Skip to content

Banglasahitya.net

Horizontal Ticker
বাঙালির গ্রন্থাগারে আপনাদের সকলকে জানাই স্বাগত
"আসুন শুরু করি সবাই মিলে একসাথে লেখা, যাতে সবার মনের মাঝে একটা নতুন দাগ কেটে যায় আজকের বাংলা"
কোনো লেখক বা লেখিকা যদি তাদের লেখা কোন গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ বা উপন্যাস আমাদের এই ওয়েবসাইট-এ আপলোড করতে চান তাহলে আমাদের মেইল করুন - banglasahitya10@gmail.com or, contact@banglasahitya.net অথবা সরাসরি আপনার লেখা আপলোড করার জন্য ওয়েবসাইটের "যোগাযোগ" পেজ টি ওপেন করুন।
Home » একেনবাবু ও বর্মণ বাড়ি রহস্য || Sujan Dasgupta » Page 5

একেনবাবু ও বর্মণ বাড়ি রহস্য || Sujan Dasgupta

ঘণ্টা খানেকের মধ্যে কল্পনা সবাইকে খেতে ডাকল। এমনিতে সকাল সাড়ে আটটায় ব্রেকফাস্ট হয়ে যায়। সকাল আটটায় জলখাবার আর রাত্রি সাড়ে সাতটায় ডিনার – এই দুটো সময় বর্মণ বাড়িতে বাঁধা, এর অন্যথা হয় না। আজ উত্তেজনায় দেরি হয়েছে। রিনিতা খাবার ঘরে পৌঁছে দেখল তুঙ্গনাথ আর সত্য ছাড়া সবাই হাজির।

“বাবা কী আসবেন, নাকি ঘরে খাবেন?” ঋদ্ধি জিজ্ঞেস করল।

“বাবু আইসচে গো।”

“আর বাবার গেস্ট?”

“সে বাবুর সনে গপ্পো বলচে। দুইজনে আইসচে।”

“বাঃ!”

ঋদ্ধির মুখে অসন্তুষ্টি পরিষ্কার। তবে ওর বিরাগের কারণ আছে। স্ত্রী- ছেলেমেয়েদের ঘর থেকে তাড়িয়েছেন, কিন্তু সত্যের সঙ্গে কথা বলতে তুঙ্গনাথের অসুবিধে নেই। অরুন্ধতী দেবীর অভিব্যক্তিতে পরিবর্তন ঘটল না, তবে মুহূর্তের জন্যে চোখে যেন একটু ঝিলিক খেলল। কয়েক মিনিট বাদেই তুঙ্গনাথ ঘরে ঢুকলেন, সঙ্গে সত্য।

খাওয়া শুরু হতে ঋদ্ধি ভাববাচ্যে সবার উদ্দেশে বলল, “আমি পুলিশে খবর দেব ঠিক করেছি, মায়ের সঙ্গে কথা বলেছি। বাবা ব্যাপারটা উড়িয়ে দিতে পারে, কিন্তু এটা বাড়ির সবার পক্ষেই ভয়াবহ। আজ বাবাকে আক্রমণ করেছে, কাল মাকে করতে পারে। আমি বা শিখাও এই খুনির টার্গেট হতে পারি। কে এই কাজটা করেছে বের না করা পর্যন্ত আমরা কেউই এখানে নিরাপদ নই।”

হয়তো আরও কিছু বলত, কিন্তু তুঙ্গনাথের চোখে চোখ পড়ায় থমকে গেল। তুঙ্গনাথ ক্রূর চোখে ঋদ্ধির দিকে তাকালেন।

“তোমাকে এখানে কেউ ধরে রাখেনি, এত ভয় করলে যেখানে ইচ্ছে গিয়ে থাকো। পুলিশ এ বাড়িতে আসবে না। আমার কথার যেন অন্যথা না হয়।”

বাবার কঠোর কথায় ঋদ্ধি রীতিমতো হকচকিয়ে গেল, অন্য সকলেও অস্বস্তিতে। শুধু অরুন্ধতী দেবী চোখ নীচু করে খেয়ে চললেন। রিনিতার ভীষণ বিশ্রী লাগছিল এই পারিবারিক টেনশনের মধ্যে বসে থাকতে। খাবার ইচ্ছে লোপাট। শিখা ধমক লাগাল ঋদ্ধিকে, “দাদা, তুই চুপ কর! খাবার টেবিলে এসব আলোচনা না করলে নয়!”

ঋদ্ধি প্রসঙ্গটা আর উত্থাপন করল না বটে, কিন্তু ভুরু কুঁচকে রইল।

প্রায় নিঃশব্দেই ব্রেকফাস্ট শেষ করল সবাই। খাওয়ার শেষে রিনিতাকে বলল শিখা, “আজকেও আবহাওয়া ঠিক আছে, চল তোকে বেড়াতে নিয়ে যাই। কাছে একটা গ্রামীণ শিল্প মেলা হচ্ছে। বেশ ইন্টারেস্টিং জিনিস পাবি। তারপর কোথাও লাঞ্চ খেয়ে ফিরব। তোর কাজের একটু দেরি হবে, অসুবিধে নেই তো?”

“না চল, বেড়াতেই তো এসেছি। দেরি হলে হবে।”

সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে শিখা বলল, “বাড়িটা কেন অসহ্য লাগে, বুঝলি? মা সব কিছু থেকে আউট, বাবা আর দাদার মধ্যে কথায় কথায় ঝগড়া। কিন্তু দাদা এখান থেকে নড়বে না পাছে বাবা ত্যাজ্যপুত্র করে! পুরো চোখটাই সম্পত্তির দিকে। সেই ভয়ে বিয়ে করা বউকে পর্যন্ত বাড়িতে আনেনি! বাবা আর দাদা, দু-জনেই এত মার্সেনারি! এসব বলতেও ইচ্ছে করে না।”

দুই বন্ধু পুরো দিনটাই কাটাল আশেপাশের জায়গা দেখে। একটু দূরে গিয়ে লাঞ্চ খেল। ফেরার পথে টিপ টিপ বৃষ্টি শুরু। গাড়ির রেডিয়োতে যে খবর ওরা শুনল, তা খুবই উদ্বেগজনক। ঝড় আসার গতি নাকি আরও বেড়েছে।

“কী করে কলকাতায় ফিরব জানি না,” শিখাকে বলল রিনিতা, “কানুদার সোমবার সকালে আসার কথা।”

“কানুদাকে নিয়ে এখানে থেকে যাবি, আবার কী? জায়গার তো সমস্যা নেই।”

“তা হোক, তোর দাদা আবার মাইন্ড না করে। এমনিতেই বাড়িতে এখন দু-জন বাইরের লোক।”

“শোন রিনিতা, বাড়িটা দাদার নয়, বাবার। আমার অধিকার এতে এতটুকু কম নয়। ওর সর্দারি একদম পাত্তা দিস না। হ্যাঁরে, তোর কানুদা কী করেন?”

রিনিতা সরাসরি উত্তর দিল না। কানুদা নিজের পরিচয় সবাইকে জানাতে চায় না। এমনকী বহুদিন পর্যন্ত রিনিতাও জানত না দাদা ঠিক কী করে! একসময় পুলিশে কাজ করত, তারপর শুনেছিল কনসাল্টিং করছে। সবে কিছুদিন হল জেনেছে কানুদা নাকি দুর্ধর্ষ গোয়েন্দা। কিন্তু এই কথা ফাঁস করার অধিকার ওর আছে কি?

“কী একটা কনসাল্টিং ফার্মে কাজ করে। একটু খ্যাপাটে, উলটোপালটা কথা বলে, তবে মনটা ভালো।”

রিনিতার বর্ণনা শুনে শিখা হেসে ফেলল।

এইসব কথাবার্তার মধ্যেই কানুদা, মানে একেনবাবুর ফোন এল।

“হ্যাঁরে। তোদের ওখানে যাবার হঠাৎ করে একটা রাইড পেয়ে গেছি। আমার পরিচিত, পুলিশেরই লোক। ওই অঞ্চলেই পোস্টেড ছিল একসময়, রাজবাড়িটা চেনে। আমাকে নামিয়ে দেবে। বলল খন্যান থেকে ভাড়ার গাড়ি পেতে কোনো অসুবিধা হবে না, ওই জোগাড় করে দেবে— তবে সোমবারের আগে হবে না। তাহলে ওখানে তো এক রাত থাকতেই হবে। তোর বন্ধুদের অসুবিধা হবে কি?”

“দাঁড়াও জিজ্ঞেস করি।”

শিখা জিজ্ঞেস করল, “কার ফোন রে?”

“কানুদার। একটা রাইড পেয়েছে, কালকেই আসতে পারে দুপুর নাগাদ। একটু হেজিটেট করছে রাইডটা নিতে।”

“কেন?”

“এক রাত থাকতে হবে… তোদের অসুবিধার কথা ভাবছে। তবে আমি জানি, কানুদার কিন্তু তোদের রাজবাড়ি দেখার খুব আগ্রহ। তার ওপর রাজবাড়িতে এক রাত থাকবে! দাদা একটু ছেলেমানুষ।

“ওমা! বলে দে কালকেই রওনা হতে। আমার খুউব ভালো লাগবে উনি এক রাত থাকলে।”

“মেসোমশাই…”

শিখা ধরতে পারল রিনিতার চিন্তা।

“আমি রোজগেরে ইন্ডিপেন্ডেন্ট মেয়ে, বাবা আমাকে তেমন ঘাঁটায় না। তারপর যদি শোনে ওঁর বাড়ি দেখার জন্য কারোর এত আগ্রহ, তাহলে তো আর কথাই নেই…! একটা গেস্ট রুম ফাঁকা আছে, তোর ঘরের পাশে। আমি কল্পনামাসিকে বলে দেব। কী খেতে ভালোবাসে তোর দাদা?” সত্যিই খুশি হল শিখা।

“আরে না, কিচ্ছু স্পেশাল করবি না, প্লিজ।

Pages: 1 2 3 4 5 6 7 8 9 10 11

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *