতর হয়ে উঠছে। কিন্তু এতো দেখে শুনে বাড়ি ফেরবার পরও অপালা ভালোভাবে কথা বলতে পারল না। গান করা তো দূরের কথা। সে নীচের ঘরে গিয়ে কখনও আপনমনে তানপুরো ছাড়ে, কখনও স্বরমণ্ডলটা কোলে নিয়ে উদাস হয়ে বসে থাকে, কখনও হারমোনিয়ামে ঝড়ের মতো তান তোড় তোলে।

শিবনাথ অফিস থেকে ফিরলে একটি বোবা মহিলা চা দিয়ে যায়। সবাই যখন একসঙ্গে খেতে বসে একজন বোবা বউ পরিবেশন করে। সোহম্ এসে গান ধরে, গজল, ঠুমরি, দাদরা। অপালার চোখ ভরে ওঠে। হঠাৎ হঠাৎ সে মুখ খোলে যোগ দেবার জন্য কিন্তু গলা দিয়ে স্বর বেরোয় না। রাত্রে এক আকাশ নীল বুকে নিয়ে ছাতের ঘরে দুজনে শুয়ে থাকে। শিবনাথ সন্তর্পণে, খুব নরম আঙুলে তার সারা মুখে মাথায়, শরীরে হাত বুলিয়ে দ্যান, অঘোরে ঘুমিয়ে পড়ে অপালা, কিন্তু শিবনাথ নিঘুম। ভাবছেন ডাক্তারের ডায়াগনোসিস ঠিক তো! ক্যানসার, ট্যানসার…। শিউরে উঠে শিবনাথ ভাবেন আর দেরি নয়। সোহমের সঙ্গে, প্রদ্যোতের সঙ্গে কথা বলতে হবে। প্রদ্যোৎ ফোনে তার মতামত জানিয়েছে আগেই। মেরিল্যাণ্ডের বাল্টিমোরে জন হপকিন্স হসপিট্যালের সঙ্গে সে কথাবার্তা বলছে, সেখানে যাবে না মিনেসোটায় মেয়োজ-এ যাবে—এ নিয়ে কথা চলছে। অনেকে পরামর্শ দিচ্ছেন, ব্যাঙ্গালোরে একবার নিয়ে যেতে। মস্ত বড় ই.এন.টি. স্পেশালিস্ট জন ম্যাথুস রয়েছেন সেখানে।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20 21 22 23 24 25 26 27 28

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress