Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » কল্যাণী || Jibanananda Das » Page 9

কল্যাণী || Jibanananda Das

কল্যাণী ঘুমিয়ে পড়েছে; ড্রাইভার ঘুমিয়েছে।

ভোরবেলা কল্যাণী বোর্ডিঙে পৌঁছে যেন নতুন জীবন পেল।

থিয়েটারের শেষ গ্লানি ঝেড়ে ফেলে, ভদ্রসদ্র মেয়েদের মধ্যে ঢের ভদ্র হয়ে, মেট্রনের সুনজরের শুভ্রতা বোধ করে, ঘাড় গুঁজে হিস্ট্রির নোট টুকতে টুকতে।

পরদিন রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর জানালার ভিতর দিয়ে গাছপালা আকাশের দিকে তাকিয়ে কল্যাণীর মনে হ’ল ছোড়দার সঙ্গে থিয়েটারে গেলে এবার আর সে নার্ভাস হয়ে পড়বে না—ভালো করে দেখতে শুনতে পারবে সব। ফূর্তি করতে পারবে—গভীর রাতে ট্যাক্সিতে কলকাতার পথেঘাটে এবার আর সে একটুও সঙ্কোচ বোধ করবে না— গঙ্গা দেখেছি, কেমন ভড়কে ভয় পেয়ে গেছল সে কাল—নদীটা কেমন সুন্দর ছিল অথচ আজ যেন সে রূপ চুপে চুপে ধরা পড়ছে সব—সেই তিনটে আন্দাজ রাত—মোটর—

—ছোড়দা—মিষ্টি বাতাস—গঙ্গাটা—

কিন্তু এ সবের ভিতর এমন বেকুবি করেছিল কেন সে কাল? বেকুব আর সে হবে না।

মিনু এল।

বললে—কি ভাবছিস?

— পড়ছি

—কি পড়ছিস?

—লজিক

—হাতী! আধঘণ্টা ধরে জানালার ভিতর দিয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে–

মিনু থামল।

মেট্রন একটু দেখেশুনে ঘুরে গেল।

কল্যাণী বললে—মিনু বোস—বসল মেয়েটি।

কল্যাণী বললে—একটা কথা কারুর কাছে বলবি না মিনু?

—কি কথা?

—বল বলবি না।

মিনু কৌতুহলাক্রান্ত হয়ে বললে—না।

—কাল থিয়েটারে গিয়েছিলাম

—সত্যি?

কল্যাণী ঘাড় নেড়ে বললে—হ্যাঁ

—কার সঙ্গে!

—ছোড়দার সঙ্গে।

—কোন থিয়েটারে?

—নাম মনে নেই

—বেশ তো।

মিনু বললে—কেমন লাগল?

–কি যেন

–কি যেন কি আবার?

মিনু বললে—কোথায় বসেছিলি?

—বক্সে

–ঈস!

—আমি আগেও থিয়েটার দেখেছি। দেখা কি খারাপ?

—জানি না।

—তুই দেখিসনি?.

—না

—কোনোদিনও না?

মিনু মাথা নেড়ে বললে—না; দেখবও না।

—কেন?

মিনু বললে কি দেখে ছাই—আমার কোনো টেস্ট নেই

কল্যাণী বললে—আমারও বোধ হয় টেস্ট নেই

—তা হ’লে গিয়েছিলে কেন?

কল্যাণী বললে—তাই তো।

—আর যাবে?

—কি করতে যাব আর?

তোমার দাদাও তো বড় মজার লোক

—কেন?

ছোট বোনকে থিয়েটারে নিয়ে যায়? কল্যাণী একটু আঘাত পেল—

বললে—ছোড়দার ওদিকে বড্ড ঝোঁক কিনা—

বলতে বলতে থেমে গেল সে, থিয়েটারের দিকে ঝোঁক? কেমন শোনায়? কল্যাণী লজ্জিত হয়ে চুপ করে রইল।

দু’জনের মধ্যে কেমন একটা অস্বস্তিকর নিস্তব্ধতা।

মিনু বললে—আমি যাই

—কেন?

–পড় তুমি।

—ছাই পড়ছি।

কল্যাণী বললে—এই দেখ বই বন্ধ করলাম।

লজিকের বইটা কল্যাণী বুজে সরিয়ে রেখে দিল—

মিনু বললে—পড়বে না আজ আর?

—না

— তুমি?

—আমিও না।

—আমার চোখ কড় কড় করে বেশি পড়লে

মিনু বললে—কিন্তু চশমা নিয়ে তোমাকে বেশ মানিয়েছে—

—সত্যি?

—বেশ সুন্দর দেখায়

—সত্যি মিনু?

মিনু বললে—এই টিকলো নাক কার কাছ থেকে পেয়েছিস—তোর মার কাছ থেকে?

—বাবার কাছ থেকে

—এই চোখ?

—বাবার কাছ থেকে

—এমন সুন্দর থুৎনি?

—বাবার কাছ থেকে

মিনু ক্লান্ত হয়ে উঠছিল—

এ সব প্রশ্নের গুখখুরি বুঝলে সে। কাজেই কথা আর নয়—কল্যাণীর মুখের অনুপম রূপসৃষ্টির দিকে তাকিয়েই রইল সে।

কল্যাণীর নিঃশ্বাসের থেকেও কেমন যেন মিষ্টি ঘ্রাণ আসছে।

মিনু বললে—কি খেয়েছিস রে?

—কখন?

মুখের থেকে তোর কিসের গন্ধ আসে? -জানি না তো

জানিস না? সব সময়ই আমি পাই

কল্যাণী বললে—কিসের গন্ধ রে মিনু?

মিনু কোনো জবাব দিল না; সৌন্দর্যের রসের থেকেই এ যেন এক ঘ্রাণ; পদ্মের রক্তমাংসের থেকে যেমন গভীর বিলাসের গন্ধ আসে তেমন, পদ্ম কি কিছু খায়?

—একটা চুমে। খাই কল্যাণী?

চুমো সে খেল—

এমন পরিতৃপ্তি মিনু কোনো দিনও পায়নি যেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11 12 13 14 15 16 17 18 19 20

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress