Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

অস্বাভাবিক গরম পড়েছে

আজ অস্বাভাবিক গরম পড়েছে। আকাশে মেঘের ছিটাফেঁটাও নেই। বাতাস নেই, গাছের পাতা নড়ছে না। মাটির নিচ থেকে গরম ভাপ বের হচ্ছে। আকাশে অনেক উঁচুতে চিল উড়ছে। এটা বৃষ্টির লক্ষণ। সন্ধ্যার দিকে হয়ত-বা বৃষ্টি নামবে। ইয়াসিন সাহেব বাড়ির দক্ষিণ দিকে কাঁঠাল গাছের নিচে পাটি পেতে বসেছেন। পাতলা পাঞ্জাবি পরেছেন। পাঞ্জাবি ঘামে ভিজে যাচ্ছে। তার সামনে পানদান ভর্তি পান, কাঁচা সুপারি এবং জর্দা। কাঁচা সুপারিটায় ভাল ধাক। তার মাথা সামান্য ঝিমঝিম করছে।

তার খাস লোক ফজলু এসে নলওয়ালা হুব্ধা তাঁর সামনে রেখে হাতে নল। ধরিয়ে দিল। ফজলু হুক্কার সঙ্গে বড় একটা তালপাখা এনেছে। ইয়াসিন সাহেব যতক্ষণ গাছের নিচে বসে থাকবেন ততক্ষণই সে পাখার বাতাস দেবে। এটা বরাবরের নিয়ম। আজ নিয়মের ব্যতিক্রম হল। ইয়াসিন সাহেব হাতের ইশারায় ফজলুকে চলে যেতে বললেন। ইয়াসিন সাহেব শেফাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। তাঁদের দুজনের কথাবার্তার মধ্যে তৃতীয় কোন ব্যক্তির থাকার প্রশ্নই ওঠে না। শেফার মা-ও না।

ইয়াসিন সাহেব নল টানছেন। গুড়গুড় শব্দ হচ্ছে। ঝাঁঝাঁ দুপুরে হুক্কার শব্দ তাঁর কাছে মধুর লাগে। আজ লাগছে না। তিনি মনে মনে কি বলবেন তা গুছিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছেন। নিজের উপর তাঁর খানিকটা রাগও লাগছে। নিজের মেয়ের সঙ্গে কথা বলবেন সেই কথা গুছিয়ে নেবার দরকার কি? ইয়াসিন সাহেব লক্ষ করলেন শেফা আসছে। মেয়েটাকে দেখে মনে হচ্ছে না সে ভয় পাচ্ছে। অথচ তার ভয় পাওয়া উচিত। ইয়াসিন সাহেব আরেক খিলি পান মুখে দিলেন। চুন মনে হয় বেশি হয়েছে। মুখ জ্বলছে।

শেফা সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আজ মেয়েটাকে অন্যদিনের চেয়েও সুন্দর লাগছে। ঝলমল করছে। অতিরিক্ত রূপবতী কন্যাও অভিশাপের মতো। নানান যন্ত্রণা রূপবতীদের নিয়েই হয়। ইয়াসিন সাহেব ইশারায় মেয়েকে বসতে বললেন। শেফা সহজ ভঙ্গিতে হাঁটুমুড়ে বসল। তার চোখ-মুখ স্বাভাবিক। যেন সে জানেই না কি জন্যে তাকে ডাকা হয়েছে।

ইয়াসিন সাহেব এখনো ঠিক করতে পারছেন না, কথা কিভাবে শুরু করবেন। মূল প্রসঙ্গে চলে যাবেন, নাকি মূল প্রসঙ্গে যাবার আগে টুকটাক কথা বলবেন। পরীক্ষার পড়া কেমন হচ্ছে এইসব।

বাপজান আমারে ডাকছেন?

ইয়াসিন সাহেব হুক্কার নল নামিয়ে সরাসরি মূল প্রসঙ্গে গেলেন। কঠিন গলায় বললেন, রফিক কোথায়?

শেফা বলল, জানি না।

তোর জানা নাই?

না।

মাটির দিকে তাকায়ে কথা বলবি না। আমার চোখের দিকে তাকায়ে কথা বল।

শেফা বাবার চোখের দিকে তাকাল। ইয়াসিন সাহেব বিস্ময়ের সঙ্গে লক্ষ করলেন যে শেফার চোখে কোন ভয় নেই।

রফিক কোথায় তুই জানি না?

বাপজান একটা কথা আমি কতবার বলব। উনি কোথায় আমি জানি না।

কাউকে কিছু না বলে সে চলে গেল কেন?

আমি তাকে চলে যেতে বলেছি।

কখন বলেছিস?

গতকাল রাত তিনটার দিকে।

তাকে কি বলেছিস।

বলেছি আপনার জীবনের মায়া যদি থাকে আপনি পালায়ে যান।

তোর ধারণা সে এখানে থাকলে তার জীবনের ভয় ছিল?

হ্যাঁ।

আমি তারে মারতাম?

হুঁ।

পালায়ে সে যাবে কোথায়। আজ সন্ধ্যার মধ্যে তারে ধরার ব্যবস্থা করব।

আচ্ছা করেন। আর কিছু বলবেন?

না।

আমি চলে যাব?

যা।

শেফা শান্ত গলায় বলল, ফজলুকে পাঠায়ে দেই। আপনে ঘামতেছেন। আপনেরে বাতাস করুক।

ইয়াসিন সাহেব মেয়ের সাহস দেখে আবারো চমৎকৃত হলেন। তিনি নিজের মনে হুক্কা টানছেন। আগুন অনেক আগেই নিভে গেছে। তামাক আসছে না। তিনি তা ধরতে পারছেন না। নল টেনেই যাচ্ছেন।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *