এ কোন্ নতুন দেশে বেড়াতে এলুম যেখানে সব কিছুই
খুব চেনা চেনা মনে হয়
এই সব উজ্জ্বল লাল চেহারার গাছ আমাদের পাড়াগাঁর
উঠোনতলা আলো করে থাকতো
ছোটবেলা পেরিয়ে আসার আগেই অবশ্য তারা ঝড়ে মুড়িয়ে গিয়েছিল
হাওয়ায় উড়ছে জল-রঙা কুচি কুচি ফুল, ঠিক যেমন দেখেছিলাম
ছোট পিসিমার পাহাড়-ঘেঁষা বাড়িতে
ছোট পিসিমা অগ্নিপরীক্ষার জন্য ঝাঁপ দিয়েছিলেন
আর ফিরে আসেন নি
এই যে দেখছি প্রত্যেকটি পুকুরেই জলস্তম্ভ
এ আর নতুন কথা কী
সেই যে আমাদের প্রথম রেলগাড়ি চেপে পশ্চিম ভ্রমণ
সেবারে আমরা মুহুর্মুহু দেখতে পেয়েছিলুম আকাশগঙ্গা
আবার কোথাও কোথাও মাঠের মধ্যে এক একটা জল-পদবী
উঠে গেছে স্বর্গের দিকে
সেই সেবারেই তো বাবা অন্ধ হয়ে গেলেন, স্পষ্ট মনে আছে
রেলের ইঞ্জিন ড্রাইভার নেমে এসে মায়ের বাহু ছুঁয়ে
বলেছিলেন,
আমি মিত্তিরবাড়ির অতুল…
এই নতুন দেশের রাস্তাঘাটগুলো আলিঙ্গনের জন্য
হাত বাড়িয়ে আছে
কী সহজ সরল অনুবাদে হেসে উঠছে মুখ মনে না-পড়া
বাল্যসঙ্গীর মতন মানুষেরা
গৃহগুলির ঘুরন্ত সিঁড়ি দিয়ে অনবরত উঠছে নামছে
অনেকগুলি চপল পা
ঠিক যেন নেমন্তন্নবাড়ি, এখনো কেউ কেউ আসে নি
শানাই বাজছে না বটে, তবু কোনো একটি সুরলহরী
ঢেকে দিচ্ছে কান্নার শব্দ
এ রকম কতই তো রোশনি ঝলমল উৎসবের পাছদুয়োরে
আমি দাঁড়িয়ে থেকেছি
এ কেমন অচেনা রাজ্য যেখানকার প্রতিটি নারীর মুখই
আগে ছবিতে আঁকা হয়ে গেছে
আমার বুক পকেটের এক একটি ছবি আমি মিলিয়ে মিলিয়ে
দেখি
সব মন পড়ে যায়!