কান্না (Kanna)
“অ-অজগর আসছে তেড়ে–
আ-আমটি আমি খাব পেড়ে
মুনাই সুর করে পড়ছে।
রামপুরহাট প্রাইমারি স্কুলে , শিশু শ্রেণী তে সবেমাত্র ভর্তি হয়েছে।
এমন সময় মা ঘরে আসতেই মুনাই আবদার করে সরস্বতী পুজো করতে চাই। মাষ্টারদা পুজো করে দেবেন । মা রাজী হতেই আগামীকালের পুজোর ব্যবস্থা শুরু করে। পুজোর সময় মাষ্টারদা বলেন পলাশ ফুল লাগবে।মুনাই এক ছুট্টে শ্যামদার বাড়ির বাগানে পলাশ গাছের তলায় পলাশের খোঁজে যায়।
শ্যামদা ছোট্ট মুনাইকে ঘরেতে ইশারা করে ডাকে।
এদিকে মুনাই ফিরছে না দেখে সবাই অস্হির ।খোঁজ চলতে থাকে। পলাশ ফুলের গাছ শ্যামের বাড়িতে আছে। সবাই অঘটন ঘটেছে ভেবে দরজা ঠেলে ঢোকে। মুনাই ফুঁপিয়ে কাঁদছে।কি সর্বনাশ করেছে শ্যাম!!
সবাই মারতে যাবে , মুনাই বলে জলপট্টি দিয়ে শ্যামদাকে ঘুম পাড়িয়েছি.. ঘুমোতে দাও। তোমরা শ্যামদাকে মেরো না। কিন্তু কে কার কথা শোনে।শ্যামকে সবাই চড়,লাথি,কিল,মারতে থাকে। তখন অচেতন শ্যাম চোখ মেলে তাকাতেই, সবাই লাল চোখ দেখে , কিছু না ভেবেই কিছু কথা না শুনে মারতে থাকে।মদ খেয়ে ছোট মেয়ের ইজ্জত নিয়ে খেলা।উফ সাংঘাতিক মারতে থাকে।পাড়া পড়শী যেন #এক অবিরাম খেলায় মত্ত।ভয়ে মুনাই আরো কাঁদতে থাকে।মুনাই যত কাঁদে শ্যামের প্রতি অত্যাচার বাড়তে থাকে।এক সময় শ্যাম মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।হয়ত মারা ও যেতে পারে। রামপুরহাটের কাতারে কাতারে লোক বাড়িতে আগুন লাগিয়ে দেয়।তারা এমন দৃষ্টান্ত রাখতে চায়,যাতে কোন মেয়ে অত্যাচারের শিকার না হয়।
শ্যামের বাড়িতে দাও দাও করে আগুন জ্বলছে। পুলিশ এসে উদ্ধার করে শ্যামকে ।হাসপাতালে বলা হয় অনেকক্ষণ আগেই মারা গেছে।মনে হচ্ছে বেশ কয়েকদিন ধরে অসুস্থ, পেটে কোন খাবার ও ছিল না। মারাত্মক জ্বর। মুনিয়া ও এইসব কাণ্ড দেখে ঘন ঘন মূর্ছা যাচ্ছে। হাসপাতালে চিকিৎসা চলছে।
একটু ভালো হলে পুলিশ তদন্ত করতে আসে শ্যাম হত্যার কিনারা করতে। সবাই ভাবে মুনাই ভয়ে উল্টো পাল্টা অসংলগ্ন কথা বলছে।
আসলে মুনাই অসংলগ্ন কথা নয় সঠিক কথা বলছে।
শ্যাম মুনাইকে ডেকে ,মুনাই এর হাত থেকে জল বিস্কুট খায়।জ্বরে বেহুঁশ ছিল।মুনাই এর সাহচর্যে একটু ভালো হলে শ্যাম মুনাই এর সাথে একটু গল্প করে। তারপর জলপট্টি দিয়ে শ্যামদাকে ঘুম পাড়িয়ে দেয়।
মুনাই নিজের চোখে দেখা শ্যামদার প্রতি অত্যাচার সহ্য করতে পারে না। পড়তে বসলে সারাদিন বকর বকর করতে থাকে।
এখন নিজেই সুর করে বলতে থাকে
অ-অজগর আসছে তেড়ে
আ-আগুন জ্বলে শ্যামদার ঘরে।
ই-ইঁট পাটকেল ঘরে পড়ে।
মানুষ এখন বড্ড অধৈর্য হয়ে পড়ে।কোনো বিচার না করে আইন নিজের হাতে তুলে নেয়। তাহলে পুলিশ কি করবে!!
হয়ত শ্যামের দোষ ছিল না, একটি ছোট্ট মেয়ের আবেগের কান্না কেউ বোঝবার চেষ্টা করল না।আজ মুনাই সাইকিয়াট্রিস্ট এর কাছে শরীর ,মন পরীক্ষা করতে যাবে।শ্যাম তো নেই।মুনাই কে ভালো হতেই হবে।।