শেষ অধ্যায় (পর্ব – ৩)
ক্রমশ অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে কুরুক্ষেত্র প্রান্তরে, অসংখ্য মৃতদেহ ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে চতুর্দিকে। মাংসাশী প্রাণীরা ঘুরছে খাদ্য অন্বেষণে, দাহকার্যের জন্য গণচিতার আয়োজনে ব্যস্ত হরিশ্চন্দ্ররা। অন্ধকারের বুকে চিতার আগুন বন্য পশুদের হুঙ্কার আহত সৈনিকদের আর্তনাদ পরিজন হারানোদের বিলাপ সব মিলিয়ে এক অতি ভয়াবহ পরিবেশের মাঝে কর্ণের প্রাণহীন দেহ শায়িত, একদিকে অবশিষ্ট কৌরবরা অন্যদিকে পঞ্চপাণ্ডব, কর্ণের শেষকৃত্যের প্রস্তুতি চলছে,আর একটু পরেই তার প্রাণহীন শরীর চিতার আগুনে পুড়ে পঞ্চভূতে বিলিন হয়ে যাবে, ঠিক তখনই এক অশ্বারোহী রক্ষী এসে যুধিষ্ঠিরকে প্রণাম করে জানালো রাজমাতা কুন্তি আসছেন রণক্ষেত্রে। যুধিষ্ঠির অবাক হলেন ভীষ্ম আহত হয়ে শরশর্য্যা নিলে কৌরব ও পাণ্ডবদের গৃহবধূরা রণক্ষেত্রে এসেছিলেন, অভিমণ্যুর মৃত্যুর পরও পাণ্ডব কূলবধূরা এসেছিলেন যুদ্ধক্ষেত্রে, কিন্তু আজ কুন্তির আগমণের হেতু তিনি বুঝতে পারছেন না। শ্রীকৃষ্ণ অগ্রবর্তী হলেন রাজকীয় শিবিকা থেকে কুন্তি নেমে এলে সবাই বিস্মিত হয়ে দেখলেন, কুন্তির আলুলায়িত কেশ অসংবৃত্ত বেশবাস দুচোখে অশ্রু সারা শরীরে শোকের চিহ্ন স্পষ্ট, যুধিষ্ঠির জিজ্ঞেস করতে যাবেন কুন্তির এমন আচরণের কারণ কি? ততক্ষণে কুন্তি কর্ণের প্রাণহীন শরীরকে তুলে নিয়েছেন নিজের কোলে, শ্রীকৃষ্ণের দিকে তাকিয়ে তিনি বললেন মাধব কর্ণের এই জীবনদান কি সত্যিই প্রয়োজন ছিল? তুমি তো রক্ষা করতে পারতে কর্ণকে! শেষ পর্যন্ত আমাকেও পুত্রহীন হতে হলো। অর্জুন কিছু বলতে চাইছিলেন শ্রীকৃষ্ণ তাকে থামিয়ে কুন্তিকে বললেন, কর্ণের মতো এক মহান যোদ্ধা ও দানবীর মানুষের এহেন পরিনতি আমার কাম্য ছিলো না এ সম্পূর্ণ নিয়তি নির্ধারিত একে রোধ করার সামর্থ আমার নেই। কর্ণের ভাগ্যই তার এই পরিনতির জন্য দায়ী। সঙ্গদোষে দুষ্ট কর্ণের মৃত্যু অবসম্ভাবী ছিলো। কর্ণকে স্পর্শ করে কুন্তি হাহাকার করে উঠলেন, পাণ্ডব ও কৌরব পক্ষিয় সকলেই বিস্ময়াবিষ্ট এ কোন নাট্যরূপ রচিত হতে চলেছে? ঠিক তখনই সেখানে উপস্থিত হলেন অধিরথ রাধা এবং কর্ণের দুই স্ত্রী ভ্রুশালী ও সুপ্রিয়া