Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

বাইরে ঝুরঝুরে বৃষ্টি পড়ছে। উদারভাবে একটা ট্যাক্সি ডেকে ফেললুম। লালুদার টাকাটা পকেটে এখনও গজগজ করছে। চন্দনদা তার মেয়েকে কত জিনিস এনে দিত, কত জায়গা বেড়াতে নিয়ে যেত। টাকা ভালো কাজেই লাগুক।

ট্যাক্সিটা সবেমাত্র এগিয়েছে, এমন সময় দেখলুম মুমুর সেই লীনামাসি আসছে উল্টোদিক থেকে। খুব সাজগোজ করে বেরিয়েছিল কোথায় যেন।

আমি বললুম, কী রে, মুমু, তোর মাসিকেও তুলে নেব নাকি?

মুমু আমার বাহুতে একটা চাপড় মেরে বলল, না! তুমি শুধু আমায় একলা নিয়ে যাবে!

আমি অন্যদিকে তাকাবার চেষ্টা করলেও লীনা আমাদের দেখতে পেয়ে গেছে। সে অবাক হয়ে হাত তুলে কী যেন বলবার চেষ্টা করল, ট্যাক্সিটা থামাবার ইঙ্গিত করল, কিন্তু ততক্ষণে ট্যাক্সি স্পীড নিয়ে ফেলেছে, বেরিয়ে গেল হুস করে।

মুমু খিলখিল করে হেসে উঠল।

লীনা বোধহয় ভাবল, আমি মুমুকে নিয়ে ইলোপ করছি। থাক না কয়েক ঘণ্টা সাসপেনসনের মধ্যে।

আর কিছুটা যেতেই বৃষ্টি নামল বেশ ঝমঝমিয়ে। তাহলে আর ভিক্টোরিয়ায় যাওয়া যাবে না। গঙ্গার ধারই ভালো। বৃষ্টির জন্য গঙ্গার ধারে মোটেই ভিড় নেই। রেস্তোরাঁটায় জায়গা পাওয়া গেল জানলার ধারে।

পরপর দুটো আইসক্রিম খেল মুমু। খুব সম্ভবত গত তিন-চার মাসের মধ্যে কেউ তাকে এরকম কোনো জায়গায় বেড়াতে এনে আইসক্রিম খাওয়ায়নি।

বৃষ্টির মধ্যে নদীর বুকে আলো ঝলমল জাহাজকে খুব রহস্যময় মনে হয়। যেন এই জাহাজে শুধু নিরুদ্দেশের যাত্রীরাই চাপে। এখানে ওখানে জোনাকির মতন মিটমিট করছে নৌকোর আলো। এই গঙ্গায় কুলুকুলু ধ্বনি নেই। কিন্তু ঢেউয়ের ছলাৎ ছলাৎ শব্দের মধ্যেও যেন একটা সুর আছে।

বাইরে তাকিয়ে থাকতে থাকতে মুমু বলল, নীলকাকা, তুমি কখনো জাহাজে চেপেছ?

—হ্যাঁ। এই কলকাতার ডক থেকেই চেপেছি জাহাজে।

—বাজে গুল ঝেড়ো না। অমনি হ্যাঁ বলা চাই। এখান থেকে জাহাজে চেপে তুমি কোথায় গেছ?

তোর মতন একটা পুঁচকে মেয়ের কাছে কেন গুল ঝাড়ব রে? তাতে আমার কী লাভ? এখান থেকে জাহাজে চেপে আমি আন্দামানে গিয়েছিলুম। মাঝখানে ঝড় উঠল। বে অফ বেঙ্গলের সেই ঝড়ের নাম সাইক্লোন, দারুণ সাঙ্ঘাতিক।

–আমি আন্দামানে যাব। নিয়ে যাবে?

–তোর পড়াশুনো রয়েছে না? এখন না, বড় হয়ে যাবি!

—সব কিছুই বড় হয়ে? আর কতদিন লাগবে বড় হতে?

—পড়াশুনো শেষ হলেই বড় হয়ে যায় সবাই।’

–আমার আর পড়তে ভালো লাগে না। ইস্কুলে যেতে ভালো লাগে না! জানো, কাল আমাদের স্কুলে পেরেন্টস মীট ছিল। কত বাবা-মা এসেছিল। আমার বাবা-মা যায়নি!

–তোর মা-ও যাননি?

—মা কাঁদছিল। শাড়িটাড়ি পড়ে রেডি হয়েও কাঁদতে লাগল, আর গেল না। আমার ক্লাস টিচার সে জন্য আমায় ধমকালেন!

—অনেকের বাবা বিদেশে থাকেন। সবাই কি যেতে পারে?

—যাদের বাবারা বিদেশে থাকে, তাদের মায়েরাও বুঝি কেঁদে কেঁদে যায় না? প্রত্যেকবার আমার প্রগ্রেস রিপোর্টে বাবা সই করে। এবারে বাবার সই না দেখলেই ক্লাস টিচার বলবে….আজ সকালে একটা চিঠি এসেছিল, আমার নামে, ছোটপাহাড়ী থেকে।

–চন্দনদা চিঠি লিখেছেন তোকে?

—আমি পড়িনি। ছিঁড়ে ফেলেছি। মা আগে পড়তে চাইছিল, মাকে দেব কেন আমার চিঠি। মা’র হাত থেকে কেড়ে নিয়েছি, আমিও পড়িনি। টুকরো টুকরো করে ফেললুম।

—সে কি! চিঠিটা একবার পড়লিও না?

—না! কেন পড়ব? সেই লোকটা একবারও আমাকে কিছু বলেছিল? বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার আগে…আমায় কিছু বলেনি, আমি ঘুমোচ্ছিলুম, আমাকে ডাকেনি! আমি ওর কেউ না!

সত্যি—চন্দনদা বাড়ি ছেড়ে চলে যাবার সময় মুমুকে কিছু বলে যাননি? অথচ মেয়ে-অন্ত প্রাণ ছিলেন চন্দনদা। ছোটপাহাড়ীতেও মুমুর সঙ্গে কঠোর ব্যবহার করলেন। অবৈধ প্রেম কি বাৎসল্যকেও অতিক্রম করে যায়? অথবা অন্ধ রাগ! চন্দনদা বরাবরই গোঁয়ার ধরনের মানুষ।

মুমু জোর দিয়ে বলল, আমার কোনো বাবা নেই। আমি আর ঐ বাবাটাকে চাই না। আমার মাকেও ভালো লাগে না। আমার বাড়িতে থাকতে ভালো লাগে না। এই নীলকাকা, কবে আমি বড় হবো!

কথা খুঁজে না পেয়ে আমি একটু ঝুঁকে মুমুর মাথায় হাত রাখলুম। মুমু হাতটা সরিয়ে দিল। আজ আর মুমু কাঁদছে না।

বিল মিটিয়ে নেমে এলুম বাইরে। বৃষ্টি সাময়িকভাবে থেমেছে। আকাশ থমথমে। কিছু লোক আবার বেরিয়ে এসেছে। কলকাতায় এই একটুখানিই তো নিঃশ্বাস ফেলার জায়গা!

ভিজে রাস্তা দিয়ে রেলিং-এর পাশ দিয়ে দিয়ে হাঁটতে লাগলুম একটুক্ষণ। একবার মুমুর কাঁধে হাত রাখতেই সে বলল, এবার তুমি আমায় চুমু খেতে পারো!

ইলেকট্রিক শক খাওয়ার মতন হাতটা তুলে নিলুম সঙ্গে সঙ্গে।

মুমু হি-হি করে হেসে উঠল। আমি এবার তার চুলের মুঠি ধরে বললুম, ওরে খুকি, আজ থেকে ঠিক সাত বছর পরে আমি তোকে চুমু খাব। এই গঙ্গার ধারে। তখন কিন্তু না বলতে পারবি না। মনে থাকে যেন, কথা রইল।

—এইটটিন ইয়ারস কমপ্লিট না হলে বুঝি কেউ ওসব করে না?

—না। তার আগে ওসব ইনডিসেন্ট শুধু না, কোনো প্লেজারও নেই। বড়দের ব্যাপার ছোটরা নকল করলে সেটা দেখতেও বিশ্রী লাগে। যেমন, ছোটদের মতন হাবভাব যদি বড়দের থাকে, সেটাও ন্যাকামি মনে হয় না? মনে কর, তুই লুকিয়ে লুকিয়ে ফ্রিজ খুলে কণ্ডেন্সড মিল্ক চুরি করে খাস। কিন্তু একজন চল্লিশ বছরের লোকও যদি সেরকম চুরি করে খায়, সেটা ভালগার মনে হবে না?

বড়দের চুরি করতে হয় না। তারা পয়সা দিয়ে যত ইচ্ছে কিনে খেতে পারে!

—আচ্ছা, তোর বয়েসি ছেলেমেয়েরা মাইকেল জ্যাকসন শুনে কিংবা রোলিং স্টোন শুনে নাচতে পারে। কিন্তু তোর বাবা-মায়ের বয়েসি লোকেরা যদি ঐ বাজনা শুনে ধেই ধেই করে নাচে, তা দেখতে কেমন লাগে?

—চন্দন ঘোষাল আর নীপার বন্ধুরা এক-একদিন আমাদের ফ্ল্যাটে এসে নেচেছে। কী বিচ্ছিরি যে দেখায়!

—তবে? এই, বাবা-মা’র নাম ধরে ডাকছিস যে!

রবীন্দ্রনাথ লিখেছেন, পঞ্চদশী মেয়েরাই পূর্ণিমায় পৌঁছে যায়। রবীন্দ্রনাথদের সেই আমল আর এখন নেই। তারও আগে মুমুর বয়েসি মেয়েদের বিয়ে হয়ে যেত, তারা নাকি মা-ও হতো। কে জানে! একালে শৈশব আর কৈশোর বেশ লম্বা। ফাস্ট ইয়ার সেকেণ্ড ইয়ারের ছেলেমেয়েদেরও বেশ বাচ্চা বাচ্চা মনে হয়। মুমুর মুখে চুমু কথাটা শুনতেই যেন কেমন অদ্ভুত লাগে!

একটু পরেই আমার মাথায় একটা দুষ্টুবুদ্ধি চাপল। ন্যাশনাল লাইব্রেরিতে গিয়ে পুরোনো খবরের কাগজ দেখার পরই আমার মাথায় এই ইচ্ছেটা ঘোরাফেরা করছিল।

—মুমু, আমার সঙ্গে আর একটা জায়গায় যাবি?

—কোথায়?

–আগে বলব না। কিন্তু সেখানে গিয়ে একটা মজার ব্যাপার হবে। আমি অনেক মিথ্যে কথা বলব! তুই কিন্তু প্রতিবাদ করতে পারবি না, চুপ করে থাকবি। কিংবা, আমার মিথ্যেগুলো শুনে শুনে তুই-ও বানাবি

–কেন, তুমি মিথ্যে কথা বলবে কেন?

—মনে কর এটা একটা খেলা। সিরিয়াসলি কি আর মিথ্যে কথা বলব, কারুর কোনো ক্ষতিও হবে না, এমনিই একটা মজা!

মিথ্যে কথা বলার ব্যাপারটা মুমুর বেশ পছন্দ হলো। সে বলল, চলো! আবার ট্যাক্সি! লালুদার টাকা আমি মোটেই বাজে খরচ করছি না।

বেহালার এস এন রায় রোডের কাছে নম্বরটা খুঁজে পেতে একটু অসুবিধে হলো। বাড়িটা একটা গলির মধ্যে। ট্যাক্সি ছেড়ে দিয়ে লোককে জিজ্ঞেস করতে করতে পাওয়া গেল শেষ পর্যন্ত। এইসব দিকে শহর আর গ্রাম এখনো মিলে মিশে আছে খানিকটা। একটা বেশ বড় কচুরিপানায় ভর্তি পুকুরের পাশ দিয়ে রাস্তা। এই বর্ষায় মট্ মট্ করে কোলা ব্যাঙ ডাকছে। তিন-চারটি ছেলে একটা সাপ মেরে ঝুলিয়ে নিয়ে যাচ্ছে লাঠির ডগায়।

সাপটা দেখে মুমু আমার হাত চেপে ধরল।

বাড়িটা মনে হয় নতুন। একতলা। ছাদ থেকে একটা ঝোলানো আলো জ্বলছে বাইরে। দরজার ওপর লেখা : ডাক্তার অম্বর সেনগুপ্ত। এম বি বি এস। তলায় ইন আর আউট-এর জায়গায় ইন করা। সেই ‘ইন’ লেখাটার দিকে তাকিয়ে রইলাম অপলক ভাবে কয়েক মুহূর্ত। এর একটা বিশেষ তাৎপর্য আছে। আমার ভালো লাগল।

বেল দিতেই দরজা খুলে দিল একটি কাজের মেয়ে। আমি তাকেই সাড়ম্বরে নমস্কার জানিয়ে বললুম, আমি বম্বে থেকে এসেছি। দিদিমণি আছেন? একবার দেখা করতে চাই।

কাজের মেয়েটি বলল, দিদিমণি মানে? মা, না বৌদি?

—তিনি তোমার বৌদিই হবেন বোধহয়। মিসেস রোহিণী সেনগুপ্ত?

সে আমাদের বসিয়ে ভেতরে চলে গেল। এই ঘরটায় ঢুকলে প্রথমেই চোখে পড়ে দেয়ালজোড়া পাহাড়ের ছবি। ব্লো আপ করা ফটোগ্রাফ। এক দেয়ালে একজন সাহেবের ছবি, সে মুখটাও চেনা চেনা। এ ছাড়া ঘরের মধ্যে কয়েকটা বেতের চেয়ার ছাড়া আর কোনো আসবাব নেই।

মুমু চোখের ইঙ্গিতে জানতে চাইল, এটা কার বাড়ি? আমিও সেইভাবে জানালুম, দ্যাখনা!

একটু পরেই দু’ চোখ জোড়া কৌতূহল নিয়ে ঘরে ঢুকল রোহিণী সেনগুপ্ত। একটা সাধারণ শাড়ি পরা, চুল খোলা। তার পেছনে, দরজার আড়াল থেকে উঁকি মারলেন আর একজন বয়স্কা মহিলা।

আমি সসম্ভ্রমে উঠে দাঁড়িয়ে হাত জোড় করে বললুম, নমস্কার, অসময়ে ডিসটার্ব করলুম বলে কিছু মনে করবেন না। আমার নাম নীলাঞ্জন ঘোষাল। আমি বম্বেতে থাকি। ফ্রি লান্স জার্নালিজ্ম করি। টাইমস অফ ইণ্ডিয়ায় মাঝে মাঝে আমার লেখা বেরোয়, হয়তো দেখে থাকবেন। আমি আপনার একটা ইন্টারভিউ নিতে এসেছি!

রোহিণী এখনো ভুরু কুঁচকে আছে। খানিকটা অবিশ্বাসের সুরে বলল, আমার ইন্টারভিউ? আপনি আমার ঠিকানা পেলেন কোথায়?

আমি বললুম, আপনার ঠিকানা জোগাড় করতে একটু অসুবিধে হয়েছে ঠিকই। পুরোনো ফাইল খুঁজতে হয়েছে। কয়েক বছর আগে খবরের কাগজে আপনাদের ঠিকানা…আপনার হাজব্যাণ্ডের নাম এখনো টেলিফোন ডিরেকটরিতে আছে।

রোহিণী বলল, বসুন!

আমি জানতুম, গলাধাক্কা খেতে হবে না, পাড়ার ছেলে ডেকে মার খাওয়াবেও না এই মহিলা। আমার সঙ্গে মুমু রয়েছে। সে-ই আমার পাশপোর্ট। সঙ্গে একটা ফুটফুটে চেহারার বাচ্চা মেয়ে নিয়ে কেউ জোচ্চুরি করতে আসে না, কোনো যুবতীর প্রতি প্রেম জানাতেও আসে না।

আমি বললুম, কলকাতায় আমার এক দাদা থাকে, এখানে এলে তার বাড়িতেই উঠি। এ আমার দাদার মেয়ে, এর নাম রম্যাণি। আমি কলকাতার রাস্তাঘাট ভালো চিনি না, তাই ওকে সঙ্গে নিয়ে এসেছি।

রেহিণীর কপাল থেকে সন্দেহের রেখাগুলো মুছে গেছে। এবারে বরং সে একটু হেসেই বলল, এইটুকু মেয়ে আপনাকে রাস্তা চেনাতে পারবে?

মুমুকে সে বলল, তোমার নাম রম্যাণি? বাঃ বেশ সুন্দর নাম তো। তোমরা কোথায় থাক?

মুমু আমাকে পর্যন্ত চমকে দিয়ে বলল, দমদম!

রোহিণী বলল, ওরে বাবা, অতদূর থেকে।

আমি বললুম, হ্যাঁ, সেই জন্যই আপনার বেশি সময় নেব না। আমাদেরও ফিরতে হবে। আমরা টাইমস অফ ইণ্ডিয়া পত্রিকায় পর্বত অভিযান নিয়ে কতকগুলো লেখা বার করছি। তার মধ্যে আমার ওপর ভার পড়েছে, মহিলা অভিযাত্রীদের নিয়ে একটা স্টোরি তৈরি করার। সেইজন্যই আমি আপনার মতন কয়েকজন বিখ্যাত মহিলা অভিযাত্রীর ইন্টারভিউ নিচ্ছি।

রোহিণী বলল, আমি আবার কিসের বিখ্যাত? একবারই মাত্র গেছি।

আমি বললুম, গতকালই আমি জামশেদপুরে গিয়েছিলুম বচ্চেন্দ্রী পালের ইন্টারভিউ নিতে। বচ্চেন্দ্রীই বলল, তোমরা রোহিণী চৌধুরীকে মিট করেছ? শী ইজ আ রিমার্কেবল লেডি, এত সাহসী, এত মনের জোর, যেসব মেয়ে মাউন্টেনিয়ারিং-এ আসতে চায়, তাদের উচিত রোহিণী চৌধুরীর কাছ থেকে এই সব শেখা। বচ্চেন্দ্রী আরও বলল, সে একবার আপনার কাছে এসে—

নিজের প্রশংসা চাপা দেবার জন্য রোহিণী পেছন ফিরে বলল, আলাপ করিয়ে দিই, ইনি আমার মা, মানে আমার শাশুড়ি। মা, এঁদের জন্য একটু চায়ের ব্যবস্থা করতে বলুন না গোলাপীকে। এই মেয়েটি কী খাবে? রম্যাণি তুমি কি চা খাও? তুমি একটু মিষ্টি খাবে?

মুমু সজোরে মাথা নেড়ে বলল, না, আমি মিষ্টি খাই না। আমি কিছু খাব না! আমি বললুম, আগে কাজের কথা সেরে নিই। আমরা জানি, আপনি বছর তিনেক আগে মেয়েদের একটি মাউন্টেনিয়ারিং এক্সপিডিশানের দলের নেত্রী হয়ে মাউণ্ট আকালু পীকে গিয়েছিলেন। আপনারা পীকটা জয় করেছিলেন ঠিকই, কিন্তু নেমে আসার সময় একটা ডিজাস্টার হয়েছিল।

রোহিণী একটা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে সংক্ষেপে বলল, হ্যাঁ।

—আপনাদের দলে সবসুদ্ধু বারোটি মেয়ে, একজন পুরুষ ডাক্তার, আর চার জন শেরপা ছিল। এদের মধ্যে দু’জন মারা যায়। আর প্রায় পাঁচ দিন আপনাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি, কোনো ট্রেসই ছিল না। একজ্যাকটলি কী হয়েছিল বলতে পারেন?

—তখনকার খবরের কাগজেই তো সেসব বেরিয়েছিল!

-তবু আপনার মুখ থেকে আর একবার শুনতে চাই। আপনার নিজস্ব অভিজ্ঞতা।

—ওঠার সময় আমরা ওয়েদার খুব ভালো পেয়েছিলাম। টপে উঠেছিল তিন জন ইনক্লুডিং ওয়ান শেরপা। নামবার সময় আমরা সাউথ কল দিয়ে নামি, সেদিক দিয়ে আগে কেউ নামেনি, তাই সেটাও একটা রেকর্ড। থার্ড দিনে হঠাৎ সাঙ্ঘাতিক ব্লিজার্ড উঠল, মানে বরফের ঝড়, হাওয়ার গতি ছিল ঘণ্টায় একশো কুড়ি মাইল, তার মধ্যেও আমাদের বিশেষ বিপদ হয়নি, কিন্তু আমাদের বেস ক্যাম্পেই ভয়ানক ক্ষতি হয়েছিল, তাঁবু উল্টে গিয়েছিল, দু’জন ভেসে গিয়েছিল গ্লেসিয়ারে।

–আপনি নিজে প্রায় পাঁচ দিন কোথায় অন্তর্ধান করেছিলেন?

—আমি একটা ফাটলের মধ্যে পড়ে গিয়েছিলাম বোধহয়!

–না, আপনি কোনো ফাটলের মধ্যে পড়ে যাননি। ইচ্ছে করে নেমেছিলেন, তাই না? আপনার ঠিক সামনেই যে ছিল, তার নাম সুজাতা।

—সুজাতা না, সুপ্রিয়া। সুপ্রিয়া মোহান্তি, উড়িষ্যার মেয়ে, খুব ব্রাইট।

—সেই সুপ্রিয়া মোহান্তি সেই সময়কার কাগজে স্টেটমেন্ট দিয়েছিল যে আপনি তার সঙ্গে সঙ্গেই আসছিলেন, হঠাৎ পেছন ফিরে সে আপনাকে দেখতে পায়নি। কিন্তু সেখানে কোনো ফাটল কিংবা খাদ ছিল না। অর্থাৎ আপনি ইচ্ছে করে একা একা সেই দু’জনকে খুঁজতে গিয়েছিলেন। বাঙালির মেয়ে হয়ে আপনি অত সাহস পেলেন কী করে?

রোহিণী হেসে বলল, যাঃ ওসব বাদ দিন। ওরকম অনেকেই করে। এমন কিছু না। পাহাড়ে গেলে ওরকম একটা স্পিরিট এসেই যায়।

আমি পাশ ফিরে বললুম, জানিস মুমু, সেই পাহাড়ে বরফের রাজ্যে এই মহিলাকে পাঁচ দিন খুঁজে পাওয়া যায়নি। তখন অনেকে ভেবেছিল, ওকে ইয়েতি ধরে নিয়ে গেছে। ইয়েতি কাকে বলে জানিস তো?

মুমু মাথা নাড়ল। রোহিণী বলল, হ্যাঁ, পরে দেখেছি, কাগজে ওসব আজগুবি কথা বেরিয়েছিল। সেসব পুরোনো কথা তো লোকে ভুলে গেছে। আপনি এতসব মনে রাখলেন কী করে।

আমি বললুম, রিপোর্টারদের অনেক কিছু মনে রাখতে হয়। তাছাড়া, আমারও পাহাড়-পর্বতের নেশা আছে। সেই সময় শুধু কাগজে নয়, টিভি-তেও আপনার ছবি দেখানো হয়েছিল অনেকবার। আপনি সেই একটা বিরাট ফাটলে নেমে গিয়ে আর উঠতে পারেননি, খাবার-দাবার কিছু পাননি। সেই অবস্থায় অসম্ভব মনের জোর ছাড়া বেঁচে থাকা যায় না। সরি, আমার নোট বুকটা বাড়িতে ফেলে এসেছি। আমায় খানিকটা কাগজ দেবেন? কয়েকটা পয়েন্ট নোট করে নিতাম।

রোহিণী উঠে গিয়ে একটা প্যাড এনে দিল। ডাক্তার অম্বর সেনগুপ্তর নামে ছাপানো প্যাড।

আমি ঝানু রিপোর্টারদের ভঙ্গিতে জিজ্ঞেস করলুম, আচ্ছা, আপনার মাউণ্টেনিয়ারিং এক্সপিডিশানে যাবার ইচ্ছেটা কী করে হলো? আপনার কোনো ট্রেনিং ছিল?

রোহিণী বলল, হ্যাঁ, ছেলেবেলা থেকেই পাহাড়ে বেড়াতে যাবার শখ ছিল। আমার বাবা কিছুদিন সিমলায় পোস্টেড ছিলেন, তখন হিমাচল প্রদেশের অনেক জায়গায় গেছি। তারপর কলেজ জীবনে কলকাতায় এসে দু’তিনটি ছোটখাটো অভিযানে, একবার হেঁটে অমরনাথ, হ্যাঁ, ট্রেনিংও নিয়েছি, হিমালয়ান মাউন্টেনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে ছ’ মাসের কোর্স, তেনজিং নিজে আমাদের ট্রেনিং দিয়েছেন, সেখানে এডমণ্ড হিলারি এসেছিলেন একদিন, তিনি তাঁর একটা ছবি অটোগ্রাফ করে তা দিয়েছিলেন আমাকে, ঐ যে দেখুন দেয়ালে বাঁধানো…. তাছাড়া আমার স্বামী, তাঁরও খুব ঝোঁক ছিল, তাঁর উৎসাহেই আমরা মাকালু অভিযানে…..

রোহিণীর স্বামী ডাক্তার অম্বর সেনগুপ্ত মাকালু মহিলা অভিযাত্রীদের সঙ্গে ডাক্তার হিসেবে গিয়েছিলেন, তিনি একজনকে বাঁচাতে গিয়ে ঐবারই মারা যান। আমি আর সে প্রসঙ্গে উচ্চবাচ্য করলুম না।

আমার পরের প্রশ্ন, আপনি এরপর আবার কোনো অভিযানে যাবেন না?

—হ্যাঁ, যেতে পারি। ইচ্ছে আছে খুবই। কিন্তু সেরকম তো কিছু হচ্ছে না। ওয়েস্ট বেঙ্গলে হঠাৎ যেন এই ব্যাপারে উৎসাহে ভাটা পড়ে গেছে!

—আপনি নিজে কিছু অর্গানাইজ করার কথা ভাবছেন না? মানে, আমি শুনেছি, আপনি একটা চাকরি নিয়েছেন। বাকি জীবনটা শুধু চাকরিই করে যাবেন? আপনার মতন একজন এক্সপীরিয়েন্সড ক্লাইম্বার, শুধু দশটা-পাঁচটা অফিস করবেন আর মিনিবাসে বাড়ি ফিরবেন…..

—পাহাড়ের নেশা একবার ধরলে আর ছাড়ে না। চাকরি একটা করছি বটে, এখন না করে উপায় নেই, তবু চাকরিতে ঠিক মন বসে না। আবার কোনো অভিযানে সুযোগ পেলেই যাব। তাছাড়া, আমি মেয়েদের মাউন্টেনিয়ারিং ট্রেনিং—এর সঙ্গে যুক্ত আছি, বছরে দু’ মাস অফিস থেকে ছুটি দেয়।

-আপনি মাউন্টেনিয়ারিং-এর ইনস্ট্রাক্টর? কোথায়, দার্জিলিঙ-এ?

—না। পুরুলিয়ায়, শুশুনিয়া পাহাড়ে। সেখানে বছরে দু’বার ক্যাম্প হয়। এই তো, সামনের সপ্তাহেই যেতে হবে আমাকে।

–সেখানে অনেক মেয়ে শিখতে আসে?

-হ্যাঁ। কুড়ি-পঁচিশজন অন্তত আসে।

-এবারে একটা খুব ব্যক্তিগত প্রশ্ন করব। আপনার যদি ইচ্ছে না হয়, উত্তর দেবেন না। আপনি কি আবার বিয়ে করবেন? শিগগির সেরকম কিছু প্ল্যান আছে? মানে, এইজন্য জিজ্ঞেস করছি, অধিকাংশ মেয়েই বিয়ে করে সংসারে জড়িয়ে পড়লে পর পাহাড়ের অভিযানে যেতে পারে না….

মাটির দিকে একটুক্ষণ চেয়ে রইল রোহিণী। আস্তে আস্তে বলল, ভবিষ্যতের কথা জানি না। কিন্তু এখন অন্তত আমি আবার বিয়ে করার কথা চিন্তাও করি না। না, প্রয়োজনও নেই। আমি যে-রকম আছি, বেশ আছি।

আমি মুমুর দিকে তাকিয়ে বললুম, আমার প্রশ্ন শেষ। তোমার কিছু প্রশ্ন আছে? মুমু রোহিণীকে জিজ্ঞেস করল, আঠেরো বছর বয়েস না হলে বুঝি পাহাড়ে ওঠা যায় না?

রোহিণী হঠাৎ খুব উৎসাহের সঙ্গে বলল, না-না, কে তোমাকে বলেছে সে কথা? তোমার বয়েসি মেয়েরাই বেশি ভালো পারে। আমি তোমার বয়েসে ট্রেকিং করতে গেছি। এখন শুশুনিয়া পাহাড়ে যারা ট্রেনিং নিতে আসে, তারা অনেকেই তোমার বয়েসি!

মুমু বলল, আমি পাহাড়ে উঠব!

রোহিণী বলল, বাঃ, খুব ভালো কথা! তোমার মতন মেয়েই তো আমরা চাই। তুমি একবার ট্রেনিং নিয়ে নাও না! দেখবে, খুব ভালো লাগবে। ক্যাম্পে সব মেয়েরা একসঙ্গে খুব হৈ চৈ করে থাকে।

আমি বললুম, হ্যাঁ, মুমু, তোকে একবার শুশুনিয়া ক্যাম্পে পাঠিয়ে দেব। বাঙালি মেয়েদের মধ্যে এখনো কেউ এভারেস্টে ওঠেনি। মুমু, তুই পারবি না? রোহিণী বলল, ট্রেনিং নিলে নিশ্চয়ই পারবে। বাবা-মাকে ছেড়ে থাকতে হবে কিন্তু কিছুদিন। তোমার কষ্ট হবে না তো?

মুমু জোরে বলে উঠল, যাব, আমি যাব!

রোহিণী বলল, তোমার বাবা-মাকে বলো ব্যবস্থা করে একবার শুশুনিয়া পাঠিয়ে দিতে। আমি থাকব, তোমার কোনো অসুবিধে হবে না।

আমি বললুম, আমি ওর বাবাকে বলে রাজি করিয়ে দিতে পারব। আপনি ওর বাবাকে চিনলেও চিনতে পারেন। ওর বাবা অ্যালায়েড স্টিল অ্যাণ্ড হেভি ইণ্ডাস্ট্রি নামে কোম্পানিতে আছেন। ঐ কোম্পানি পর্বত অভিযান স্পনসর করে, অনেক সাহায্য করে। আপনাদের মাকালু অভিযানেও ঐ কোম্পানি টাকা দিয়েছিল। ওর বাবাই অনেকটা চেষ্টা করে সেই ব্যবস্থা করেছিলেন। ওর বাবার নাম চন্দন ঘোষাল!

রোহিণীর যতই ব্যক্তিত্ব থাক, এবারে সে বিস্ময়ের চমক লুকোতে পারল না। বিমূঢ় ভাবে একবার আমার দিকে, একবার মুমুর দিকে তাকিয়ে বলল, হ্যাঁ চিনি। চন্দন ঘোষালের মেয়ে?

এই সময় প্রৌঢ়া মহিলাটি একটা ট্রে নিয়ে এলেন। আমাকে চা দিয়ে তিনি মুমুকে বললেন, তোমাকে দুটো নারকোল নাড়ু খেতেই হবে। আমি নিজে বানিয়েছি! এইটুকু মেয়েকে তো চা খেতে দেব না। দুধ খাবে?

মুমু লজ্জা পেয়ে গা মোচড়াতে লাগল।

প্রৌঢ়া মহিলাটি বললেন, কী মিষ্টি মুখখানি, তুমি কোন্ ক্লাসে পড়ো মা!

রোহিণী একেবারে স্তব্ধ হয়ে গেছে। আমিও চুপ করে চায়ে চুমুক দিয়ে যেতে লাগলুম। কোনো একটা গোপন প্রেমের জায়গায় আমি কি নিষ্ঠুরের মতন আঘাত দিয়েছি? আমার ভূমিকা কি জল্লাদের? কিন্তু এই রোহিণী যদি চন্দনদার প্রেমিকা হয়েও থাকে, তাহলে ওর কি মুমুর অস্তিত্বের কথা জানা উচিত নয়?

প্রৌঢ়া মহিলাটি আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, তুমি বম্বেতে থাক? কোন পাড়ায়? আমার ছোট বোন থাকে দাদার স্টেশনের প্রায় গায়েই।

আমি বললুম, আমিও তো দাদারেই থাকি। হিন্দু কলোনিতে। আপনার বোনের হ্যাজব্যাণ্ডের নাম কী?

রোহিণীর শাশুড়ি বেশ হাসিখুশি মহিলা। তিনি গালে হাত দিয়ে বললেন, তাই তো, সানুর ভালো নাম কী যেন? ও হ্যাঁ, সুরঞ্জন। সুরঞ্জন দাশ।

আমি বললুম, সুরঞ্জন দাশ? খুব ভালোই চিনি। প্রায়ই বাজারে দেখা হয়। উনি সুরঞ্জন, আমি নীলাঞ্জন। উনি আমার নাম শুনলেই বুঝতে পারবেন।

এবার ওঠার পালা।

রোহিণী এবং তার শাশুড়ি আমাদের এগিয়ে দিতে এলেন বড় রাস্তা পর্যন্ত। খবরের কাগজের রিপোর্টাররা কাজ সেরে চলে যায়। কিন্তু রোহিণীর শাশুড়ি আমাকে আন্তরিক ভাবে বললেন, তোমরা আবার এসো!

রোহিণী অস্ফুটভাবে বলল, চন্দন ঘোষালের বাড়ি দমদম?

আমি বললুম, না-না, দমদমে ওদের মামাবাড়ি। আমরা সেখান থেকে আসছি, এখন ফিরব সুইন হো স্ট্রিটে। বেশি দূর না। চিন্তা করবেন না, ঠিক পৌঁছে যাব। আর একটা কথা, যদি কিছু মনে না করেন, আজ ক্যামেরা আনতেও ভুলে গেছি, আমি কাল-পরশুর মধ্যে আর একবার এসে আপনার কয়েকটা ছবি তুলে নিয়ে যার।

ট্রামে চাপবার পর মুমু বলল, অ্যাই ব্লু, তুমি ওদের আমার বাবার নাম বলে দিলে কেন? সব মিথ্যে কথা বলবে বলেছিলে না?

আমি বললুম, ওটা তোর সত্যিই বাবার নাম, না মিথ্যে, তা ওরা কী করে বুঝবে?

-বাবার অফিসের নাম বলে দিলে?

—মাঝে মাঝে দু’একটা সত্যি মিশিয়ে না দিলে ধরে ফেলতে পারে, বুঝলি! এখানে এসে ভালো হলো না, বল? কত পাহাড়ের গল্প শোনা গেল!

-ওকে সত্যি সত্যি ইয়েতি ধরে নিয়ে গিয়েছিল?

—কী জানি, হতেও পারে। নিজের সম্বন্ধে বেশি বলতে চায় না। কিন্তু ইণ্ডিয়ায় যারাই মাউন্টেনিয়ারিং করে, তারা সবাই রোহিণী সেনগুপ্তর নাম জানে। ভেবে দ্যাখ, পাঁচ দিন পাহাড়ের এক ফাটলের মধ্যে, বরফের ঝড়, কী ঠাণ্ডা, কিছু খেতে পায়নি, ওফ, আমরা হলে তো ভয়েই মরে যেতাম!

–ও ইচ্ছে করে গিয়েছিল?

–হ্যাঁ, ইচ্ছে করে দলের লোকদের খুঁজতে গিয়েছিল। মেয়েটার কী দারুণ সাহস! মেয়েটাকে তোর ভালো লাগেনি?

মুমু চট করে কারুর সম্পর্কে ভালোর সার্টিফিকেট দেয় না, কিন্তু রোহিণী সেনগুপ্তকে তার পছন্দ হয়েছে। সে আস্তে আস্তে মাথা নাড়ল।

ট্রামে আলিপুরের মোড় পর্যন্ত এসে সেখান থেকে ট্যাক্সি নিতে হলো। এখন ঠিক কটা বাজে কে জানে, সাড়ে নটার কম হবে না। নীপাবৌদি এর মধ্যে বাড়ি ফিরে এলে নিশ্চয়ই হৈ চৈ শুরু করে দিয়েছেন।

বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে আছে সেই লাল রঙের ছোট গাড়ি!

মুমু চোখ টিপে বলল, এসে গেছে বয়ফ্রেণ্ড!

আমি বললুম, এই রে! ভেবেছিলুম নীপাবৌদির আগেই ফিরতে পারব। মুমু, আজ যে আমরা গঙ্গার ধারে আইসক্রিম খেতে গেলাম, তারপর আর এক জায়গায়, এটা তোর আর আমার মধ্যে সিক্রেট। আর কারুকে বলবি না কিন্তু। মাকে বলবি, তুই আমার বাড়িতে গিয়েছিলি। চল, নীপাবৌদিকে আমি বুঝিয়ে বলে আসছি।

মুমু বলল, তোমাকে যেতে হবে না। আমি ঠিক বলতে পারব।

আমি বললুম, তোর কথা বিশ্বাস না করতেও পারে। চল না, আমি ঠিক ম্যানেজ করে দেব। তোর ভয় নেই কিছু।

বাড়ির দরজার সামনে মুমু আমার দিকে ঘুরে দাঁড়িয়ে বলল, ভয়? আমি কারুকে ভয় পাই না! তুমি ভাবছ, মা আমাকে মারবে? মারুক তো দেখি! আমি বলে দিয়েছি, আর একবার আমাকে মারতে এলেই আমি বারান্দা থেকে ঝাঁপ দেব!

সিঁড়ি দিয়ে দুপদাপ করে খানিকটা উঠে গিয়েও মুমু আবার নেমে এলো। আমার একটা হাত ছুঁয়ে বলল, থ্যাঙ্ক ইউ, ব্লু, ফর দা আইসক্রিম। ফর এভরিথিং দিস ইভনিং!

ঠিক বড়দের মতন কথা। অথবা, বাচ্চারাও আসলে হয়তো কোনো কোনো ক্ষেত্রে বড়ই, আমরা আমাদের ঐ বয়েসটার কথা ভুলে গেছি।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress