Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

বিজ্ঞান কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশন

বিজ্ঞান কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশন বসেছে। কাউন্সিলপ্রধান মহান বিজ্ঞানী এমরান টি। যৌবনে তিনি পদার্থবিদ্যার অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাজ করেছেন। কৃষ্ণ গহ্বর নিয়ে তাঁর কাজ তুলনাহীন। হঠাৎ গবেষণার ক্ষেত্র পরিবর্তন করে টাইম প্যারাডক্স নিয়ে মেতে ওঠেন। জার্নালে শতাব্দীর সবচে গুরুত্বপূর্ণ বিবেচিত আবিষ্কার হিসেবে এই বিষয়ে দুটি গবেষণা প্রকাশিতও করেন। তারপর হঠাৎ থেমে যান। তাঁর বাড়ি থেকে বিজ্ঞানবিষয়ক সব বইপত্র সরিয়ে ফেলেন। তাঁর সম্পর্কে প্রচলিত গুজব হচ্ছে তিনি এখন ছড়া রচনার ব্যাপারে আগ্রহবোধ করছেন। খাতার পর পাতা ছড়া লিখে ভরিয়ে ফেলছেন। তাঁর বয়স একশর উপরে কিন্তু কথাবার্তা চালচলনে তারুণ্য ঝলমল করছে। আজ তিনি মেরুন রঙের কোট পরেছেন। কোটের সোনালি বোতাম চকচক করছে। এই সময়ের ফ্যাশনে মাথার চুলের সঙ্গে বড় রুমাল আটকে দিয়েছেন। বিশেষ ধরনের এই রুমাল বাতাস ছাড়াই সারাক্ষণ কাঁপতে থাকে। এমরান টি যে রুমালটি পরেছেন তার রং ঘন সবুজ। এই রঙের রুমাল অল্পবয়েসী কিশোরীরা মাথায় দেয়। উদ্ভট যে-কোন কিছু করার ব্যাপারে এমরান টির সীমাহীন আগ্রহ। বিজ্ঞান কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশন উদ্ভট কোন কর্মকাণ্ডের জন্যে উপযুক্ত জায়গা না। কিন্তু মহান বিজ্ঞানী এমরান টি তার পাগলামি দেখানোর জন্যে বিশেষ অধিবেশনগুলিই বেছে নেন। বিজ্ঞানীরা বিরক্ত হন। এমরান টি মানুষের বিরক্ত মুখ দেখতে পছন্দ করেন।

বিশেষ অধিবেশনে কাউন্সিলের সকল সদস্য বিজ্ঞানীদের উপস্থিত থাকতে বলা হয়। যারা অসুস্থতার কারণে উপস্থিত হতে পারেন না তাদের প্রতিনিধি হিসেবে তাদের মস্তিষ্কের সঙ্গে ইন্টারফেসের মাধ্যমে সরাসরি যুক্ত কম্পিউটার অংশগ্রহণ করে। মানুষ-বিজ্ঞানী ছাড়াও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটারদের দুজন প্রতিনিধি থাকে। তাদের কোন ভোটাধিকার থাকে না। পৃথিবী নিয়ন্ত্রক মূল কম্পিউটার সিডিসি থাকে। সিডিসির ভোটাধিকার আছে। ক্ষমতার দিক দিয়ে এমরান টির পরের স্থানটিই সিডিসির। তবে বিজ্ঞান কাউন্সিলের নেয়া কোন সিদ্ধান্তে ভেটো প্রয়োগের ক্ষমতা সিডিসির নেই।

অধিবেশন কক্ষে নীল আলো জ্বলছে। নীল আলো মুছে গিয়ে সবুজ আলো জ্বলে উঠলেই অধিবেশন শুরু হবে। নীল আলো হল প্রস্তুতিমূলক আলো। বিজ্ঞানীরা তাদের কাগজপত্র গুছিয়ে নেবেন। আজকের আলোচনার এজেন্ডাগুলি দেখবেন। আলোচনায় অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি ভালমত জানার জন্যে সিডিসির সাহায্য চাইবেন।

আজকের আলোচ্য বিষয় একটাই রেফ নামক মানুষটির বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ। বিশেষ অধিবেশন কখনোই দীর্ঘস্থায়ী হয় না। সিদ্ধান্ত গ্রহণ-বিষয়ক অধিবেশনে সময় খুব কম লাগে। সিদ্ধান্ত গ্রহণের দায়িত্ব সিডিসির উপর দিয়ে দেয়া হয়। মানুষ অতি সাধারণ সিদ্ধান্তও চট করে নিতে পারে না। কম্পিউটার পারে।

এমরান টি তার মাথার সবুজ রুমাল নিয়ে বিব্রত হয়ে পড়েছেন বলে মনে হচ্ছে। তিনি টুপিটা একবার এদিকে পরছেন আরেকবার অন্যদিকে পরছেন।

এমরান টির পাশের চেয়ারে সিডিসি বসে আছে। সিডিসিকে দেখে বোঝার কোন উপায় নেই যে সে মানব সম্প্রদায়ের কেউ না। গত একশ বছরে রোবট প্রযুক্তির সীমাহীন উন্নতি হয়েছে। সিডিসি দশম ধারার রোবটের মাধ্যমে আলোচনায় অংশ নিচ্ছে।

এল এফ সিরিজের সব রোবটই মানুষের মতো। ম্যাগনেটিক ফিল্ড ডিটেকটর ছাড়া এই সিরিজের রোবটদের মানুষের কাছ থেকে আলাদা করার কোন উপায় নেই। সিডিসি শান্ত ভঙ্গিতে বসে আছে। এমরান টির রুমাল নিয়ে বাড়াবাড়ির দৃশ্যটি মাঝেমধ্যে দেখছে। তখনই তার ভুরু কুঁচকে যাচ্ছে।

এমরান টি বললেন, সিডিসি আমার রুমালের রঙটা মনে হয় তোমার পছন্দ হচ্ছে না। তুমি যতবারই আমাকে দেখছ ততবারই ভুরু কুঁচকাচ্ছ।

সিডিসি বলল, আপনার রুমালের রং চমৎকার। যদিও এই রঙের রুমাল কিশোরীরা ব্যবহার করে, তাতে আমি আমার দিক থেকে কোন সমস্যা দেখি না।

তাহলে তুমি ভুরু কুঁচকাচ্ছ কেন?

অন্য বিজ্ঞানীদের প্রায় সবাই আপনার দিকে তাকিয়ে ভুরু কুঁচকাচ্ছেন। আমি তাদের অনুকরণ করছি। এর বেশি কিছু না।

তুমি অনুকরণ করছ কেন?

বাহ্যিক আচার-আচরণে মানুষকে অনুসরণ করার জন্যে একটি সফটওয়ার আমাদের মধ্যে আছে। মানুষের কাছাকাছি যেতে হলে তাকে অনুকরণ করতেই হবে।

খুব ভাল।

আপনি কি সফটওয়ারটি বিষয়ে জানতে চান?

না—অর্থহীন সফটওয়ার নিয়ে আমার আগ্রহ নেই। রুমালের রং কি সত্যি তোমার পছন্দ হয়েছে?

হ্যাঁ হয়েছে।

অন্যদের পছন্দ হচ্ছে না কেন?

আপনি কি সত্যি জানতে চান? জানতে চাইলে কারণগুলি বলতে পারি তবে আমার মনে হচ্ছে না কারণ জানার ব্যাপারে আপনি আগ্রহী।

তমি ঠিকই বলেছ আমি আগ্রহী না।

সিডিসি গলার স্বর নিচু করে বলল, মহামতি এমরান। আপনি কি কোন অজানা কারণে খুবই দুঃশ্চিন্তাগ্ৰস্ত?

আমি হাসছি, মাথার রুমাল নিয়ে খেলছি। তারপরেও তোমার কেন মনে হল আমি দুঃশ্চিন্তাগ্রস্থ?

আপনার হাসি-খুশির মধ্যে মেকি অংশ আছে বলেই বলছি। আপনি হা করে নিশ্বাস নিচ্ছেন। উপস্থিত বিজ্ঞানীদের দিকে একবারও তাকাচ্ছেন না। কারো চোখে চোখ পড়া মাত্রই চোখ ফিরিয়ে নিচ্ছেন। আপনার চোখের পাতা যেভাবে পড়ে, তারচে ত্রিশ ভাগ দ্রুত পড়ছে। আপনার শরীরবৃত্তীয় কর্মকাণ্ড আমি যতটুকু জানি তা থেকে সিদ্ধান্তে আসা যায় যে আপনি খুবই দুঃশ্চিন্তাগ্রস্ত।

টুন করে ঘন্টাধ্বনির মতো শব্দ হল। হলঘরের নীল আরো সবুজ হয়ে গেল। এমরান টি মাথার রুমাল ঠিক করতে করতে বললেন, বিজ্ঞান কাউন্সিলের বিশেষ অধিবেশন শুরু হচ্ছে। এ বছরের দ্বিতীয় বিশেষ অধিবেশন। কাউন্সিলের একশ সদস্যদের সবাই সশরীরে উপস্থিত। এটি আনন্দময় ঘটনা। আমি সিডিসিকে এখন বিশেষ অধিবেশনের কারণ ব্যাখ্যা করতে অনুরোধ করছি।

সিডিসি উঠে দাঁড়াল। সামান্য হাসল। অবিকল মানুষদের মতো নাভাস ভঙ্গিতে কয়েকবার কাশল। শাদা কোটের পকেট থেকে টকটকে লাল রুমাল বের করে ঠোট মুছে তার কথা শুরু করল।

সম্মানিত বিজ্ঞান কাউন্সিলের সদস্যবৃন্দ। মহামান্য এমরান টি। আজকের বিশেষ অধিবেশনের উপর প্রতিবেদন আমি এক্ষুণি আপনাদের জানাচ্ছি। আপনাদের যে-কোন প্রশ্নের জবাব আমি প্রতিবেদন পেশ করার সময়ই দেব। বিশেষ অধিবেশনের নিয়ম-অনুযায়ী প্রতিবেদন শেষ হবার পাঁচ মিনিটের ভেতর আপনারা আপনাদের সিদ্ধান্ত জানাবেন। এখন আমি শুরু করছি। আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি—আমার ডানপাশে হলোগ্ৰাম মনিটারটির দিকে।

সিডিসির ডানপাশের হলোগ্ৰাম মনিটারে কাজ করা শুরু হল। মনিটারটি একটি ত্রিমাত্রিক ছবি তৈরি করল। সেই ছবিতে দেখা গেল রেফকে। সে চাদর গায়ে বিছানায় শুয়ে আছে। মাঝে মাঝে মাথা উঁচু করে জানালায় সমুদ্র দেখার চেষ্টা করছে। হলোগ্রামের ছবি যেমন হয়ে থাকে রফিকের ছবিটি সেরকম। বোঝার কোন উপায় নেই যে যা দেখা যাচ্ছে তা ত্রিমাত্ৰিক ছবি। মনে হচ্ছে বাস্তবের মানুষটি এখানে সরাসরি উপস্থিত। তার নিশ্বাস ফেলার শব্দও কানে আসছে।

যাকে আপনারা দেখছেন তার নাম রে। সে বিজ্ঞান কাউন্সিল নিয়ন্ত্রিত মানসিক হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। চার বছর ধরেই তার চিকিৎসা চলছে। তার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে তার চিকিৎসক নিউরো বিশেষজ্ঞ মতামত দেবেন। তিনি তাঁর বক্তব্য দেবেন হলোগ্ৰাম মনিটারের মাধ্যমে। তাকে কোন প্রশ্ন করা যাবে না।

রফিকের ছবি মুছে গেল সেখানে প্রফেসর বার্নকে দেখা গেল। হাসিখুশি একজন বৃদ্ধ। নিজের খাসকামরায় বসে আছেন। হাতে কফির মগ। সামনে প্রচুর অগোছালো ফাইলপত্র। প্রফেসর ব্লেয়ার হাতের মগ নামিয়ে রাখতে রাখতে বললেন

রেকে চার বছর আগে বিশেষ ব্যবস্থাধীনে বিজ্ঞান কাউন্সিল নিয়ন্ত্রিত স্যানিটোরিয়ামে ভর্তি করা হয়। কাউন্সিলের নির্দেশে আমাকে এই রোগীর প্রতি বিশেষ নজর রাখতে হয়। রোগী এক বিচিত্র স্নায়ু-বৈকল্যে ভুগছে। এই স্নায়ুবৈকল্যের লক্ষণ হল স্থান-কাল সম্পর্কিত ভ্ৰম। রোগী কখনো ভাবছে সে এখানে আছে আবার কখনো ভাবছে এখানে নয় অন্য কোথাও বাস করছে। সাইকাডেলিক ড্রাগ যেমন LSD গোত্রীয় ড্রাগে এ ধরনের অবস্থার সৃষ্টি হয়, তবে সেই অবস্থা স্থায়ী হয় না। রক্তে ড্রাগের মাত্রা কমে গেলে রোগী স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসে। এই ক্ষেত্রে তা হচ্ছে না। রোগীর অবস্থা অপরিবর্তিত আছে। চিকিৎসায় এই রোগ আরোগ্যের কোন আশা নেই। রোগীর বিষয়ে এরচে বেশি বলার কিছু নেই। এই স্নায়ু-বৈকল্য চিকিৎসায় যে-সব ড্রাগস এবং পদ্ধতি ব্যবহার করা হয়েছে তার পূর্ণ বিবরণ ফাইল নাম্বার MS001-525-PS005 QLPতে দেয়া আছে। যারা আগ্রহী তারা ফাইল দেখতে পারেন।

হলোগ্রামের ছবি মুছে গেল। সিডিসি উঠে দাঁড়াল। সে আবারো শাদা কোটের পকেট থেকে টকটকে লাল রুমাল বের করে ঠোট মুছতে মুছতে বলল, রেফের মানসিক সমস্যার ধরনটা আমি সামান্য ব্যাখ্যা করি। যদিও আমি জানি। ব্যাখ্যার তেমন প্রয়োজন নেই। রেফ নিজে নিশ্চিত নয় তার কোন জগৎটা সত্যি জগৎ। কখনো সে ভাবছে তার এই জগৎটা সত্যি, সে রেফ। যে রোবট তার দেখাশোনা করছে তার নাম শেফ। আবার কখনো ভাবছে সে আসলে রফিক। যে মেয়েটির সঙ্গে তার পরিচয় তার নাম শেফা। আমার যা বলার আমি বললাম। যেহেতু আপনারা কেন প্রশ্ন করছেন না? আমি ধরে নিচ্ছি আপনাদের আর কিছু জানার নেই। কাজেই এখন সিদ্ধান্ত নেবার সময়। আপনারা সিদ্ধান্ত নেবেন এই রোগীর বিষয়ে কি করা হবে। আমরা কি তার চিকিৎসা আরো চালিয়ে যাব? নাকি ধ্বংস করে দেয়া হবে? সিদ্ধান্ত নেবার জন্যে আপনাদের পাঁচ মিনিট সময় দেয়া হল।

পাঁচ মিনিট অপেক্ষা করতে হল না, তার আগেই একশজন বিজ্ঞানীদের সবাই বললেন—ধ্বংস করে দেয়া হোক। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট দুজন বিপক্ষে রায় দিল। তাদের ভোটাধিকার নেই। তারা হ্যাঁ বা না বলতে পারে তবে ভোটাভুটির মতো পরিস্থিতির সৃষ্টি হলে তাদের হ্যাঁ-না বাতিল হয়ে যায়।

হলঘরের সবুজ আলো নিভে গিয়ে নীল আলো জ্বলে উঠল। অধিবেশন শেষ হয়েছে। বিজ্ঞানীরা উঠতে শুরু করবেন এমন সময় এমরান টি উঠে দাঁড়ালেন। অধিবেশন শেষ হবার পর কিছু ধন্যবাদ-সূচক কথা বলতে হয়। এমরান টি প্রায় যন্ত্রের মতো বললেন–

আপনাদের সবাইকে ধন্যবাদ। গুরুত্বপূর্ণ একটি সিদ্ধান্ত নিতে আপনারা সহায়তা করেছেন। কাউন্সিলের নিয়মানুযায়ী সিদ্ধান্ত গ্রহণের চব্বিশ ঘণ্টার ভেতর সিদ্ধান্ত কার্যকর করা হবে।

কাউন্সিল সদস্যদের প্রতিনিধি উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, আমরা কি ধরে নিতে পারি বিশেষ অধিবেশন শেষ হয়েছে?

এমরান টি বললেন, হ্যাঁ ধরে নিতে পারেন। অধিবেশন সমাপ্তির ঘোষণা অবশ্যি আমার কাছ থেকে আসবে না। এই ঘোষণা কাউন্সিলের নিয়মানুযায়ী সিডিসি দেবে। আমি সিডিসিকে অধিবেশন শেষ করার ঘোষণা দেবার জন্যে অনুরোধ করছি।

সিডিসি উঠে দাঁড়াল। পকেট থেকে লাল রুমাল বের করে ঠোট মুছল। সে শান্ত গলায় বলল,

অধিবেশন সমাপ্তি ঘোষণার আগে আমি একটি আপাতত তুচ্ছ বিষয়ের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। মহান বিজ্ঞানীদের বুঝিয়ে বলার কোন প্রয়োজন নেই। যে তুচ্ছ বিষয়ও মাঝেমধ্যে অনেক বড় হয়ে দেখা দেয়। উদাহরণ দিয়ে বলি এই পৃথিবীতে এডলফ হিটলার নামের এক ব্যক্তি বহুকাল আগে দ্বিতীয় মহাযুদ্ধ শুরু করেছিলেন। মানবজাতির বিরাট একটা অংশ এই যুদ্ধে ধ্বংস হয়ে গিয়েছিল। অতি তুচ্ছ একটি কারণ ঘটিয়ে এই ভয়ংকর যুদ্ধ বন্ধ করা যেত।

কাউন্সিলের একজন প্রতিনিধি বললেন—তুচ্ছ কারণটা ব্যাখ্যা করুন।

অসংখ্য তুচ্ছ কারণ উল্লেখ করতে পারি। যেমন ধরা যাক যে রাতে হিটলারের বাবা এবং মার সামান্য ঝগড়া হল। হিটলারের পিতা কফি চেয়েছিলেন। সেই কফি ঠাণ্ডা হওয়ায় হিটলার-জনক সামান্য রাগলেন। এবং রাগ নিয়ে ঘুমুতে গেলেন। ধরে নিন এটি হচ্ছে সেই বিশেষ রাত যে রাতে মাতৃগর্ভে হিটলার নামক মানুষটির সৃষ্টিপ্রক্রিয়া শুরু হবে। কফি গঠিত জটিলতায় প্রক্রিয়াটি শুরু হল না। তাহলে দাঁড়াল কি? এককাপ কফি সামান্য ঠাণ্ডা হবার কারণে পুরো মানবজাতি ধ্বংসের মুখোমুখি চলে গেল।

পদার্থবিদ ফেনটাং বিরক্ত গলায় বললেন, সিডিসি আপনি মূল বিষয়ে কথা বলুন।

সিডিসি ঠাণ্ডা গলায় বলল, মহান পদার্থবিদ ফেনটাং আমি মানব প্রজাতির কেউ না। আমি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন কম্পিউটার। মূল সমস্যা থেকে দূরে সরে যাবার প্রবণতা মানবজাতির ভেতরই দেখা যায়। আমার মধ্যে এই প্রবণতা থাকার কথা নয়। আমি মূল বিষয়েই আছি। আমি বলার চেষ্টা করছি যে আপাতত অতি তুচ্ছ বিষয়ও পরে ভয়ংকর বিষয় হিসেবে দেখা দিতে পারে।

আমরা অতি দ্রুত রেফ নামের মানুষটির ধ্বংসের ব্যাপারে সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত দিয়ে দিলাম। মহান বিজ্ঞান কাউন্সিলের কাছে এটি খুবই তুচ্ছ বিষয়। বিজ্ঞান কাউন্সিলকে এই অধিকার দেয়া হয়েছে। চিকিৎসার-অতীত মানসিক রোগীকে ধ্বংস করার আইন আছে। একমাত্র বিজ্ঞান কাউন্সিলই এই আইন প্রয়োগ করতে পারে। কাজেই সিদ্ধান্ত গ্রহণে আইনগত কোন জটিলতা নেই।

আমি আপনাদের মনে করিয়ে দিতে চাই যে মানবসভ্যতার শুরু থেকেই মানসিক রোগীদের বিষয়ে প্রবল ভীতি কাজ করছে। এক সময় ছিল যখন তাদের পুড়িয়ে মারা হত। আবার একটা সময় ছিল যখন তাদের বস্তায় ভরে সাগরে ডুবিয়ে দেয়া হত। পরবর্তিতে মানবসমাজ সামান্য সহনশীলতা দেখায়, তারা মানসিক রোগীদের মেরে না ফেলে অপরাধীদের যেভাবে সমাজ থেকে আলাদা করে রাখা হত সেভাবে আলাদা করে রাখার ব্যবস্থা করে। প্রায় একশ বছর এই ব্যবস্থাটি চালু থাকে। একবিংশ শতাব্দীর মাঝামাঝি থেকে আবারো মানসিক রোগীদের ধ্বংস করে ফেলার আইন পাস হয়। কিছুক্ষণ আগে আপনারা এই আইনই প্রয়োগ করলেন।

এমরান টি বললেন, তাতে সমস্যাটা কি?

সিডিসি বলল, কোন সমস্যা নেই।

সমস্যা না থাকলে দীর্ঘ বক্তৃতার কারণ কি?

দীর্ঘ বক্তৃতার কারণ হল, আমি শুধু বর্তমানের সমস্যা দেখি না, ভবিষ্যতের সমস্যাও দেখি আমার মধ্যে একটি সফটওয়ার আছে ফোর্থ অর্ডার প্রবাবিলিটি ভেক্টর এনালিসিস প্রোগ্রাম। এই সফটওয়ারের সাহায্যে আমি যে-কোন বর্তমান ঘটনাকে ভবিষ্যতের কো-অর্ডিনেটে ফেলতে পারি।

খুবই ভাল কথা।

শুধু এইটি ফেলতে পারছি না।

পারছ না কেন?

ফোর্থ অর্ডার প্রবাবিলিটি ভেক্টর এনালিসিস মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষদের ক্ষেত্রে কাজ করে না।

এটা জানা ছিল না।

সিডিসি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে আবার কথা বলা শুরু করল। তবে এবারে সে ঠোট মুছল গাঢ় সবুজ রঙের রুমাল দিয়ে।

আমি আরেকটি বিষয়ের দিকে আপনাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে চাচ্ছি। আমি অতি প্রাচীনকাল থেকে এখন পর্যন্ত যত মানসিক রোগী আছে তাদের সবার কেইস হিস্ট্রি জোগাড় করেছি। সেখান থেকে একটি কৌতূহল-উদ্দিপক বিষয় বের করা গেছে। বিষয়টি হচ্ছে আমি লক্ষ করেছি মানসিক রোগীদের মধ্যে অনেকেই একই সঙ্গে অন্য কোন সময়ে তাদের অবস্থানের কথা জানিয়েছেন।

এমরান টি বললেন, তুমি বলতে চাচ্ছ যে রেফ্‌ যা বলছে অতীতেও অনেক রোগী তা বলেছে।

হ্যাঁ আমি তাই বলতে চাচ্ছি।

এটাই কি স্বাভাবিক না। তারা সবাই বিশেষ কোন মানসিক রোগে ভুগছে।

আমি মনে করি রোগের এই বিশেষ প্যাটার্নটি নিয়ে আমাদের আরো চিন্তা-ভাবনা করা উচিত।

আমি তা মনে করি না।

আজ যদি রেফ্‌কে নষ্ট করে দেয়া হয় তাহলে এই বিশেষ দিকটি নিয়ে গবেষণার বড় একটা সুযোগ আমরা হারাব। এটা কি ঠিক হবে?

খুবই ঠিক হবে। কারণ তোমার কথার সূত্র ধরেই বলছি এ ধরনের রোগী অতীতে যেমন পাওয়া গেছে, ভবিষ্যতেও পাওয়া যাবে। কাজেই গবেষণা করার জন্য রোগীর অভাব হবে না। আমাকেও রোগী হিসেবে পেতে পার। কিছুদিন হল আমার মনে হচ্ছে আমি একই সঙ্গে এই পৃথিবীতে আছি আবার একই সঙ্গে কৃষ্ণ গহ্বরের টানেলের ভেতর সঁতার কাটছি। কাজেই সভা সমাপ্ত।

বিজ্ঞানীরা সচরাচর সেন না। এমরান টির কথায় অনেকেই হেসে ফেললেন। সিডিসি সভা সমাপ্তির ঘঘাষণা দিল। এমরান টি সিডিসির দিকে ঝুঁকে এসে বললেন আমি লক্ষ করেছি যে কোন কাউন্সিল মিটিং-এ তুমি ঠোট মোছার জন্যে একটা লাল রুমাল ব্যবহার কর। এর কারণ কি?

দৃষ্টি আকর্ষণের জন্যে করি। আজ অবশ্যি একটা সবুজ রুমালও ব্যবহার করেছি। আমার দিকে মনোযোগ আকর্ষণের জন্যে এই কাজটা করা হয়।

আমিও তাই ভেবেছিলাম। এসো কফি খাওয়া যাক। ও আচ্ছা তোমার সঙ্গে কথা বলার সময় আমার মনেই থাকে না যে তুমি আমাদের কেউ না…

সিডিসি বলল, আমাদের বাহ্যিক গঠন এমন করা হয়েছে যে আমি ইচ্ছে। করলে আপনার সঙ্গে কফি খেতে পারি।

ও হ্যাঁ তা তো পারই। তাহলে এসো কফি খেতে খেতে গল্প করি।

আপনি কি সত্যিই আমার সঙ্গে গল্প করতে চাচ্ছেন?

না গল্প করতে চাচ্ছি না—তবে তোমার কাছ থেকে কিছু তথ্য জানতে চাচ্ছি।

বলুন।

তুমি কি সত্যি মনে কর রেফ্‌ একটি গুরুত্বপূর্ণ গবেষণার বিষয়?

আমি অবশ্যই সেরকম মনে করি।

আমি মনে করি না।

আপনিও মনে করেন। মনে করেন বলেই আবারো প্রশ্নটি এসেছে। শুধু আপনি না, আপনার বিজ্ঞান কাউন্সিলও মনে করে। তার চেয়েও বড় কথা বিজ্ঞান কাউন্সিল রেফ নিয়ে ভয়াবহ শংকার ভেতর আছে। বিজ্ঞান কাউন্সিল মনে করছে এই মানুষটি হুমকিস্বরূপ।

তুমি মনে করছ সে হুমকিস্বরূপ না?

সিডিসি সহজ গলায় বলল, মানুষটিকে যদি মেরে ফেলা যায় তাহলে সে হুমকিস্বরূপ না। আর যদি মেরে ফেলা না যায় তাহলে অবশ্যই হুমকিস্বরূপ।

মেরে ফেলা যাবে না কেন?

আপনাকে আমি এক বিশেষ শ্রেণীর মানসিক রোগীর কথা বলেছি যারা দাবি করত তারা দুটি ভিন্ন অবস্থানে বাস করে।

হ্যাঁ বলেছ।

এই শ্রেণীর মানসিক রোগীদের সবাই দীর্ঘদিন বেঁচেছেন। তাদের আয়ু স্বাভাবিকের চেয়েও অনেক বেশি ছিল। এবং এ রকম দুজনের কেইস হিস্ট্রি আছে যাদেরকে ভুলক্রমে এমন ওষুধ দেয়া হয়েছিল যাতে তৎক্ষণাৎ তাদের মৃত্যু হবার কথা। তা কিন্তু হয় নি। আরেকটি কেইস হিস্ট্রিতে পেয়েছি ওদের একজন ঝড়ে নৌকাডুবিতে পড়েছিল। নৌকার সমস্ত আরোহী মারা গেলেও সে মারা যায় নি।

সবই তো কাকতালীয়।

কাকতালীয় হতে পারে। তবে না-ও হতে পারে। চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে রেকে ধ্বংস করতে যে নির্দেশ দেয়া হয়েছে সেই নির্দেশ পালন করা হয়ত-বা সম্ভব হবে না।

কেন সম্ভব হবে না?

কারণ রেফ্‌ সেনিটোরিয়ামে নেই। সে বের হয়ে পড়েছে।

এমরান টি হতভম্ব গলায় বললেন—এটা তো অসম্ভব ব্যাপার।

প্রবাবিলিটির হিসেবে অসম্ভব নয়। আমাদের ব্যবস্থায় শতকরা দুই ভাগ প্রবাবিলিটি ছিল পালিয়ে যাবার। সে সেই দুইভাগ ব্যবহার করেছে।

ঘটনা ঘটেছে কখন?

কাউন্সিল অধিবেশন শুরু হবার প্রায় সঙ্গে সঙ্গেই আমি খবর পেয়েছি।

তুমি খবরটা জানালে না কেন?

বিশেষ কাউন্সিল অধিবেশন চলাকালীন সময়ে বাইরের কোন খবরাখবর দেবার নিয়ম নেই। এতে কাউন্সিলের মর‍্যাদা ক্ষুন্ন হয় এবং কাউন্সিলের সিদ্ধান্ত গ্রহণও বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এই নিয়ম আপনার জানা থাকার কথা।

রেফ্‌কে খুঁজে বের করার চেষ্টা কি করা হচ্ছে?

আপনি নিশ্চিত থাকতে পারেন। সব চেষ্টা ইতিমধ্যেই শুরু হয়েছে।

তার লুকিয়ে থাকার এবং পালিয়ে বেড়াবার সম্ভাবনা কতটুকু।

একভাগেরও কম। আমার হিসেব মতো আজ সন্ধ্যার ভেতর তাকে ধরে ফেলা যাবে।

রেফকে সার্বক্ষণিকভাবে চোখে চোখে রাখার দায়িত্বে যে রোবটটি ছিল তাকে কি জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

হ্যাঁ জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

তার বক্তব্য কি?

সে তেমন কিছু বলছে না। যাবতীয় প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে যাচ্ছে। শেফ হচ্ছে অষ্টম ধারার রোবট। প্রশ্ন পাশ কাটিয়ে যাবার ক্ষমতা এদের অসাধারণ। আপনি কি শেফের সঙ্গে কথা বলতে চান?

তুমি ভুলে যাচ্ছ যে আমি রোবটদের ঘৃণা করি। বিশেষ করে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাসম্পন্ন রোবট।

ঘৃণা করলে তো কোন সমস্যা নেই। আপনি তার সঙ্গে ঘৃণা নিয়ে কথা বলবেন। আমি তাকে বিজ্ঞান ভবনে চলে আসতে বলেছি। আমার মনে হয় সে। চলেও এসেছে। আপনি কি কথা বলবেন?

তুমি কথা বলতে বলছ?

আমি কিছুই বলছি না। আমি শুধু সব ব্যবস্থা করে রেখেছি। আপনি কথা বলতে চাইলে বলবেন। বলতে না-চাইলে বলবেন না।

এমরান টি মাথার রুমাল নাড়াচাড়া করছেন। তাঁর কাপের কফি অনেক আগেই শেষ হয়ে গেছে। তারপরও তিনি খালি কাপেই চুমুক দিচ্ছেন।

শেফ একটা চেয়ারে মাথা নিচু করে বসেছিল। এমরান টিকে দেখে সে উঠে। দাঁড়াল। একপলক তার দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিল। এমরান টির বিস্ময়ের সীমা রইল না। কে বলবে এই মেয়েটি মানবজাতির কেউ না। কি সুন্দর মমতাময় মুখ। চোখে ভয়ের অংশ এত স্পষ্ট। এরা ভুল করে নি তো। শেফকে পাঠানোর বদলে অন্য কাউকে হয়ত পাঠিয়েছে। তিনি তাঁর পুরনো সেক্রেটারিকে বদলাতে চাচ্ছিলেন। এ হয়ত নতুন সেক্রেটারি।

এমরান টি চেয়ারে বসতে বসতে বললেন, তোমার নাম কি?

শেফ।

বোস। দাঁড়িয়ে থাকার প্রয়োজন নেই। যদিও আমি জানি তোমার দাঁড়িয়ে থাকাও যা বসে থাকাও তা। তবু বোস।

শেফ বসল। এমরান টি ঝুঁকে এসে বললেন, তুমি রেফ কে ছেড়ে দিয়েছ?

শেফ হ্যাঁ-সূচক মাথা নাড়ল।

এই কাজটা কেন করলে?

ওর উপর খুব মায়া হচ্ছিল।

মায়া?

জ্বি মায়া। মহান বিজ্ঞানী এমরান টি আপনি নিশ্চয়ই জানেন অষ্টম ধারার কম্পিউটারে মানবিক আবেগ ঢোকানোর চেষ্টা করা হয়েছিল। সেই চেষ্টা সফল হয়েছে। মায়া ব্যাপারটা আমাদের মধ্যে আছে।

মায়া ছাড়া আর কি আছে।

দুঃখবোধ আছে, ভালবাসা আছে।

ঘৃণা নেই?

ঘৃণাও আছে। ভালবাসা থাকলেই ঘৃণা থাকতে হবে। ভালবাসা যদি হয় পজেটিভ ভেক্টর, ঘৃণা হবে নেগেটিভ ভেক্টর।

রেফের প্রতি তোমার কি শুধুই মায়া নাকি মায়ার সঙ্গে ভালবাসাও আছে?

এখনো বুঝতে পারছি না। হয়ত ভালবাসাও আছে। রেফের জন্যে খুবই দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে। এই কারণে মনে হয় ভালবাসা আছে।

তোমার নিজের জন্যে দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে না? তুমি যে অপরাধ করেছ তার জন্যে কঠিন শাস্তির বিধান আছে। হয়ত-বা তোমার কপোট্রন নষ্ট করে ফেলা হবে।

আমি তা জানি। এর মধ্যেই আমার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। আপনার সঙ্গে কথা বলা শেষ হলেই আমাকে সেলে ঢুকিয়ে তালা দিয়ে দেয়া হবে। হয়ত-বা কপোট্রন খুলে নিয়ে যাবে। তবে আমি সেটা নিয়ে দুঃশ্চিন্তা করছি না। ভয় পাচ্ছি, কিন্তু দুঃশ্চিন্তা করছি না।

ভয় পাচ্ছ?

জ্বি ভয় পাচ্ছি। ভয় নামক আবেগও আমাদেরকে দেয়া হয়েছে।

তোমার বিচার যখন শুরু হবে তখন তুমি আত্মপক্ষ সমর্থনের জন্যে কি বলবে?

শেফ এই কথায় সামান্য হাসল। হাত দিয়ে মাথার চুল ঠিক করতে করতে বলল, আমি বলল, অবশ্যই আমি অপরাধী। অপরাধ করেছি কারণ রেফের জন্যে প্রচণ্ড মায়া অনুভব করেছি। আমার ভেতর মায়া নামক আবেগ সৃষ্টি করেছে মাল্টি ভেক্টর জেটা পটেনশিয়াল। এই মাল্টি ভেক্টর জেটা পটেনশিয়াল তৈরি করেছে মানুষ। কাজেই আমার অপরাধের সমস্ত দায়দায়িত্ব মানুষের। আমার নয়। মহান এমরান টি আমার যুক্তিটা কি খুব খারাপ?

সহজ যুক্তি তবে ভুল যুক্তি।

ভুলটা কোথায় ধরিয়ে দেবেন?

ধর কোন মানুষ বড় কোন অপরাধ করল। তারপর সে যুক্তি দিল অপরাধের দায়ভাগ তার না। মানুষ হিসেবে যে তাকে সৃষ্টি করেছে তার। এই যুক্তি যেমন ভুল। তোমার যুক্তিও ভুল।

মহান এমরান টি ভুল এবং শুদ্ধ খুবই জটির বিষয়। ন্যায়-অন্যায় যেমন আলাদা করা অত্যন্ত কঠিন। ভুল-শুদ্ধ আলাদা করাও কঠিন। ফোর্থ অর্ডার প্রবাবিলিটি ভেক্টর এনালিসিস প্রোগ্রামে দেখা গেছে—এক সময় যা ভুল, অন্য সময় তা শুদ্ধ, এক সময় যা ন্যায় অন্য সময় তা অন্যায়। ন্যায়-অন্যায়কে যদি সময়ের বিপরীতে প্লট করে গ্রাফিক আকারে দেখানো হয় তাহলে মজার একটা চিত্র পাওয়া যায়।

মজার চিত্রটা কি?

গ্রাফটা হয় সাইন কার্ভের মতো। আমি কি আপনাকে গ্রাফটা একে দেখাব।

তার কোন প্রয়োজন দেখছি না। আচ্ছা তুমি যাও। আমি ব্যক্তিগতভাবে দেখব যেন তোমার কপোট্রন সরিয়ে নিয়ে নষ্ট না করা হয়।

স্যার আমি কি জানতে পারি আপনি কেন আমার প্রতি এই বিশেষ দয়া দেখাচ্ছেন?

এমরান টি বিরক্ত গলায় বললেন, আমি দয়া দেখাচ্ছি কারণ দয়া, মমতা, ভালবাসা এইসব ব্যাপারগুলি আমি মানুষ হিসেবে জন্মসূত্রে নিয়ে এসেছি। আচ্ছা যাও এখন বিদেয় হও।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress