Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।

ওমিক্রন লকার

ওমিক্রন লকার মনে হয় পুরোপুরি কাজ করা শুরু করেছে। এমরান টি নিজের ঘরেই বসে আছেন, অথচ তিনি প্রধান কম্পিউটারের সঙ্গে রেরে কথাবার্তা পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছেন। রেফ্‌ একবার পানি খেল। সেই স্বাদও তিনি পেলেন। কি ভয়ংকর কথা। এখন কি তার নিজের জগত বলতে কিছু নেই? তিনি অস্থির বোধ করছেন। এই অস্থিরতাটাও কি তাঁর নিজের নাকি রেফের অস্থিরতা তিনি নিজের মধ্যে বোধ করছেন। তাঁর ইচ্ছা করছে পাতলা চাদর গায়ে জড়িয়ে বিছানায় শুয়ে থাকতে। এই ইচ্ছাটা কি তার নিজের না, অন্য একজনের তা বুঝতে পারছেন না বলে শুতে যাচ্ছেন না।

এমরান টি চোখ বন্ধ করে ফেললেন। প্রধান কম্পিউটার এবং রেফের ভেতর কি কথাবার্তা হচ্ছে এই সম্পর্কে তিনি আগ্রহ বোধ করছেন না। তবু শুনছেন। এবং ভুরু কুঁচকে ভাবছেন—এই যে অনাগ্রহ এটা তাঁর নিজের নাকি রেফের।

রেফ্‌ আমি প্রধান কম্পিউটার, সিডিসি।

আপনার বিষয়ে আমার তীব্র কৌতূহল ছিল। আপনার সঙ্গে কথা বলতে পারব ভাবি নি।

তোমার বিষয়েও আমার তীব্র কৌতূহল।

কৌতূহলের কারণ জানতে পারি?

অবশ্যই জানতে পার। তুমি হচ্ছ এমন একজন যাকে বেছে নেয়া হয়েছে।

কে বেছে নিয়েছে?

ওমেগা পয়েন্ট। মানুষের জ্ঞান বিজ্ঞানের শেষ সীমা।

পরিষ্কার করে আমাকে বলবে?

পরিষ্কার করে কিছু বলতে পারছি না। নানান দিক থেকে যুক্তির সিঁড়ি তৈরি করার চেষ্টা করছি। তুমি এবং এমরান টি তোমারা দুজন সাহায্য করলে হয়তবা জট খুলতে পারব।

আমাকে কি করতে হবে বল?

আমার প্রশ্নের উত্তর দেবে। সত্যি উত্তর এবং মিথ্যা উত্তর। দুরকম উত্তরই প্রয়োজন।

বুঝতে পারলাম না। প্রশ্নের উত্তর তো একটাই হবে।

সিডিসি বলল, দ্বিতীয় ক্রম সমীকরণের দুটা উত্তর হয়। একটা সত্যি উত্তর। একটা কাল্পনিক উত্তর। তেমনি যে-কোন প্রশ্নেরই দুটা, তিনটা, চারটা উত্তর হতে পারে। আমি কোন্ উত্তরটা রাখব সেটা আমার ব্যাপার। মিথ্যা উত্তর বলতে আমি বোঝাচ্ছি যে-সব উত্তর তোমার মাথায় আসে সবই বলবে।

বেশ প্রশ্ন করুন।

তুমি কি রোবট? সত্যি উত্তরটা আগে দাও।

আমি রোবট না।

কি করে বুঝলে তুমি রোবট না?

আমার ক্ষুধা, তৃষ্ণা বোধ আছে, আমার আবেগ আছে।

তোমার যা আছে অতি আধুনিক বায়ো-রোবটেরও তার সবই আছে।

হতে পারে। আপনার জন্যে এই প্রশ্নের সত্যি উত্তর বার করা কঠিন কিছু না। আমার ডি.এন. এ. পরীক্ষা করেই জানতে পারেন।

বায়ো-রোবটদেরও ডি.এন.এ. আছে। মানুষের ডি.এন.এ.র সঙ্গে তার কোন প্ৰভেদ নেই।

আমি তা জানতাম না।

তোমাকে যদি রোবট ধরে নেই তাহলে তোমার সম্পর্কে আমি যে হাইপোথিসিস দাঁড় করিয়েছি তা মিলে যায়।

আমি রোবট না। আমি মানুষ। শেফা নামের একজন তরুণীর প্রতি আমি গভীর আবেগ বোধ করছি।

শেফ নামের অতি সাধারণ মানের একটি রোবটও তোমার প্রতি গাঢ় আবেগ পোষণ করেছে। তার মানে তো এই না যে, সে মানুষ?

আমাকে রোবট হিসেবে ধরে নিলে আপনার কি সুবিধা হয় বলুন।

চট করে হিসেব মেলে। ওমেগা পয়েন্ট তোমাকে তৈরি করেছে। বিশেষ একটা দায়িত্ব দিয়ে পাঠিয়েছে।

বিশেষ দায়িত্বটা কি?

তোমার জানার কথা। ওরা তোমার কাছে কি চায়?

জানি না কি চায়?

তোমার কি মনে হয় ওরা তোমাকে দিয়ে কি করতে চাচ্ছে? যে-সব উত্তর মনে আসে। সব বল।

ওরা চাচ্ছে আমি যেন বেঁচে থাকি। আমাকে সমস্ত বিপদ থেকে রক্ষা করার চেষ্টা করা হচ্ছে। আর তারা চাচ্ছে শেফা নামের মেয়েটির প্রতি আমি যেন আবেগ অনুভব করি।

আর কিছু?

না, আর কিছু মনে হচ্ছে না।

ওমেগা পয়েন্ট তো তোমাকে বলেছে যে তাদের পরীক্ষা শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে।

হ্যাঁ তা বলেছে। আপনি এটা জানলেন কিভাবে। মানুষের মাথার ভেতর ঢুকে যাবার ক্ষমতা কি আপনার আছে?

না নেই। তুমি আত্মজৈবনিক ধরনের কিছু লেখা লিখছিলে, সেখানে থেকে জানলাম।

ওমেগা পয়েন্ট বলেছে যে তাদের পরীক্ষা প্রায় শেষ পর্যায়ে।

পরীক্ষা প্রায় সফল হতে যাচ্ছে এই কথাও বলেছে?

হ্যাঁ।

তাহলে আমি ধরে নিতে পারি যে তারা তোমাকে দিয়ে বিরাট গুরুত্বপূর্ণ কোন আবিষ্কার করার জন্যে পরীক্ষাটা করছে না। তাহলে বলত না যে পরীক্ষা শেষ। আমার এই যুক্তি তোমার কাছে কেমন লাগছে?

ভাল। তবে আমি আপনার সঙ্গে আর কথা বলতে চাচ্ছি না। আমার প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে। আমি চোখ মেলে রাখতে পারছি না।

তুমি ঘুমিয়ে পড়া মানে কিন্তু অন্য একটা জগতে চলে যাওয়া।

সেই জগতে যেতে পারলে আমি খুশিই হব। আমার অসহ্য বোধ হচ্ছে।

তোমার বিষয়ে যে মীমাংসাটা করেছি তা শুনতে চাও না?

না। শুধু একটা ব্যাপার জানতে চাই—আমি কি আসলেই কৃত্রিম একজন মানুষ একজন রোবট?

না।

রেফ্‌ গভীর ঘুমে তলিয়ে গেল। এমরান টির চোখভর্তি ঘুম। তিনি অনেক কষ্টে জেগে আছেন কারণ প্রধান কম্পিউটারকে তাঁর একটি প্রশ্ন জিজ্ঞেস করার আছে।

হ্যালো সিডিসি হ্যালো।

মহান পদার্থবিদ এমরান টি আপনার কথা শুনতে পারছি।

তুমি কি রেফ্‌ ছেলেটির রহস্যভেদ করেছ?

পুরোপুরি পেরেছি বলতে পারব না। তবে খুব কাছাকাছি আছি।

তোমার ব্যাখ্যাটা বল।

ওমেগা পয়েন্ট আপনাকে দিয়ে বিরাট কিছু করতে চাচ্ছে। সময়-সংক্রান্ত সমীকরণগুলি যা শুরু করেও আপনি ফেলে রেখেছেন তার সমাধান ওমেগা পয়েন্ট চাচ্ছে। আপনার যে মানসিকতা তাতে আপনি এর সমাধান করবেন না। বার বারই ওমেগা পয়েন্ট আপনার ডি.এন.এর ভেতর ছোট ছোট পরিবর্তন করছে। আপনাকে নিখুঁতভাবে তৈরি করার চেষ্টা করছে ওমেগা পয়েন্ট।

তুমি ধোঁয়াটে ভাষায় কথা বলছ।

আপনার ডি.এন.এর সঙ্গে ভয়াবহ মিল আছে রেফ-এর ডি.এন.এ. এর। তার মানে এই দাঁড়াচ্ছে যে রেফ্‌ অর্থাৎ রফিক এবং শেফা নামের মেয়েটি আপনার অতি আদি পিতা-মাতা।

কি বলছ তুমি?

ওমেগা পয়েন্ট শেফাকে ঠিক রাখছে, কিন্তু প্রতিবারই রফিককে বদলাচ্ছে। তারা রফিককে সংগ্রহ করছে আমাদের সময় থেকে। তাকে পাঠিয়ে দিচ্ছে। শেফার কাছে। যেন এদের বিয়ে হয়। এদের সন্তান হয়। এবং শেষ। এই সন্তানই বিশেষ ধরনের ডি.এন.এ.-এর বাহক।

রেফকে তারা পাঠিয়ে দিচ্ছে বলছ। কিন্তু এখানেও তো তার অস্তিত্ব। থাকছে।

ওমেগা পয়েন্ট এই কাজটা করছে ঠিকই। কিভাবে করছে আমার কাছে পরিষ্কার না। প্রতিটি বস্তুর যেমন প্রতিবস্তু থাকে। আমার ধারণা এখানেও এমন কিছু ঘটছে। রফিক যে জগতে বাস করছে সেই জগৎটা হয়ত আমাদের জগতের প্রতিবিম্ব। মিরর ইমেজ।

তুমি খুবই জটিল প্রক্রিয়ার কথা বলছ।

জটিল তো বটেই।

ওমেগা পয়েন্টের পরীক্ষা যদি সফল হয় তাহলে কি হবে?

নতুন এক এমরান টি আমরা পাব, যিনি সময় সমীকরণের সমাধান করবেন।

এখনকার এমরান টি কোথায় যাবে?

তার কোন অস্তিত্ব থাকবে না। এখনকার এমরান টির জগৎ শূন্যে মিলিয়ে যাবে।

কি বলছ তুমি?

ওমেগা পয়েন্ট অসীম সংখ্যক জগৎ নিয়ে কাজ করে। সেইসব জগতের কিছু নষ্ট হয়ে গেলেও ওমেগা পয়েন্টের কিছুই যায়-আসে না।

ওমেগা পয়েন্ট কি বলে তোমার ধারণা?

কম্পিউটার সিডিসি কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বলল, আমার ধারণা ওমেগা পয়েন্ট হল এমন এক কম্পিউটার যা বিশ্ব ব্ৰহ্মাণ্ড ছড়ানো। মানুষের সেখানে কোন অস্তিত্ব নেই। প্রয়োজনও নেই।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Powered by WordPress