কুসুম কোরক – পর্ব- 5
আজ স্কুল বাড়িতে নাচ গান হচ্ছে। কচিকাচারা বার বার মালীকে বলে গেছে। তোমাকে কিন্তু যেতেই হবে। তাই মালী স্কুলের দিকে হাঁটতে লাগলো। দুর থেকেই দেখা যাচ্ছে কচিকাচারা মঞ্চে নাচছে। আড়ালে গান হচ্ছে-“শরৎ রাণী দাঁড়াও আসি।”
হলুদ শাড়ি পড়ে এক শিশু মঞ্চে এল। তার মাথায়, গলায়, হতের বাজুতে ফুলের মালা। মঞ্চে এসে বলল।
-“আমি ভরা নদী” ।
নাচতে নাচতে গাইতে লাগল।
-“আমি যে গো ভরা নদী, ভেঙে চলি দুই পাড়—
আমার স্রোতের কাছে মানে নাতো কেহ হার “।
মালীর দারুণ লাগছে। ফুলের মালা আর সাজে ওদের চেনা যাচ্ছে না । এবার মঞ্চে এলো আর এক শিশু । তার পড়নে নীল শাড়ি।
ভরা নদী বলল-তুমি কে গো?
নীল শাড়ি পড়া শিশু বলল-“-আমি নীল আকাশ গো। “
ভেতরে গান চলছে—
“নীলের আমেজ নয়নে লেগেছে,
আমি যে গো নীল আকাশ।
উষার গগন লাল হয়ে ওঠে,
দেখি তপনের হাস, ।
আমি যে গো নীল আকাশ। “
আরও এক শিশু এল মঞ্চে। পড়নে তার সাদা শাড়ি।
নীলাকাশ বলল-তুমি কে গো?
সাদা শাড়ি পড়া শিশু হেলে দুলে বলল।
-“আমি কাশ ফুল”।
“হেলছি, দুলছি,চামর দুলাচ্ছি ঝির ঝিরে হাওয়ায় ।”
আবার শুরু হলো সমবেত সুরে গান। –
“শরৎ রাণী দাঁড়াও আসি “।
আর এক শিশু মঞ্চে এলো। পড়নে তার সাদা শাড়ি। মাথায়, হাতে, গলায় গোড়ের মালা পড়া।
কাশ ফুল বলল-তুমি কে গো?
সাদা শাড়ি পড়া শিশু বলল-“-আমি সমীরণ। “
এবার সমীরণ গান গাইতে গাইতে নাচতে লাগল।
-“শরতের ফুরফুরে আমি সমীরণ
গানে গানে উতলা যে হলো মোর মন।
বাঁশি বাজে মন মাঝে গোপনে মোর সাজ
আঁকুলিয়া রাখি আমি সুনীল গগন। “
সমবেত গান শুরু হল-“শরৎ রানী দাঁড়াও আসি।”
শরৎরাণীর মঞ্চে আগমন। সবাই তাকে ঘিরে দাঁড়ালো।
পর্দা পড়ে গেল।
শরৎ রাণী নৃত্য নাট্য শেষ হতেই কচিকাচারা মালীকে দেখতে পেয়ে ছুটতে লাগল মালীর দিকে। দু’হাতে শাড়ি গুটিয়ে মালীর কাছে এলো।
কচিকাচা- ও মালী ভাই। আমাকে কেমন দেখাচ্ছে?
মালী- দারুণ দেখাচ্ছে তোমাদের। আমি বেলী আর টগর কে বলবো।
কচিকাচা- কি বলবে?
মালী- তোমরা মালা পড়ে সুন্দর নেচেছো।
কচিকাচা- আমরা তোমার সাথে যাব।
মালী- রাতের বেলায় বাগানে গেলে তোমাদের বাবা -মা বকবেন। কাল সকালেই যাবে।
কচিকাচারা- কল কল করতে করতে বাবা মায়ের কাছে ছুটলো। কারো শাড়ি খুলে গেছে। কেউ বা বুকে আগলে রেখেছে শাড়ি।
কলকলিয়ে কথা বলছে শিশুরা। মালী ভাবছে, এ ও বুঝি একটা বাগান!! শিশুরা ও ফুলের মত সুন্দর। এদের যত্ন করতে হবে। ভাল মানুষ তৈরি করার জন্য চাষ করতে হবে। ভালবাসার বীজ বুনে লালন করতে হবে এই ছুটন্ত ফুল গুলো কে। ভালবাসা না দিলে ছুটন্ত ফুল গুলো তো শুকিয়ে যাবে!!!!