রামায়ণ : কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড – শ্রীরামের প্রতি বালির বিনয়
শ্রীরাম বলেন, বালি শুন হয়ে স্থির।
বানর জাতির মধ্যে তুমি বড় বীর।।
আমারে করিলে তুমি অনেক ভৎসন।
আর যদি থাকে কিছু কহ কুবচন।।
পৃথিবীতে যত রাজা আছে যুগে যুগে।
দয়া করি কোন্ রাজা ছাড়িয়াছে মৃগে।।
ঘাস খায়, বনে চরে, নাহি অপরাধ।
তবু মৃগ মারিতে রাজারা হয় ব্যাধ।।
মৎস্যগণ জলে থাকে তারা হিংসে কাকে।
তারে বধ করে কেন বড় বড় লোকে।।
পশু পক্ষী সর্ব্ব স্থানে থাকে সর্ব্ব বনে।
ব্যাধগণ অবিরত কেন তারে হানে।।
আমার রাজ্যেতে থাকি কর পরদার।
সেই পাপে মম রাজ্যে পাপের সঞ্চার।।
মম বাণে তোমার হইল মুক্ত পাপ।
স্বর্গে যাহ বালি, কেন করহ সন্তাপ।।
ভক্ত হেন সুগ্রীবের করিব পালন।
তাহার যে শত্রু, তার বধিব জীবন।।
করিয়াছি মিত্রতা পাবক সাক্ষী করি।
কোথাও না রাখি আমি সুগ্রীবের অরি।।
সুগ্রীবের জ্যেষ্ঠ ভাই তুমি ত গর্ব্বিত।
তোমারে অধিক বলা না হয় উচিত।।
তোমার সহিত যুদ্ধ মোরে নাহি সাজে।
ক্ষমা কর কপিরাজ কেন পাড় লাজে।।
ক্ষমা কর বীর, তব দৈবের লিখন।
আমার প্রসাদে যাও মহেন্দ্র-ভুবন।।
ইন্দ্র-পুত্র তুমি হও মহেন্দ্রের বেশ।
অমরাবতীতে যাও আপনার দেশ।।
বালি বলে, ত্রিভুবনে তুমি ত পূজিত।
ব্যথিত হইয়া বলিলাম অনুচিত।।
ক্ষমা কর, ধরি রাম তোমার চরণ।
সুগ্রীব অঙ্গদে তুমি করহ পালন।।
সুগ্রীবেরে রাজ্য দিতে করিলে স্বীকার।
অঙ্গদেরে দিবে তুমি কোন্ অধিকার।।
তুমি দাতা, তুমি কর্ত্তা, তুমি ত বিধাতা।
সুগ্রীব অঙ্গদের ধর্ম্মতঃ হও পিতা।।
সুষেণ-দুহিতা তারা আছে গৃহমাঝে।
সুগ্রীব না দেয় দুঃখ যেন কোন কাজে।।
শ্রীরাম বলেন, গতি চিন্ত কপিরাজ।
পবিত্র হইলে তুমি, কথায় কি কাজ।।
শ্রীরামে বিনয়ে কহে বালি যোড় হাত।
বিরূপ বচন ক্ষমা কর রঘুনাথ।।
বালির বচন শুনি রামের উল্লাস।
রচিল কিষ্কিন্ধ্যাকাণ্ড কবি কৃত্তিবাস।।