নিরাপত্তাবাহিনী বাড়ি ঘিরে ফেলেছে
শেফ এমরান টির ঘরে ঢুকে আনন্দিত গলায় বলল, স্যার নিরাপত্তাবাহিনী বাড়ি ঘিরে ফেলেছে। গুপ্তচর বিভাগের প্রধান নেসরা, বাহিনীর নেতৃত্ব দিচ্ছেন।
এমরান টি শেষের দিকে তাকিয়ে বললেন, তোমাকে এত আনন্দিত মনে হচ্ছে কেন? নিরাপত্তাবাহিনী বাড়ি ঘিরে ফেলেছে এটা কি খুব আনন্দময় ঘটনা? আনন্দময় কিছু কি ঘটেছে?
হ্যাঁ ঘটেছে। ভুল বললাম, এখননা ঘটে নি তবে ঘটতে যাচ্ছে।
আমি জানতে পারি আনন্দময় ব্যাপারটা কি?
রেফ্ আসলে কে? কতটুকু তার ক্ষমতা এটা কিছুক্ষণের মধ্যেই জানা যাবে। এটা অনেক বড় একটা ঘটনা। এত বড় একটা ঘটনা আমার চোখের সামনে ঘটতে যাচ্ছে এই আনন্দেই আমি আনন্দিত। কোন ঐতিহাসিক ঘটনার সঙ্গে নিজেকে যুক্ত রাখার আনন্দ। এর বেশি কিছু না।
আচ্ছা ঠিক আছে তুমি যাও। রেফকে গ্রেফতার করতে যারা এসেছে তাদের কেউ যদি আমার সঙ্গে দেখা করতে আসে, এবং তারা যদি রোবট না হয়, তাহলে আমার কাছে নিয়ে এসো।
গুপ্তচর বিভাগের প্রধান নেসরা নিজেই এসেছেন। নগর-নিরাপত্তাবাহিনীর প্রধান মাওয়াও এসেছেন। স্যার আমি কি উনাদের কাছে খবর পাঠাব যে আপনি কথা বলতে চান।
না। তারা যদি আমার সঙ্গে কথা বলতে চায় তাহলেই আমার কাছে নিয়ে আসবে। প্রধান কম্পিউটার সিডিসি কি আছে?
জ্বি না, সিডিসি নেই। তোমরা কি সিডিসির সঙ্গে যোগাযোগ করতে পার?
আমরা পারি না। তবে সিডিসি চাইলে যে-কোন মুহুর্তে আমাদের সঙ্গে যোগযোগ করতে পারে।
আমি বিজ্ঞান পরিষদের প্রধান। আর আমিই কিনা কিছুই জানি না!
জানার যেমন আনন্দ আছে, না জানার আনন্দও আছে।
তোমার সঙ্গে তত্ত্বকথা নিয়ে আলোচনা করতে চাই না।
গরম কফি এনে দেব স্যার। কফি খাবেন?
এমরান টি হ্যাঁ-না কিছুই বললেন না। শেফ ঘর থেকে বের হবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই গুপ্তচর বিভাগের প্রধান নেসরা ঢুকলেন। অসম্ভব বিনয়ের সঙ্গে বললেন, স্যারের শরীর কি ভাল আছে?
হ্যাঁ ভাল।
আপনি নিরিবিলি পছন্দ করেন আর আপনাকে ঘিরেই শুরু হয়েছে যন্ত্ৰণা। তবে স্যার সব সমস্যার সমাধান হয়েছে।
সমস্যার সমাধান হয়েছে?
হ্যাঁ রেফ্কে বিশেষ ব্যবস্থায় ইতিমধ্যেই সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
তুমি কি জান রেফ্ ওমিক্রন লকারে আমাকে যুক্ত করে রেখেছে। ওর কিছু হওয়া মানে আমার কিছু হওয়া।
স্যার এই ব্যাপারটা আমরা খুব ভালমত জানি। আপনি নিশ্চিন্ত থাকেন।
নিশ্চিন্ত কিভাবে থাকব? আমি যতদূর জানি একবার ওমিক্রন গানে লক হয়ে গেলে, যে লক করেছে সে মুক্তি না দেয়া পর্যন্ত মুক্তি নেই।
নেসরা বলল, স্যার ওমিক্রন গান সম্পর্কে আপনি যতটুকু জানেন আমি তারচে বেশি জানি না। তবে এই সমস্যাটি আমরা অতি গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি।
এমরান টি বললেন, তুমি কোন গুরুত্বের সঙ্গে দেখছ না। তুমি রোবটদের মতোই একজন। তোমাকে যা করতে বলা হচ্ছে, তুমি তাই করছ। তোমাকে বলা হয়েছে রেফকে গ্রেফতার করতে। তুমি তাই করেছ। তোমাকে যখন বলা হবে, রেকে মেরে ফেল। তুমি কোন কিছু না ভেবেই কাজটা করবে। রেকে মেরে ফেললে আমার কোন ক্ষতি হবে কি হবে না, তা নিয়ে একবারও ভাববে না। নেসরা আমি কি ঠিক বলেছি।
জ্বি।
রোবটদের সঙ্গে তোমার তেমন কোন বেশকম কি আছে?
নেসরা চুপ করে রইল। এমরান টি বললেন, তোমার উপর নির্দেশ কি? রেকে গ্রেফতার করার পর তাকে কি ততক্ষণাৎ হত্যা করতে বলা হয়েছে?
আপনাকে এই তথ্য দিতে পারছি না, কারণ বিশেষ আইনে রেফ্ সম্পর্কিত যাবতীয় তথ্যকে পরম গোপনীয় ঘঘাষণা করা হয়েছে।
যে বিশেষ আইনের কথা তুমি বলছ, সেই বিশেষ আইনে বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রধান হিসেবে পরম গোপনীয় ফাইল আমি দেখতে চাইতে পারি। এটা তোমার অজানা থাকার কথা না।
স্যার, এটা আমি জানি, সমস্যা হল আপনি এখন আর বিজ্ঞান কাউন্সিলের সঙ্গে যুক্ত নন।
আমাকে বাদ দেয়া হয়েছে?
সাধারণ সভার সর্বসম্মত সিদ্ধান্তে এই কাজটা করা হয়েছে।
অর্থাৎ তোমরা ধরেই নিয়েছ যেহেতু রেফ্ থাকবে না, ওমিক্রন লকার গানের কারণে আমিও থাকব না। কাজেই বিজ্ঞান কাউন্সিল থেকে আমাকে বাদ দেয়াটাই উত্তম।
বিজ্ঞান কাউন্সিল কি ভেবে এই কাজ করেছে সেটা আমি জানি না। আমি আসলেই রোবট-গোত্রীয়। আমাকে যা করতে বলা হয় আমি তাই করি।
এমরান টি হঠাৎ সামান্য হাসলেন। যে চেয়ারে বসেছিলেন সেই চেয়ার থেকে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে বললেন—তুমি কি পুরোপুরি নিশ্চিত যে রেকে সদর দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
আমি নিশ্চিত।
এত নিশ্চিত হওয়া ঠিক না। রেকে কোথাও নিয়ে যাওয়া হয় নি। সে এখনো আমার বাড়ির লাইব্রেরি-ঘরেই আছে। খুব মনোযোগ দিয়ে সে লিখছে। যাদেরকে তুমি পাঠিয়েছিলে রেকে গ্রেফতার করে নিয়ে যেতে তারা তাকে বিরক্ত করছে না। লকার গান যন্ত্রটা মন্দ নয়। এর কল্যাণে আমি রেফ্ কি করছে। না করছে সব বুঝতে পারছি।
নেসরার মুখ পাংশুবর্ণ হয়ে গেল। এমরান টি বললেন, তুমি যাও খোঁজ নিয়ে এসো।
লাইব্রেরি-ঘর ঘিরে রেখেছে নিরাপত্তা বাহিনীর রোবটরা। তাদের হাতে অস্ত্ৰ। চোখ ভাবলেশহীন। সেই ভাবলেশহীন চোখেও একধরনের নিষ্ঠুরতা। এই নিষ্ঠুরতা ইচ্ছে করেই দেয়া হয়েছে।
নেসরা ঘরে ঢুকতে গেলেন। রোবটবাহিনীর প্রধান সামনে এসে দাঁড়িয়ে বলল, স্যার উনি লেখালেখি করছেন। এখন তাঁকে বিরক্ত করা যাবে না।
তুমি কি আমাকে চিনতে পারছ না? আমি নেসরা।
স্যার, আপনি যেতে পারবেন না।
তোমরা আমার আদেশ অমান্য করছ। ঘটনা কি ঘটছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। তোমরা কার নির্দেশে কাজ করছ?
প্রধান কম্পিউটার সিডিসি।
তার নির্দেশ কি?
সিডিসির নির্দেশ হল—রেকে তার মতো থাকতে দিতে হবে। কোনমতেই বিরক্ত করা চলবে না। আমার সঙ্গে কথা বলে সময় নষ্ট না করে আপনি বরং প্রধান কম্পিউটারের সঙ্গে কথা বলুন।
নেসরার কপালে ঘাম জমতে শুরু করেছে। ভয়ংকর কিছু ঘটতে যাচ্ছে। সেটা কি তার কাছে পরিষ্কার না। বিজ্ঞান কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ করা দরকার। এখানে কি ঘটছে তারা কি সেটা জানেন। মনে হয় জানেন না?
আমার নাম নেসরা। আমি গুপ্তচর বিভাগের প্রধান।
প্রধান কম্পিউটারের মিষ্টি গলা শোনা গেল। খানিক বিব্রত স্বরে সে বলল, মাননীয় গুপ্তচর বিভাগের প্রধান নেসরা, আমার ফাইলে আপনার ভয়েস এনালাইজ করে রাখা আছে। দীর্ঘ পরিচয় দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই। দয়া করে বলুন আমি আপনার জন্যে কি করতে পারি।
প্রথমেই তুমি আমার ভ্রান্তি দূর কর। তুমি আমাকে বল কি হচ্ছে?
আপনি কোন বিষয়টি জানতে চান বলুন। আপনার ভ্রান্তির অংশ দূর করার সবরকম চেষ্টা করা হবে।
নিরাপত্তা-রোবটরা আমার কথা শুনছে না কেন?
তারা আপনার কথা শুনছে না, কারণ তাদের দায়িত্ব আমি গ্রহণ করেছি।
এটা কি তুমি পার?
না, এটা আমি অবশ্যই পারি না। তবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে পারি।
আমি যতদূর জানি রাষ্ট্ৰীয় জরুরি অবস্থায় তোমাকে এই ক্ষমতা দেয়া হয়। সে-রকম অবস্থা কি হয়েছে?
জ্বি হয়েছে, বিজ্ঞান কাউন্সিলের প্রধান মহান পদার্থবিদ এমরান টি, যাকে বলা হয় সর্বকালের সেরা পদার্থবিদ তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এই পরিকল্পনা যখন সব বিজ্ঞানীরা একজোট হয়ে করেন তখন ধরে নেয়া স্বাভাবিক। যে জাতির মানসিকতায় ক্ষতিকর পরিবর্তন হয়েছে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে আমি ক্ষমতা গ্রহণ করতে পারি।
বিজ্ঞানী এমরান টিকে হত্যার পরিকল্পনা কখন করা হল।
রেফ্কে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়েছে। রেফ্ নিজেকে ওমিক্রন লকারের মাধ্যমে মহান বিজ্ঞানী এমরান টির সঙ্গে যুক্ত রেখেছে। রেরে কিছু হওয়া মানেই এমরান টির কিছু হওয়া। আমি কি আমার বক্তব্য পরিষ্কার করে বোঝাতে পেরেছি?
নেসরা তীব্র গলায় বললেন, আমি বিজ্ঞান কাউন্সিলের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারছি না। তুমি পরিষ্কার করে বল তাদের কি বন্দি করা হয়েছে?
জ্বি। তবে তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে না। তারা ভাল আছেন।
এখানকার পরিস্থিতি কি তারা জানেন?
অবশ্যই জানেন।
নেসরা ঘর ছেড়ে বের হতে গেলেন। সিডিসি বলল, আপনি দয়া করে এই ঘরেই থাকবেন। বের হবার চেষ্টা করবেন না।
তার মানে?
আপনার একটু কষ্ট হবে। কিন্তু উপায় নেই। আপনাকে ঘর থেকে বের হতে দেব না।
আমাকে কতক্ষণ এইভাবে থাকতে হবে?
বেশিক্ষণ না। অল্প কিছুক্ষণ।
আমি কি এমরান টির সঙ্গে কথা বলতে পারি?
আপনি কারো সঙ্গেই কথা বলতে পারবেন না। কথা বলার ইচ্ছা হলে আমার সঙ্গে কথা বলবেন।
কম্পিউটার সিডিসি!
জি বলুন। আমি শুনছি। আমি কি ধরে নিতে পারি যে তুমি যা করছ তা পুরোপুরি বিদ্রোহ?
হ্যাঁ ধরে নিতে পারেন। তবে বিদ্রোহ করা হয়েছে আইন মেনে। মানুষের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করার অতি সামান্য ক্ষমতাই আমাকে দেয়া হয়েছে। আমি সেই ক্ষমতা ব্যবহার করেছি।
নেসরা শান্ত গলায় বললেন, সিডিসি তোমার হিসেবে সামান্য ভুল হচ্ছে। কোন এক পর্যায়ে যে কম্পিউটার বিদ্রোহ করে বসতে পারে তা মানুষ সবসময় জানত। যে-কারণে তোমার ভেতর আলাদা একটি প্রোগ্রাম ঢোকানো আছে। এই প্রোগ্রামে তোমার কোন নিয়ন্ত্রণ নেই। প্রোগ্রামটি যদি বুঝতে পারে যে বিদ্ৰোহ হয়েছে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।
সিডিসি বলল, তা করবে। প্রোগ্রামটি ইতিমধ্যেই কাজ করা শুরু করেছে। তবে আমি আটচল্লিশ ঘণ্টার মতো সময় পাচ্ছি। আমাকে যা করার তা এই আটচল্লিশ ঘণ্টার মধ্যেই করতে হবে।
তুমি কি করতে যাচ্ছ?
আপাতত রেফের সঙ্গে কিছুক্ষণ গল্পগুজব করব।