কর্তব্য
ক্রিং ক্রিং–
হ্যালো কে বলছেন?
তুমি কি সুমন ?
হ্যাঁ সুমন ,তবে আপনি কে চিনতে পারলাম না তো!
তা চিনতে পারবে কি করে…সেই অষ্ট মঙ্গলায় আধা ঘন্টার জন্য এসেছিলে জামাই।
শ্বাশুড়ির গলা চিনবে কি করে।জানি তুমি খুব ব্যস্ত।ওদিকে মেয়ে ও ব্যস্ত।আসা তো দূরের কথা একটা ফোন করবার সময় পায় না।আমরা বুড়ো বুড়ি তোমাদের আসার অপেক্ষায় আছি ।”সময় নিয়ে এসো একদিন”।
আসলে মা আপনার মেয়ে শ্বশুরবাড়িতে এতটাই ব্যস্ত আমাকেও সময় দেই না।দেখুন কার ঘরে সেবা করছে।
আর জানেন এখনতো আপনার মেয়ে না থাকলে বাড়ির সবাই চোখে সর্ষে ফুল দেখে।
সূর্য ওঠার পর থেকে দু হাত পা সমান ভাবে চলে।
এই সুমন ঘুমাও নি ..এত রাতে কার সাথে কথা বলছ?
সোমা…ফোনটা ধরো ..তোমার মা করেছেন।
আচ্ছা তাই নাকি..দাও দাও।
মা কেমন আছো?আমি সময় পাই না একদম।শ্বশুরের শ্বাসকষ্ট ,শ্বাশুড়ির পা ভাঙা,বড় জায়ের ছেলে মাধ্যমিক দেবে।তাই দিদি ছেলের পড়াশুনা নিয়ে সারাক্ষণ ব্যস্ত থাকে।কোনদিকে বলো আমি সামলাই।
সামনেই ভাসুরের ছেলের পরীক্ষা।শেষ হলেই আমি বাড়ি যাব ঠিক করেছি…
ঠিক আছে রে সোনামা…আমি তোর বাপি..দাদা বৌদি…সবাই ভাল আছি
তবে তুই তো আমার একমাত্র মেয়ে..ভিডিও তে দেখি..তাতে স্বাদ মেটে না।
তাছাড়া শ্বশুরবাড়িতে সবাই যে তোর প্রশংসায় পঞ্চমুখ…এতে আমি ও তোর বাপি খুব খুব আনন্দ পেলাম।
ভাবছিলাম তোর দাদাকে বলি ..যা বোনটাকে একটু দেখে আয়।তারপর ভাবি তোর দাদাতো অফিস ..সংসার..বাচ্চাদের নিয়ে ব্যস্ত।তারপর প্রতি শনি ও রবিবার তো ছুটি থাকে..ঐ দুদিন তো দাদা ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকে।আর আমাদের কথা বাদ দে..শিলিগুড়ি থেকে কোলকাতা অসম্ভব।
সেই অষ্ট মঙ্গলায় এলি..তারপর দার্জিলিং বেড়াতে চলে গেলি।
আসব মা..আমিও তোমাদের অভাব অনুভব করি।
তা জামাইকে বলিস না একাই আসতে।
আচ্ছা মা ভোরে উঠতে হবে।ভাসুরের জন্য রান্না করতে হবে।
কেন রে ঐ সময় তোর জায়ের ছেলে নিশ্চয় ঘুমা….য়!!তাহলে তোর জা….!!
নিজের শরীরের দিকে লক্ষ্য রাখিস।
আমি মা তো সন্তানের জন্য কষ্ট হয়।পারলে আসিস।
এই সুমন শুনছ..মা তোমাকে দেখতে চাইছেন..আমিতো তোমাদের সংসার দেখি..তুমি জামাই হয়ে একটু কর্তব্য করো।
হ্যাঁ সোমা তোমার মা কি করুণ সুরে বললেন “সময় নিয়ে এসো একদিন”।
মাকে বলবে এবার জামাই যাবে টানা সাত দিন থাকবে।
গুবলুর মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষ হবার পরদিন দেখি ভাসুররা দশদিনের জন্য পুরী বেড়াতে গেলেন।
এদিকে আমরাও ঠিক করেছি অফিসের কাজে সুমন শিলিগুড়ি যাবে..আমিও টাটা সুমো করে বাপের বাড়ি যাব।এটা জা অবশ্যই জানত। টিকিট নাকি আগেই ওদের কাটা ছিল।
শুধু যাবার সময় বলে গেলেন ভাসুর কিছু অসুবিধা হলে বলতে দ্বিধা করো না।
ছলছল চোখে জানাই আচ্ছা।প্রায় নয় মাস হলো বাড়ি যাই নি।বর ও দুদিন বাদে শিলিগুড়ি যায়।তবে শ্বশুরবাড়ি গিয়ে জামাই আদর পায়নি..কারণ মা আমাদের যাবার আনন্দে দুদিন ধরে প্রচুর রান্না করেছিলেন..তারপর যখন শুনলেন সোমা আসছে না..জামাই হয়তো যাবে।খুব কেঁদেছিল মা ..হয়ত কষ্টটা নিতে পারে নি..দীর্ঘ নয় মাস মেয়ের স্পর্শ পান নি।মা চলে গেলেন।সোমার বাপি ও পাথর হয়ে যান..এখন বাপি নাকি কাউকে চিনতে ও পারেনা।জামাই ও দাদা বাবাকে নিয়ে অনেক ডাক্তারের পরামর্শ নিয়েছেন..চিকিৎসা ও চলছে..কিন্তু আমি এই অসহায় বুড়ো বুড়ি ফেলে বাপিকে ঠিক করতে যাই কি করে!!
ভাসুর পুরী যাবার সময় বলেছিলেন কিছু হলে বলতে দ্বিধা করো না।কিন্তু সেটা নিজের বাবা মার জন্য।আমার মা হঠাৎ চলে গেলেন ও বাপি ও অসুস্থ..তার জন্য ওনারা পুরী থেকে ফিরতে পারেন না।এখনো আসতে পাঁচদিন বাকি।ভাসুর বললেন সোমা একটু কষ্ট করে কাটিয়ে দাও।তুমি তো শ্রাদ্ধানুষ্ঠানে যেতে পারবে।এখন তোমার বাপি হয়ত অসুস্থ।তুমি তো ডাক্তার নও।উনি ভালো হবার হলে এমনি হবেন।
তবে বলুন শ্বশুরবাড়িতে ভায়ে ভায়ের স্বার্থপরতা জন্য বাইরের মেয়েরা খারাপ হয়ে যেতেই পারে।
মা অনেকবার ইঙ্গিত দিয়েছিল ..সব দিকে কর্তব্য পালন করার সাথে সাথে নিজের দিকে ও লক্ষ্য রাখিস।